হুটোপাটি করতে করতে কেমন করে যে বেঞ্চটা ভেঙে গেল বুঝতেই পারেনি ওরা। পুরোনো কাঠের বেঞ্চ। ক্লাস ইলেভেনের দামাল ছেলেদের অত্যাচার নেবে কেমন করে! ফলস্বরূপ কিছুক্ষণ পরে সবাই হেডস্যারের ঘরের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। স্যারের বেতের স্বাদ কমবেশি সবাই জানে। টকটকে ফর্সা রঙের স্যার মোটা পাওয়ারের কাচের ওপার থেকে তাকিয়ে আছে একে অপরের গা টেপা ছেলেগুলোর দিকে। হঠাৎই সবাইকে অবাক করে দিয়ে স্যার বলে ওঠেন, “খেলো ঠিক আছে! কিন্তু মাঠে খেললেই তো পারো! পরেরবার বেঞ্চ ভাঙলে কিন্তু সব্বাই শাস্তি পাবে! যাও, ব্যাটবল নিয়ে গ্রাউন্ডে যাও!”
আশাতিত ক্ষমা পেয়ে হুল্লোর করতে করতে বেরিয়ে যায় ছেলের দল। রাগী হেডস্যারের চোখেমুখে খেলে যায় দুষ্টুমির হাসি, ইলেভেনের ছেলেগুলোর মতোই।
ক্লাবের ছেলেরা ভীষণ খাপ্পা নতুন আসা লোকটার উপর। কঞ্জুস একটা! একশো’ টাকা চাঁদা চাইলে দশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বিদেয় করে দেয়৷ সামনেই সরস্বতী পুজো। ছেলেরা এবার কিছুতেই কম চাঁদা নেবে না। কথামতো সবাই গিয়ে হাজির হয় দোতলা বাড়িটার দরজায়৷ প্রত্যেকবারের মতোই লোকটা দশটা টাকা হাতে করে নিয়ে এসে দাঁড়ায় সামনে। যেন ভিক্ষে দিতে এসেছে। ছেলেরা জোর প্রতিবাদ জানাতে যেতেই ফোনটা বেজে ওঠে লোকটার। ফোন ধরে লোকটা জানান দেয়, “খাবারের আয়োজনে যেন ত্রুটি না হয়! আমার পেনশনের টাকাটা পুরোটাই দেব। লোকগুলো সরস্বতী পুজোর দিনটা যেন অন্তত একটা ভালো জামা পরে একটু ভালো খাবার খেতে পারে।”
ছেলের দল দশ টাকাটা হাসিমুখে নিয়ে মন থেকে বলে যায়, “আসবেন জেঠু। সন্ধেবেলা কিন্তু ফাংশন হবে!”
নামকরা অভিনেত্রী হওয়ার সুবাদে মেয়েটি যেখানে সেখানে যেতে পারে না, যা তা খেতেও পারে না। মিডিয়ার সামনে মেপে মেপে কথা বলতে বলতে সত্যিই যে কবে ও সাধারণ মেয়ে থেকে সেলিব্রিটি হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। হঠাৎ ফ্রেন্ডশিপ ডে-তে অযাচিতভাবেই হানা দেয় পুরোনো বন্ধুর দল। কেউ মেক আপ করেনি, কেউ ক্যামেরা বের করে না, কেউ বলে না সোশ্যাল মিডিয়াতে পোষ্ট করার কথা, এমনকি কেউ ওকে ভালো নাম ধরেও ডাকে না। মেয়েটা আবার মেতে ওঠে অনেকদিন পর। সঙ্গে থাকে মুখের অজস্র ছোটখাটো খুঁত আর প্রাণখোলা হাসি। চিপস, চকলেট, আলুর চপ, মুড়িতে মাখতে মাখতে কখন যে রাত কেটে ভোর হয়ে যায় টেরই পায় না কেউ!
মুখোশ তো থাকেই, থাকবেও। কিন্তু মাঝে মাঝে কোথাও কোথাও মুখোশ ছেড়ে বেরোলে ক্ষতি কী বলুন!