চাশমিস হিজাবওয়ালী

চাশমিস হিজাবওয়ালী

ক্লাসের ফাঁকেফাঁকে বা কারণ ছাড়াই মেয়েদের দিকেই ঐ ৪ নাম্বার সিটের প্রথম স্থানে যেই মেয়েটি বসে প্রতিদিন তাকে দেখায় আমার একমাত্র কাজ! আমার দেখা বা আমার চোখে সেরা এক রমনী! আহা! সে’কি হাত সুন্দর হাত! আর সে’কি তার চশমার আড়ালে লুকিয়ে রাখা চোখ যেন ইচ্ছেকরে সবসময় তাকিয়েই থাকি। মেয়েটি আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর। আমার সবথেকে বেশি ভালোলাগে ওর চুপচাপ এই শান্ত স্বভাব টা আমি মেঘ সবসময় চাইতাম জীবনে যাকে চাইবো সেযেন খুব ভদ্র হয়। আর সবসময় শান্ত চুপচাপ হয়। তেমন যেন এই মেয়েটি মেয়েটির কোন বন্ধু বান্ধবী নেই। সবসময় একাএকা থাকে! ক্লাসে একটা কথাও বলেনা।আমি তো সবসময় ওর দিকেই তাকিয়ে থাকি আমি জানবো না কারও সাথে কথা বললে? কিছু মেয়ে আছে যারা কথা বলতে চায়, কিন্তু এই মেয়েটি হয়তো তেমন পাত্তায় দেয়না সোনালি ফ্রেমের চশমার ভেতর থেকে যখন আমার দিকে দু একবার তাকায় তখন যেন সেই চাহনি আমার হৃদয়ে এসে বারি খায়…

–মেয়েটিকে ভেবেভেবে কত যে লিখেছি তার কোন হিসাব আমি রাখিনি তবে হ্যা আমি যখন তাকে প্রথম দেখেছিলাম সে হিজাব পরে এসেছিলো। আমার ভার্সিটির কিছু বখাটে ছেলেরা যখন ডিস্টার্ব করছিল আমি আটকেছিলাম। তখনো তেমন মায়া কাজ করেনি আমার। বাট যেদিন হুট করেই তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম সেদিন ফিল করেছিলাম মেয়েটির মাঝে আসলেই কিছু আছে যা কোন ছেলেকে টানতে পারে শুনেছি অনেক ছেলেই মেয়েটিকে ফ্রেন্ডশিপ করার প্রপোজ দিয়েছে। আর মেয়েটি না করে দিয়েছে। সে নাকি কখনো রুম থেকে বের হয়না এসব শুনেছি আচ্ছা এতো চুপচাপ থাকা কী সম্ভব? বা ভালো লক্ষণ?

–আমি এখন প্রতিদিন পিছনের বেঞ্চিতে বসি আর হা করে হোক বা যেভাবেই হোক তাকিয়ে থাকি। আমার ভিষণ ভালোলাগে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে আজও কথা বলিনি তবে দেখতে সুন্দরি হবে আশাকরি। কখনো মুখ খুলেনা মেয়েটা… আমি জীবনে অনেক হিজাব দেখেছি তবে এই স্টাইলের হিজাব কারও দেখিনি। আমার ভিষণ প্রিয় এই হিজাব টা ওর মুখ দেখার ইচ্ছা আমার কখনো পূরণ হবে বলে মনে হয়না আর কথা তো দূরে থাক আমি ওর আশেপাশেও যাইনা শুধু দূর থেকে তাকিয়েই দেখি…

–সাদা আর সবুজ মিলে ওর একটা বোরখা আছে আর ম্যাচিং করে হিজাব মাঝেমাঝে হলদে হিজাব পড়তে দেখেছি। এতোটা শান্ত মেয়ে যদি আমার লাইফ পার্টনার হতো তাহলে জীবনে আর কি চাইতাম?

–ক্লাস শেষ হবার সাথেসাথে আমার প্রধান কাজ হচ্ছে ওর পিছুপিছু হাটা কখনো দেখিনি আমার দিকে তাকাতে। হঠাৎ চোখ পড়লে সাথেসাথে অন্যদিকে তাকিয়ে নিতো। এমন হতো যেন না চাইতেই চোখ চলে এসেছে। সে’কি তার মায়াবী চোখ….

–প্রায় ২ মাস কেটে গেছে আমি শুধু তাকিয়েই দেখি। এর মাঝে অনেক ছেলে কথা বলতে যেয়ে ফিরে আসতে দেখেছি যখন কেউ কথা বলতে যেতো খুব ভয় হতো যদি সে অন্যকারো হয়ে যায়? যদি সে পরিবর্তন হয়ে যায়?? কিন্তু সবার তো পরিবর্তন হলে চলবেনা সে হিজাব পড়ে থাকে এটায় বেশ লাগবে না তার এতো আধুনিক হবার…

–আমি এটাও জানি আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর অনেক ছেলে আছে যারা চায় মেয়েটি তার হোক জানি মেয়েটি আমার নয়! আমি তো শুধু তাকিয়েই দেখি কথা বলার মতো সাহস হয়নি। তবুও কেন জানি ওর সাথে কেউ কথা বললে আমার খুব জেলাস ফিল হতো বুঝতামনা মেয়েটার দিকে কেউ তাকালে আমার কেন জানি কষ্ট আর রাগ হতো…

–হ্যা আমি জানি এখনো আমি বুঝতে দেয়নি বা বুঝিয়ে বলিনি তবুও কেউ কথা বলতে চাইলে খুব খারাপ লাগতো আমার…

–একদিন ক্লাসে মেয়েটিকে দেখলাম না সেদিন খুব কষ্ট হচ্ছিল বারবার তার বেঞ্চির দিকে তাকাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম আজ কী যেন নেই! কী যেন অপূর্ণ! সেদিন আর ক্লাসে মন বসেনি। পরে সারাপথ তাকে ভেবেই আমার কেটেছিল। আজব ব্যাপার আমি তার নাম আজও জানিনা কারণ আমারো কোন বন্ধু নেই। তার দিকে তাকিয়ে থাকলে যে ভালোলাগা খুঁজে পাই এটাই আমার একমাত্র বন্ধু মেয়েটার পাশের সিটে আবিষ্কার করেছি অনেকবার স্বপ্নে মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরতে যাবার স্বপ্ন দেখেছি অনেকবার কারণ আমি চাচ্ছিলাম এই ভালোবাসা টা খুব গভীর ভাবে আসুক “যেন কোন ঝড়ে আটকাতে না পারে, যেন ঠুনকো না হয়, আর দেরিতে পেলে খারাপ হবেনা বুঝি আমি” কী ভাবে বলতে হয় সেসব অনেকবার ভেবেছি কিন্তু বলতে পারবোকিনা আজও জানিনা…

–মেয়েটিকে যখন বাইরে খুঁজি তখন হঠাৎ পেয়ে যায় তখন বুকের পাজর টা চেপে আসে মেয়েটি আমার পাশ দিয়ে গেলে আমার কলিজা শীতল হয়ে যায়…. বুকের মাঝে চিনচিন করে ব্যথা করে যখন ভাবি মেয়েটি বুঝবেতো?? যখন ভাবি আমাকে সে গ্রহণ করবে তো? আবার এটাও ভেবেছি তার কেউ নাইতো? আমি যে শুধুই তাকে ভালোবাসি! কিন্তু সে’কি আমার ভালবাসা গ্রহণ করবে?

–মেয়েটা যখন চুপচাপ ক্লাসে বসে থাকে তখন আমার ইচ্ছাকরে তার পাশে যেয়ে বসি। ইচ্ছা করে তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি।

ইচ্ছাকরে তার সাথে জমিয়ে গল্প করি! তা আর হবার নয়! এসব কেবল তাকিয়েই দেখেছি যা ৪ মাস হতে চলেছে….

–এরপরে ভার্সিটি ছুটি থাকে ১২ দিনের। ভেবেছি তখন প্রতিদিন মেয়েটির বাড়ির সামনেকার রাস্তার দিয়ে যাব। যদি একদিন দেখা হয়ে যায়?? তাকে না দেখলে যে আমার কিছুই ভালোলাগে না। কিছুতেই মন বসেনা…. তাকে দেখা যে খুব জরুরী!! এরপরে আমি প্রায়দিন যেতাম তার বাড়ি পর্যন্ত। জানলা খোলা থাকতো, হয়ত তার বাতাস প্রিয় ছিলো। তার বারান্দার ফুলগাছ গুলো যদি হতে পারতাম তাহলে প্রাণ ভরে তাকে দেখতাম।যদি আমি জানালার ঐ হিমেল বাতাস হতে পারতাম তাহলে তাকে ছুঁয়ে দিতাম…. যদি আমি ঘরটাই হতাম মেয়েটির দিকে তাকিয়েই থাকতাম….. ওর ভেতর কি যেন একটা ব্যাপার আছে যা আমাকে খুব টানে! এই টান আর কখনো কোন মেয়ের প্রতি হয়নি আর হবেওনা জানি….

–তাকিয়ে থাকার মেয়াদ যখন ৮ মাস পৌছে গেছে তখন দেখতাম মেয়েটি দু একবার আমার দিকে তাকাতো। আর সেই চাহনি কাচের লেন্স ভেদ করে সোজা আমার চোখে এসে বাধতো। মেয়েটিকে নিয়ে প্রচুর লিখেছি এই ক’মাসে। কেউ তা পড়েনি! কেউ তা দেখেনি! তবে আমি জানি আমি মেয়েটাকে কতটা ভালোবাসি… এটাও জানি মেয়েটাকে না পেলে জীবন কে আমি কিছুই দিতে পারবোনা…. বাট আমিতো মেয়েটির সামনে গেলেই চুপ হয়ে যায়….

— আমাদের ভার্সিটিতে একবার বেশ জমিয়ে ম্যাগাজিন হচ্ছিল! প্রত্যেক ডিপার্টমেন্ট থেকে ক্রিয়েটিভ কিছু চাচ্ছিল! আমি সেদিন তার দিকে তাকিয়ে গল্পে নাম দিয়েছিলাম….. আর এই গল্প পাঠ করে শোনাতে হচ্ছিল সেখানে, আমি সেদিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ফ্যালফ্যাল করে। এরপরে বলতে শুরু করছিলাম। টানা ৩৮ মিনিট লেগেছিল বলতে। গল্পটা তোমার আমার কাহিনী ছিলো, সবায়তো স্থব্ধ হয়ে গেছিল শুনে! তাকে আমি কোন পরিবর্তন দেখিনি সেদিনও আজও.. তার সবকিছুই আমার ভালোলাগে। সুন্দর হাত বা হিজাব টা.. মঞ্চের সবায় খুব প্রশংসা করেছিল!

— এর ঠিক ২ মাস পর যখন ডিসেম্বর আসে তখন সে আমার দিকে আর তাকাত না। আমার ভয় হতো তার লাইফে কেউ এসে যায়নি তো?? না তা তো হবার কথা নয়! আমার থেকেও বেশি ভালোবাসা আছে নাকি আবার?? আমার মতো কে আছে মেয়ে টিকে এতটা বুঝবে??

–এখন খুব ইচ্ছাকরে কথাবলি। তারসাথে বন্ধুত্ব করি। কিন্তু ভয় করে খুব আমার, যদি কিছু বলে ফেলে??

–সেদিন তার পিছুপিছু যাচ্ছিলাম। ক্লাস শেষ করে ওকে বাসায় আগিয়ে দিয়ে আবার বাস স্টান্ডে এসে বাসে করে বাসায় যাওয়া…. এতো আর নতুন না প্রায় ১বছর হতে চলেছে। সেদিন রাস্তা ফাঁকায় ছিলো। মেয়েটি সামনে আমি তার পিছনে, হঠাৎ সে দাঁড়িয়ে পড়লো; দেখে আমার কলিজা চিরিক করে উঠলো তারপর আমার দিকে এগিয়ে,

–এসে বলল;- আসসালামু আলাইকুম?
আমি কেঁপেকেঁপেঃ- ওয়ালাইকুম আসসালাম!
— কেমন আছেন??
— জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আমিও! নামাজ পড়েন আপনি?
— মাঝেমাঝে। ( “মায়ায়াঝেএএ মাঝেএএ” কেঁপেকেঁপে)
— আপনি কি আমাকে ভয় পান যে ভয়েভয়ে কথা বলছেন??
— নায়ায়ায়া এএএএএমনিইই
— আপনি কী তুতলা…..??
— না আপনার সামনে এলে তুতলা হয়ে যায়…
— এখন থেকে নামাজ পড়বেন ৫ওয়াক্ত। আর আপনার বাস তো ছেড়ে দিবে যান এখন আমিতো এসেই গেছি
— শুনে আমার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে এলো। মেয়েটি কী তাহলে আমাদে দেখতো?

–সেদিন জীবনের সবথেকে বেশি খুশি হয়েছিলাম। আসলে মন থেকে ভালোবাসলে তাকে পাওয়া যায় এখন বুঝলাম। আর এটাও বুঝলাম মেয়েটিও আমাকে পছন্দ করে হয়তো.. বাসায় এসে আর রাতে ঘুম আসেনি। তার কথায় যেন বাড়বার মনে পড়ছিল। কী মিষ্টি তার কন্ঠ। হিজাবের ভেতর থেকে যেন মধু বেড়িয়ে আসছিল যা অমৃত!

— তারপর থেকে বেশ ক’বছর কেটে গেছে। আমার অনার্স পরিক্ষা শেষ হয়ে গেলো। আজব ব্যাপার মেয়েটির নাম ছিলো মায়া। মায়া কে আমি আজও দেখিনি। মায়া শুধু বলতো আমার জীবনে সে আসবে কি’না আল্লাহ জানে। তবে মায়া চাইতো আমি যেন নামাজ পড়ি। ভালো পথে চলি। আর সে কখনো মুখ খুলত না কারণ তার এই সৌন্দর্য কেবল তার স্বামী ব্যতিত কেউ দেখার অধিকার রাখেনা এজন্যআমার সাথে খুব কম কথা বলত। আমিও ভেবেছি বিয়ে করলে এই মেয়েকেই করব! কারণ মায়াকে ছাড়া বেঁচে থাকতে পারা কঠিন হয়ে যাবে…

–মায়া একটা মাদ্রাসা তে জব করতে এপ্লিকেশন করে। আল্লাহর রহমতে সে পেয়েওও যায়। কারণ মায়া ধর্ম সম্পর্কে অনেককিছু জানতো। এরপরে আমার অনেক চেষ্টার পর প্রাইমারী স্কুলে জব টা আসে তখন নিজেকে বেশ সুখী লাগছিল.. এখন কাজ একটায় মায়ার বাড়িতে প্রস্তাব পাঠানো আব্বুকে পাঠিয়েছিলাম আমি জব করছি মায়াও করছে এজন্য দ্বীমত আর করেনি আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে আমি পরহেজগারি এক নারীকে পেয়েছিলাম তাকে পবিত্র ভাবে ভালোবাসা। মন ঈমান ঠিক রেখে ধর্য্যসহ অপেক্ষা করা প্রায় ৪বছরভর। এরপরে তাকে বিবাহ করা এ এক প্রাপ্তি! যা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন.. মায়া খুব ধার্মিক মেয়ে। আমরা কখনো হাত ধরিনি। কখনো ফুসকা খায়নি। কখনো রাত জেগে কথা বলিনি। তবুও আমরা একে ওপরকে পেয়েছি। ভালোবাসা মন থেকে আসে। মনের সাথে কানেকশন হয়। যা একটা মেয়ে প্রাপ্তবয়স না হওয়া পর্যন্ত বুঝতে পারেনা আর এজন্য তাকে সময় দিতে হয়। ক্লাস( ৯- ১২) এই শ্রেনীর মেয়েরা কি এমন বোঝে? সংসার? ভালোবাসা? কিছুইনা তারা তো আবেগের মাঝে থাকে। বয়স বাড়লে ভালোবাসাও বাড়ে আর মন থেকে ভালোবাসলে তাকে সময় দিতে হয় যার কারনে আমি মায়াকে পেয়েছি আমার জীবনে…

–আপনিও ভালোবাসুন পবিত্রভাবে! তাহলে সে হবে ধার্মিক মেয়ে। আপনাকে ডাকবে জান্নাতের দিকে! একটা পরহেজগারি নারী তার স্বামীকে জান্নাতের দিকে ডাকে!

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত