-তুমি আর কি জানো রুনুদা।মেয়ে মানুষদের যে কত প্রকারের হিংসে। তুমি সেদিন লুনা আপুর সাথে বাসার নিচে অতক্ষন ধরে কথা বললে, আমার কি যে খারাপ লাগতেছিল।চোখের মধ্যে পানিও এসে গেছিল দু-এক ফোটা।কিসের অত কথা তোমাদের?
-যাহ্ বাবা!লুনা আমার বান্ধবী হয়, তার সাথে আমার কথা থাকতে পারে না।
-না থাকতে পারেনা। তুমি শুধু আমার সাথে কথা বলবা।
-তোর সাথে আবার কিসের কথারে পিচ্চি।
-দেখো রুনুদা আমাকে পিচ্চি বলবা না৷জানো না আমি ইন্টারে পড়ি।এখনো কি আমি পিচ্চি।
-নয়ত কিরে। এই তো কবছর আগেও তুই আমার কোলে পি করে দিলি।
-ছি ছি কি লজ্জার কথা।কি সব বল তুমি।অই তুমি মানুষ হবা না!
-হা হা পিচ্চির বড় হওয়ার সাধ জাগছে রে।
-দেখো বেশি পিচ্চি পিচ্চি বললে আমিও খালামনিকে বলে দিব।
-কি বলে দিবি।
-লুকিয়ে লুকিয়ে রাতে, চোরের মত ছাদের দরজা খুলে, কে ছাদে সিগারেট খায়?
-না না বলিস না বোন। প্লিজ বলিস না।
-উহু আমাকে বোন বলবা না তো। একসময় আমি তোমার বউ হব।
-কি?বউ?তোর বয়স কত?
-আঠারো।
-আমার জানিস কত?ঊনত্রিস। বয়সের পার্থক্য কত হল হিসেব বুজিস?
-আমার হিসেব করা আছে।তোমার তেইশ বছরে শেষ করা অনার্স সার্টিফিকেট দেখে হিসেব করেছি তুমি আমার চেয়ে ১১ বছর, ৮ মাস,১২ দিনের বড়। মেয়েদের কাছে ওটা কোন বিষয় না। বরংচ হাসবেন্ড -ওয়াইফের বয়সের পার্থক্য থাকলে সেটা আরো ভাল। সংসারে সুখ আসে।আর যদিও তোমার-আমার টা একটু বেশি, তারপরেও মন দিলে ওটা কোন ব্যাপার না।
-তুই এত কিছু বুজিস হিমি।তারপরেও তোকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।এত পিচ্চি মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবো না।
-ফের পিচ্চি।দাড়াও!
হিমি আমার সাথে কথা বলতে বলতে ডালিম খাচ্ছিল। সে এবার তারই খোসা গুলো আমার দিকে ছুড়ে দিতে উদ্যত হচ্ছিল।বুঝতে পেরে আমিও রান্নাঘরে দে দৌড়। সেখানে মা রান্না করছিল। মাকে গিয়ে বললাম -মা তুমি আজই হিমিকে তাদের বাসায় পাঠাই দাও।তার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।
আমার পিছে পিছে হিমিও দেখি রান্নাঘরে ডুকে, মায়ের আচলে মুখ ঢেকে বলে,দেখোতো খালামনি রুনুদা আমাকে পিচ্চি বলতেছে৷মা এবার আমাকে মিথ্যে শাসিয়ে, চোখ পাকিয়ে বলতেছে কি ব্যাপার রুনু তুই আমার মেয়েকে পিচ্চি বলছিস কেন?আমার মেয়ে কি পিচ্চি আছে?বলে আম্মুও মুখ চেপে হাসতে থাকে। বুজতে পেরে হিমি বলে,খালামনি তুমিও!এবার সে লজ্জায় রাংগিয়ে যায়।
লজ্জা!হিমির লজ্জা! লজ্জায় সিটিয়ে যাওয়া হিমির এই অবনত মুখশ্রী আজ দু বছর আমায় ঘুমুতে দেয়না।প্রথম প্রথম নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম এটা কোন ভাবেই সম্ভব না। সে বয়সে আমার অনেক ছোট।না এটা পসিবলই না। কিন্তু মানুষের মনে প্রেম নামলে আর চারটা মানুষের যা হয় আমারো তা হল।কোনো বাধাকেই আর বাধা মনে হল না।তারপরে আবার আরেক সমস্যা বাধল এই কথা হিমিকে আমি বলব কি করে।না কোনভাবেই তাকে আমি বলতে পারব না।তখনই আমার সমস্যার সমাধান নিজে এসে আমার হাতে ধরা দিল। যেন আল্লাহ পাক আমাদের মিলন লিখেই রেখেছেন।যেদিন মা এসে বলল -হ্যা রুনু শুনছিস হিমির বিছানার নিচে তোর বিশটা স্কেচ পাওয়া গেছে।প্রতিটার পেছনে আবার অনেক অনেক কি সব কথা লেখা।আমি বাবা তোর খালামনির সাথে কথা বলে এসেছি আমার বাড়ির বউ হিমির মত লক্ষী মেয়েই কেবলমাত্র হওয়ার যোগ্যতা রাখে৷ আমার কথার মান রাখিস বাবা।
সেদিন আমি মায়ের সামনে একটি কথাও বলতে পারিনি।আমার ভেতরে কি হচ্ছিল আমি নিজেই তো বুজতে পারছিলাম না। গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহে মৃত প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য আল্লার কুদরতে যেমন হুট করে বৃষ্টি নামে, সেদিন মায়ের কথা আমার জন্য সেরকমি ছিল। হিমি অবশ্য এসবের কিছুই জানে না। তাই আমিও তার সাথে মজা নেই।
তারো দুবছর পরের এক রাত। প্রচুর টেনশন হচ্ছে।নিজের কাছেই অবাক হচ্ছি আজ নিজের রুমে যেতেই আমাকে বারবার ভাবতে হচ্ছে। হাত পা ঘেমে যাচ্ছে,বুকে সাহস পাচ্ছিনা।হ্যা ঠিকই ধরেছেন আজ আমার বাসর রাত। দেয়ালের ওপাশের মেয়েটি হিমি৷ আমার হিমি! হালকা ভেড়ানো দরজার ফাক দিয়ে দেখতে পাচ্ছি আমার হিমির সেই নোয়ানো মুখশ্রী। নাহ, যাহ হওয়ার হবে এবার রুমে যাই। রুমে গিয়ে হিমির পাশে বসলাম।কত কি ঠিক করে আসলাম। কি কি বলব।সব ভেস্তে দিয়ে তার আগেই হিমি বলল, ওই হাদারাম নিজের রুমে আসতেই এত ঘামতে হয় তোমার। দরজার ওপাশে এত পায়চারি করতে হয়।আগেও ওই হাদারাম ছিলা, এখনো ওই হাদারাম ই থাকলা।
-আগে হাদারাম ছিলাম মানে?
-নয়ত কি? আজকের তারিখ কত,আজকের বার কি এগুলা জানার জন্য যখন আমাক ফোন দিতা তো তোমাকে কি ভাবব?
-তার মানে? তার মানে?তুমি’ই, তুমি সব বুজতা?
-তা নয়ত কি।মেয়েরা সব বুজতে পারে।
-তবেরে পিচ্চি মেয়ে সব বুজো না!
-পিচ্চি।ফের নিচ্চি? আজ পিচ্চি নিয়ে তোমাকে একটা প্রতিজ্ঞা করতেই হবে।
-কি প্রতিজ্ঞা?
হটাৎ হিমির হাসি হাসি মুখটা পরিবর্তন হয়ে গেল। সে কিছুক্ষন কোন কথাই বলল। তারপরে খুব নিচু স্বরে বলল -তুমি প্লিজ আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাকে পিচ্চিই ডাকবে।কথা দাও আমার আগে কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না।
চেয়ে দেখলাম হিমি কাঁদছে।আমি তার মাথাটা আস্তে করে আমার কাঁধে নিলাম।হিমি কাঁদছে।আর অন্যদিকে এক শোভিত পরিপূর্নতা ভড়িয়ে দিচ্ছে আমার শরীর,মন,প্রাণ।আমি হারিয়ে যাচ্ছি বহুদূরে। এ পৃথিবীর ছায়াপথ ছেড়েও আরো এক অজানালোকে।