ভালোবাসা ও?

ভালোবাসা ও?

চুপ-চাপ বসে আছে রাব্বী। তার পাশেই অন্যমনস্কা নুপুর। শীতের শেষ সময় গুলির একটি নিথর সকাল। পার্কের কোলাহল ও কম “অাচ্ছা অামায় ছাড়া থাকতে বুঝি কষ্ট হবে না?” রাব্বির এই প্রশ্নের উত্তর নুপুরের জানা নেই। শুধু জানা আছে-
দুই বৎসরের প্রেম অাজই ইতি টানতে যাচ্ছে । সামনের মাসের ২য় শুক্রবারই নুপুরের ফ্যামিলির কতৃক তার বিয়ে ।

অার এই দেখাই হতে যাচ্ছে রাব্বীর সাথে শেষ দেখা। সব জেনেও দুজন স্বাভাবিক ভাবেই বসে ,দিগন্তে চোখ রাখছে। দিগন্ত কি জীবনের মতোই দ্বীর্ঘ?
অাচ্ছা ,,”রাব্বী ‘- যখন অামায় খুব মনে পড়বে কি করবে”?
রাব্বী কিছু না বলে চুপ করে অাছে।
অাবারো পুরোদমে নীরবতা, দুইজনের কথা বন্ধ। অন্য কোন দিন হলে এতক্ষনে নুপুরের বকবকানিতে কান জ্বালা ধরার মতো অবস্হা হয়ে যেত,
“ভাইয়া ফুল নেবেন” একটা কিশোরীর কন্ঠে নীরবতা ভাঙলো রাব্বীর, মেয়েটা রোজ ফুল বিক্রি করে এই ভালোবাসার উদ্যানে, রাব্বীর কাছে কেমন যেন অচেনাই লাগছে মেয়েটিকে। না প্রতিবারই পার্কে এলে নুপুর কে ফুল কিনে দেওয়া হয়। মেয়েটি ও তাদের প্রায় পরিচিত। রাব্বী অাজ অামায় ফুল দেবেনা? নুপুরের মায়াবী চেহারাটার চেয়ে কন্ঠটি কম মায়াবী নয়,মায়াবীনি এই স্বর এই বিদায় বেলায় অারো মায়াবী হয়ে উঠছে। দুইটি ফুল হাত নিয়ে একটি খোপায় অারেকটি নুপুরের হাতে দিয়ে রাব্বী একটু হাঁসার বৃথা অভিনয় করলো। নুপুরের চোখ গুলি খুব ছোট হয়ে অাসছে।

অার ভীড়-ভীড় করে কিছু একটা বলছে-
রাব্বী কানটা একটু কাছে নিলে নুুপুর পা গ ল অক্ষর তিনটি উচ্চারণ শেষে টুক-টুকে ঠোঁট দুটি রাব্বীর খোচা খোচা দাড়ি ছুঁয়ে যায়।
কি করছো?
পাগলী!!
নুপুরের মায়াবী কন্ঠের জবাব “পাগলামী করছি”
অাজ ই তো…………!!
থমকে যায় রাব্বী
অাচ্ছা রাব্বী বিয়েই কি সব?
একটা মানুষের হাতে সব দিয়ে দাওয়া??
জবাব নেই রাব্বীর ও।
আজ কোন কথারই জবাব নেই।
প্রচন্ড রৌদ্র পড়ছে, চলো অন্য কোথাও বসি রাব্বীর এমন আপত্তি কানে নেয়নি নুপুর।
নুপুর এক নাগাড়ে কথা বলেই যাচ্ছে।।
যে কথায় বিদ্রোহ অাছে। অাছে সমাজের মনগড়া সার্থ নীতি বিরোধ।

রাব্বী চুপ করে অাছে সে খুব ভালো করেই বুঝে নুপুর তাকে কতটা ভালোবাসে। অার এই মূহুর্তে নুপুরের কথায় হ্যাঁ /জ্বী করলেই হবে, নুপুর যেকোন কান্ড করে বসবে,হয়তো অাজ বিকেলেই চলে অাসবে রাব্বীর কাছে।

রাব্বী বুঝে সব বুঝে – মাত্র এবার অনার্স প্রথম বর্ষ,এখনো বেকার। অার নুপুরের ফ্যামিলি কি সেটা কখনো মানবে বৈকি?
নাহ অার নয়- রাব্বী অামার যে যাওয়ার সময় এলো!

নুপুর বিদায় বেলা একটু থাকো বলে ঘাম মোছার অভিনয় করে চোখের কোন থেকে অন্য কিছু মুছে নিলো। নুপুর খুব রৌদ্র পড়ছে ।দেখোনা, অামার চোখে মুখে কত ঘাম। কই দেখি?

নুপুর ওলনাটা রাব্বীর মাথার উপর দিয়ে বলে এখন রৌদ্র লাগছে?
রাব্বী অাজ চুপই থাকবে। অাজ যে ভালোবাসার চুপ থাকার দিন। নিজের অজান্তেই নুপুরের হাতে চোখ থেকে গাল বেয়ে তরল কিছু একটা পড়লো। “তোমাকে এত ঘাম দিচ্ছে কেন?
রাব্বী চুপ করে অাছে। কে বিশ্লেষন করবে ঐ জল ঘাম না চোখের পানি?
সারাটা শরীর যার কষ্টে পুড়ছে তার সব ঘাম হয়তো চোখের জল হয়ে গেছে। ।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত