সেই ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি পুজোর মৌসুমে বেশ বৃষ্টি হয়। নদীতে বেশ পানি থাকে । এলাকার লোকজন একটি নৌকা বাইসের আয়োজন করে। ছেলে মেয়ে বুড়ো সবাই বেশ উপভোগ করে।পুজোর ছুটিতে সাধারনত আমরা নানা বাড়িতে বেড়াতে যাই কিন্তু এবার আমার খালাত ভাই ও মামাত ভাইরা সবাই আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবে। আমরা সবাই মহাখুশি। আমার বড় বোনের সাথে আমার এক খালত ভাইয়ের প্রেম না কী চলছে এ নিয়ে আমার মা ও খালার ভিতর বেশ মান অভিমান বেশ কিছু দিন ধরেই লেগে আছে । আমাদের ধারনা এবার ওদের বিয়ে হবে। তা না হলে মা কেন খালামনি আসছেন । এক জন আরেক জনের মুখ দেখতে চাইত না। আমার মা বলত আমার মেয়ের মাথা খেয়েছে আর খালা বলত আমার এত সুন্দর ছেলেকে তাবিজ করেছে । যাই হোক এবার আমাদের গ্রামের বাড়িতে মায়ের বংশের লোকদের প্রাধান্য । আমার দাদু আবার তিন ছেলের বউদের মধ্যে আমার মাকে একটু বেশি আদর করে । মা ও দাদির প্রতি একটু বেশি যত্নশীল। আমার এক খালাত ভাই নাম বিল্টু। সে বেশ রশিক আর অসম্ভব দুষ্টু। আমরা বেশ খুশি । বিল্টু ভাই মানে বাড়তি আন্ন্দ, বাড়ি খুশি ।
দাদু কিন্তু ভয়ে থাকে বিল্টু কি অঘটন ঘটায় আবার । আমরা ও সবাই এক্সাইটেড বিল্টু ভাই কি করে।
সারাদিন প্রস্তুতি,বিকেল বেলা শুরু হলো নৌকা বাইস প্রতিযোগিতা ।দাদাকে ও আমন্ত্রন জানলো এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তি হিসেবে। বিল্টু মনে মনে এই সুযোগটাই খুঁজছিল । বিল্টু শয়তানি মাথার খেলা সে নানুকে এবার সন্দেহ ঢুকাবে ওর নানা একটি মেয়ের সাথে প্রেম করে । নানুকে তো কোন মতেই বিশ্বাস করাতে পারে না। এবার সে বিশ্বাস করিয়েই ছাড়বে।
নানু তোমার তো সর্বনাশ হয়ে গেছে !সর্বনাশ হয়ে গেছে!!
নানু– কি হয়েছে?
–আরে নানু বুড়াতো এক মেয়ের প্রেমে হাবু ডুবু খাচ্ছে, তুমি বাড়িতে থেকে কি কর ? এগুলো দেখ না?
তাই নাকি, তোর নানা এই বয়সে এই কাজ করতেই পারে না । বুড়ি তুমি আমাকে বিশ্বাস করলে না,
পরে পস্তাবে।
–তাই?
–হ্যা।
নানুকে নিয়ে গেল নৌকা বাইস দেখাতে । বিল্টু একটি মেয়েকে আমন্ত্রন জানাল নৌকা বাইস দেখাতে, মেয়েটি বেশ সেজে গুজে এসেছে । বিল্টু বেশ স্মার্ট বয় । মেয়েটির মনে মনে ইচ্ছা বিল্টুর সাথে কথা বলা, এক সাথে মেঠো পথের ধান খেতের পাশ দিয়ে হাটা, পা পিছলে পড়ে গেলে বিল্টুর হাত ধরা । মেয়েটিকে দেখে বিল্টু বেশ ও খুশি। নানু এই সুন্দরী তোমার সতীন । “ধুর হারামজাদা এই ছুকড়ি কি ঐ বুড়ারে ইয়া করবে” বলে দিল এক ধমক। নানুকে তো কোন মতেই বিশ্বাস করাতে পারছে না । কিন্তু মনে মনে ভয় ও পাচ্ছে বুড়ি । আর বুড়ার উপর রাগ বাড়ছে ।বিল্টুর সাথে নানার বেশ রশিকতা চলছে। নানাকে বিল্টু আগে থেকেই বলে রেখেছে যে তার এক বান্ধবী আজ নৌকা বাইস দেখবে আর নানা কে সে পরিচয় করিয়ে দিবে । মেয়েটি আসলে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল আর অনুরোধ করলো আগে থেকেই ঠিক করা একটি নৌকায় চড়তে । না উঠেতে রাজি হয় না – “না আমি এই বয়সে নৌকায় চড়বো না” বিল্টুর মনে শয়তানি বুদ্ধি খেলা করছে। প্রথমে সেই মেয়েটিকে নৌকায় তুলে পরে নানাকে কৌশলে তুললোত ।
নানাকে বিল্টু– নানা ভাই স্মৃতির হাতটা ধরে নৌকায় তুলো ।স্মৃতি খুব ভয় পাচ্ছে । সত্যিই নানা বোকার মত হাত ধরে নৌকায় তুললো । বুড়ি নানু বুড়ায়ার কান্ড দেখে তো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো । বিল্টু দৌড়ে এসে নানুকে সান্তনা দেয় । বুড়ি এ কি দেখছো একটু দাড়াও আরো দেখবে। বিল্টু বদের হাড্ডি নৌকার এক মাথায় চড়ে কাত করে দিল নৌকা । দু‘জনই নদীতে পড়ে গেল । গ্রামের লোক সাতার কাটতে জানে তারপর ও বিল্টু নানাকে স্মৃতির হাত ধরে তুলতে বলে । যে হাত ধরে কিনারায় নিয়ে এলে এলাকার সবাই হো হো করে হেসে উঠলো ।সবাই নৌকা বাইস উপভোগ করলো ।বিল্টু ও স্মৃতি বেশ উপভোগ করলো । বিল্টুর নানু রাগে ক্ষোভে বাড়ি চলে গেল। সন্ধ্যার পর সব ছেলে মেয়েদের নিয়ে এক বিশাল সালিস বসালো । নানু সিদ্ধান্ত নিল সে আর নানার সাথে থাকবে না। এই বুড়ো বয়সে সে কেন এমন যুবতি মেয়ের প্রেমে পড়ল আর এত মানুষের মাঝে এমন কান্ড করলো । সবাই হতো বাক!!
বিল্টু এক কোনে বসে আছে। সবাই নানাকেই দুষছে । নানা তো বেকুবের মতো বসে আছে। কোন উত্তর নেই। আসলে সে এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা । নানু সবার সামনে কেঁদে দিলে পরিস্থিতে অন্যদিকে মোর নেয়।। সবাই নানুর পক্ষে। বিল্টু বেড়িয়ে এসে– আমি নানা পক্ষে। সবাই হতোবাক !!
বিল্টুর মা– তুই সব দেখলি আর তুই !
–হ্যা মা। আর নানু শোন আমি কালকে তোমাকে বিয়ে করবো।
নানু–ধুর হারামজাদা শয়তান আগে ওনার শয়তানি বন্ধ করা।
–নানু আগে আমার কথা শোন । নানার এখানে কোন দোষ ছিল না।
–তাই?আমারা সবাই যা দেখলাম তা কি ভুল আর তুই যা আমাকে দেখালি ?তোরা ছেলেরা সব শয়তান ।
–নানু স্মৃতিকে আমি রাজি করিয়েছিলাম এই অভিনয় টুকু করার জন্য ।সবাই বিস্ময়ে একে অপরের দিকে তাকায় আর হেসে গড়াগড়ি … ।
এবার শুরু বিল্টু আর আমার বোনের ঘটনার স্বীদ্ধান্তের পালা।নানা ভাই এবার খুব শক্তি সাহসি পুরুষ ।
আমার মা আর খালা একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। আমার বড়বোন ও দেখছি বিল্টু ভাইয়ের দিকে চেয়ে চেয় হাসছে । মা বুবুর উপর ভীষন রাগ ।
নানা – আমি তোমাদের সবার বড় আর আমি বেশি দিন বাঁচবোনা । আমার উপর একটা দায়িত্ব এসছে একটা ভালো কাজে সাহায্য করা এখন তোমাদের সহযোগিতা দরকার, আমার একটা আবদার রাখবে তোমরা ?
মা মনে মনে ভাবছে রুপার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে -”আমার মেয়েকে বিল্টুর কাছে বিয়ে দিব না” বলে ঘরের ভীতর চলে গেল ।সবাই চুপ!
বিল্টু– দাদু তুমি বলো আর না পারলে আমিই বলি ।
রুপা – কেউ না পারলে আমি বলি।
আমার খালা চাচারা সবাই হতবাক। মেয়ের দেখি লজ্জাসরম বলতে কিছু নাই!!
নানা– না তোমাদের বলতে হবে না । আমি বলছি।
নানা বিল্টুর কানে কানে ফিস ফিস করে কিছু একটা বলছে। এতে সবার সন্দেহ আরো বাড়ছে । মেঝ বউ মা কোথায় ?
–এই যে বাবা (ঘরের ভীতর থেকে)।
–শোন তোমার একটু বাড়তি কাজ করতে হবে।
–বলেন বাবা।
–কালকে বিল্টুর বিয়ে।
সবাই এ ওর দিয়ে তাকায়।রুপার সে কি হাসি ।মা মাটিতে বসে পড়লো।
–বউ মা তোমার কি হলো ? কেন তোমার বোনের ছেলে আমাদের এলাকায় বিয়ে করলে তোমার অসুবিধে আছে ? থাকলে বলো বিয়ে বাতিল করে দেই।
–বাবা মেয়েটা কে ?
–স্মৃতি । কেন মেয়েটা ভালো না ?
–হ্যা, ভালো তবে রুপাকে নিয়ে যে এতদিন সবাই কানাকানি করছিল ?
ওসব ভুল।রুপা শুধু ওদের ঘটকালী করছিল ।
সবাই হাপ ছেড়ে বাচঁলো । বেশ ধুমধাম বিয়ে হলো বিল্টুর। নতুন বউ নিয়ে ঢাকায় চলে গেল ।
এভাবেই আমাদের সংসারে হাসি ঠাট্রার মধ্যে কাটতো ছোট বেলার প্রায় প্রতিদিন ।