এক দেশে ছিল এক টোনা আর টুনি। একদিন টোনা কহিল, ‘টুনি, পিঠা খাইব।’
টুনি কহিল, ‘ফ্রিজে আছে, বাহির করিয়া নাও। সমস্যা কী!’
টোনা কহিল, ‘না, ঠান্ডা না! গরম গরম পিঠা খাইতে ইচ্ছা কিরতেছে।’
টুনি বিরক্ত হইয়া কহিল, ‘ওভেনে গরম করিয়া খাও।’
টোনা দেখিল, এ তো মহা মুশকিল। সে অনলাইন হইতে একটা পিঠার রেসিপি নামাইয়া বলিল, ‘টুনি, আমি এই পিঠা খাইব।’
টুনি কহিল, ‘অনলাইনে অর্ডার করিয়া দাও। হোম ডেলিভারি করিয়া দিবে।’
টোনা কহিল, ‘ওগুলোয় স্বাদ হইবে না। আমি তোমার হাতেই পিঠা খাইব।’
টুনি পত্রিকা হইতে চোখ না সরাইয়াই কহিল, ‘নো, হানি। নট টুনাইট, আমি ব্যস্ত।’
টোনা কহিল, ‘কী লইয়া ব্যস্ত তুমি যে আগেকার আমলের গল্পের মতো আমাকে পিঠা বানাইয়া দিতেছ না!’
টুনি কহিল, ‘তোমাকে বলিয়া তো লাভ নাই। আমার আর এই খড়কুটোর বাসায় থাকিতে ভালো লাগে না। কত করিয়া বলিলাম, একটা অ্যাপার্টমেন্ট বুকিং দাও। পাকা বাসায় থাকি।’
টোনা কহিল, ‘এত টাকা কই পাই?’
টুনি কহিল, ‘তাহা হইলে বানাইয়া দাও। বানাইতে কম টাকা লাগে।’
টোনা কহিল, ‘অ্যাপার্টমেন্ট বানাইতে তো ইট লাগে, বালু লাগে, সিমেন্ট লাগে, রড লাগে। আমি এইগুলান কই পাই?’
টুনি কহিল, ‘এই জন্যই বলি, পিঠা পিঠা নিয়া এত প্যাকপ্যাক করিয়ো না। আমাকে চিন্তা করিতে দাও। আই অ্যাম ওয়ার্কিং অন ইট।’
টোনা কহিল, ‘ক্যামনে কী?’
টুনি কহিল, ‘শোনো, গত বছর আমি এক ট্রাক বালু সংগ্রহ করিয়া রাখিয়াছিলাম। আর গত সপ্তাহে গুলশান হইতে এক ট্রাক ইট সংগ্রহ করিয়াছি। এখন দরকার সিমেন্ট আর রড।’
টোনা কহিল, ‘ওহ্, দারুণ! কিন্তু রড আর সিমেন্ট কই পাইব?’
টুনি কহিল, ‘আর কয়েক দিন অপেক্ষা করিলেই আশা করি গুলশান এলাকা হইতেই এক ট্রাক সিমেন্ট আর রড পাওয়া যাইবে।’ শুনিয়া টোনা খুশিতে হইহই করিয়া উঠিল। কিন্তু টুনি চিন্তিত স্বরে কহিল, ‘সিমেন্ট, রড নাহয় পাওয়া যাইবে কিন্তু বাঁশ পাওয়া মুশকিল। তবে উপায় একটা আছে।’ টোনা কহিল, ‘কী উপায়?’
টুনি কহিল, ‘তোমাকে এক জায়গায় যাইতে হইবে। সেইখানে গিয়া বাঁশ ম্যানেজ করিয়া আনিতে পারিলে তোমাকে গরম গরম পিঠা বানাইয়া খাওয়াইব।’
টোনা কহিল, ‘কোথায়?’
টুনি কহিল, ‘এরশাদের কাছে।’
শুনিয়া টোনা সঙ্গে সঙ্গে হাউমাউ করিয়া কাঁদিয়া উঠিয়া কহিল, ‘না না না, আমি মরিয়া গেলেও উনার কাছে বাঁশ আনিতে যাইব না। উনি খুব রিস্কি পারসন। এমনিতে রাজনীতিবিদরা আমাদের প্রতিদিন বাঁশ দিতেছেন। সেই বাঁশই আমরা লইতে পারিতেছি না! তুমি এখন পিঠা খাওয়াইবে কি না বলো?’
টুনি রাগিয়া উঠিয়া কহিল, ‘বাঁশ ম্যানেজ করিতে না পারিলে আমিও পিঠা বানাইতে পারিব না। তুমি মুড়ি খাও গিয়া। ডিস্টার্ব করিয়ো না।’ এই কথা শুনিয়া টোনা রাগে–দুঃখে তার শাশুড়ির কাছে ছুটিয়া গেল। গিয়া কহিল, ‘ও টুনির মা, তোমার টুনি কথা শোনে না…।’