পাশের রুমে তাস খেলা চলছে। খেলার মাঝে তারা সীমাব্ধ নেই। উচ্চস্বরে বাক্য বিনিময় চলছে। উল্লেখ যোগ্য শব্দ দূষন মাসুদের মুখ থেকেই বের হচ্ছে। মাসুদ এই ম্যাচের একমাত্র অস্থায়ী সদস্য। মাত্র ছয় মাসের প্যারামেডিক্যাল কোর্সে কোথায় যেন ভর্তি হযেছে। আচরণ দেখলে মনে হতে পারে সে হাজার বছর ধরে এই ম্যাচে থাকে! সবচে মজার ব্যাপার হচ্ছে সে আস্তে কথা বলতে পারেনা এবং ঘনঘন নির্বাক হয়!একজন সদস্যের মুখ থেকে নিশ্চয় এ শব্দ দূষন গ্রহনযোগ্য নয়।তবে খেলার সঙ্গীরা শব্দকে মেনে নিয়েছে।অতি উচ্চ শব্দে পড়াশুনা ব্যহত হচ্ছে আমাদের।শব্দ করে তাস খেলা নিয়ে মাসুদের সাথে দেলোয়ারের খুব ঝামেলা চলছে। সাথে আছি আমিও। আমরা থাকব চার বছর তাই অধিকারটা আমাদের বেশি। পরদিন পরিক্ষা শেষে দেলোয়ার দ্বারস্থ হল সনোয়ার ভাইর কাছে। এই এলাকার লোকাল মাস্তানরা গ্রুপ হিসাবে কাজ করে। সানোয়ার সেই সব গ্রুপের মধ্যে একজন। তিনি তাকে আশস্থ করলেন কিছুক্ষনের মধ্যেই সে ম্যাচে যাবে। দেলোয়ারের কাছে কথাগুলো শুনে কৃত্বিতের সাথে অপেক্ষা করছিলাম মাসুদের করুন পরিনতি দেখার জন্য।
তিন তালার গেটে জোরে জোরে আওয়াজ হচ্ছে। ম্যাচের কেউ এমন জোরে শব্দ সাধরণত করেনা। আমি গেট খুলতে গেলাম। জিগাসা করলাম কে? ওপাশ থেকে কঠিন কন্ঠে জবাব জবাব এল দরজা খোল। গেট খুলে দেখি সানোয়ার ভাই মুখে সিগারেট নিয়ে প্রবেশ করলেন। সাথে ১৫ সদস্যের একটা বিশাল টিম। দ্রত সালাম দিলাম। জবাব এল না। মনে হলো আমাকে তিনি দেখছেন না!শুধু বলল মাদারছোদ মাসুদ কই? বললাম ডেকে আনব? যা আন। শোন, দেলোয়ারের রুম কোন দিকে? রুম দেখিয়ে উজ্জল চোখে বললাম ও আমার রুমমেট। যা ওটাকে ডেকে দেলোয়ারের রুমে আয়। দুপুরে সদ্য খেয়ে ঘুমানো মাসুদকে ঘুমের কোল থেকে টেনে তুলাম। বললাম সানোয়ার ভাই ডাকে আপনাকে। দ্রুত স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল। কারণ সে ভাল করে জানে সানোয়ার কে। এ ম্যাচের অসংখ্য সদস্যকে বিনা বাধায় বহুবার মেরেছে সে। এলাকার নাম করা মাস্তান।
নতুন কেউ আসলেই তাকে সানোয়ারের গল্প শোনায় হয়। একারণে বেশ পরিচিত সানোয়ার। তবে সব সময় তাকে দেখা দেয় না। আজ দেখা দিয়েছে। সানোয়ারকে আমি মনে মনে জানোয়ার বলি। মাসুদ আমাকে যেতে বলে নিজে তৈরি হয়ে আসছে জানাল। রুমে ফিরে এলাম সবাই খাট টেবিল দখল করে বসে আছে।কেউ কোন কথা বলছে না। জায়গা করে আমিও বসলাম খাটের এক কোনায়। মাসুদ রুমে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি নিচ্ছে সানোয়ার ভাইয়ের। এই প্রথম আমার রুমে মাসুদ অনুমতি নিয়ে ঢুকছে দেখে খুশি হলাম। রানিং লিডারের নিশ্চুপ একটা ইশারায় রুমে প্রবেশ করল মাসুদ। আরো একটি ইশারায় ঘুটঘুটে কালো খাটোমত একটা ছেলে চেয়ার চেড়ে বসতে দিল মাসুকে।সবাই শান্ত ভাবে বসে আছি। আসামী হয়ে বসে আছে মাসুদ। একটা সময় তাকে মাসুদ ভাই বলতাম। সম্মান করার সীমা কমেছে বলে মাসুদ বলে আনন্দি হই। নিশ্চুপ রুমে একমাত্র শব্দদাতা হিসাবে সানোয়ার ভাই আছে। সে শুরুতেই বজ্র কন্ঠে বলল কি হয়েছে মাসুদ? মাসুদ করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। হয়তো আশা করেছিল একটু সহনুভূতিশীল দৃষ্টি। আমি স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকালাম। খাটোমত সেই ছেলেটা মাসুদের সামনে দাড়াল। গায়ে তার সিগারেটের বিকট গন্ধ! একটু নড়ে বসলাম। মাসুদ তখনো নির্বাক!
এই ছেলেটা সবকিছুতেই নির্বাক হওয়ার ভাব করত। স্বাভাবিক কোন কথা শুনলেই সে নির্বাব হত। সে হয়তো ভাবতো নির্বাব হলে তার চেহারাটা নিশ্পাপ লাগে। একবার ছুটিতে ম্যাচের সবাই বাড়িতে চলে গেল। শুধু আমার যাওয়ার তারিখটা ছিল সবার শেষে। ম্যাচের জন্য কেনা নতুন বালতি নিয়ে মাসুদ বাড়িতে গেল। পথিমধ্যে সাক্ষী হয়ে দেখেলাম তার হাতে জ্বলজ্বল করছে একটা লাল বালতি। রিকসায় থাকা মাসুদকে ডাক দিলাম। সে আমার ডাক অগ্রাজ্য করল। ছুটি শেষে সাবাই ম্যাচে ফিরল। সদ্য কেনা বালতিটা খুজে পেতে ব্যর্থ সবাই। এক ছেলে তো বালতি চোরকে নিয়ে বিরাট গালি দিল। শুনে মাসুদ নতুন বালতি কেনার আহব্বান জানাল। সবার সম্মুখে আমি বললাম মাসুদ ভাইকে লাল বালতি নিয়ে রিকসায় যেতে দেখেছি। সবার সামনে মাসুদ চরম মাত্রায় নির্বাক হল। আমি তার অবাক হয়ার ভাব দেখে অবাক হলাম! মাসুদ রেগে গেল। অন্যরা তাকে থামাল। নতুন করে আবার আয়োজন করে বালতি কেনা হল।
পচন্ড গন্ধ বয়ে বেড়ানো ছেলেটা নিরবতা ভেঙ্গে দেলোয়ারের দিকে তাকিয়ে বলল কিছু কস না ক্যা? সবাই দেলোয়ারের দিকে দৃষ্টিপাত করলাম! উচ্চস্বরে দুটি শব্দ বেজে উঠল। একটি চড়ের অন্যটি মাগো! বুঝলাম সবার দৃষ্টি আড়াল করে মাসুদকে চড় মারা হয়েছে। আনন্দে আমার মুখে ফুল চন্দন পড়ল। মনে হল হাসিটার জন্য আমি দায়ী না। বাম গালে হাত দিয়ে বসে আছে মাসুদ। এরই মাঝে সানোয়ার ভাই উচ্চ শব্দে বেশ কিছু নোংরা গালি প্রসব করলেন। মাসুদের লজ্জা হয়েছে কিনা জানিনা আমি লজ্জা পেয়ে বসে রাইলাম। পরিশেষে সানোয়ার উত্তেজিত হয়ে মাসুদকে মারতে চাইল। টিম লিডারের উত্তেজনা সবাই মিলে ঠেকাল। যাওয়ার সময় সানোয়ার বলে গেল দেলোয়ারের কিছু হলে তোকে প্যাকেট করে বাড়ি পাঠাবো। দেলোয়ারকে পাশে একটা রুমে নিয়ে কি যেন বলল সানোয়ার পরে শুনলাম কিছু খরচপাতি চেয়েছে। পরে শুনলাম দেলোয়ার ৫০০ টাকা দিয়ে জানাল আরো কিছু দিন পর ৫০০ টাকা দেবে। টাকা যায় যাক মাইর যে হেইছে তাতেই আমি খুশি।
সন্ধ্যায় বাসায় ছাদে উঠে দেখি মাসুদ বসে কি যেন ভাবছে। আস্তে করে ডাক দিয়ে বলি মাসুদ ভাই। কোন সাড়া না পেয়ে নিজ থেকেই বলি আজকে আপনাকে যে চড় মারা হয়েছে তাতে আমার খুব খারাপ লেগেছে। মাসুদ আমাকে তুই করে বলে উঠল। তাতে তোর খারাপ লাগবে কেন? তোরা মিলেই তো আমাকে..। বললাম সবই ঠিক আছে কিন্তু খারাপ লাগাটা সেই জন্য না। মাসুদ বলে উঠল তাহলে কি জন্য এত দরদ? পেচনে তাকিয়ে দোড় দেয়ার জায়গা দেখে বললাম শুনেছি একগালে নাকি চড় দিলে বিয়ে হয়না আপনার দুই গালে মারা হয়নি বলে খারাপ লাগছে। কথাটা বলার পর দ্রুত কেটে পড়লাম। হয়তো ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে আর খুজে পায়নি।
রাতে প্রবল উত্তেজনায় উত্তেজিত হয়ে বললাম দেলু এইটা কি করলি! হাসি থামিয়ে দেলোয়ার বলল নেক্স টাইম দেলু বললে তোর সাথে আমার বিরাট ঝামেলা হবে। ঠিক আছে বলব না। কঠিন মুখটা তখন নরম হতে লাগল। দেলোয়ার নিজ থেকেই বলল মাইরটা কেমন হয়েছে? বললাম চরম! গভীর রাত পযর্ন্ত আমাদের উত্তেজনা চলতে থাকে। অনেক দুঃখ কষ্ট নিয়ে মাসুদ পরের মাস থেকেই ম্যাচ থেকে বিদায় নিল। আমরা নিজেদের বিজয়ী দাবী করলাম। মাসুদ দ্বারা নির্যাতিন অন্য সদস্যরা হয়তো আমাদের সাথে সমবেত খুশি হয়েছে।