টেবিলে বসতে না বসতেই মি: রায়ের ফোন –
‘ সন্দীপ, একবার আসতে পারবে ?’
ছোটো অফিস, আর মি: রায় হলেন হেড অফিসের লোক, মানে মালিকের ঘরের লোক| তাই ডিপার্টমেন্ট আলাদা হলেও সন্দীপ তাঁকে একটু খাতির করতে বাধ্য | যদিও মনে মনে গালাগালই দেয়, এই কাজ গুছিয়ে নেওয়া, গায়ে – পড়া আত্মীয়তা, সব কিছুর মধ্যেই একটা ছোটোলোকোমি তার চোখে পড়ে | পারতপক্ষে উনি কারোকেই আপনি – আগ্গে করেন না, এই ডাকের মধ্যেও আন্তরিকতা ছাপিয়ে প্রছন্ন অপমান উঁকি দেয় বইকি !
কিন্তু কী আর করা, ছোটো চাকরির দায় | অগত্যা হাতের সমস্ত কাজ মুলতুবি রেখে সে মি: রায়ের কেবিনে গেল |
– ‘ আর বোলো না, ছোটোলোক একেবারে | অডিটিং- এর এত ঝামেলা- একটা লাইসেন্স আটকে দিয়েছে ব্যাটারা এদিকে | যাক্গে কাজের কথাটা বলি | এখুনি আমার গাড়িটা নিয়ে ব্যাঙ্কে যাও, পাঁচ লাখ টাকা ক্যাশ রেডি রাখতে হবে এখনই !
– ‘ মানে, আমি ? আসলে কয়েকটা জরুরি কাজ ছিল-‘
– ‘ আরে সব পরে হবে, এ হল বড়ো সাহেবের হুকুম | আমি ব্যাঙ্কে ফোন করে ক্যাশ রেডি রাখতে বলেছি, শুধু যাবে আর আসবে | রমেশ !’
রমেশ ওনার ড্রাইভার | তাকে ডাকা মানেই সন্দীপের আর কোনো কথাই উনি শুনবেন না | অগত্যা সন্দীপ বিড়বিড় করে গালাগাল দিতে দিতে বেরোল |
ব্যাঙ্কে সত্যিই ভিড় নেই, আর টাকাটাও রেডিই ছিল |
চেক জমা দিতেই ক্যাশিয়ার বললেন – ” স্যার, হান্ড্রেডে প্রবলেম নেই তো ?”
সর্বনাশ ! একশো টাকার বান্ডিলে পাঁচ লাখ মানে তো থলি করে নিয়ে যেতে হবে ! না:, আজ দিনটাই খারাপ সন্দীপের|
– ‘ কোনো চিন্তা নেই স্যার, এই যে আমি বান্ডিলগুলো খবরের কাগজে মুড়ে দিচ্ছি |’ ক্যাশিয়ার দেঁতো হাসল | তবে স্যার গাড়ি থাকলেও একটু সাবধানে ‘ বুঝলেন তো, জায়গাটা ছোটোলোকদের কিনা !’
বগলে বড়ো বড়ো দুটো কাগজের বান্ডিলে টাকা নিয়ে সন্দীপ কোনো মতে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে যাবে, রাস্তার দুটো ছেলে তাকে ধরল | ‘ বাবু, পয়সা !’
সর্বনাশ ! সন্দীপ পা চালাল | রমেশ গাড়িটা পার্ক করেছে রাস্তার ওধারে আর এখন পেছনে জুটেছে এই দুটো আপদ | সন্দীপ যত তাড়াতাড়ি পারল এগোতে লাগল, কিন্তু ছেলে দুটোও ছুটতে লাগল তার পেছনে –
” বাবু, পয়সা বাবু !”
প্রাণপণে রাস্তা পেরিয়ে গাড়ির কাছে পৌঁছতেই ছেলে দুটো সন্দীপকে ধরে ফেলল | রমেশকে দেখে সাহস পেয়ে সন্দীপ ঘুরে দাড়াল ওঁদের টেনে একটা চড় মারবে বলে, কিন্তু ঘুরেই সে থমকে গেল, তোলা হাতটা তোলাই রয়ে গেল|
‘ বাবু আপনার পয়সা পড়ে গেছিল !’ হাঁপাতে হাঁপাতে ছেলে দুটো তাকে কথাটা বলে আর তার হাতে কিছু একটা গুঁজে দিয়েই হাসিমুখে দৌড়ে পালাল |
হতভম্ব সন্দীপ একশো টাকার বান্ডিলটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েই রইল | কোন ফাঁকে কাগজের মোড়কের ফাঁক দিয়ে পড়ে গেছিল বান্ডিলটা !