-সবকিছু ঠিকমত নিয়েছ তো?..জামা,কাপড়,
শীতের চাদর সবকিছু?আজ কিন্তু বেশ শীত করছে…
-হুম নিয়েছি।সাথে হাত খরচের জন্য কিছু টাকাও আছে..কিন্তু আমরা যাচ্ছি আসলে কোথায়?
-উম আমরা?? এখান থেকে ঢাকার বাসে চড়ে প্রথমে ঢাকা যাবো।সারারাত জার্নিতে কাটবে।আর ভোর বেলা ঢাকা থেকে সিলেটের বাসে উঠব।সিলেটে আমার বন্ধু আছে সেই কিছুদিন থাকার সব ব্যবস্থা করে রাখবে আমাদের..রিতুর হাতে হাত রেখে এভাবে আশ্বস্ত করল আবির।
-তোমার কি ভয় করছে রিতু?
-“উমম একটু একটু করছে।আসলে আগে কখনও মা বাবার অবাধ্য হইনি তো এজন্য খারাপ লাগছে অনেক।
-টেনশন করো না।আমরা তো আর সারাজীবন এর জন্য যাচ্ছি না।মাত্র কিছুদিন থাকবো,,তারপরেই আবার ব্যাক করব।দেখবা তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে..তুমি আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়।সকালে আবারও জার্নি আছে।না ঘুমালে টায়ার্ড হয়ে যাবা.আর হা ফোনটা সুইচ অফ করে রাখো।নাইলে বাসা থেকে কল আসবে বারবার…রিতুকে বলল আবির।
-ঠিকই বলেছো।এখনই সুইচ অফ করছি।ফোনের সুইচ অফ করে শান্ত মেয়ের মত আবিরের বুকে মাথা দিয়ে চোখ বুজল রিতু।
রিতুর সাথে আবিরের চার বছরের রিলেশান।কিন্তু এই রিলেশান রিতুর বাসায় কেও মানে নি।উপরন্তু রিতুর বাবা রিতুকে মারধোর করেছে সবকিছু জানার পর।আবির কেবল ভার্সিটির ৪র্থ বর্ষের ছাত্র।পড়াশোনা এখনও শেষ হয়নি।ওর সাথে ২য় বর্ষে পড়া রিতুর বিয়ে পারিবারিক ভাবে যে মেনে নেওয়া হবে না এটা সে জানত।তারপরেও সে রিতুর বাবাকে অনেক রিকুয়েস্ট করেছিল।কিন্তু ফলাফল হয়েছে উল্টো।চাকুরীজীবী একটা ছেলের সাথে আগামী সপ্তাহে রিতুর বিয়ে ঠিক হয়।শেষমেস কোন উপায় না পেয়ে ওরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার।তারপর কোর্ট ম্যারেজ করে কিছুদিন বাইরে থাকলে এমনিতেই হয়ত পরিবার থেকে মেনে নিবে।যেই ভাবা সেই কাজ।এই চমৎকার আইডিয়াটা বের হয়েছে রিতুর মাথা থেকে..আর আবিরও টিউশনির জমানো টাকা আর বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করা কিছু টাকা নিয়ে রিতুর সাথে পালিয়ে যেতে রাজি হয়..প্ল্যানমত রাজশাহী বাসস্ট্যান্ডে আবির আগে থেকেই টিকেট কেটে অপেক্ষা করছিল।রিতু আসার পর ওরা একসাথে রওনা হয় ঢাকার উদ্দেশ্যে..ওদের গন্তব্য সিলেটে আবিরের বন্ধুর কাছে যাওয়া..
২.
ভৈরব সদর হাসপাতালের মর্গের একদম কোনার দিকে গত দুইদিন থেকে তিনটা লাশ রাখা আছে।এই লাশগুলোর সাথে ইনফরমেশন বলতে তেমন কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি।আর এজন্য লাশগুলোকে কেও শনাক্ত করতে পারে নি।লাশগুলোর মাথা খুব খারাপ ভাবে থেতলে গেছে।দুইদিন আগে সকাল বেলায় সিলেটগামী বাসের সাথে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটা বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।এতে ঘটনাস্থলেই আটজন মারা যায়।আর গুরুতর আহত অবস্থায় ২৫ জনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।সেই ২৫ জনের মধ্যে ৬ জন বর্তমানে কোমায় আছে।ওদের ভেতর ‘আবির’ নামের একটা ছেলের পরিচয় পাওয়া গেছে।আর সেই “স্পট ডেইথ” এর লাশগুলোকে ভৈরব হাসপালের মর্গে রাখা হয়।আটটির মধ্যে পাঁচটা লাশ ইতোমধ্যেই শনাক্ত হয়েছে।বাকি আছে শুধু তিনটি লাশ।সেগুলোর মধ্যে একটা অল্পবয়সী তরুনীর লাশ আছে।কে জানত বাসা থেকে বাবা মায়ের অবাধ্য হয়ে পালিয়ে আসা এই বাইশ তেইশ বছরের তরুনীকে এরকম ভয়াবহ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়ে জিবনের চরম পরিনতি মেনে নিতে হবে…
হাসপাতালের মর্গে সেই তরুনির লাশটা আরো চারদিন রাখা হয়।তারপর সেই লাশ, কেও না নেওয়ায় সেটা আঞ্জুমান মফিদুল এর সাহায্যে “বে-ওয়ারিশ” লাশ হিসেবে দাফন করা হয়।..নামপরিচয়হীন একটা তরুনীর লাশ “বে-ওয়ারিশ” হিসেবে দাফন করার সাথে সাথেই সেই লাশের প্রতি দুনিয়ার মানুষের থাকা সর্বশেষ দায়িত্বটাও শেষ হয়ে যায়…