ইসমাইল ভাগ্যগণক। প্রতিদিন সে বসে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায়। আজ একটু আগেই এসে গেছে ইসমাইল। তখনো সাতটা বাজেনি। ঢাকার কোচগুলো ছাড়ি ছাড়ি করছে।
রংপুর,দিনাজপুর,রাজশাহী, গাইবান্ধা,কুষ্টিয়ার কিছু কিছু বাস চলে গেছে। যাত্রী অবশ্য খুব একটা নেই। সকালের ট্রিপগুলোর অবস্থা এরকমই।
ইসমাইল তার টিয়া পাখির খাঁচা, ভাগ্যলেখা কার্ডভরা খামগুলো সাজিয়ে রেখে পাশের হকার ছেলেটার কাছ থেকে দৈনিক করতোয়ার একটা কপি ধার নিয়ে পড়তে শুরু করলো। যথারীতি চোখ গেলো রাশি ফলের ওপর। ইসমাইল সিংহ রাশির জাতক। লেখা আছে, সিংহ রাশির জাতকদের জন্য আজকের দিনটি শুভ। বাড়তি আয়ের সম্ভাবনা প্রচুর।পড়েই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো ।
ভাগ্যলেখা খামগুলো আবার সুন্দর করে সাজালো। খাঁচার টিয়া পাখিগুলোকে অনেকক্ষণ ধরে আদর করলো। এরপর স্বপ্নিল চোখ মেলে অপেক্ষা শুরু করলো মক্কেলদের আসার আশায়। ভাগ্য পরীক্ষার জন্য জনপ্রতি দু’টাকা নেয় সে। সাধারণত প্রতিদিন ৪০/৪৫ জন মক্কেল আসে। পাখিদের খাইয়ে যা বাঁচে তা দিয়েই সংসার চালায়। যতো কষ্টই হোক পাখিদের সে ঠকায় না। কারণ ওরাই তার ভাগ্যলক্ষ্মী !
আজ তো ভাগ্য শুভ। তার ধারণা আজ মক্কেল সংখ্যা নিশ্চয়ই ৬০/৭০ জনও হয়ে যেতে পারে। আনন্দে ইসমাইলের নাচতে ইচ্ছা করছিলো। যদি সে রকম হয়, তাহলে আজই সে মেরিনা হলে ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ দেখতে যাবে। কতোদিন সিনেমা দেখা হয় না !
দেখতে দেখতে বেলা এগারোটা হয়ে গেলো। একটা মক্কেলও এলো না !
ইসমাইল অস্থির হয়ে ওঠে। এমন তো হয় না। অন্যদিন এতোক্ষণে ৫/৭ জন এসে যায়। আজ কী হলো। আজ না ভাগ্য শুভ !
জোহরের আজান হয়ে গেলো অথচ কেউ এলো না ! ভরদুপুরে সে আর ধৈর্য রাখতে পারলো না। একটা টিয়া পাখি ছেড়ে দিলো খামগুলোর ওপর। আজ নিজের ভাগ্যই পরীক্ষা করবে সে। কিন্তু পাখি তো কার্ড তোলে না ! পাখিও যেন বোঝে ! কাস্টমার ছাড়া সে কার্ড তুলবে কেন ? অধৈর্য ইসমাইল বললো, তোল না বাবা একটা কার্ড। পাখিটা কিছু সময় ইসমাইলের মুখের দিকে চেয়ে থেকে ৩/৪টা কার্ড বেছে একটা এগিয়ে দিলো। মনে মনে আল্লাহর নাম নিতে নিতে চোখ বুঁজে ভেতরের কার্ডটি বের করলো সে। ধীরে ধীরে চোখ মেলে দেখলো কার্ডের লেখাটা-“ভাগ্য অতি শুভ। অন্যদিনের চাইতে আয় অনেক বৃদ্ধি পাইবে। রোমাঞ্চ শুভ” !