ক্লাস নাইনে সবে উঠেছে বাবা বলল – আর না , এবার বিয়ে দিতেই হবে। মা বলল – তাই তো আর বই খাতা কিনতে পারব না। অনেক হয়েছে সেই তো ঘরকন্না , তাছাড়া এখন থেকে না দেখাশোনা করলে বিশ পেরোতে কতক্ষণ?
গায়ের রঙ একটু কালো তাই সম্বন্ধ কিছুতেই হচ্ছে না। কেটে গেল আরো বছর দুই। পড়াশুনা বন্ধ। তাই সখি বলতে পাড়ার মিনু মিঠু মণি রাই। তারাই বলল- প্রেম করবি? সানা ভয় পেল। কিছুটা পড়া আর কড়া মায়ের শাসন আছে না ? তবুও মেলায়, ধান খেতের আলে, খড় গাদার পেছনে , সব্জি বাজারে সানা পা বাড়ায় তাতে সাড়া মেলে, অনেকটা গায়ে হাত দেওয়ার কৌশল। তারা সব যায় আসে।
আর বিয়ের বেলায় পাওয়া গেল একটি ছেলে। পড়াশোনা তেমন নেই। বাবা মারা যাওয়ায় নিজের নামে বিঘেটাক জমি আছে।
বিয়ে হয়েই সানা বুঝল প্রিয়মের সঙ্গে শরীর দিয়ে প্রেম গড়ে উঠছে। তাতেও নিজেকে মানাতে শুরু করল। কিন্তু ছেলে মাঠে ঘাটে এর ওর বাড়িতে এবং যোগাড়ের কাজে যায় ফলে কুসঙ্গ। মদ গুটখা বিড়ি খৈনির নেশা। মেয়েদের সঙ্গ দোষ আছে কি না বুঝতে পারে না। আশেপাশে অনেকেই এ রকম একটু আধটু করে তাই সানা পাত্তা দিত না। সেটাই বাড়তে থাকল। এ ভাবেই বছর কয় কেটে গেল।
এর মাঝে ছেলে হতেই একটু আদরের টানাটানি। শরীরে রুচি কমল কি না কে জানে একটু মারধরও করতে লাগল। প্রেম তো করে বলেই মনে হয় আলাদা করে ভাবার আর সময় কই? সংসারে দিনরাত কাজ আর কাজ!
তার সাথে শাশুড়ির বাড়ল মুখঝাড়া। যোগ দিল পাড়া পড়শি। ছেলের দোষ এসে পড়ল সানার ঘাড়ে। আর রাতে শাশুড়ির অভিযোগে প্রিয়মের মার। বেশির ভাগ কাজ নিয়েই। কেন ভুল হয়। সেটা ঘুরে বুঝিয়ে বলাও চলবে না। আশেপাশে সবাই একটু আধটু বউকে মারে। নিজের মাকেও তো দেখেছে। সানা তাই ভবিতব্য মেনে নিল।
ক্রমে শাশুড়ি বয়সের অসুখে পড়ল। কাজ না করে বসে বসে যন্ত্রণায় মুখের বিরাম নেই। টানাটানির সংসারে টাকাও বেশ খরচ হতে লাগল। প্রিয়মের আরো ভাবনায় নেশাও বাড়ল। আশেপাশে সবাই এভাবেই অভ্যস্ত। অন্য কাওকে মনের কষ্ট বুঝিয়ে লাভ হল না । সানা একটু পেটের বিদ্যে নিয়ে বাঁচার চেষ্টা খুঁজল।
সারাদিনের টুকটাক কাজে নানা কৌশলে যে করেই হোক শাশুড়িকে যুক্ত করতে চেষ্টা করল। সকাল থেকে যে সব কাজ নিজের কাঁধে করতে বাধ্য হত এখন সেই সব কাজে কৌশল করে ভাগাভাগি করল। সেই কাজে শাশুড়ি নিজেকে নড়াচড়া করতে বাধ্য হল। রাতে প্রিয়মকে বলার সুযোগ পেত আর প্রিয়ম না বুঝে মারত সানাকে। আস্তে আস্তে সে হিসেব পাল্টাতে লাগল।
আর শুয়ে বসে সময় কাটিয়ে জড়িয়ে আসা বার্ধক্যে শাশুড়ি হাত পা নাড়তে বাধ্য হল। কিছুটা যেন যন্ত্রণা থেকে সতেজ হতে লাগল। রোগের পিছনে খরচ আস্তে আস্তে কমতে লাগল। শাশুড়ি যে কাজ করতে চাইত না তাতেই হাত লাগিয়ে সুস্থ থাকতে চাইল । প্রিয়মের নেশাতে শাশুড়িই টুকটাক বলতে লাগল বাধা দিতে থাকল। সানার মাথায় আর প্রিয়ম বা ছেলে নয় শাশুড়ির দিকে নজরেই সংসারে সুখ ধীরে ধীরে ফিরে আসতে লাগল।
এখন যে করেই হোক ছেলেকে আর কিছু না হোক পড়াশুনা করাচ্ছে। যাতে সামাজিক পরিস্থিতিতে এভাবে অ-সুখ অ-সুস্থ সমাজে নিজের মুখ নিয়ে বাঁচতে পারে।
প্রিয়মের সংসারে যদিও আগের মত সবই আছে। তাকেই একটু অদল বদল করে সানা সুখেই আছে।