রিপনঃ এই সজিব, খেলার খবর কিরে?? আমার ফোনের চার্জ নেই, আর এখানেও কারেন্টের সমস্যা হয়েছে জন্য টিভি অফ। তুই ত বাইরে ছিলি, জানিস??
সজিবঃ নাহ
রিপনঃ রাগ করে, এতক্ষণ কই ছিলি তুই??
সজিবঃ নামাজ পড়লাম, মসজিদে ছিলাম।
রিপনঃ নামাজ টা পরে পড়লে পারতি না?? খেলাটার রেজাল্ট যে কই পায় এখন উফফফ। ফোন ও অফ শালার কারেন্ট রে যে কি করতে মন চাইতেছে।
সজিবঃ নামাজের চাইতে তোর কাছে খেলাটা বড় হয়ে গেলো??
রিপনঃ মানে??
সজিবঃ মাত্র বললি,
রিপনঃ আমি আবার কখন এটা বললাম??
সজিবঃ নামাজ টা পরে পড়তে পারতি না, কথাটা কে বলছে??
রিপনঃ হ, আমি কইছি।
সজিবঃ ত কথাটাতে কি বোঝাচ্ছিস?? যে নামাজটার মুল্য তোর কাছে খেলার চাইতেও কম??
রিপনঃ আমি কিন্তু সেটা বলিনি, আ’
সজিবঃ নামাজ পড়েছিস আজ??
রিপনঃ মাথা নিচু করে, না’হ
সজিবঃ সব কথা মাথা উচু করে বলিস ত এটা নিচু করে বললি কেন? যাক অপরাধবোধ টুকু তাও আছে দেখছি তোর মাঝে।
রিপনঃ তুই কিন্তু বেশি বলছিস। তোরে কিন্তু আমি,
সজিবঃ মেস ছাড়া করবি?? হুম কর। এটাই শুধু বাকি আছে।
কিছুটা নিরবতা বিরাজ করলো তারপর
সজিবঃ তুই মুসলিম??
রিপনঃ মানে??
সজিবঃ হ্যা অর নাতে উত্তর দিবি
রিপনঃ হ্যা, অবশ্যই
সজিবঃ কালেমা পড়েছিস, এক আল্লাহ মানিস??
রিপনঃ পাগল হয়ে গেছিস?? সিট বুকিং দিতে হবে?? রাগ করে বললো কথাটা
সজিবঃ হ্যা অর না??
রিপনঃ অবস্যই মানি।
সজিবঃ রাসুল কে অনুসরণ করিস??
রিপনঃ করি
সজিবঃ বাহ, তুই ত অনেক ভালো রে, তোর জন্য ত জান্নাত ফ্রি হা হা
রিপনঃ কি বোঝাতে চাস??
তুই জান্নাত জাহান্নামে বিশ্বাসি??
রিপনঃ হুম, অবশ্যই
সজিবঃ সত্যি??
রিপনঃ কি বলবি বল..
সজিবঃ তুই আল্লাহ কে বিশ্বাস করিস কিন্তু আল্লাহর হুকুম মানিস না, তুই রাসুলে বিশ্বাসি কিন্তু রাসুলের সুন্নত অনুসরণ করিস না। রাসুল কে অনুসরণ করলে রিফাতের দাড়ি নিয়ে ট্রল করতে পারতি না। বাবা মায়ের সাথে ঝগড়া করে এখানে থাকতি না। তুই জান্নাত বিশ্বাস করিস কিন্তু জাহান্নামের শাস্তির কথা মানিস না। এমন মনে করিস নিজেকে যে তুই জান্নাতে চলে যাবি মরার সাথে সাথে।
রিপনঃ সজিবের দিকে তাকিয়ে আছে,
সজিবঃ তুই যেই খেলার জন্য আজ নামাজ কে পড়ে মুল্য দিলি, ওই নামাজ ই তোকে জান্নাতে নিয়ে যাবে, কোন খেলাধুলা বা নষ্টামো কিছু বিনোদন নিতে পারবে না। হ্যা ওগুলো তোকে নিবে তবে জান্নাতে না, জাহান্নামে।
দেশপ্রেম দেখাস?? খেলা দেখে, অন্যকে ট্রল করে, অন্যকে রাজাকার বলে গালি দিয়ে কি বোঝাতে চাস তুই দেশপ্রেমিক??
রিপনঃ সজিব চুপ কর
সজিবঃ কেনো?? ভুল বলছি কিছু??
খেলাতে বাংলাদেশ হেরেছে জন্য রাতুল কে তুই মেরেছিস ইভেন মেস থেকেও বের করে দিয়েছিস। আবার ওকে রাজাকার বলেও গালি দিয়েছিস, দেশপ্রেমিক হয়ে গেছিস?
শোন ভাই, খেলার সময় টা তোর শেষ হয়ে যাচ্ছে না। এক অভার মিস গেলে কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু এক ওয়াক্ত নামাজ মিস গেলে কবিরা গোনাহ হবে যার জন্য তোকে অনেক বছর জাহান্নামে থাকতে হবে। তুই কি চাস সেখানে যেতে??
রিপনঃ….
সজিবঃ ক্ষমা করে দিস যদি ভুল বলে থাকি, বন্ধু, বলিস, ভাই বলিস, আপন মানুষ বলিস তুই, তোরা। তোদের ভালো চাওয়াটা আমার দায়িত্ব, ভাইয়ের দায়িত্ব।
সজিব চলে গেলো। রিপন ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো,
ভোরে
ফজরের আযানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো সজিবের। উঠে চোখে চশমা দিয়ে, রুম টা খুলে বাহিরে বেরোয়েই ওর চোখের সামনে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।
ত, তোরা, এখানে?? ঘুমাস নাই??
কালকে রাত্রে রিপন কে অতগুলো কথা শুনাইছি, হইতো এজন্য মারতে আসছে, শীতের রাতেও কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই সজিবের মুখ ঘেমে গিছে।
দেরি করছিস কেন?? নামাজে যাবি না??(তুহিন)
সজিব অবাক হয়ে হা করে রইলো,
কিরে, অযু করে নে যা।
মামা, দেহো আর কিন্তু ১০ মিনিট বাকি জামাত শুরু হতে।
সজিব কি সপ্ন দেখছে?? এ, এটা কিভাবে সম্ভব??
আর কিছু না ভেবে অযু করতে গেলো, হঠাত কেউ সজিবের কাধে হাত রাখতেই,
রাতুল, তুই এখানে??( সজিব)
রিপন নিয়ে আসছে রাত্রেই, ওর রুমেই ছিলাম রাত্রে।
নিজের হাতে জোরে করে চিমটি কাটলো সজিব। আহ বলে উঠলো, ব্যাথা ত সেই জোরে লাগছে তারমানে সত্যি সব।
মেস থেকে ১০ মিনিটের পথ, ঠান্ডায় সবগুলার হাত পা জমে যাচ্ছে, সজিবের প্রব্লেম হচ্ছে না, ওর অভ্যাস আছে যে।
সজিব ভাবছে, রিপন হইতো সবগুলো কে জোর করেই নিয়ে যাচ্ছে নামাজে, যাক তবুও ভালো।
হঠাত রিপন সজিব কে থামিয়ে,
আমায় ক্ষমা করে দে সজিব।
এ, কি বলিস। ক্ষমা ত আমায় বলা উচিত। তখন কি বলেছি, সরি রে
একদম চুপ।(রিপন)
তোকে আমি ক্ষমা করবো না। বরং শাস্তি পাবি তুই(রিপন)
সজিবের গলা শুকায়ে গেলো,
আর শোন, তোর মনে হতে পারে, আমি ওদের কে জোর করে নামাজে নিয়ে আসছি, নারে। জোর করে না। শুধু তোর বলা কথাগুলোই ওদের কে বলেছি, ব্যাস।
সজিব হা হয়ে তাকিয়ে রইলো রিপনের দিকে।
মসজিদে নামাজ পড়ার শেষে, আরো অনেক কিছু ওরা জানতে পারলো, যাএ জন্য প্রায় প্রত্যেকেই ওয়াদা করলো ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো নামাজ বাদ দিবে না। কেউ না, সজিবের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, ইমাম সাহেব জোরে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলেন।
নামাজ থেকে ফিরতে ফিরতেই প্রায় দুই টা বেজে গেলো। অনেক্ষণ বসে ছিলো ওরা মসজিদে। অন্যরকম শান্তি পাচ্ছিলো ওরা।
সজিব ভাবছে অন্য কথা, রিপন বলছে ওকে শাস্তি দিবে। কি শাস্তি দিবে?? আমার ত আর যাইয়ার যায়গা নাই। যদি মেস থেকে বের করে দেয়।
রিপন আগেই চলে এসেছিলো মেসে, তাই বাইক নিয়ে সজিবের সামনে দাড়ালো,
উঠে বস( রিপন)
ক, কোথায় যাবি??(সজিব)
তোকে শাস্তি দিতে(রিপন)
কেউ কি ইচ্ছাকৃত ভাবে শাস্তি নিতে চায়??
ন, নারে ভাই। আমায় ক্ষমা করে দে। আমি আর তোকে কিছু বলবো না। আমার কেউ নাই ভাই, আমারে মেস থেকে বের করে দিস না প্লিজ।(সজিব)
রিপন এবার রাগ করে, উঠবি নাকি গায়ের উপর দিয়ে বাইক উঠায়ে দিবো??
সজিব এবার তড়িঘড়ি করে বাইকে উঠে পড়লো।
কিছুসময় পরে একটা বাসার সামনে এসে বাইক থামলো,
নামম… (রিপন)
সজিব নেমে পড়লো,
রিপন সজিবকে ভেতরে আয় বলে বাসার ভেতরে চলে গেলো।
সজিব গুটিগুটি পায়ে ভেতরে গেলো।
আম্মা, সজিব( সজিব কে দেখিয়ে কথাটা বলে উঠলো রিপন)
রিপনের আম্মা এসে আমার কপালে চুমু দিলো।
বাবা, কেমন আছিস??(আন্টি)
বুদ্ধি হউয়া থেকে শুরু করে আজ অবধি কেউ এভাবে এতটা ভালোবাসেনি সজিব কে, তাই এটুকুতেই চোখে পানি জমে গিছে।
কিরে সজিব, বাবা আমার। কান্দিস কেন??(আন্টি)
ক, কিছু না, আ, আন্টি। ওই এমনিতেই একটু( সজিব)
আন্টি কাকে বলিস?? আম্মা বল। আমার ২ই ছেলে, রিপন, আর সজিব।
এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না, রিপনের মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
আন্টি নিজেও কান্না করছেন, কারন রিপনের ছোট ভাই(জিসান- ১৯) মারা গেছিলো ২ বছর আগে। হইতো সেই আসনেই সজিবকে বসায়ে দিয়েছে। রিপনের দিকে তাকাতে সজিব দেখলো রিপন বাচ্চাদের মতো টিভিতে কার্টুন দেখছে আর হাসছে।
আন্টি রান্না ঘরে গিছে ১৫ মিনিট হলো।
সজিব সোফার এক কিনারে বসে আছে। আর একটু পরপর রিপনের দিকে তাকাচ্ছে,
কিরে?? এভাবে তাকাচ্ছিস কেন??( রিপন)
ক, কই, এমনি(সজিব)
রিপন হেসে দিলো।
সজিব উঠে গিয়ে রিপনের কাছে গিয়ে,
সরি রে( সজিব)
কেনো? তোর কি শাস্তি পছন্দ হইনি??(রিপন)
এই শাস্তি টা আমাকে সারাজীবনের জন্য পেতে দিবি??(সজিব)
পার্মানেন্টলি পেয়ে গেছিস ভাই (রিপন)
সজিব রিপন কে জড়িয়ে ধরলো। কেদে দিয়েছে। তবে কান্নাটা দুঃখের না, সুখের। তোর শাস্তি টা আমি সাদরে নিলাম রে, শাস্তির মধ্যে যে এতটা শান্তি থাকে আগে জানা ছিলো না আমার।