মীম: ভাইয়া আমাকে একটা পুতুল কিনে দিবি?
আরাফঃ আচ্ছা দিবো এই মাসের টিউশনি এর টাকাটা পাইলেই দিবো।
মীমঃ না ভাইয়া আমার আজকেই লাগবে,দিবি দিবি দিবি বল?
আরাফঃ বললাম তো আমার কাছে টাকা নেই,টাকা জোগাড় করেই সামনের মাসে দিবো সত্যি বলছি।
মীম: আচ্ছা দিস,আমি কিন্তু না দিলে তোর চুল সব ছিঁড়বো। আর তোর মাথা টিপে দিবো না।তোর বিছানা গুছিয়ে দিবো না।দেখিস তোর সব জিনিষ নষ্ট করে দিবে।
আরাফঃ আচ্ছা আমি পড়তে বসছি তুই যা এখন। মীম চলে যাওয়ার পর আরাফ ভাবতে শুরু করে।তার এক মাত্র বোন পুতুল চাচ্ছে সেই কবে থেকেই কিন্তু প্রতিবার ই টিউশানির টাকাটা পেলে কোন না কোন ভাবে খরচ হয়ে যায়।কিন্তু এইবার বোনকে টাকাটা দিয়ে যে ভাবেই হোক একটা পুতুল কিনে দিতে হবে।কিন্তু বছরের শেষ একটাই মাত্র টিউশনি আছে তার ও শেষ মাসের টাকাটা বাকি।
আরাফ ভাবতে থাকে আর দু চোখের দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।বোনকে যে সে খুব ভালোবাসে।তাদের বাবা নেই,মা ও খুব অসুস্থ বাবার পেনশনের টাকাটা দিয়েই সংসার চলে।আর টুকটাক খরচ চলে তার টিউশানির টাকা দিয়ে।
পড়ের দিন আরাফ টিউশানি তে যায়।ছোট ছেলেটাকে পড়াচ্ছে।আরাফের ছাত্র বলল স্যার জানেন আমরা না কয়দিন পর চলে যাব।আরাফের মন খারাপ কথাটা তেমন শুনে না বলে তুমি পড়।আজকে মাসের ৩১তারিখ একদিন পর ই বেতন পাওয়ার কথা।এই বাসায় বেতন খুব নিয়ম করেই দিয়ে দেয়।
আরাফ পড়ানো শেষ করে চলে যায়।রাত্রে বেলা মীম ভাইয়া কে মনে করিয়ে দিলো ভাইয়া কালকে কিন্তু ১তারিখ।আমার জন্য বেতন পেয়ে কিন্তু পুতুল নিয়ে আসবি।আরাফ একটা কষ্ট মাখা হাসি দিয়ে বলে আচ্ছা আনবো।মীম খুশিতে নাচতে নাচতে চলে।একটা মাত্র ফুটফুটে বোন তার সব শখ চাইলেও আরাফ পূরণ করতে পারেনা।
পরের দিন আরাফ পড়াতে গেলো কিন্তু যখন দেখে দরজায় তালা ঝুলছে তার ছাত্রের বাড়িতে তখন কানের মাঝে ছাত্রের কথাটা বাজতে থাকে।কালকে বলেছিলো তার ছাত্ররা চলে যাবে।কই গেলো।বাড়ির কেয়ার টেকারের কাছ থেকে জানতে পাড়ল সাহেবের অন্য যায়গায় বদলি হয়েছে।আরাফ বলল তারা আর আসবে না?লোকটা জানায় না।
আরাফ মন খারাপ করে বাসা থেকে বের হয়।তখন শুধু তার বোনের পুতুল চাওয়ার কথা গুলি মনে পড়ছিল।এখন বোনকে গিয়ে কি বলবে।সব লজ্জা ভুলেও টাকার জন্য ফোন দিলো ছাত্রের বাবাকে।যদি সমস্যার কথা বলে তবে হয়ত বিকাশে টাকাটা পাঠিয়ে দিতে পারবে।আরাফ ফোন দিয়ে দেখে নাম্বার বন্ধ।তখন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছিলো।আরাফের বুক ফেটে কান্না আসছিলো শুধু বোনের হাসি মুখটা যে কালো হয়ে যাবে।
আরাফ বাসার দিকে পা বাড়ায়।হেটে হেটে যাচ্ছে আর ভাবছে।এর মাঝেই তার ফোনে ফোন আসে।আরাফের বন্ধু জয় ফোন দিয়েছে।আরাফ কই তুই বলল জয়।আরাফ এই তো হসপিটাল রোডে।জয় বলল তোর রক্ত তো ও নেগেটিভ তাইনা?আরাফ বলল হ্যাঁ।জয় বলল দ্রুত হসপিটালে আয় তো এক ব্যাগ রক্ত দিতে হবে ইমারজেন্সি।আরাফ না করতে পারেনা।এই রক্তের অভাবেই তার বাবা মারা যান।সময়ে এক ব্যাগ রক্ত লক্ষ টাকা দিয়েও পাওয়া যায়না।
আরাফ রক্ত দেওয়া হলে,বলল জয় আমি যাইরে।জয় বলে আচ্ছা যা।এর মাঝেই যেই রোগীকে রক্ত দিয়েছে তাদের মাঝের একজন বলল চলুন আপনাদের এগিয়ে দিয়ে আসি।আরাফ কে সাথে নিয়ে সেই লোকটা একটা ফলের দোকানে ঢুকলো অনেক গুলি ফলমূল কিনে আরাফ কে দিলো।আরাফ নিতে রাজি হচ্ছিলো না।লোকটি জোড় করেই বলল নেন এই গুলি খাবেন যাতে সুস্থ থাকেন আর মানুষ কে রক্ত দিতে পারেন।আমি আপনাকে রক্ত দেওয়ার বিনিময়ে দিচ্ছিনা।শুধু দিলাম ভাই হিসাবে।
আরাফ আর কিছুই বলেনা।ফলের ব্যাগটা নিয়ে হাটা দেয়।লোকটি আর জয় চলে যাওয়ার পরে আরাফ আবার সেই ফলের দোকানে আসে।ফলের দোকানদার কে বলে ভাই একটু আগের যে লোকটা ফল কিনল কত টাকার ফল নিয়েছিলো?দোকানদার বলে ৯৮০টাকার।আরাফ বলে ভাই আমার ফল গুলি লাগবে না আপনি ফল গুলি রেখে আমায় ৫০০টাকা দিবেন?দোকানদার বলে কিরে ভাই শুনলাম রক্ত দিয়েছেন তার জন্য ফল গুলি কিনে দিয়েছিলো।এখন ফল ফেরত দিয়ে টাকা নিচ্ছেন ধান্দা করেন নাকি নেশা করেন?
আরাফ কান্না ভেজা চোখে বলে না ভাই,বোনের জন্য পুতুল নিতে হবে।টিউশনির টাকাটা পাইনি।বাসায় গেলে বোনটা খুব মন খারাপ করবে।দোকানদার আরাফের চোখের পানি দেখে বলে সরি ভাই কিছু মনে করবেন না আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম।দোকানদার কিছু ফল কমিয়ে রেখে বলল এই নিন ৫০০টাকা আমি ৫০০টাকার ফল কমিয়ে রেখেছি।বোনকে পুতুল কিনে দিন আর বাকি ফল গুলি বোনকে দিয়েন খুশি হবে।আরাফ দোকানদার কে ধন্যবাদ দিয়ে হাটা শুরু করে।
সামনের মার্কেট থেকে সুন্দর রঙের টুপি ওয়ালা একটা লাল রঙের পুতুল কিনে যায়।পুতুল টায় মিউজিক ও আছে।খুব খুশি হবে তার বোন।বাসায় যেতেই মীম ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে ভাইয়া আমার পুতুল কই?আরাফ পিছন থেকে পুতুলটা বের করে দেয়।মীম খুশিতে নাচতে থাকে এত সুন্দর পুতুল দেখে।ভাইয়াকে একটা চুমু দিয়ে বলে আমার লক্ষ্মী ভাইয়া।
পিছন থেকে যখন ফল গুলি দেযদেয় মীম আরো খুশি হয়।মীম ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলে ভাইয়া তুই কি আজকে অনেক টাকা বেতন পাইছিস আমার জন্য যে ফল এনেছিস? হুম অনেক টাকা পেয়েছি রি বোন অনেক।।।।।