আমি যখন অফিস থেকে বের হলাম তখন সূর্যটা প্রায় পশ্চিম দিকে হেলে গিয়ে লাল রক্তবর্ণ ধারন করেছে।যাকে বলে রক্তের জমাট বাধার মত।অবশ্য পশ্চিম আকাশের প্রায়টুকুই এরকম লাল রক্তবর্ণ ধারণ করে ফেলেছে কিন্তু আমার আকাশে আজ কি চলছে এইটা আমি না দেখেই বলে দিতে পারি।মেয়েটাও হয়তো রেগে লাল বর্ণ ধারণ করে ফেলেছে।
আমি আর কিছু না ভেবে সামনের শপিংমল থেকে একটা কালো শাড়ি কিনে বের হতেই দাঁড়িয়ে গেলাম।মনে হচ্ছে কিছু একটা ফেলে যাচ্ছি।আমি আবারও শপিংমলটার ভেতরে গিয়ে এদিক ওদিক ঘুরতেই আমার সবকিছু মনে পড়ে গেলো।হ্যা এটাই রেখে যাচ্ছিলাম,এটাই।
কালো শাড়িটার সাথে একটা লাল শাড়ি নিয়ে যখন আমি বের হলাম তখন চারিদিকের সোডিয়ামের আলো বুক ফুলিয়ে জানান দিচ্ছে এখন আর বিকেল নেই,সন্ধে হয়ে গেছে।যেটা আস্তে আস্তে বাড়তেই থাকবে।তাই এখানে আর দেড়ি করা মোটেই উচিত নয়।আরও একটা কাজ আছে,সেটা করেই বাসায় যেতে হবে।
আমি রিক্সায় চেপে বসতেই লাল শাড়িটার দিকে চোখ পড়লো।কালো শাড়িটা আমার পছন্দ হলেও লাল শাড়িতে মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগবে।লাল সাদার কম্বিনেশনে গড়া শাড়িটা পড়লে ওকে কেমন লাগবে এটা আমি এখনই কল্পনা করে ফেলেছি।হয়তো রেগে আছে, কিন্তু এ রাগটা ও একদম গলে যাবে।
দু বার কলিংবেল বাজানোর পরেও যখন দড়জা ঠিক আগের মতই দাঁড়িয়ে রইলো তখনই বুঝলাম মেয়েটা একটু বেশিই রেগে আছে।অন্যদিন হলে প্রথমবারই খুলে দিত,সাথে ওর মিষ্টি হাসি।সারাদিনের সব ক্লান্তি ওর হাসি দেখেই কেটে যেতো।অবশ্য আজ সকালে মেয়েটা বলেছিল একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে কিন্তু সেটাও পারিনি।তাই হয়তো রাগের পরিমানটা আরও একটু বেড়ে গেছে।মেয়েটা রাগলে অবশ্য দেখতে খারাপ লাগে না।ওর ভাললাগার অন্যরূপটা দেখতে পাই।
আমি যখনি আরও একবার কলিংবেল বাজাতে যাব তখনি খট করে দড়জাটা খুলে গেলো।কিন্তু প্রতিদিনের মত ওর মুখের হাসিটা আজ দেখতে পেলাম না।গোমড়া মুখেই মেয়েটা চলে গেলো।আচ্ছা ও কি সারাদিন কিছু খেয়েছে নাকি না খেয়েই আছে।এই মেয়েটার সবকিছুই আমার ভাল লাগে শুধু এই একটা বিষয় ছাড়া।রেগে গেলে কিচ্ছু খাবে না।
আমি ভেতরে ঢুকে দড়জা আটকে দিয়ে হাতে রাখা জিনিসগুলা রেখে লাল শাড়িটা নিয়ে রুমে ঢুকলাম।রুমে না পেলেও একটু এগুতেই দেখি মেয়েটা গোমরা মুখে বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি আরও একটু এগিয়ে মেয়েটাকে আস্তে করে ডাক দিলাম,
-নাইস,এই নাইস।
কিন্তু মেয়েটার কোন সাড়া পেলাম না।ঠিক আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে।আমি আরও একটু এগিয়ে গিয়ে ওকে ধরে আমার দিকে ঘুরাতেই দেখি মেয়েটার চোখে পানি।এই মেয়েটা সহজেই কাদে না।যদি খুব বেশিই কষ্ট পায় তখন ওর চোখটা ভিজে ওঠে।কিন্তু আমি কি ওকে একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।
আমি নাইসের চোখের পানি মুছে ওর হাতে লাল শাড়িটা দিয়ে বললাম,
-এটা পড়ে নাও।
আমার কথায় নাইসের গোমড়া মুখে হাসি ফুটে উঠলেও মেয়েটা একটু চুপ থেকে বললো,
-তারমানে তোমার সবকিছু মনে ছিল।
-হ্যা থাকবে না কেন,তাছাড়া শফিক সাহেব আমাকে আজ সকালেও বলেছিলেন ওনাদের আজ প্রথম বিবাহ বার্ষিকী।তোমাকে নিয়ে যেন অবশ্যই যাই।
আমার কথায় নাইসের মুখটা আরও একটু মলিন হয়ে গেলো।বুঝলামনা মাত্রই তো মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার আকাশে ঝড় তুলে দিয়েছিল এখন আবার হঠাৎ করেই এরকম গোমড়া হয়ে গেলো কেন।আমার কথায় নাইস কিছু বললো না।শাড়িটা হাতে নিয়েই অন্যরুমে চলে গেলো।
আমিও আর দেড়ি করলাম না।ফ্রেশ হতে হবে,তারপর ছোট্ট একটা কাজ।এতেই মেয়েটার মনটা ভাল হয়ে যাবে।অন্ধকার আকাশটা আলোতে ভরে যাবে।
নাইস যখন লাল শাড়িটা পড়ে বের হলো তখন আমার কাজ প্রায় শেষ।লাল শাড়িতে নাইসকে যে আমার কল্পনার থেকেও বেশি সুন্দর লাগবে এইটা ওকে না দেখলে বুঝতামই না।মেয়েটাকে দেখতে একদম লালপরীর মত লাগছে।মনে হচ্ছে ওকে বসিয়ে রেখে সারারাত ওর দিকেই তাকিয়ে থাকি এক দৃষ্টিতে।
লাল শাড়ি,লাল টিপ,লাল লিপস্টিক সাথে খোলা চুলে এই মেয়েটা দেখছি পরীদেরও হার মানিয়ে দেবে।আমার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে মেয়েটা আমার সামনে এসে বললো,
-কি দেখছো এভাবে?
-তোমাকে।
-কি?
-না মানে কিছুনা।
-হুম চলো।
-কোথায়?
-একটু আগেই না বললে কার যেন বিবাহ বার্ষিকীতে যাবে।
-ও হ্যা,তোমাকে দেখে সবকিছু ভুলেই গিয়েছিলাম।
আমার কথায় নাইস কিছু বললো না।চুপ করেই রইলো।আমি নাইসকে কিছু বলার সুযোগও দিলাম না।মেয়েটাকে ধরে পাশের রুমে নিয়ে যেতেই নাইস বললো,
-এই অন্ধকারে কি?
নাইসের কথায় আমি কিছু বললাম না।ওকে অন্ধকারে দাড় করিয়ে দিয়ে আমি লাইটটা জ্বালিয়ে দিতেই মেয়েটা অবাক চোখে চারপাশ দেখতে লাগলো।আমি একটু এগিয়ে গিয়ে নাইসকে কেক রাখা টেবিলের সামনে দাড় করিয়ে দিয়ে বললাম,
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ
হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার পরী
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ
নাইসকে করা আমার জন্মদিনের উইশ শেষ হলেও মেয়েটার অবাক চোখে তাকিয়ে থাকাটা শেষ হলো না।ওর চোখদুটো হুট করেই ভিজে উঠলো।আমি নাইসের পাশে গিয়ে ওর হাতে ছুড়ি দিয়ে বললাম,
-কি ভেবেছিলে,ভুলে গেছি।না ভুলিনি।এটা কি আমি ভুলতে পারি?
আমার কথায় নাইস কিছু বললো না।আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।কিন্তু আমি নাইসের কান্না থামানোর কোন চেষ্টাই করলাম না।সুখের কান্না থামাতে নেই।আমি তো মোটেই চেষ্টা করবো না।কোন ভাবেই না,কোন মতেই না।