ও নিতাই, নিতাই। বলে কে যেন নিতাই বাবুকে পিছন থেকে ডাকছে। নিতাই বাবু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন শুভ্র বাবু।
– আরে দাদা যে, নমস্কার।
– নমস্কার, তা কেমন আছো নিতাই।
– এই তো দাদা ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?
– এই তো ভালোই আছি দাদা। তা কাকিমা, অহনা, অহনার মা তাঁরা কেমন আছেন?
– সবাই ভালো আছেন দাদা, আপনারা।
– হুমমম ভালো, এখন তো আর তোমারে বেশি দেখা যায়না।
– কাজের ঝামেলায় একটু ব্যস্ত।
– তা অহনা এখন কীসে পড়ে?
– এই তো এইচ এস সি পাস করে, এবার অনার্স ভর্তি হল।
– বাহ্ অনেক বড় হয়ে গেছে।
– সবই আপনাদের আশীর্বাদ দাদা।
– আশীর্বাদ তো অবশ্যই। তা অহনার বিয়ে টিয়ে নিয়ে কোনো চিন্তা ভাবনা করছ।
– না দাদা, অনার্সটা কমপ্লিট করুক, তারপর চিন্তা ভাবনা করবো।
– বুঝলাম, এখন যা দিনকাল কখন কি দুর্ঘটনা ঘটে যায় বলা যায়না।
– এসব চিন্তা করলে তো আর মেয়েকে পড়ালেখাই করাতে পারবোনা।
– তবুও তো চিন্তা করতে হয়। সেদিন শুনলাম নিমাই বাবুর মেয়ে কলেজের নাম করে কোন ছেলের সাথে ফস্টিনস্টি করে।
– দাদা শুনেন, যে ফস্টিনস্টি করার সে ঘরে থাকলেও করবে, আর কলেজে গেলেও করবে। যদি সবাই সবাই খারাপ হতো, তাহলে মা বাবারা মেয়েদের পড়ালেখা বন্ধ করে দিতো।
– তা বুঝলাম। আমার কাছে একটা ভালো সমন্ধ এসেছে তাই বলছিলাম।
– অবশ্যই দাদা, আপনি আমার বড় ভাই। তা ছেলে কি করে?
– ছেলের বাজারে বড় একটা দোকান আছে।
– ছেলের লেখাপড়া কতটুকু।
– ছেলের লেখাপড়া দিয়ে কী করবে? এত বড় ব্যবসা একা সমলাচ্ছে, বাবার অনেক টাকাও আছে।
– হুমম বুঝলাম! তা শুনলাম আপনার মেয়েও নাকি বিয়ে দিয়েছেন।
– আর বলিস না রে নিতাই, জামাইটা মানুষের বাচ্চা না। খালি মেয়ের সাথে ঝগড়া করে। মেয়ে এখন মাস তিনেক থেকে আমার এখানেই থাকে। আমি নিজেই চলতে পারিনা। আবার মেয়ে সাথে একটা বাচ্চাও।
– দাদা ঝগড়া একটু হতেই পারে, ছেলে শিক্ষিত, আপনার মেয়ে অশিক্ষিত। মনের মিল অনেক সময় নাও হতে পারে।
– তুমি কি বলতে চাও নিতাই।
– শুননে দাদা। রক্তের সম্পর্কগুলো মনের মিল না থাকলেও এগুলো মানতে হবে। কিন্তু বন্ধু বান্ধব, স্বামী, স্ত্রী এগুলো মনের মিল না থাকলে চলেনা। একটা সময় এই সম্পর্কগুলোতে ফাটল দেখা দেয়। আজকে যদি আপনার মেয়ে শিক্ষিত হতো তাহলে সে আপনার বাড়িতে বসে খেতো না। সে তার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পাড়তো। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অনেক সময় মতে মিল নাও হতে পারে। এটাকে একটা মেয়েই সমলাতে হবে। সংসার সামলানোর জন্য শিক্ষা দরকার, সেটা হোক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, বা পারিবারিক শিক্ষা।
– তা অবশ্যই ঠিক বলেছ, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে তো আর মানুষ বিচার করা যায়না নিতাই।
– তা ঠিক বলেছেন দাদা।”বিয়ে” এখানে আমাদের কারোর হাত থাকেনা। তবুও ছেলে মেয়ের মনের মিল থাকে এমন মানুষের সাথেই বিয়ে দেওয়া উচিত। মনে করুন আমার মেয়েকে যদি শিক্ষিত করে বিয়ে দেই, আর আপনার মেয়ের মতো কোনো দুর্ঘটনা ঘটলো কোনোদিন। তারপর মেয়ে আর আমার বাড়িতে আমার উপর বোঝা হয়ে থাকবনো। সে নিজে কিছু করতে পারবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। এর জন্যই শিক্ষা দেওয়া, যাতে তাঁর নিজের কিছু করার ক্ষমতা থাকে, আর মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। কার কপালে কি আছে তা তো বলা যায়না। সে তাঁর নিজের ভালো বুঝতে পারে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মতের অমিল থাকতেই পারে, এটাকে সমালে নিতে হবে। তখন পারিবারিক শিক্ষা এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দুইটারই দরকার পড়ে। একটা মেয়ে চাইলে একটা সংসার ভাঙতে পারে, আবার একটা মেয়ে চাইলে সংসার বাঁচাতে পারে। আর কিছু অমানুষ তো থাকবেই। এঁদেরকে আপনি চাইলেও ঠিক করতে পারবেন না।
– তা অবশ্য ঠিক বলেছ নিতাই। মানুষ চেনা বড্ড কঠিন কাজ।
– এরজন্যই একটা মেয়েকে আগে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। যাতে সে সকল পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারে।
– আচ্ছা নিতাই ভালো থেকো।
– আপনিও ভালো থাকবেন দাদা।