চেইঞ্জ উইথ টাইম

চেইঞ্জ উইথ টাইম

অভ্র আর ত্রয়ীর রিলেশনশিপের পাঁচ বছর পূর্ণ হতে চলেছে আজ। বাসার কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে অভ্র কেক নিয়ে ত্রয়ীর জন্য অপেক্ষা করছে।

রেস্টুরেন্টে অভ্রের তেমন একটা আসা হয় না। তবে আজ স্পেশাল দিন। কিছু টাকা পয়সা জমিয়ে রেখেছিল সে আগে থেকেই। ত্রয়ীকে ঠিক বিকাল পাঁচটায় আসতে বলেছিল অভ্র। কারণ এদিক হতে অভ্রকে আবার টিউশনে যেতে হবে। ত্রয়ী আসতে একটু দেরি করছে। ওয়েটারকে ডেকে কফি অর্ডার করল অভ্র।

অর্ডার শুনে ওয়েটার অভ্রের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো কিছুক্ষণ। এরপর আস্তে করে বলল, “স্যার, এই নিয়ে মোট ছয় কাপ কফি খেলেন আপনি।”

কেমন যেন চমকে উঠল অভ্র। তাই তো! এতক্ষণ হয়ে গেল ত্রয়ী এখনো আসছে না কেন? ঘড়ির দিকে তাকালো সে। সাতটা ত্রিশ বাজে। ত্রয়ীর নাম্বারে অভ্র সংযোগ পাচ্ছে না সেই দুপুর থেকে।

কোনো দুর্ঘটনা হলো না তো! যথেষ্ট সময় সচেতন মেয়ে ত্রয়ী। ত্রয়ীর দুই-একজন বান্ধবীকে কল দিয়েও সন্তোষজনক কোনো উত্তর পেল না অভ্র। রাত নয়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে কফির বিল মিটিয়ে বাসায় চলে এল অভ্র।

দশটার দিকে ত্রয়ীর মোবাইল খোলা পেল অভ্র। কয়েকবার কল হওয়ার পরও ত্রয়ী রিসিভ করেনি। কিছুক্ষণ পর ত্রয়ী নিজ থেকে কল দিল অভ্রকে।

ব্যস্ত হয়ে অভ্র কল রিসিভ করে বলল, “কি সমস্যা ত্রয়ী? আসলে না কেন আজ? সারাদিন কই ছিলে?”

ত্রয়ী কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বলল, “সব আগামীকাল বলব। আগামীকাল সকাল দশটায় তোমাদের এলাকার মোড়ের কফি শপ টাতে দেখা করো আমার সাথে।”

এটা বলেই ত্রয়ী কল কেটে দিল।

ত্রয়ীর কথার মাঝে অভ্র কোনোরূপ ব্যস্ততা বা দুশ্চিন্তা দেখতে পেল না। রাতে ভালোমতো ঘুম হয়নি অভ্রের। নানা ধরণের বাজে চিন্তা আসতে লাগলো তার মাথায়। সবকিছু বাদ দিয়ে কোনোরকমে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করল সে। সময়মতো কফিশপে গিয়ে অভ্র অপেক্ষা করতে লাগল।

দশটা পঞ্চাশে ত্রয়ী আসলো।

অভ্র দুজনের জন্যই কফি অর্ডার করলো। প্রায় দুই মিনিট কেউ কোনো কথা বলল না। গতকালের ঘটনায় অভ্রও রাগ করেছে প্রচুর। তবুও প্রথমে কথা অভ্রই বলল।

হালকা স্বরে সে জিজ্ঞেস করল, “কি সমস্যা তোমার? গতকাল কি এমন হয়েছিল?”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ত্রয়ী মুখ খুলল।
সে বলল, “দেখো সমস্যা হয়েছে একটা। ব্যাপারটা তুমি কীভাবে নিবে তা আমি বুঝতে পারছি না। ”
অভ্র বলল, “অসুবিধে নেই। কি হয়েছে বলো!”

ত্রয়ী বলল, “আসলে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।”
কথাটা শোনা মাত্রই অভ্রের পায়ের নিচ হতে যেন মাটি সরে যেতে লাগলো।
কণ্ঠ স্বাভাবিক রেখে অভ্র জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি রাজি হয়েছো?”

মুখটাকে হালকা বিমর্ষ করে ত্রয়ী উত্তর দিল, “হ্যাঁ। দেখো ব্যাপারটা বাস্তবিকভাবে নেওয়ার চেষ্টা করো। তুমি এই মুহূর্তে কোনো ভালো পজিশনে নেই। কোনো চাকরি করছো না। তাছাড়া তোমার পরিবারও এমন কোনো ভালো পজিশনে নেই যে তোমার ব্যাপারে আমি আমার পরিবারকে জানাবো।”

ছোট্ট একটা নিশ্বাস নিয়ে ত্রয়ী আবার শুরু করলো, “আমি ভেবেছিলাম এতদিনে তুমি কিছু একটা করতে পারবে। কিন্তু এখনও আগের জায়গাতে পড়ে আছো তুমি। আমার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে বড় একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে। মাসে লাখের কাছাকাছি বেতন পায়। আর তুমি টিউশন করিয়ে পাও কত টাকা? ভবিষ্যৎ এ কতটুকুই বা করতে পারবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। প্লিজ কিছু মনে করো না। আবেগ দিয়ে না ভেবে বাস্তবতা দিয়ে সবকিছু চিন্তা করতে শিখো তুমি।”

এতক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে অভ্র ত্রয়ীর কথাগুলো শুনছিলো। কিছু না বলে চোখে পানি নিয়ে সে চুপচাপ বসে রইল। অভ্র কিছু বলছে না দেখে ত্রয়ী বিরক্ত হয়ে উঠে চলে গেল। এরপর আরো কিছুক্ষণ বসে রইল অভ্র। সেদিনের পর থেকে অভ্রের সাথে ত্রয়ীর কোনোদিন যোগাযোগ হয়নি।

ত্রয়ীও প্রায় ভুলে গিয়েছে অভ্রকে। বিয়ের একবছর পর ত্রয়ী শুনেছিল অভ্র অনেক বেশি অসুস্থ। যেতে চেয়েছিল সে। তবে ব্যস্ততার কারণে ত্রয়ী যেতে পারে নি। অনেকটা সময় গড়িয়েছে। অভ্রকেও আর মনে রাখা হয়ে উঠেনি তার।

আসলে অভ্রদের কেউই মনে রাখে না। কারণ দুনিয়ার কাছে তারা ব্যর্থ বলে পরিচিত। আর ব্যর্থদের মনে রাখার মতো বাজে সময় সত্যিই কারো নেই।

এদিকে সবকিছু বদলেছে। ত্রয়ীর স্বামী কোম্পানি পাল্টেছে। বেতন বেড়েছে। এখন লাখের উপর বেতন পায় তার স্বামী। কোনোকিছুর অভাবে রাখেননি তিনি ত্রয়ীকে।

ত্রয়ীর বিয়ের তিন বছর পূর্ণ হতে চলল আজ। স্বামীকে নিয়ে ত্রয়ী শপিং এ এসেছে। শহরের সবচেয়ে বড় শপিংমলটাতে এসেছে তারা। অনেক ঘোরাঘুরি করে ভালো থেকে দুইটা শাড়ি কিনল ত্রয়ী। পরিচিত এক বন্ধুর সাথে দেখা হওয়ায় ত্রয়ীর স্বামী সেই বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে একটু দূরে চলে গেল।

কাপড় দেখা শেষ করে দোকান থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল ত্রয়ীর। সামনে হতে হেঁটে আসা একজনকে দেখে কেমন জানি কেঁপে উঠল ত্রয়ী। কাছে আসার পর মানুষটাকে বেশ ভালোমতো চিনতে পারলো ত্রয়ী।

এতবছর পর অভ্রকে এইভাবে এখানে দেখবে সেটা কখনো ভাবতে পারেনি ত্রয়ী। অভ্রও তার সামনে এসে অবাক হয়ে দাঁড়ালো। আগে থেকে বেশ বদলেছে অভ্র। মুখে হালকা দাঁড়ি রেখেছে। হালকা রং এর সুতির শার্ট পড়েছে। কাপড়চোপড় দেখেই বোঝা যাচ্ছে অবস্থা এখনও তেমনটা ভালো না তার। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে ত্রয়ী জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছো তুমি? অনেকদিন পর দেখা হলো।”
হালকা হেসে অভ্র বলল, “যেমনটা রেখে এসেছিলে তেমনটাই আছি। ”
ত্রয়ী বলল, “হুম, তা তোমাকে দেখেই বুঝতে পারছি আমি।”

হাতের শপিং ব্যাগটা দেখিয়ে ত্রয়ী বলল, “আজ আমাদের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকী। এই দেখো শাড়ি নিলাম। দুটো শাড়ি কত নিলো জানো? পঁচিশ হাজার টাকা। তোমার সাথে ঘর করলে এসব আমার কাছে স্বপ্ন হয়েই থেকে যেতো অভ্র। ”

কেমন যেন অবাক হলো অভ্র।

ত্রয়ী আবার জিজ্ঞেস করল, “কি শাড়ির দাম শুনে অবাক হলে বুঝি?”

মৃদু হেসে অভ্র বলল, “বেশ ভালোই আছো দেখছি।”

ত্রয়ী কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় পিছন হতে কারো ডাকে চুপ হয়ে গেল সে। অভ্র এবং ত্রয়ী দুজনেই সেদিকে তাকালো। ত্রয়ীকে ডাক দেওয়া লোকটি অভ্রকে দেখে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো।

ত্রয়ী মুখ খুলে বলতে গেল, “এই শুনো, ও হলো আমার কলেজের ব্যাচমেট…”

ত্রয়ীকে কথা শেষ করতে দিল না তার স্বামী। তাড়াতাড়ি সে বলে উঠল, “তুমি কাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছো আমার সাথে? আমার অফিসের বস উনি। আমি তো উনার কোম্পানিতেই চাকরি করি।”

অভ্রের দিকে ফিরে ত্রয়ীর স্বামী বলল, “স্যার, আপনি এখানে হঠাৎ? কোনো দরকার আছে স্যার?”

অভ্র মৃদু হেসে বলল, “এই শপিংমলের ফিফটি পার্সেন্ট আমার কোম্পানিরই। দেশে আসার পর থেকে এদিকে আসা হয়নি। ভাবলাম একটু দেখে যাই। এসেই ওর সাথে দেখা হয়ে গেল।”

এরপর একটু সময় নিয়ে মৃদু হেসে অভ্র বলল, “বেশ ভালোই আছো তোমরা তা দেখাই যাচ্ছে। বেশ ভালো মানিয়েছে তোমাদের। একদম ত্রয়ীর জন্য পারফেক্ট তুমি।”

এরপর, “আচ্ছা যাই তবে। আমি ওদিকটা একটু ঘুরে আসি।” – বলেই সামনের দিকে পা বাড়ালো সে।

সামনের দিকে পা বাড়ানোর সময় ত্রয়ীর ছলছল চোখ জোড়া দেখতে ভুল করলো না অভ্র।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত