ঠিক অফিস যাওয়ার সময় হাজির হয় বলে খুব রাগ হয় । প্রায়ই বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে । খুলে দেখি একটা ময়লা বারমুডা পরা গায়ে ছেঁড়া গেঞ্জি মাথায় গামছা । বলবে – দাও , গোটা কুড়ি টাকা দাও । পাঁচজনে চা খাব ।
আশে পাশে ময়লা পরিস্কার করে ঠেলা গাড়ি করে নিয়ে যায় । করপোরেশন থেকে মাইনে পায় । প্রতিদিন আট ন’টা নাগাদ আসে আর বিকেল তিনটে নাগাদ চলে যায় । একদিন নীচে চার পাঁচ জনে কাজের ফাঁকে বসে হাঁপাচ্ছে দেখে চা খাওয়ার পয়সা দিয়েছিলাম । এটা ওটা খবরা খবর নিয়েছিলাম । সেই থেকে আস্তে আস্তে ঘর চিনে চলে আসে । আমার কুড়ি টাকায় অসুবিধা হবে না কিন্তু ওদের অনেক সুবিধা হবে তাই দিই ।
-বলেছি না হবে না । এ সময় আসবি না । যা ভাগ ।
-তুমি দাও বলে আসি । কেউ তো দেয় না । না দিলে আসব না ।
কথাটা বেশ দেমাকি লাগল । তাও দরজাটা বন্ধ করতে গিয়েও ভাতের থালা ফেলে সেই এঁটো হাতে টাকা দিলাম । সে এক গাল হেসে চলে গেল ।
দিন তিনেক পরে আবার । আজ আমার ছুটি । কিছু না বলে কুড়ি টাকা দিতে বলল – আর দশ ।
আমি হকচকিয়ে গেলাম । টাকা কি রাখা ছিল ? বললাম – কি বললি , তোর টাকা কি রাখা ছিল যে আরো চাইছিস ।
আমার রাগী মুখ দেখে সরে গেল । চলে যেতে যেতে বলল – গত দিন দশটাকা বেশি দিয়েছিলে তাই দিয়ে সবাই বিস্কুট খেয়েছিলাম । কি ভাল লাগছিল , কতদিন খাই নি । ঠিক আছে ।
আমি ওকে পেছন থেকে ডাকলাম – তোর নাম কি ?
– বিশু
আমি মানিব্যাগ খুলে আরো তিরিশ দিয়ে বললাম – এই নে । যা !
তারপর থেকে আসত দিন দশ বারো পরে পরে । বললাম – আর আসিস না ।
বলল – এই ঠিক আছে । আর হাতে টাকা নিয়ে দিত একগাল হাসি ।
বিশুর সেই হাসি আমার মনে আজও লেগে আছে ।