শহরের লম্বা লম্বা বাড়ির কোল ঘেসে একটু একটু করে সন্ধ্যা নামছে। বাড়ির নিচে পায়ে চলা রাস্তা খালি পরে আছে। একটু আগেই স্কুলযাত্রি ছেলেমেয়ের দল এই রাস্তা দিয়ে হেটে গেছে। সন্ধ্যা বেলা এদিকটা ফাঁকা হয়ে যায়। তখন কদাতিৎ দুয়েকটা গাড়ির দেখা মিলে। এখন অবশ্য তিনজন মানুষকে হাটতে দেখা যাচ্ছে। দুজন সামনে একজন একটু পিছনে সন্তর্পণে। সামনের দুজন যাতে তার উপস্থিতি বুঝতে না পারে সে জন্য পা টিপে টিপে হাটছে। সেভাবেই হাটতে হাটতে আরো কিছুটা এগিয়ে এলেন ডাঃ আহমেদ। ছেলে-মেয়ে দুটোর কথা বার্তা এখন আবছা শোনা যাচ্ছে।
– ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছঃ, অংকে ২৪, ভুগোলে ১৮, আর জীবনবিজ্ঞানে তো কামাল করে দিয়েছিস.? ১৬..!!!!!
– তো আমি কি করবো, অত বিজ্ঞান সম্মত নাম মনে রাখতে গিয়ে আমি না বাপের নামই ভুলে যাই।
– তাই বলে ১৬.? খাতা তো পুরোটা লাল কালীতে রক্তাক্ত হয়ে গেছে।
– ওই হরিচরন তো একটা ঢ্যামনা। যা লিখি তাই কেটে দেয়। আবার খাতার নিচে লিখে দিয়েছে, ” আপনার ছেলের এ জীবনে আর জীবন বিজ্ঞান পাস করা হবেনা “।
– কেস খেয়েছিস, এ যদি বাড়ির লোকের হাতে পরে.?
– পড়তেই হবে। মন্তব্যের নিচে গার্জেনের সই করে নিয়ে যেতে বলেছে।
– তুই গেলি, জীবনবিজ্ঞানই তোর মরণের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবার।
– মাথায় একটা আইডিয়া আছে।
– কি.?
– তুই আমার বাবার সইটা করে দে।
– আমি.? মেয়েদের হাতের লেখা দেখলেই বুঝা যায়। নিজে করে নে।
– সে তো আমার হাতের লেখা দেখলেও বুঝা যাবে।
– আরেহ কায়দা করে লিখে নেনা। হ্যান্ড রাইটিং এক্সপার্ট আনবে নাকি।
– হুম, তাই করতে হবে। তবে সেটা বাড়িতে করতে গেলে কেস খাবো।
ডাঃ আহমেদ আরেকটু পিছিয়ে এসে হাসলেন। এতক্ষণে আরো অন্ধকার নামতে শুরু করেছে।
– মন দিয়ে একটু পড়াশোনা কর বাবা। এরকম বাবার সই নকল করে কতদিন চলবে।
– উফফফফ, তুইও শুরু করলি।
– হিহিহিহি। আমার চকলেট দে এখন।
ছেলেটার হাতে একটা কাগজ গুজে দিলো মেয়েটা। আবার বলল,
– যদি কাল দেখা না যা হয়.?
– কি আর হবে, আমার একটা চকলেট বেঁচে যাবে।
– ওরে হ্রামি এই করে তুমি পয়সা বাচাচ্ছো.? প্র্যাকটিক্যালে কে তোর ছবি এঁকে দেয় আমি দেখবো।
– ওসব ছবি আমিও আঁকতে পারি।
– ইহহহহ, কি যে আঁকিস আমার জানা আছে। হৃৎপিন্ড দেখে মনে হয় ফোলানো বেলুন।
– মনে প্রেম থাকলে ওরকম হৃৎপিন্ড ফুলে যায়।
– বাবা এত ফোলা প্রেমে.!!!!
– হু যা যা।
– ধুর যা।
একটু পরে দুজনের কেউ সেখানে দাঁড়ালো না। সামনে একটা বড়সড় ফুটবল মাঠ। একটু আলোতে অল্পবয়সী ছেলে খেলা করছে সেখানে। সেদিকেই এগিয়ে গেলো ছেলেটা। মেয়েটা গলি পথে বাড়ির রাস্তা ধরলো। ডাঃ আহমেদও তার পিছে পিছে মাঠের ভিতর এলো এলো। এই মাঠটা তার চেনা। অবশ্য বহুদিন পরে আবার এই অবস্থায় দেখছেন। একটা বেঞ্চে গিয়ে বসে ব্যাগ থেকে পরীক্ষার খাতা বের করলো অর্দ্র। রাফখাতায় কয়েকবার বাবার সইটা প্রাকটিস করলো। নাহ, তাও হচ্ছেনা। হাতের লেখার মধ্যে কেমন একটা কাঁচা ভাব থেকে যাচ্ছে। বসে বসে কপাল ঘামতে লাগল তার, সাথে মাথাটাও গরম হতে লাগল।
– তুমি কি অর্দ্র.?
ঠিক এইসময় পাশ থেকে নিজের নামটা শুনে ফিরে তাকালো। পাশের এসে বসেছে একটা বছর ৩৫ এর লোক। তার মাথা ভরা টাক। চোখে কাল ফ্রেমের চশমা। মুখে অল্প দাড়ি। অর্দ্র তার দিকে তাকিয়ে বলল,
– হ্যা।
– তোমার সইটা কিন্তু আমি করে দিতে পারি।
সেরেছে.! লোকটা কি যানে যে সে সই নকল করতে এসেছে এখানে। অর্দ্র ভাবল এত তাড়াতাড়ি স্যারেন্ডার করলে চলবে না। গলায় ঝাঁঝ এনে বলল,
– আপনাকে কে বলল আমার সই দরকার.?
– তোমার সম্পর্কে সব কিছুই জানি আমি।
বাবা কি তবে টিকটিকি লাগিয়েছে তার পিছনে.? লোকটা কিন্তু চুপ করে থাকলো না। তার দিকে বেশ খানিকটা সরে এসে বলল,
– সে যে সেবার বেড়াতে গিয়ে হোটেলের জানলা দিয়ে লোকের মাথায় হিসি করে দিয়েছিলে।
অর্দ্রর বুকের ভেতর এবার উত্তেজনার স্রোত বয়ে গেলো। এই ঘটনার কথা তো সে নিজে ছাড়া আর কেউ জানেনা। মুখ তুলে লোকটার দিকে তাকালো অর্দ্র তারপর আবার মাথা নামিয়ে নিলো। সাথে সাথে একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলো অর্দ্র, লোকটার বাম হাতে কনিষ্ঠা আঙ্গুকের নিচে ছোট্ট একটা তিল আছে। ঠিক ওইরকম একটা তিল ওর নিজের হাতেও একটা আছে।
– আপনার দাবিটা কি বলুন তো.?(ভারি গলায় বলে অর্দ্র)
– বললাম যে তোমার সব সমস্যার সমাধান আমি করে দিবো। (শান্ত গলায় বলল ডাঃ আহমেদ) শুধু আমার একটা কথা শুনতে হবে।
এতক্ষণে কৌতুহল হল অর্দ্রর। লোকটার তারমানে কিছু উদ্দেশ্য আছে।
– এত উঁচু উঁচু কথা বলছেন, কে বলুনতো আপনি.?
– আমার নাম ডক্টর অর্দ্র আহমেদ।
– সেতো আমারও নাম, তবে ওই ডাক্তারটা নেই।
– তা হয়ে যাবে। কয়েকটা বছর পরেই হয়ে যাবে।
– আমি ডাক্তার হয়ে যাবো.? বয়স তো কম নয় ফাজলামু মারছেন কেন.?
– আমার সঙ্গে তোমার একটাই পার্থক্য, বয়সের।
অর্দ্র মনে মনে কি যেন ভাবলো। সে মিনমিন করে বলল,
– মানে আপনি বলছেন আপনি আর আমি একই মানুষ.?
– হুম একদম তাই। শুধু ২০ বছরের এদিক ওদিক।
হাসতে গিয়েও অর্দ্র হাসতে পারলোনা। বিদেশি সাইন্স ফিকশনে একরকম হয় বটে। কিন্তু সেসব তো গল্প। বাস্তবে এসব অসম্ভব। কিন্তু লোকটা ওর সম্পর্কে এমন কিছু জানে যা ও ছাড়া আর কারো জানার কথা না। সেটাই বা কি করে হয়। অবশ্য লোকটা বলছে জীবনবিজ্ঞানে ১৬ পাওয়া ছেলে একদিন ডাক্তার হবে, ব্যাপারটা ভাবতে খারাপ লাগেনা।
– খাতাটা দাও সই করে দিই।
চুপচাপ খাতাটা এগিয়ে দিলো অর্দ্র। ডাঃ আহমেদ পকেট থেকে পেন বের করে খাতার উপর আঁক কাটলেন। অর্দ্র জোর গলায় বলে উঠলো,
– পেনে কালি পরে কিনা সেটা অন্য কোথায় ঘসে দেখতে পারতেন।
– না না, এটাই আমার সই।
অর্দ্র দেখলো খাতার মধ্যে কেউ থেতলে যাওয়া কেঁচো বা অ্যামিবা আঁকার চেস্টা করেছে।
– আসলে হাতের লেখাটা……
লোকটার কথা এখনও বিশ্বাস হচ্ছেনা অর্দ্রর। হঠাত মনে পড়লো পকেটে কাল রাতের যন্ত্রটা এখনও সজাগ আছে। কাল রাতে জানালা দিয়ে কে যেন ফেলেছিল যন্ত্রটা। তখন জানালার বাহিরে একটা লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল অর্দ্র। অন্ধকারের জন্য চেহারা দেখতে পায়নি অর্দ্র। রাতে কি তবে এই লোকটাই যন্ত্রটা ফেলেছিল.?
– আপনি কি চাইছেন বলুন তো.?
অর্দ্রর মনে কেমন যেন সন্দেহ জাগে।
– আপনি নয়..! আমরা। তুমি আর আমি দুজনেই চাইছি।
– সে যাই হোক, আমরাই বা কি চাইছি.?
লোকটা মাথা নামিয়ে কি যেন ভাবতে লাগলো। যে কথা বলতে চলেছে সেটাই কিভাবে বলবে ভেবে নিচ্ছে। অর্দ্র লোকটার দিকে তাকালো। দূর থেকে এক ছটা আলো এসে পড়েছে লোকটা চকচকে টাকে। অর্দ্রর মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এখন তার মাথা ভর্তি চুল
, একসময় কি তবে….
– রিয়ার সাথে আর মেলামেশা করোনা তুমি।
আচমকা চেনা নামটা কানে আসতেই চমকে উঠলো অর্দ্র। বাদ বাকি কথা ভালো করে শুনতে পেলনা।
– কিহ, কি বললেন.?
– রিয়ার সাথে আর মেলামেশা করোনা, আরো ভালো হয় যদি একেবারে না করো।
– ওহ আচ্ছা, আমি চললাম সইয়ের জন্য ধন্যবাদ।
অর্দ্র উঠে পড়ল। ব্যাগটা পিঠে নিতে নিতে বলল।
– কোনো ভালো ডাক্তারের কাছে গিয়ে নেশাটা ছাড়িয়ে আসুন।
– কাল রাতের যন্ত্রটার কথা বলেছো রিয়াকে.?
অর্দ্র পা বাড়ারে গিয়েও থেমে গেল। সত্যিই বলা হয়নি রিয়াকে। কেন যে বলেনি সেটাও ও নিজেও জানেনা।
– ওহ, তাহলে আপনি কাল রাতে ওটা ছুড়েছেন.?
মাথা নাড়লেন ডাঃ আহমেদ। বেঞ্চে পাশের যায়গাটা দেখিয়ে দিয়ে বলল,
– রাগ করোনা, এখানে বসো। এরকম সুযোগ সবাই পায়না।
– কিসের সুযোগ.?
– নিজের জীবনটা পাল্টানোর। নিজের ভুল গুলো শুধরানোর।
অর্দ্র কি যেন ভেবে চলেছে। ধরে নেওয়া যাক লোকটা যা বলেছে সব সত্যি। তাহলে তার জীবনে সব আগে থেকেই ঘটে গেছে । তাহলে এরকম সুযোগ সত্যি কেউই পায়না।
– না, আপনি ভবিষ্যৎ থেকে এসেছেন মানে ঘটনা এর মধ্যেই ঘটে গেছে।
– হুম ঘটেছে আমার জন্য, তোমার জন্য নয়।
– কিন্তু আপনি বললেন যে আমরা একই মানুষ।
ডাঃ আহমেদ হাসলেন, ছেলেটার পিঠে একটা হাত রেখে বললেন,
– কি করে তোমায় বোঝায় বলোতো। আচ্ছা দেখো সৃষ্টির শুরু থেকে আমাদের হাতে দুটো জিনিস ছিল, এক মহাবিশ্ব আরেকটা হলো সময়। তোমরা যে থ্রিডি সিনেমা দেখো মহাবিশ্ব হলো থ্রিডি। যাকে ধরাছোঁয়া যায় অনুভব করা যায়। আবার সময় হলো ওয়ানডি। যাকে ধরাছোঁয়া যায়না সে শুধু আছে তার প্রমান পাওয়া যায়। তোমার মাথার চুল আর আমার মাথার টাক দেখে। এই দুটো মিলেমিশে আছে আমাদের চারপাশ। দুয়ে মিলে মোট ফোরডি। এই স্পেস আর টাইম এর মাঝে আবার কিছু সাঁকো আছে।
– মানে, মানে ব্রিজ.? যা দিয়ে মানুষ পার হয়।
– একদম, কিন্তু এই ব্রিজ দিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা নয়, এক সময় থেকে আরেক সময়ে যাওয়া যায়।
– আর সেখান থেকেই এসেছেন আপনি.?
– হ্যা।
– আমি যেতে পারবোনা সেখানে.?
– একদিন নিশ্চয় যাবে। কিন্তু আমি যে কথা বললাম সেটা মনে রেখো। ওর সাথে আর মিশোনা।
– কেনো.? কি হবে তাতে.?
– ভালো কিছু হবেনা।
– আমি তোমার খারাপ চাইনা। নিজের খারাপ পাগলেও চায়না।
দু মিনিট কিছু একটা ভেবে নিলো অর্দ্র। তারপর পকেট থেকে বের করে আনল কাল রাতের যন্ত্রটা। সেটার দিকে তাকিয়ে টাক মাথা ডাঃ স্মিত হাসলেন।
– ওটায় যে সংখ্যাটা দেখতে পাচ্ছো সেটা একজনের থেকে তুমি কত দূরে আছো সেটা দেখাচ্ছে।
– কার থেকে.?
– শোনো অর্দ্র, কি করলে তোমার ভালো হবে সেটা আমি জানিনা, কিন্তু কি করলে তোমার খারাপ হববে সেটা জানি। কাল আবার এসো মাঠের এই খানে আমিও চলে আসবো।
– সে দেখা যাবে কিন্তু কারণটা বললেন না আপনি।
– যদি একান্তই মানতে না চাও তাহলে বলবো কারণটা। তবে সেটা না বলাই ভালো। চলি আজ।
খানিকটা হেটে অন্ধাকারে মিলিয়ে গেল লোকটা। একটু আগে রিয়ার দেয়া কাগজটা ব্যাগের সামনের চেনে রাখা আছে। সেটা বের করে মুখের সামনে ধরলো সে। মার্কারি পেপারে জীর্ণ আলোতেও চিনে নিতে পারলো অক্ষর কয়টা। AB/22 (AB বাই 22)।
লাইব্রেরী থেকে বই হাতে বেরিয়ে থমকে দাঁড়ালো অর্দ্র। বইয়ের ভিতর একটা ভাঁজ দেখলো। মনে মনে হাসলো। তারপর সেই ভাঁজের মধ্যে থেকে একটা কাগজ পকেটে চালান করে দিল। একটু দুরেই দাঁড়িয়ে আছে রিয়া। এই মুহুর্তে তাকে যেন চিনতেই পারছেনা। অর্দ্র রিয়ার কাছে গেলো। হাতের বইটা তুলে ধরে বলল,
– এত বই থাকতে ট্রেজার আইল্যান্ড.? অন্য কারো হাতে পড়লে।
– ধুস, ওসব আর কেউ পড়েনা।
বই থেকে বের করা কাগজটা আরেকবার দেখল অর্দ্র, বলল,
– তিন জায়গায় বানান ভুল আছে, কোনোদিনো ওটা ো নয় ও হবে। ভালোবাশা ওটা শ নয় স হবে। এই বাসা মানে হলো বাড়ি। প্রেমপত্রও লিখতে শিখলি না।
– এই তোর পকেটে ওটা কি রে।
এতক্ষণ অর্দ্র খেয়াল করেনি যন্ত্রটা থাকার জন্য পকেটটা বেশ ফুলে আছে। মুহুর্তে সে ভেবে নিল কথা বলা যাবে নাকি যাবেনা। ধীরে সুস্থে সেটা পকেট থেকে বের করে বলল,
– এই দেখ।(@ [100026502172929:])
যন্ত্রটা এখন চালানো নেই। ফলে স্ক্রিনের উপর কোনো সংখ্যা দেখা যাচ্ছেনা। সেটাকে ভালো করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রিয়া বলল,
– কি হয় এটা দিয়ে।
– আমিও ঠিক জানিনা।
– সে কি.!! তাইলে নিয়ে কি করছিস.?
– কিছুইনা, কুড়িয়ে পেয়েছিলাম।
স্ক্রিনের ঠিক নিচেই বড় বোতামটা চোখে পড়তেই সেটাকে টিপে দিলো রিয়া। সাথে সাথে জলজলে সংখ্যা ফুটে উঠলো স্ক্রিনে। অবাক চোখে সেদিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
– এই নম্বরগুলো কি বলতো।
অর্দ্র দেখলো নম্বরগুলো ১০০০ এর মধ্যে ঘুরাঘুরি করছে। অর্থ্যাৎ এক কিলোমিটারের মধ্যেই আছে সে। মুখে কিছু বলল না অর্দ্র। কি রকম যেন অস্বস্তি শুরু হয়েছে।
– এইটা নাড়ালে নম্বরগুলো বদলাচ্ছে। ( বিড়বিড় করে বলল রিয়া) তারপর বলল,
– এই মনে হচ্ছে যন্ত্রটা যার তার থেকে আমাদের দুরত্ব বোঝাচ্ছে। ভাড়ি মজার জিনিস তো।
অর্দ্র মুখের হাসি শুকিয়ে গেছে। সে এখন কোনোরকমে বাড়ি যেতে পারলে বাঁচে। জিনিসটা আগে ফেলে দিলেই ভালো হত।
– চল খুজে দেখি, বেশি দূর তো নয় ফেরত দিয়ে আসবো।
– না না তুই কেন যাবি আমি নিজেই গিয়ে ফেরত দিয়ে আসবো।
– কেন.? আমি গেলে কি হবে তোর.? সম্মান যাবে.?
অর্দ্র আর কিছু বলল না। কারণ কিছু বলে আর লাভ হবেনা বরং রিয়ার জিদ বেড়ে যাবে।
মেয়েটার কাছে যন্ত্রটা নিয়ে যাবে সে হয়তো যন্ত্রটা নিবেনা। এখন রিয়ার কেমন লাগবে সেটাই বড় কথা। খোলা রোদে দুপুরের রাস্তায় হাটতে লাগল। তাড়াতাড়ি হবে আর লোকে দেখার সম্ভাবনা কম থাকায় মেন রাস্তায় উঠেনি ওরা।
হাটতে হাটতে অর্দ্রর কালকের লোকটার কথা মনে পড়লো। সে-ই যত নস্টের গোড়া। কোথাকার কে হনু সে ঠিক করে দিবে সে কার সাথে মিশবে কি মিশবেনা।
যন্ত্রের সংখ্যাটা ৫০ এর কাছে নেমে আসতেই ওরা একটা বড়সড় পুকুর পাড়ে পৌছালো। পুকুরের পাড় জুরে লম্বা পার্ক করা করা আছে। সেখানেইই বসে আছে আছে ছোট – বড় – মাঝবয়সী মানুষ গুলো। যন্ত্রটা নিয়ে রিয়া একপা একপা করে এগিয়ে যেতে লাগলো। আর ১৫ মিটার।
– ওই মেয়েটা মনে হচ্ছেনা, দেখ বসে আছে ওই মেয়েটা।
অর্দ্র কিছুই বলতে পারলনা।
– আয় দেখি আমার সাথে। দেখি জিজ্ঞাসা করি এটা ওরই কিনা.?
অর্দ্র কথা বলল না। জিনিসটা যে মেয়েটার নয় সেটা তার থেকে ভালো কে জানে.? জিনিসটা যেহেতু মেয়েটার নয় সেহেতু সে নিতে চাইবেনা। তারপর কি হবে.?
– আরেহ এইটা তো আমার। তুমি পেলে কি করে.?
চেনা গলা শুনে চোখ তুলে তাকালো অর্দ্র। গলাটা তার নিজের। শুধু একটু বয়সের ছাপ। কালকের লোকটা দাঁড়িয়ে আছে রিয়ার সামনে।
– পড়ে গিয়েছিল। ওই যে ও কুড়িয়ে পেয়েছে।
ডাঃ আহমেদ রিয়ার মাথায় এক হাত রাখলেন। এর মধ্যেই চোখ থেকে গরিয়ে পড়লো জল। রিয়া অবাক হয়ে গেলো।
– অনেকদিন দেখিনা তোমায়।
– আপনি.? আমাকে.? আগে দেখেছেন.?
– হ্যা অনেকবার।
– রিয়া অবাক চোখে একবার ডঃ এর দিকে একবার অর্দ্রর দিকে তাকাল। তারপর অর্দ্রর দিকে এগিয়ে এগিয়ে গেলো।
– চল বাড়ি যাই, সন্ধ্যা নামবে এখন।
– একটু পরে যাও, আমার কিছু কথা আছে।
– হ্যা, কি বলুন।
– তোমার সাথে না ওর সাথে।
অর্দ্র এতক্ষণ কোনো কথা বলেনি তার সাথে যে লোকটার কি দরকার সেটাই ভেবে পেলোনা।
ডাঃ আহমেদ অর্দ্রর কাঁধে একটা হাত রেখে বললেন,
– ও এখানে থাকুক, আমরা বরং ওই বেঞ্চিতে যাই।
ওরা একটু দূরে এসে একটা বেঞ্চে রেখে দিলো।
– তাড়াতাড়ি বলুন, আমার বাড়ি যেতে হবে, আর আপনার এই যন্ত্রটা আপনার কাছেই রেখে দেন।
– ও জিনিসটা কয়েকদিন হলো আবিষ্কৃত হয়েছে। আর এটা দিয়ে কি হয় সেটা তো জানোই।
– কিছুটা।
অর্দ্র দূরে তাকিয়ে দেখলো রিয়া হাওয়াই-মিঠাই কিনছে।
– দেখে নাও, সারাজীবন আর এরকম থাকবেনা।
অর্দ্র আর কিছু না বলে বেঞ্চ থেকে উঠে যেতে যাচ্ছিল। ডাঃ তার হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বললেন,
– দাড়াও, তোমাকে কেন কথাটা বলেছিলাম জেনে যাও।
পকেট থেকে একটা ছবি বের করে অর্দ্রর দিকে দিয়ে বললেন,
– আমি কিন্তু আগে কথাটা বলতে চাইনি, যাইহোক এটা দেখো।
ছবিটা হাতে নিয়ে অর্দ্র দেখলো ছবিটা একটা মানুষের। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে বোঝা যায় ছবিটা একটা মহিলার। কোনো মরণ রোগের আক্রমণে মুখটা রক্তশুন্য। সেখানে মাঝে মাঝে চামড়া ফাটা দাগ। চোখের উপর থেকে ভ্রুর রেখা উধাও।
– কে ইনি.?
ডাঃ আহমেদ উত্তর দিলেন না। তার চোখ দুটো এখনও তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে। বিস্ময়,যন্ত্রনা আর শুন্যতা খেলা করছে সেই চোখে।
– ৪ বছর হলো ওর ক্যান্সার ধরা পড়েছে।
কাঁপা কাঁপা হাতে ছবিটা কয়েকবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল অর্দ্র। নাহ, কোনো মিল নেই মুখে। এতটুকু মিল নেই। হতেই পারেনা মিথ্যে বলছে লোকটা।
– যে যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে আমি গেছি, আমি চাইনা সেটা তুমি আবার ভোগ করো।
অর্দ্র কোনো উত্তর দিলোনা। তার কানটা ধীরে ধীরে লাল হয়ে চলেছে। ডাঃ বলেই চলেছেন,
– তুমি আজ যা ভাবো আজ থেকে ১৫ বছর আগে আমিও ঠিক তাই ভাবতাম। কিন্তু বিশ্বাস করো যেদিন আমার জুতোয় পা গলাবে সেদিন বুঝবে যন্ত্রনাটা কি! এখন ও তোমার বন্ধু এখন কস্টটা অনেক কম হবে। ১৫ বছর এক সাথে কাটানোর পর….
– ঘটনা যে ঘটবেই আপনি জানলেন কেমন করে.?
– কারণ ঘটেছে এই ঘটনা।
দু হাতে মুখটা ঢেকে নিলো অর্দ্র। হাতের ফাক দিয়ে শব্দ বেড়িয়ে এলো।
– আমি, আমি, আমি ওকে ছেড়ে যাবোনা। আপনি চলে যান এখান থেকে।
– জানতাম, সব জানার পরও তুমি এটাই বলবে। এক কাজ করো তুমি বরং উত্তরটা ওর কাছেই জিজ্ঞেস করো।
– ওকে বলবো.? আপনি পাগল.?
– আমি কি বলেছি সেটা বলতে হবেনা শুধু জিজ্ঞেস করো ওর মতামতটা কি.?
– আপনি এখনও চিনতে পারেননি ওকে।
– তাই নাকি.? আমি চিনিনি.? আমাকে তোমার কাছে ওই-ই পাঠিয়েছে। আমি আসতে চাইনি।
– রিয়া পাঠিয়েছে আপনাকে.?
– হুম, ও চায়নি একই যন্ত্রনা তুমি দ্বিতীয়বার পাও। সুযোগ যখন আছে ভেবে দেখো। কাল এই মাঠে দেখা হবে আবার। হয়তো শেষবার। চলি এখন।
ডাঃ আহমেদ চলে যেতে উঠে দাড়ালো অর্দ্র। এখনও হাজার লোকের মেলা মাঠে। অথচ রিয়া ছাড়া আর কাউকে চোখে পড়ছেনা ওর। সে হাওয়াই-মিঠাই হাতে ধরে তাকিয়ে আছে অর্দ্রর হেটে আসা শরীরের দিকে।
কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করলো,
– এই, কিসের ছবি দেখাচ্ছিলো তোকে.? মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজছে.?
অর্দ্র বসে পড়ল। তারপর অবশিষ্ট হাওয়াই-মিঠাই নিয়ে নিলো রিয়ার হাত থেকে। তারপর সেটাই কামড় দিতে দিতে বলল,
-লোকটার জন্য খারাপ লাগছে।
– কেন.?
– ওর স্ত্রীর ক্যান্সার ধরা পড়েছে।
– এ বাবা।
এই প্রথম রিয়ার চোখেমুখে সন্ধ্যার আধার নেমে এলো।
– আমি ভাবছি লোকটা যদি আগে থেকে জানতো যে এরকম কিছু একটা হবে তাহলে…
– মানে.?
– ধর যার শারীরিক যন্ত্রনা পাবার সেতো পাবেই, তাকে যারা ভালোবাসে তাদের যন্ত্রনা আবার অন্য যায়গায়। দুটো মানুষের কস্ট পাওয়ার থেকে একজনের কস্ট পাওয়া ভালোনা.?
– উমমম, আমারও তাই মনে হয়।
– আচ্ছা তুই থাকলে কি করতি.?
প্রশ্নটা করতে আর একটুও সময় নিলোনা অর্দ্র।
– জিন্দেগি কা সফর এ কাইছা সফর।
– ধুর, ইয়ার্কি মারছিনা।
– ওহ মারছিস না.? তাহলে ভাবতে দে।
রিয়াকে দেখে মনে হলো সত্যি সত্যি ও কিছু একটা ভাবছে। কিছুক্ষণ উদাস মনে চুপ করে থেকে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো ওর চোখমুখ।
– মনে পড়েছে, র্যাক নম্বর BP বাই 17। ৭২ পাতা।
– সে কি.!! আমি তো এইমাত্র প্রশ্নটা করলাম তোকে।
– তাতে কি.? আমি আগে থেকে রেখে দিয়েছি।
– কি করে.?
– জানিসনা আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই। এই যেমন দেখতে পাচ্ছি তিন মিনিটের মধ্যে তুই আমাকে একটা চকলেট দিবি।
অর্দ্র অবাক হয়ে পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে দিলো।
– লাইব্রেরী তো এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
– তাতে কি কাল খুলবে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। বেশি দেরি করলে বাড়িতে সমস্যা হবে।
– চল, আর হেটে ফিরবোনা।
রিয়াও উঠে গেল ওর সাথে।
– সরে আয় ওদিক থেকে।
রিয়ার হাত ধরে মেইনরোড থেকে ফুটপাতে নিয়ে এলো অর্দ্র। আর ছাড়লো না হাতটা।
আজকের বিকেলটা একটু অন্য রকম। সূর্য্যটা ডুবে যাওয়ার কোনো তাড়া দেখাচ্ছে না। মাঠ থেকে ছোটছোট ছেলের ভাসানো চিৎকার শুনা যাচ্ছে। তার থেকে অনেক দূরে নির্জনে বসে আছে দুটি ছায়া মূর্তি। তাদের দুজনেরই চোখ মাটির দিকে।
– তোমার সিদ্ধান্তটা কি.?
– সিদ্ধান্ত তো আমার না, আপনি তো ওর মতামত নিতে বলেছিলেন।
– হ্যা, কি বলেছে ও।
– বলেছিল, BP/17, ৭২ পাতা।
– তার মানে.?
– ভুলে গেছেন দেখছি। পাড়ার লাইব্রেরীর একটা বইয়ের দুটো পাতার মাঝের একটা যায়গা। ওর গোপন কিছু বলার থাকলে কাগজে লিখে বইয়ের মাঝে রেখে আসে। আমাকে খালি পাতার নাম্বারটা বলে।
– উম, তারপর কাগজটাই কি লিখা ছিল।
– কোনো কাগজ ছিলোনা ওখানে, ফঁাকা।
ডাঃ আহমেদ এর মুখে একটা করুণ হাসি খেলে গেলো। অর্দ্রর পিঠে একটা হাত রেখে বললেন,
– আজ অল্প কস্টের সাথে যদি মানিয়ে নাও তাহলে আর ভয়ানক কস্ট পেতে হবেনা।
– হুম। ঠিকি বলেছেন আপনি।
– হুম, তোমার আর কিছু জানার থাকলে বলো, আমি সাহায্য করলে খারাপ কিছু হবেনা।
– সত্যি বলছেন.?
– সত্যি, বলো আর কি জানতে চাও।
– আমি জানতে চাই যে….
– হুম।
– উমমম আপনি বিদেয় হচ্ছেন কখন পার্মানেন্টলী.? রিয়ার সাথে দেখা করার আছে আধ ঘন্টা পরে।
– মানে.? ও তো উত্তর দিয়ে দিয়েছে, কাগজ না থাকার অর্থ বুঝোনা.?
– প্রথমে বুঝেছিলাম তারপর দেখলাম বইয়ের ওই পাতায় একটা কবিতা লেখা আছে। সঙখ ঘোসের লেখা কবিতা। সেটা পড়ে বুঝলাম আমাকে হাতে লেখা কাগজ নয় ওই পাতাটা দেখাতে চেয়েছে। এই যে দেখুন ছিঁড়ে এনেছি।
– কবিতা.? যাইহোক পড়ে শোনাও চশমা নেই আমার কাছে।
ছোট কাগজটা খুলে ধরে পড়তে লাগলো অর্দ্র।
– ” হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয়,
সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়,
একথাটা খুব সহজ কিন্তু কে না জানে,
সহজ কথা ঠিক ততটা সহজ নয়,
পায়ের ভিতর মাতাল আমার পায়ের নিচে মাতাল,
এই মদের কাছে সবাই ঋণী।
ঝলমলে রোদ দুপুর বেলা ও সঙ্গে থাকে, হা করা ওই গঙ্গাতীরের চণ্ডালীনী,
সেই সনাতন ভরসাহীনা, অশ্রুহীনা,
তুমি আমার সব সময়ের সঙ্গীনীনা।
তুমি আমায় সুখ দেবে তা সহজ নয়,
তুমি আমায় দুঃখ দেবে সহজ নয়”।
– এই কবিতা পড়েই মাথা ঘুরে গেল তোমার.?
ডাঃ আহমেদ গর্জে উঠলেন।
– ক্যান্সার কাকে বলে বোঝনি এখনও। বোঝার বয়স হয়নি তোমার।
– নাহ, বুঝিনা, জীবন বিজ্ঞানে তো বরাবরই কাঁচা। আমি ইতিহাসে বেশি নম্বর পাই। আর ইতিহাস মানেই ছোট ছোট মানুষের হার না মানার গল্প। লড়াইয়ের গল্প। ইতিহাস মানে প্রবল দাঙ্গার সময় যে মুসলমাল লোকটা কোনো হিন্দু মেয়েকে জীবন দিয়ে বাঁচিয়েছিল বা উল্টটা। আপনি কবে ভুলে গেলেন অর্দ্র সাহেব যে জীবন মানে শুধু সুখ আর নিরাপত্তার খোঁজ করা নয়। শুধু ভালো থাকার জন্য বেঁচে থাকা যায়না। ভালোবাসা কিন্তু দন্ত্য-স নয়, তালব্য-শ। ভুল কিন্তু ভুলটাই ঠিক। আমি জানি আজ আমি ভুল করছি। আমি জানি রিয়া সারাজীবন আমার কাছে থাকবেনা। যুদ্ধের শেষে একদিন আমি ঠিক হেরে যাবো। কিন্তু যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালাবোনা আমি। আপনিও পালাবেন না, ফিরে যান।
– ভুল করলে তুমি, একটা বয়সে গিয়ে পস্তাবে।
ডাঃ আহমেদ উঠে পড়লেন। অন্ধকারেও তার চোখ দুটো রাগে জ্বলছে। সেটা অর্দ্রর ভবিষ্যৎ যন্ত্রনার কথা ভেবে নাকি এইটুকু ছেলের স্পর্ধায় তা বোঝা যায়না। লোহার বেঞ্চের উপর একটা ঘুসি মারলেন তিনি। আর সেখানে দাড়ালেন না।
অর্দ্র মাঠ থেকে বেড়িয়ে পড়লো। কাগজটা এখনও তার হাতে। ল্যাম্পপোস্টা খারাপ হয়েছে। জ্বলছেনা সেটা। শরীরের গভিরে অন্ধকার ঢুকে পড়েছে। একটু পরে রিয়া এসে দাঁড়াবে এখানে। একটু দুরেই মাটির উপর তার পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। চোখের পাতা ফেলার শব্দ, হাওয়ায় মৃদু কম্পন। আজ সন্ধ্যায় অর্দ্রর সমস্ত ইন্দ্রীয় বেশি সজাগ হয়ে উঠেছে।
– কি হে ডাক্তার সাহেব আজ আগে আগে এসে দাঁড়িয়ে আছো যে।
সামনে থেলে ভেসে এলো কৌতুকটা। কৌতুককারকে দেখা গেলোনা।
– আমি ঠিক সময়েই এসেছি, তুই দেরি করেছিস।
– আর জায়গা পেলিনা। উফফফ কি অন্ধকার এখানটা।
– মুন্ডুটা উপরে তোল, চাঁদ উঠেছে আজ, আমিতো বেশ দেখতে পাচ্ছি তোকে।
– এখন পাচ্ছিস, রাতের দিকে এতটা রাস্তা হেটে ফিরতে হবে।
– তোহ, ভয় করবে তোর.?
– নাহ, এভাবে ভয় লাগেনা আমার।
– আমারও।
ফিকে অন্ধকারে দুটো মানুষ আরো কাছে সরে এলো। সামনে অনেকটা রাস্তা খালি পড়ে আছে। লোকজন কিচ্ছু নেই। শুধু সোজা রাস্তা চাঁদের আলো মেঘে শুয়ে আছে। রাস্তার উপর দিয়ে নিঃশব্দে হাটতে লাগলো দুজন।
পৃথিবীর বহু রহস্যের এখনও সমাধান হয়নি। এটা তার মধ্যে একটা। সব জেনে শুনে নির্ধিধায় আমরা একটা ট্র্যাজিক নাটকের নায়ক-নায়িকা হয়ে উঠি। শুধু মাত্র পার্শচরিত্র দেখে।