সূর্যের উতাপ্ততা শেষে অস্তি যাওয়ার সময় যে লাল আভা ছড়িয়ে যায় সেটা সুন্দরের এক বিশাল প্রতিক। সৌন্দর্য মিশে থাকে প্রকুতিতে,,মানুষের মনে। চেহারাতে কখনই সৌন্দর্য বিকাশ করে না। তাই প্রকৃতির সৌন্দর্য ও মনের সৌন্দর্য একমাত্র বিদ্যমান সবার মাঝে।
– কী ভাবছেন?
কথাটি শুনে নিধির দিকে তাকালাম। ঠোটের কোনে লেগে আছে এক মিষ্টি হাসি। যে হাসিতে মনকে কেমন কাপুনি তুলে দেয়। বারবার দেখতে ইচ্ছে হয় হাসিটি।
– কি হল নিলয় সাহেব?
– জ্বি কিছু না,,আর আপনি এখানে কেনো?
– চলুন চা খাবেন।
কথাটি শেষ হতেই নিধি আমার হাত ধরল। ঠিক তখনি কেমন যেন কেঁপে উঠলাম। বিয়ের পর এই প্রথম নিধি আমাকে টাচ করলো। তবে এই কাঁপুনিতে এলোমেলো করে দিচ্ছে আমার সব অনুভুতি। হারিয়ে যেতে বসলাম কল্পনার সাগরে। কিন্তু না, আমার যে বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে। চাইলেই যে সব হয় না।
– বলুন চা টা কেমন হল?
– হুমম ভালোই।
বিকালে ছাঁদে দাড়িয়ে বিকেলের পরিবেশটাকে উপভোগ করছিলাম তখনি নিধি এসে আমাকে ডেকে নিয়ে এলো চা খাওয়াতে। আর আমি পুনরায় ওর প্রেমে মত্ত হতে লাগলাম। শত চেষ্টা করেও নিজেকে সামলাতে পারছি না। নিঃস্ব হতে হচ্ছে আমার ওর প্রতি।
– আপনার কষ্ট হবে না? (নিধি)
– নাহ তো। কেন হবে?
– নাহ মানে আমি ভাবলাম হয়ত কষ্ট হবে।
হালকা মন খারাপের আভা নিয়ে নিধি চায়ে চুমক দিলো। আচ্ছা মেয়েটাকি বোঝে না,, আমার যে কষ্ট এখন থেকেই হচ্ছে? মানুষের কষ্টগুলো যদি চিৎকার করে কথা বলতে পারতো। তাহলে মানুষ তখনি দেহ ত্যাগ করতো। কারন,,কষ্ট নিরব হয়ে যদি এতটা খারাপ অনুভুতি হয় তাহলে কথা বলাতে না জানি কি হত?
– আচ্ছা আমাকে বিয়ে কেনো করেছিলেন? (আমি)
মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আসলেই আমার প্রশ্নটা কেমন যেনো বিদঘুটে। তবে আমার জানতেই হবে।
– কি হল বলুন,,কেন আমাকে বিয়ে করেছেন?
– আসলে পরিবারের চাপে বিয়েটা করতে হয়েছে।
– হাহাহাহা..(আমি)
– হাসলেন যে?
– একবারও কি ভেবেছেন আপনার এই পরিবারের চাপের জন্য আমার লাইফটা তছনছ হতে পারে? ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে আমার জীবন?
– সরি..
– আপনার বিএফ কবে নিতে আসবে আপনাকে?
– কথা হয়েছে দুইদিন পরেই নিয়ে চলে যাবে।
নিধির কথা শুনে আবার ছাদে চলে আসলাম। এক চাপা কষ্ট আমার মনের মধ্যে আবার বইতে লাগলো। এখন কেনো যে মনে হচ্ছে নিধিকে বিয়ে করলাম? কেনো যে তাকে ভালোবেসে ফেললাম?
।।
দুই,
– দেখুন আপনাকে কিছু কথা বলার ছিলো। (নিধি)
– হুমম বলুন।
– আসলে আমি একজনকে ভালোবাসি। মূলত তার সাথে প্লান করেই আপনাকে বিয়ে করেছি। যাতে করে ওর কাছে চলে যেতে পারি। আমাকে হেল্প করবেন??
বিয়ের রাতে বাসর ঘরে ঢুকেই কেউ এমন কথা শুনতে চাইবে না। কিন্তু আমার কপালে এমনি ছিলো। বাসর ঘরেই বউটা এভাবেই আমাকে বললো। যেটা শোনার জন্য মোটেেও প্রস্তুত আমি ছিলাম না। কি সাধারন ভাবেই বললো কথাটি। যেন কত সহজ।
– কি হল চুপ কেনো? কিছু বলুন? (নিধি)
– আচ্ছা বেশ
কথাটি বলেই ছাদে এসে চেয়ারে বসে পড়েছিলাম। কতই না আশা ও স্বপ্ন ছিলো বউকে নিয়ে। কিন্তু এমনভাবে বললো আমি যে আর তার প্রতি কোনো অধিকারই দেখাতে পারবো না। ভাবতে অবাকই লাগছে,,কত সহজ করেই কথাটি বললো ও।
নিধির সাথে বিয়ে হওয়ার আগে থেকেই ওকে দেখে ওর প্রতি কেমন যেনো একটা ভালোলাগা ফিল হত। তবে কখন যে সেটা ভালোবাসায় রুপ নিয়েছে বুঝতে পারিনি।।
।।
– কি ভাবছেন? (নিধি)
নিধিরি কথায় বাস্তবে ফিরলাম। শৃকনো মুখে ওর দিকে ফিরলাম। দেখলাম মেয়েটা দিব্যিই আছে। কিন্তু মাঝখান থেকে আমার সব কিছু সে কেড়ে নিয়ে যাবে। নিজেকে আসলেই সামলাতে পারছি না। বারবার নিধির প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।
– কি হল,,কি দেখছেন?
– কিছু না,,যান আপনি খেয়ে ঘুমান। আমি এখানেই থাকবো।
কিছু না বলেই চোখ তুলে একবার আমাকে দেখে চলে গেল। এ মেয়েটার মনে কি কোনো মায়া নেই? নাকি সে এমনি?
আর দুইদিন পরই সে চলে যাবে। আজ বিয়ের সাতদিন হল, কিন্তু নিধিকে আমি কোনোদিন খারাপ চোখে দেখিনি। চাইলে জোর করে অনেক কিছুই করতে পারতাম। তবে আমি জানি জোর করে তো আর সব হয় না।
.
– এই যে উঠুন..সকাল হয়ে গেছে। (নিধি)
রাতে ছাদে এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চেয়ারটাতে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পায়নি।
– একটা কথা বলি শোনেন। আজই আবির এর সাথে আমি চলে যাবো। ও আজ একটু আগে ফোন দিয়েছিলো। বললো চলে আসতে।
– ওহ,,আচ্ছা রেডি হচ্ছি পৌছে দিয়ে আসবো।
.
তিন,
রেডি হয়ে যখন বের হলাম,দেখলাম নিধি সেজে গুজে বাইরে দাড়িয়ে আছে। কি অপরুপ লাগছে তাকে। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। আবারো দূর্বলতার স্বীকার হচ্ছি আমি। নিজেকে সামলাতে পারছি না
– কি হল..কি দেখছেন এভাবে? চলুন.. (নিধি)
– হুমম চলুন
গাড়িতে উঠে যেতে লাগলাম। তখনি জিগাস করলাম
– আচ্ছা আপনি কেনো এতদিন আবিরের কাছে যান নি?
– আবির চাকরি পাইনি তো তাই আরকি।
– এখন কি চাকরি পেয়েছে?
– হুমম পেয়েছে।
– হাইরে পাবলিক।
– মানে?
– মানে মানুষের মুল্যবোধের কোনো দামই নেই কারো কাছে। চাকরিই সব। সে যদি চাকরি না পেত তাহলে তো যেতে না তাই না? বা আগেও যদি আমার মত চাকরি পেত তাহলে আমাকেই বিয়ে করতে না। সত্যিই হাস্যকর বিষয়।
আমার কথা শুনে নিধি মাথাটা নিচু করে চুপ করে রইলো। আসলেই তো কি বলবে সে এখন?
– রাখেন এখানে। (নিধি)
– কেনো?
– ও এখানেই আসতে বলেছে। বলেছে এই গাছের নিচে দাড়াতে ও চলে আসবে ঠিক সময়ে। আপনি এখানে নামিয়ে দিন।
নিধিকে নামিয়ে দিয়ে বললাম..
– আচ্ছা আমাকে তো দেখা করাবা ওর সাথে তাই না?
– নাহ,,ও বলেছে আপনি যেন না থাকেন। প্লীজ চলে যান।
নিধির কাছে থেকে কথাটি শুনে খারাপ লাগলো। শেষ দেখা আজ ওর সাথে। কেমন যেনো শুন্য শুন্য লাগলো চারিদিক।
– কি হল যান..
নিধির কথা শুনে সোজা চলে আসলাম সেখান থেকে। বাড়িতে আর যাইনি। নিধির কাছ থেকে চলে এসে বসেছিলাম জেস গার্ডেন পার্কে। ওখানেই বসে ছিলাম সারাটা বেলা।
– নাহ এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। যায় বাসার দিকে। বাড়িতে যেয়ে সব ফাকা ফাকা লাগবে। কারন, বাড়িতে যে নিধি নেই। মেয়েটাকে কতটা ভালোবেসে ফেললাম এ কদিনে। তবে সেটা মুল্যহীন।বাড়িতে এসেই আমি অবাক। কারন, বাড়ির দরজা খোলা। কিন্তু আমার খুব মনে আছে আমি বাড়ির দরজা খুব ভালো করেই লাগিয়ে গেছিলাম। চাবি তো মাত্র দুটো,, যেটা আমার কাছে আর নিধির কাছে থাকে। কিন্তু নিধি তো চলে গেছে। তাহলে কে এসেছে?
বাড়ির মধ্যে ঢুকে আমি একদম অবাক। কারন, নিধি সোফায় বসে টিভি দেখছে।
– আরে তুমি যে? (নিধি)
– মানে আমি থাকবো না তো কে থাকবে?
– ওহ হুমম,,আসো সিরিয়াল দেখি।
– মানে কি?
– টিভি দেখি আসো..
– আবির কোথায়?
– কিসের আবির?
– মানে কি হচ্ছে কি বলবা?
– মি. নিলয়,, আবির তো..
– ওহ বুঝতে পেরেছি..আবির হয়ত তোমাকে খুব খারাপ কিছু বলেছে বা ও তোমার কাছ থেকে টাকা নিতে পারেনি বলে তাই তুমি চলে এসোছো?
হাইরে ভালোবাসা।
দেখলাম নিধি বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়ত সে এমন কিছু বলবো আশা করেনি।
– কি বলছো এসব? (নিধি)
– বুঝতে পারছো না? আবির কোথায়?
– আরে কিসের আবির? কে আবির?
নিধির কথায় কিছুই বুঝতে পারছি না। এ মেয়েটা কি চায়? সকালেই তো সে আবিরের জন্য চলে গেলো। আর এখন নাকি সে তাকে চিনতেই পারছে না।
– হা হা হা হা হা..
– হাসছো কেনো? (আমি)
– আরে গাধা…আবির বলে কেউ নাই। ওটাতো আমার বানানো ক্যারেক্টার। আব্বু আম্মু কার সাথে বিয়ে দিচ্ছে,, সে কেমন এটা চেনার জন্যই এতকিছু।
– মানে?
– মানে হল, তুমি পুলাটা কেমন? আমাকে কেমন ভালোবাসবে? তোমার মনটা কেমন এসব দেখার জন্যই আবির নামের একটা চরিত্র সাজায়
– ঠাসসস
নিধির কথা শুনে ওর গালে একটা কষে চড় মারলাম। বলে কি মেয়েটা? আমাকে কষ্ট দিয়ে সে মজা নিয়েছে।
– ভ্যাঁ…ভ্যাঁ..(নিধি)
– ঐ কাদছো কেনো?
– আমাকে কেউ কোনোদিন মারেনি।
– চৃপপ..বেয়াদপ,, ফাজিল মেয়ে..আমাকে কষ্ট দিয়েছো তাউ শাস্তি।
– কিসের কষ্ট হুহহ?
– ভালোবাসলেই কষ্ট পেতে হয়।
– মানে?
এইরে..মুখ ফসকে কি বলে দিলাম আমি?
– কিছু না (আমি)
– হি হি হি হি..
– ঐ হাসো কেনো?
– জানি তো
– কি জানো?
– ভালোবাসো তাই
– তুমি তো বাসো না..
হুটট করেই নিধি আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বুঝলাম সেও আমাকে ভালোবাসে।
– সরি..(নিধি)
আমি আর কিছুই বললাম না। আরো শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম তাকে। বুঝিয়ে দিলাম। আমিও তোমাকে ভালোবাসি খুব।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প