নুসরাতঃভাইয়া ঘুরতে যাবো,দ্রুত তোমার বাইক টা নিয়ে আমাদের বাসার সামনে চলে আসো,,,,
ইমনঃআজ শুক্রবার,ছুটির দিন তো,ঘুমুচ্ছি,,,,
নুসরাতঃভাইয়া না করো না প্লিজ,আমার অনেক ইচ্ছা নৌকা বাইচ দেখবো কিন্তু কেউ নিয়ে যায় না,,,,
ইমনঃওহহহহ রে আজকে তো নৌকা বাইচ,,আমার তো মনেই ছিলো না,,,,তুই রেডি হয়ে নে,,আমি আসছি,,,
ইমনঃহ্যালো নুসু তুই কই???আমি তোদের বাসার সামনে এসে বসে আছি,,,
নুসরাতঃনুসরাত বলো,,,নুসু বল্লা কেন???আমি যাবো না,,,,
ইমনঃওকে সরি,,,তাড়াতাড়ি আসেন ম্যাম,,,
ওরা দুজন চলছে বাইকে নৌকা বাইচ দেখতে,,,এর ফাকে ওদের দুজনের পরিচয়টা দিয়ে নেই,,,
নুসরাত হচ্ছে ইমনের ফুফাতো বোন,,,,
ইমন পড়াশোনা করে অনার্স ৩য় বর্ষ আর নুসরাত ইন্টার ২য় বর্ষ,,,
ইমন নুসরাতের চেয়ে বয়সে বড় হলেও ওদের ছিলো বন্ধু সূলভ আচরণ,,,,
নুসরাত ইমন কে খুব ভালোবাসে কিন্তু বলতে পারে না,,,
আর ইমন শুধু নুসরাত কে রাগানোর জন্যই লেগে থাকে,,,,
নুসরাত কে নুসু বল্লে খুব রেগে যায় তাই ইমন নুসরাতকে নুসু বলেই ঢাকে,,,,
ওরা দুজন মামাতো-ফুফাতো ভাই বোন হলেও ওদের দুই পরিবারের মাঝে ছিলো দ্বন্দ্ব,,,,
দ্বন্দের কারণ টা হলো,ইমনের ফুফু মানে নুসরাতের মা নুসরাতের বাবাকে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করে,,,
পালিয়ে বিয়ে করাটা মেনে নিতে পারে নি ইমনের দাদা,তাই তার মেয়েকে সে বাড়ি থেকে বের করে দেয়,,,,
কোন যোগাযোগ নেই নুসরাত আর ইমনের পরিবারের মাঝে,,,
নুসরাত আর ইমন যে দেখা করে একজন ছাড়া আর কেউ জানে না,,,,
সেই একজন টা হচ্ছে ইমনের দাদী মানে নুসরাতের নানী,,,,
আমি এসব বলতে বলতে নুসরাত আর ইমন চলে গেলো নৌকা বাইচ দেখতে।দুজন বসে বসে নৌকা বাইচ দেখছে আর বাদাম খাচ্ছে,,,
এসময় নুসরাত বলে ওঠলো,,,
নুসরাতঃভাইয়া আমাদের দুই পরিবারকি কখনো এক হবে না???
ইমনঃজানি নারে,,,,দাদু হয়তো রাগ করে না হয় ফুফিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তাই বলে কি দাদু মারা গেলো ফুফি দেখতেও আসলো না,,,
জানিস নুসু আমার খুব খারাপ লাগে,আমার একটা মাত্র ফুফি আর তার সাথেও কোন যোগাযোগ নেই,,,,,
নুসরাতঃভাইয়া আমরা কি ভালোবাসা(মুখ দিয়ে ফসকে ভালোবাসাটা বের হয়ে যায়) দিয়ে জয় করে দুই পরিবারকে এক করতে পারি না???
ইমনঃইমন অবাক হয়ে বলে, ভালোবাসা মানে,,কাকে ভালোবাসবো,,,
নুসরাতঃনা না ভাইয়া আমাকে ভালোবাসতে বলি নি,,,পরিবারে ভালোবেসে এক করা বলছিলাম,,,,
ইমনঃওকে,পাকামো করতে হবে না,,চল বাসায় চলে যাই,,সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে,,,
নুসরাতঃওকে চলো,,,
ইমন বাইক চালাচ্ছে আর নুসরাত ইমনকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে,,,,
ইমন নুসরাতকে নুসরাতের বাসার সামনে রেখে দিয়ে ইমন বাইক নিয়ে চলে গেলো,,,
বেলকুনি থেকে নুসরাতের মা দেখতে পেলো একটা ছেলের বাইক থেকে নামছে তার মেয়ে,,,
নুসরাতের মাঃছেলেটা কে???
নুসরাতঃআমার বন্ধু(ভয়ে ভয়ে বলে,,,যদি ইমনের পরিচয় তার মা জেনে যায় তাহলে তাকে মেরে ফেলবে)
নুসরাতের মাঃআর যেনো অপরিচিত কোনো ছেলের সাথে তোকে না দেখি,,,
নুসরাত তার মায়ের সামনে থেকে চলে গেলো,,
নুসরাতের মা ইমনকে চিনে না কিন্তু একটু একটু চেহেরা টা মনে আছে,,,কারণ নুসরাতের মাকে যখন ইমনের দাদু বাসা থেকে বের করে দেয় তখন ইমনের বয়স ছিলো ৫বছর,,,,,
ইমন বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তার দাদী সামনে বসে আলাপ করছে,,,
ইমনঃদাদী ফুফিকে এখন মেনে নেয়া যায় না???
দাদীঃআমি কি বলবো রে দাদু???তোর দাদর খুব রাগ ছিলো সে মেনে নিতে পারে নি আর এখন তোর বাবাই মেনে নিলে নিতে পারে,,,,
ইমনঃতুমি বাবাকে বুঝাও,,,
দাদীঃওকে,,চেষ্ট করবো আর তোর ফুফির মুখ টা আমি অনেক দিন হলো দেখি না আর ওর মেয়েটাকেও দেখি নি,,,
এসব বলে ইমনের দাদী কান্না করছে আর ইমনও,,,,
এদিকে নুসরাত ওর আম্মুকে বলছে,,,
নুসরাতঃআম্মু আমার কি নানু বাড়ি নাই???
মাঃনা নেই আর থাকলেও কোনদিন যাওয়া হবপ না,,,
নুসরাতঃ আমি সব জানি মা,নানু বাড়িদের সাথে তোমার কি হয়েছে,,,নানু হয়তো ভুল করেছিলো এখন তো দু পরিবার এক হতে পারো,,,
মাঃতুই এসব কোথা থেকে শুনলি???
আর কোনদিন আমি ঐ বাড়িতে যেতে পারবো না,,,,
নুসরাতঃশুনেছি একজনের কাছ থেকে,,,,
মা পারলে এক হয়ে যাও,,,
নুসরাত এই বলে তার মার কাছ থেকে চলো গেলো,,,,
আর এদিকে চলছে ইমন-নুসরাতের গভীর প্রেম,,,নুসরাত আগে থেকেই ইমনকে ভালেবাসতো কিন্তু ইমন ভালোবাসতো না তবে নুসরাতের ভালোবাসার ফলে ইমনও ধীরে ধীরে নুসরাতকে ভালোবেসে ফেলে,,,,
একদিন ইমন আর নুসরাত পার্কে বসে গাঁয়ের সাথে গাঁ ঘেষে বসে আছে এবং আলাপ করছে,,,,,
বলতে গেলে খুবই রোমান্টিক মোডে আছে,,,,
ওদের রোমান্টিক দৃশ্য দেখে ফেলেছে নুসরাতের চাচ্চু আর ইমনের আব্বু,,,,
ওরা পার্কে থেকে সন্ধ্যায় চলে আসে বাসায়,,,
নুসরাতকে ওর আম্মু ডাকছে,,,,,,
নুসরাত গিয়ে দেখে ওর চাচ্চু,বাবা,মা বসে আছে,,,
চাচ্চুঃকোন ছেলের সাথে পার্কে বসেছিলি???
নুসরাতঃইমনের সাথে(কেপে কেপে বলে)
চাচ্চুঃকোন ইমন??বাসা কোথায়???
নুসরাতঃসাহস নিয়ে বলে আমার একমাত্র মামার ছেলে ইমনের সাথে,,,আর আমি ওরে খুব ভালোও বাসি,,, আমি ওরে ছাড়া বাচবো না,,,,
নুসরাতের মা, বাবা,চাচ্চু সবাইতো শুনে হতবাক,এবং নুসরাতের বাবার মাথায় রাগ ওঠে যায়,,,,নুসরাতের মাকে কিছু না বলে নুসরাতের বাবা ইমনকে মারার প্লান করে,,,,
নুসরাতের বাবা তার অপমানের প্রতিশোধ নিবে যে ভাবে তাকে তার শ্বশুর অপমান করেছিলো ২০বছর আগে আজও তার মনে আছে,,,,
এদিকে ইমনের পরিবারও জেনে যায় ইমন তার ফুফির মেয়ে নুসরাতে কে ভালোবেসে ফেলেছে,একথা শুনে ইমনের বাবার মাথায় ও আগুন জ্বলে যায়,,,,
তারা দু পরিবার মগ্ন হয়ে আছে প্রতিশোধ নিতে রক্ত দিয়ে,,,,,
এদিকে নুসরাত আর ইমনকে ঘরে আটকিয়ে রেখেছে তাদের পরিবার,,,,
নুসরাত একদিন ইমনকে অনেক কষ্ট করে ল্যান্ড ফোন থেকে কল দেয়,,,,
নুসরাতঃকেদে বলে আমাকে বদ্ধ রুম থেকে আমাকে নিয়ে চলো,,,
ইমনঃচিন্তা করো না,,,আর শুনো শনিবারে ভোর ৫টায় বাসস্ট্যান্ডে চলে আসবা আমরা পালিয়ে যাবো,,,,
অবশেষে শনিবার সকালে নুসরাত বিভিন্ন কৌশলে বাসা থেকে পালিয়ে চলে এলো ইমনের কাছে,,,
তারা পালিয়ে যাবার উদ্দেশে বাস-স্ট্যান্ডে চলে গেলো,,,
এদিকে নুসরাত আর ইমনকে না পেয়ে তাদের পরিবারের লোকজন তাদের খোজতে লাগলো,,,
নুসরাতের বাবা আর তার চাচা তাদের খোজে পাওয়া মাত্র প্রচন্ড রাগে নুসরাতের চাচা তার ছোরা টা ইমনের দিকে নিক্ষেপ করলো প্রতিশোধ নেয়ার জন্য,,,,,,
কিন্তু ছোরাটা লাগালো নুসরাতের বুকে,,,,,
এই ঘটনা দেখে নুসরাতের বুক থেকে ছোরা টা খুলে নিজের বুকেই বসিয়ে দিলো ইমন,,,
নুসরাতের চাচ্চুর নয়নের মনি ছিলো নুসরাত,,,নিজের হাতে তার নয়নের মনি কে খুন করে নিজেও চলে গেলো পরপারে,,,,
দুই পরিবারের অভিমানের জন্য চলে গেলো দুটি তাজা প্রাণ আরও চলে গেলো নুসরাতের চাচা,,,,
এখন আর তাদের দুই পরিবারের মাঝে নেই কোন দ্বন্দ্ব-দ্বীধা,,,,,,
নুসরাত-ইমনের ভালোবাসার দৃষ্টান্ত দেখে তাদের দুই পরিবার এক হয়ে যায়,,,,
আজ ৩বছর পরে দুই পরিবার মিলে নুসরাত,ইমন এবং নুসরাতের কাকার কবর জিয়ারত করতে আসছে,,,,
কান্নায় ভেঙ্গে পরছে সবাই,,,,এখন আর হাজার কান্না করলেও ফিরে আসবে না নুসরাত-ইমন,,,
তবে তাদের রক্তের বিনিময়ে মিলিত হয়েছে দুটি পরিবার,,,,,
(গল্প টা সম্পূর্ণই কাল্পনিক, আমরা চাই না আমাদের জীবনে এই রকম ঘটনা ঘটে যাক)