শুকনো পাতা

শুকনো পাতা

বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে যেদিন ইচ্ছাকৃত ভাবে ধাক্কা খেয়েছিলাম আর সে আমাকে গুনে গুনে মাত্র তিনটা লাড্ডু আইমিন থাপ্পড় দিয়েছিলো। সেদিন-ই বুঝেছিলাম, এই মেয়ে আর যাইহোক দরদী না, পুরাই ফকিন্নি। সেই থাপ্পড়ের দাগ আমার গালে এখনও স্পষ্ট দেখা যায়। পুরা পিংক কালার হয়ে গেছে। আমি কিচ্ছু বলিনি কারণ মেয়েটিকে ভালোবাসি।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলাম। উঠেই প্রতিদিনের মতো ছাদে যাওয়ার জন্য তৈরি হলাম। কারণ এইসময় মেয়েটা ছাদে থাকে। আমিও পুরা শরীরে হালকা পারফিউম মারলাম। মুখ দিয়ে গন্ধ বের হচ্ছে, তাই হা করে ফুসসসস করে একটু পারফিউম মুখেও মারলাম। ইয়াককক কি তেতো! তারপর দৌঁড়ে ছাদে চলে গেলাম। ছাদে এসেই টাস্কি খেলাম। কারণ আজকে মেয়েটি চোখ বন্ধ করে গুনগুন করে হাত নারিয়ে গান গাচ্ছে। আহ! কি কোকিলের মতো কণ্ঠ। শালিকের মত নাক, টুনটুনির মতো ঠোঁট, প্যাচার মতো মুখ, চামচিকার মতো কান মেয়েটাকে কত্ত কিউট লাগছে বলা যাবেনা। তখনই জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। যে করেই হোক এই মেয়েকে আমার পেতেই হবে। মাইয়া ইজ বেরি ইম্পরট্যান্ট ফর মাই লাইফ। আই হেতিক বিয়া করাম।

আমিও মেয়েটার গান শুনছি আর চোখ বুঝে গানের তালে হাত নাড়াচ্ছি। কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম কে যেন আমার শার্টেরর কলার ধরে আছে। চোখ খুলে দেখি মারিয়া (মেয়েটি), বললাম….

–কিচ্চে মারিয়া, কলার ধরছো ক্যারে…?

-হারামি তুই আমার গান শুনছিলি ক্যান?

–তোমার গান অনেক সুন্দর তাই শুনছিলাম।

-তুই আমার গান শুনবি ক্যা? তর এত্ত বড় সাহস তুই আমার গান শোনস।

–ধুরু রাগ করো ক্যারে, জানো রাগলে তোমাকে ইন্দুরের মতো দেখা যায়।

-হোয়াট? (কলার ছেড়ে দিয়েয়ে)

–দি ইঁন্দুর।

-মানে?

–ইউর গান।

-ফাইজলামি করস, থাপ্পড় খাবি।

–ইউর গান ইজ ইঁন্দুর, ইউর দাদী ইজ বান্দর, ইউর খালা ইজ সুন্দর।

-আর ইউ ম্যাড? (ভ্রু-কুঁচকে)

–তর মায় বাপে ম্যাড…তর নানা গুতুগুতু।

-হোয়াট গুতুগুতু।

–গুতুগুতু ইজ উগান্ডা, সেখানে অনেক ঠাণ্ডা।

-আরেকবার ফাইজলমি করলে তরে এইখানেই পুইত্তালামু।

–ইউর মর্জি মারিয়া, আমি আছি এখন খারিয়া, চাইলে তুমি দৌড় দিতে পারো একটা কিল মারিয়া, মারিয়া।

-উফফফফ অসহ্য।

–সহমত।

–ধ্যাত…

-রেগে গেলা নাকি সোনা?

–টুটটুট… (উগান্ডার ওয়াজ)

মারিয়া ছাদ থেকে হনহন করে চলে গেলো। আমিও পিঁছে পিঁছে চলে আসলাম। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম।

অনেক দিন পর ভার্সিটি যাবো তাই বাইক নিয়ে বের হচ্ছি। বাইক স্টার্ট করব ঠিক তখন-ই মারিয়ার আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিলো। ডালমে কুচ বেগুন ভর্তা হে! আমি বললাম….

–মারিয়া কিছু বলবা?

-রুবেল ভাইয়াআআআআআআ….

মারিয়ার মুখ থেকে এত সুন্দর ভাইয়া ডাক শুনে অবাক হয়ে গেলাম। খুশিতে মোটর সাইকেল থেকে কাইত হয়ে বাম দিকে গোবরের মধ্যে পরে গেলাম। আর মোটর সাইকেল পরলো ডান দিকে। ভাগ্য ভালো গোবর হাতের কুনুই তে লেগেছে।মারিয়া দৌড়ে এসে আমায় টেনে তুললো। তারপর পানি দিয়ে গোবর পরিষ্কার করে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো। এই সময় একটা গান মনে হলো….” তুমি ছুয়ে দিলে হায় আমার কি যে হয়ে যায় ”

–কি হলো ভাইয়াআআআআ…?

-কই কি কি কিছুনা তো।

–তাহলে যে আপনার চোখে পানি?

-ও তুমি বুঝবেনা।

–আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো ভাইয়ুউউউউউউ…

-বলে ফেলোনা।

–না মানে..?

-আরে বলো ইসসসসস, লজ্জার কি আছে?

–না মানে বলছিলাম কি, চলুননা আজকে কোন এক রেস্টুরেন্টে গিয়ে কফি খেয়ে আসি।

-তুমি সত্যিই মারিয়া তো?

–কেনো ভাইয়া, আমিতো মারিয়াই।

-আচ্ছা চলো।

আমি বাইক চালাচ্ছি। মারিয়া পিছনে বসা। আহ! আকাশে বাতাসে কত্ত আনন্দ। মনে মনে ফেমিলি প্লানিংটাও করে ফেললাম। এখন বাইকে ঘোরা, কয়েকদিন পর প্রেম। তারপর বিয়ে, হানিমুনে নেপচুন। তারপর কয়েকশো বাচ্চা। আহ! জীবন এত্ত সুন্দর ক্যারে? ভাবতে ভাবতে কখন যে রেস্টুরেন্টের কাছে চলে এসেছি খেয়ালই নেই। বাইক থেকে নেমে মারিয়াকে নিয়ে সরাসরি রেস্টুরেন্টের ভিতরে গেলাম। একটা ছেলে একটা টেবিলে বসে আছে। মারিয়া আমাকে সেখানে নিয়ে গেলো। বলল….

-রুবেল ভাইয়াআআআ ও হচ্ছে শামস্ আমার বয়ফ্রেন্ড।

–হাই ভাইয়া, কেমন আছেন?

মুহূর্তেই পুরো আকাশ ভেঙ্গে পরলো আমার মাথায়। এটা কি হলো!?

-কি হলো ভাইয়া কেমন আছেন? (শামস্)

–আছি কোনরকম।

-ভাইয়া আপনার চোখে পানি? (মারিয়া)

–চোখে বোধহয় কিছু একটা পরেছে।

-ও আচ্ছা, এই নিন টিস্যু।

–হারামজাদি টিস্যুতে কাজ হবেনা। (অস্ফুট সুরে)

-কি বললেন ভাইয়াআআআ..?

–ওহ সরি, আসলে।

-না ঠিক আছে।

তারপর সবাই মিলে টেবিলে বসে পরলাম। মারিয়া বলল….

–ভাইয়া আজকে কিন্তু বিলটা আপনাকে দিতে হবে?

-ভাইয়া কেনো আমি দিবনি। (শামস্)

পার্সোনালিটি রক্ষার্থে আমি বললাম…

–না না আমিই দিব।

-আচ্ছা ভাইয়া এত করেই যখন বলছে তাহলে ভাইয়াকেই দিত দাও শামস্। (মারিয়া)

মারহোগা! ফকিন্নি বলে কি? এত করে নাকি বলছি। বললাম মাত্র একবার। কি আর করার হাজার হলেও বোনতো। মারিয়া খাবারের অর্ডার দিলো। যেগুলোর নাম জীবনেও শুনিনাই। ওয়েটার খাবার দিলো। তারপর মারিয়া আর শামস্ খাওয়া শুরু করলো। আমি খাচ্ছি না। টিস্যু দিয়ে একটু পরপর চোখের পানি মুছছি। মারিয়া বলল….

–ভাইয়া খাচ্ছেন না কেনো?

-তোমরা খাও তোমাদের খাওয়া মানেইতো আমার খাওয়া।

–থ্যাংকু ভাইয়া।

–হারামজাদি আমার মানিব্যাগেরর বারোটা বাজালি। (মনে মনে)

ওরা দুজনে হেসে হেসে খাবার খাচ্ছে। মনে হচ্ছে বাপের জন্মেও এমন খাবার খায় নাই। এদিকে আমি কেঁদেই চলছি। কেনো জানি চোখে বাধা মানছে। আমি উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলাম। টয়লেটে ডুকে একটু হালকা চিৎকার করে কাঁদলাম। হাত-মুখ ধুলাম। দূরর থেকে মারিয়া আর শামসের একটা ছবি তুললাম। শালি বুজবি পরে। তারপর হাসি মুখে সেখানে চলে গেলাম। বললাম….

–মারিয়া একটা সেলফি তুলতে পারি?

–অবশ্যই ভাইয়াআআআআআআ, কেননা।

তারপর একটা সেলফি তুললাম। ক্রপ করে আমার ছবি কেঁটে দিলাম। মারিয়াদের খাওয়া শেষ হলো। খাওয়া শেষ হলে দুজনেই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। আর সেটা আমার বুকে তীররে মতো বিধলো। পুরা বারোশো টাকা বিল দিতে হলো। মানিব্যাগে আর মাত্র ৩ টাকা। নিজেকে খুবই অসহায় লাগছে।

আমি বাইক চালাচ্ছি। আমার পিছনে শামস্ তার পিছনে মারিয়া বসে আছে। আমার চোখ দিয়ে মাঝে মাঝে টুপ করে পানি পরছে। আর ওরা দুজন পিছনে বসে রাজ্যেরর যত আলাপ আছে সব করছে। মাঝে মাঝে একটু একটু ঝগড়া করছে। মনডায় কয় ট্রাকের নিচে পরে মারা যাই। ওদেরকে ভার্সিটি পৌঁছে দিলাম। আমাকে থ্যাংকইউ বলে দুজনে হাত ধরে চলে গেলো। আমি বাইক নিয়ে সরাসরি বাসায় চলে আসলাম।

বাড়িওয়ালা আংকেলের সাথে আমার ভালোই মিল। বললাম….

–আংকেল একটা কথা ছিলো?

–জি বাবা বলো।

–না মানে…?

–টাকা পয়সার সমস্যা? আচ্ছা পরের মাসে দিও..

–আংকেল তা না, আসলে হয়েছে কি। কি করে যে বলি….

–আরে বলোতো, অতো লুকানোর কি আছে।

–আসলে আংকেল মারিয়া ইদানীং কি সব করছে।

–হোয়াট।

-মারিয়া একটা ছেলের সাথে রিলেশন করছে।

–দেখো রুবেল উল্টাপাল্টা বলবানাা। আমার মেয়েকে আমি চিনি।

তারপর আংকেলকে আমার মোবাইলের ছবি দুইটা দেখালাম। আর বললাম….

–দেখেন আংকেল আপনার টাকায় ওরা কত্ত সুন্দর সুন্দর খাবার খাচ্ছে।

–তুমি এটা তুললে কিভাবে?

–আরে আমি রেস্টুরেন্টে খেতে গেছিলাম সেখানে ওদের সাথে দেখা হয়ে গেলো।

–হারামজাদি আজকে আসুক বাড়িতে।

–থাক আংকেল কিচ্ছু বলার দরকার নাই, ছোট বাচ্চাতো। (খুশিতে গুলুগুলু)

–তুমি চুপ করো আজকে আসুক বাড়িতে, ওর প্রেম করা ছুডামু।

–আংকেল এসব মেয়েদের জন্যই কিন্তু বাবা মায়ের বদনাম হয়।

-ওকে আজকে পিটাবো, হারামজাদীর সাহস কত্ত।

আমি আর কিছু বললাম রুমে এসে কাপড় পাল্টিয়ে একটা লুঙ্গী পরলাম। সাথে স্যান্ডো গেঞ্জি। উড়াধুরা ড্যান্স দিচ্ছি। কিছুক্ষণ পর চিৎকারে শব্দ শুনতে পেলাম। পরে রুম থেকে বের হয়ে দেখি আংকেল মারিয়াকে বকছে। মারিয়া মাথা নিচু করে আছে। মনে মনে বললাম… “আংকেল চুলের মুডি ধইরা পিডান, আমার বারোশো টাকা লস।” আমার ভাবতে দেরি আংকেল অমনি শুরু করলো, ধারাম ধারাম।

রুমে এসে উল্টাপাল্টা ড্যান্স। আল্লাহ এত্ত খুশি খুশি লাগে ক্যারে। সাউন্ড একটু বারিয়ে ড্যান্সের পরিমান বারালাম। চিৎকার করে বললাম…”আমার বারোশো টাকা উঠছেরে, হৈ হৈ হৈ”

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত