নতুন সুর

নতুন সুর

বিয়ের খইদান পর্ব চলছে, আর কিছুক্ষন পরই অনিমেশের বিবাহ সুসম্পন্ন হবে। যজ্ঞের আগুনের দিকে তাকিয়ে আছে সে, তার সামনেই তার হবু স্ত্রী। যজ্ঞ কুন্ডের আগুনে যে ভাবে খই গুলো পুড়ছে, একদিন এভাবেই ভালবাসা হারানোর আগুনে পুরেছিল সে।

বছর তিনেক আগের কথা। সবে M.Tech complete করেছে অনিমেশ। চাকরি জোটেনি তখনও। ইন্টার্ভিউ দিয়েছে অনেক গুলো। কিন্তু তখনও ডাক আসেনি কোন দিক থেকে। এমন সময় অনামিকার ফোন। অনামিকা, অনিমেশের প্রেমিকা। ওরা ক্লাস নাইন থেকে একে অপরকে ভালবাসে। দুজন মিলে রোজ একটু একটু করে ভবিষ্যতের গল্প সাজিয়েছিল। রাস্তায় পাশাপাশি হেটে, ঘুরতে গিয়ে জমিয়েছিল নিজেদের ভালোবাসায় মোরা স্মৃতি। একদিন অনিমেশ জিজ্ঞেস করেছিল অনামিকা কে-

– আমরা ঘুরতে বেরিয়ে যে এতো ফটো তুলি, এগুলো কি হবে?
– বিয়ের পর দেওয়ালে টাঙাবো।
অনিমেশ আর কিছু বলে নি। ফোনে অনামিকাই কথা বলে প্রথম-
– বলো।
– অনিমেশ একটা জরুরি কথা জানানোর আছে।
– কি?
– বাবা আমার বিয়ে ঠিক করছে।
– কি? এত তাড়াতাড়ি?
– হুম। বাবার কোন এক বন্ধুর ছেলে। ডক্টর। তাই বাবা তড়িঘড়ি করছে। আমি জানি না আমি কি করবো?

– cool. আমি দেখছি আমি কি করতে পারি।
সেদিন বিকেলেই অনিমেশ চলে গেছিল অনামিকাদের বাড়ি। কথা বলে অনামিকার বাবার সাথে।
– তা কি নাম তোমার?
– অনিমেশ। অনিমেশ রায়।
– কি কর?
– M. Tech pass. এখনও জব পাই নি। তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব।
– মানে সোজা কথায় বেকার। তাই তো?
– না। মানে…. কটাদিন…. আমরা একে অপরকে খুব….
– ভালোবাসো তাই তো? কিন্তু আমি আমার মেয়ের বিয়ে কোন বেকারের সাথে দিতে পারব না। Get out. কান খুলে

শুনে রাখো অনামিকার বিয়ে আমার পছন্দ করা পাত্রের সাথেই হবে।
তারপর আর কি, অনামিকা বা অনিমেশ কারোর কথাই শোনে নি অনামিকার বাবা।
মাস খানেক পর বিয়ে হয়ে যায় অনামিকার। অনামিকা মেনে নিল এটাই তার নিয়তি। তার কপালে অনিমেশ নয় ডক্টর অর্জুনের নাম লেখা। বিয়ের পর নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিল ডক্টর অর্জুনের স্ত্রী হিসেবে। মুছে ফেলেছিল নিজের জীবন থেকে অনিমেশ কে। কিন্তু বিয়ের মাস ছয় পর সে অর্জুনের affair এর কথা জানতে পারল। ব্যাস শুরু হল নিত্য দিনের অশান্তি। অনেক চেষ্টা করেও স্বামী কে নিজের দিকে ফেরাতে পারেনি অনামিকা। ফলস্বরূপ বিয়ের এক বছর পর ডক্টর অর্জুন ডিভোর্স দিল অনামিকা কে। অনামিকা মেনে নিতে পারল না তার সেই অবস্থা, ঘিরে ধরল তাকে depression, ভাবল শেষ করে দেবে জীবন টাকে, ঠিক সেই সময় তার ও তার পরিবারের হাত ধরল অনিমেশ। আবার অনামিকা ছিন্ন বীণায় নতুন সুর বাঁধলো। শুরু হল আবার নতুন করে কাছে আসা, ভালবাসা। এখন দুজনেই ভালো জব করে। অনিমেশ আরও দুবছর সময় নিল নিজেকে ভালো পোস্ট এ নিয়ে যেতে।

যজ্ঞ কুন্ডের মধ্যে পুড়তে থাকা খই গুলো আকর্ষন করল অনিমেশের হবু স্ত্রী কেও। সেও দগ্ধ হয়েছিল একদিন এভাবে, যেদিন অনিমেশ কে ছেড়ে অন্য কারোর সাথে ঘর বেধে তার তাসের ঘর ভেঙে পরেছিল। আজ অনিমেশের সাথে আর কারোর না তার এক ও একমাত্র ভালবাসা অনামিকার বিয়ে। কূলো থেকে শেষ খই এর কনা টা আগুনে পড়তেই দুজনেই প্রতিজ্ঞা করল “এই খই এর সাথে সাথেই পুড়ে গেল আমাদের বেদনাময় অতীত, দুঃখ ও কষ্ট। আর শুরু হল এক আনন্দময় ভালবাসায় মাখা নতুন জীবন।”

।। সমাপ্ত।।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত