ছলাৎ ছলাৎ ছলাৎ ছলাৎ
ছলাৎ ছলাৎ শব্দ হচ্ছে। গভীর রাত। আচমকা ঘুম ভেঙ্গে গেল তার । ঘুম ভেঙ্গে গেলে প্রথমে যা হয় ইদানিং এক আতঙ্কে মন দেহ অসাড় হয়ে থাকে কতক্ষণ। তখন শোয়া থেকে উঠে অজু করে জায়নামাজ এ বসে থাকে কতক্ষণ। ফজর নামাজ এর আজান শোনা পর্যন্ত্য সে জায়নামাজ এ কাটায়। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে কোরান শরিফ পড়ে। তারপর ও তার ভয় টা কাটছেনা ইদানিং। তার বর্তমান বাসা টা ধানমন্ডি লেক সংলগ্ন। এই বাড়ি টা কিনে যে ভুল করেছে। এখন বিক্রি ও করতে পারছেনা। ছেড়ে যাওয়া ও সম্ভব হচ্ছেনা। পুরা মাস আসিফ অফিস এর কাজে টুর এ থাকে। বলা যায় একা একা এই বাসা টা আগলে থাকে ।
পাশে লেক থেকে সম্ভবত আওয়াজ টা আসছে। জানালা দিয়ে যে দেখবে সে সাহস করে উঠতে পারছেনা। গভীর রাত হলে যা হয় ছোট খাট যে কোনো শব্দে সে চমকে চমকে যাচ্ছে। এখন ফজর নামাজ এর সময় আসতে বিলম্ব আছে। তাই সে তসবিহ পাঠ করতে করতে আস্তে আসতে জানালা খোলে। জানালা খুলতে গিয়ে লাপ দিয়ে বিছানায় বসে পড়ে আচমকা কিছুর তীক্ষ্ণ আওয়াজে।
বুকে থু থু দিয়ে উঠে দাড়ায়।
নাহ এই বাসায় আর একা থাকা যাবেনা। হয় কাওকে আনিয়ে রাখতে হবে। নাহলে এই বাসা তালা দিয়ে কিছুদিনের জন্য বোনের বাসায় চলে যাবে কালকে। এখন ও বুকের ধুক ধুক যায়নি।
টুক টুক টুক টুক।
মনে হলো কেও দরজায় নক করছে। এত রাতে কে এলো ?ভয়ে হাত পা অবশ হয়ে আসতে চাইল।মিরর এ দেখা যায় কে ?ভয়ে সে দরজার কাছে গেলনা। বার বার আসিফ কে ফোন করছে সে। আসিফ সম্ভবত ফোন বন্দ করে ঘুমাচ্ছে। বোনের বাসায় ফোন দিল। কেও ধরছেনা। এত রাত সবাই ঘুম। তার হলো একা নির্ঘুম রজনী।
আবার ও শব্দ টুক টুক টুক টুক।
এবার এসে লক মিরর এ দেখল নাহ কেও নেই। ভয়ে সে দৌড়ে এসে ভিতরের রুম এর দরজা বন্দ করে দিল।
ক্যাচ করে কোথাও শব্দ হলো মনে হচ্ছে। অনেক টা পুরানো বাড়ির দরজা কফিন এর ডালা খুললে যে ধরনের আওয়াজ হয় সেরকম মনে হলো।
খুব আবছায়ায় এক প্রিয় দর্শিনী মহিলা কে দেখতে পাচ্ছে।
আহ কে ? মা খুব ছোট বেলায় হারিয়ে ফেলা মা কে আজ আবার দেখছে। সিনেমার দৃশ্যের মত একটা র একটা দৃশ্য ভেসে উঠছে দেয়ালের গায়ে। সে গান গাছে দোলনায় দুলছে। হাসিতে ফেটে পড়ছে।
কিসের এত হাসা হাসি পাশে শোনা গেল এক কর্কশ কন্ঠের আওয়াজ। এ শব্দ এত কর্কশ কেন ? এ যে বাবা।
পুরুষ লোক টি এসে গলা টিপে ধরল সে প্রিয়দর্শিনীর।
মা মা মাগো। বলতে বলতে একসময়ে সে চেতনা হারিয়ে ফেলে।
দুই ঘন্টা পরে তার চেতনা ফিরে এলো। ফিরে এলো বাস্তবতায় সচেতনতায়। এ কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়। কোনো দৃশ্য বিভ্রম ও নয়। তার শৈশব এর কুত্সিত অন্ধকার জীবনের স্মৃতিচারণ। যা সে কখনো মনে করতে চায় না। কাওকে বলেনি সেই শৈশব এ পুলিশ এর কাছে মিথ্যে বলে তার মায়ের হত্যাকারী বাবাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল।
মাগো মাগো মাপ করে দাও মা তোমার হত্যাকারীকে মাপ করে দাও।