বাড়ি ফেরা

গত তিন বছর আগের কথা,,,,
পবিত্র ইদুল ফিতর এগিয়ে আসতেছে। রমজান মাসে রোজা থাকতে হয় আমাদের মুসলিম জাতিদের। আমিও প্রায় প্রতি বছরেই রমজান মাসের প্রতিটা দিনেই রোজা দেই। এরি ধারাবাহিকতা ধরিয়ে রাখতে এবার ও রোজা রেখেছি। প্রথম কয়েকদিন খিদে লাগলেও পরে ঠিক হয়ে গেছে। এমনিতেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরতাম না তবে রমজান মাসের প্রতিটা দিনেই নামাজ পরেছি। মনের মাঝে সবসমায় আখিরাতের ভাবনা ছিলো। টের পেয়েছিলাম নামাজের মধ্যে অন্যরকম একটা শান্তি রয়েছে যা আর কোথাও পাওয়া যাবে না।

দেখতে দেখতে ঈদুল ফিতরের দিন চলে আসলো মনের মাঝে এত আনন্দ ছিলো যা বলে বোঝাতে পারব না। কারন টানা ১মাস না খেয়ে আল্লাহর রাস্তায় আমল করে গেছি আর আজ সেইদিন এসেছে যে আজ দিনের বেলায় একবার হলেও খেতে পারব।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে গোসল করে উযু করে ঈদের নামাজ পরতে গেলাম। নামাজ পরে এসে মা সেমাই খেতে বললো তখন বাবা ভাই ও ভাইয়ের ছেলের সাথে খেতে বসলাম।বেশি খেতে পারলাম না কারন ১মাস তো দিনের বেলা খাওয়া হইনি তাই হঠাৎ করে খেতে পারি নাই। একটু খেয়েই উঠে পরলাম তারপর পাড়ার ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলতে গেলাম।সচারচর ঈদের দিন সবাই ঘোরাঘুরি করে বাট আমার ভালো লাগে না। তাই সারাদিনটাই পাড়ার ছেলের সাথে কাটালাম তারপর বিকাল বেলা আমার বন্ধু পারভেজকে ফোন করলাম। সে ফোন ধরেই বললো ভাই কালকে ঘুড়তে যাব আমিও তার সাথে তাল মিলিয়ে বললাম যাব তো। তখন বললো কোথায় যাবি আমি বললাম দিনাজপুর যাব ওখানে রাজবাড়ি আর রাম সাগর দেখব। তখন বললো ঠিকআছে। আমি বললাম সকাল বেলা রেডি হয়ে বাজার আসবি। ও ঠিকআছে বলেই কেটে দিলো।

আমি তখন টিভিতে সবার সাথে একটা সিনেমা দেখলাম দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। তখন রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করলাম তারপর মা নাস্তা খেতে দিলো নাস্তা খেয়েই ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন দিলাম পারভেজকে সে ফোন রিসিভ করে বললো ভাই রেডি হয়েছিস আমি বললাম হ্যা হইতেছি তুই তারাতারি রেডি হয়ে বাজার আয় ও বললো ঠিকআছে তখন আমি গোসল করে মায়ের কাছে ৫০০ টাকা নিলাম। তারপর বাজারে গেলাম দেখতেছি দারিয়ে আছে।

তখন বাজার থেকে একটা ভ্যান নিয়ে শিমুল তলায় গেলাম। তারপর ওখান থেকে সোজা ওয়াপদা গেলাম দিনাজপুর যাবার উদ্দেশ্যে। প্রায় দশ মিনিটট লাগলো ওয়াপদা যেতে। ওখানে গিয়েই দেখতেছি একটা বাস দারিয়ে আছে তারাতারি ভ্যান আলাকে টাকা দিয়ে বাসে চরলাম। চরেই দেখতেছি পুরো বাসটাই মানুষে ভরে গেছে একটাও সিট নেই তাই দুজনে একসাথে দারিয়ে থাকলাম।

দারিয়ে থাকতে ভালো লাগতেছিলো না তখন আমি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষন দেখতে দেখতে রাবেয়া তে আসলাম ওখানে বাস থামালো অনেক মানুষ নেমে গেলো তখন দুজন মিলে সিটে বসলাম আমি জানালার কাছে বসলাম। তখন একটু ভালো লাগতেছিলো কারন গোটা পথটা দুজনে সিটে বসে গল্প করতে করতে দিনাজপুর যাব।

তখন বাসে অল্প মানুষ ছিলো পরিবেশটাও চুপচাপ ছিলো অনেক ভাল লাগতেছে ছিলো। তখন ফোনটা বের করে হেডফোন লাগিয়ে দুজনে গান শুনতে শুনতে যাইতেছি ঠিক আর একটু পর রানীর বন্দর পৌছালাম। সেখানেও বাস থামালো, আর অনেক মানুষ বাসে চরলো ঠিক বাসটা আগের মত হয়ে গেলো বাট আমাদের সিট আমরা পেয়েছি।

চারিদিকে মানুষের শব্দ একটুো ভালো লাগতেছে না তখন একটু সিটে বসেই ঘুমানোর চেষ্টা করলাম আর কিছুক্ষন পর ঘুমিয়ে পরলাম আমার বন্ধুো ঘুমি পরলো। প্রায় ৪০-৫০ মিনিট পর বাসের কন্ট্রাকটর চিল্লাইতেছে দিনাজপুর বাস টার্মিনাল এসে গেছে সবাই নামুন আচঙ্কা ঘুম ভেঙ্গে গেলো পারভেজ বললাম এই ওঠে পর এসে গেছি। তখন দুজনে বাস থেকে নামলাম।

তারপর ওখান থেকে একটা অটোতে চলে দিনাজপুর রাজবাড়ি গেলাম। রাজবাড়ীর গেটের সামনে বড় করে একটা সিংহের মুর্তি ওখানে দুজনে সেলফি নিলাম। তারপর ভিতরে গিয়ে রাজবাড়ীর মন্দিরে প্রবেশ করলাম। যেহেতু মন্দির হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থান তাই দুজনেই জোতা খুলে প্রবেশ কররলাম। মন্দিরটার চারিদিকে ঘর আর কিছু পুলিশ ও রয়েছে মন্দিরটা সংস্কার করা অনেক সুন্দর লাগতেছিলো ঘুরে ঘুরে দেখলাম এবং অনেকগুলা ছবি তুললাম স্বৃতি হিসেবে রাখতে মন্দির থেকে বেরানোর সমায় দুজন মহিলা বলতেছে ৫টাকা করে দুজনে ১০ টাকা দাও। আমি বললাম কিসের টাকা তখন উনি বললেন জোতা যে রেখেছেন আমরা পাহারা ছিলাম, তখন পকেট থেকে ১০টাকা বের করে মহিলাটাকে দিলাম।

তারপর একটু হেটে রাজবাড়িতে গেলাম। বাড়িতে প্রবেশ করেই দেখলাম চারিদিকে জঙ্গল আর গাছ মাঝখানে একটা ধংশবশেষ বাড়ি। দেখে ভালো লাগতেছিলো না কারন একটা ঐতিহাসিক জিনিষ আমাদের মাঝ থেকে ধিরে ধিরে হারিয়ে যাচ্ছে। তখন দুজনে মিলে চারদিকটা ভাল করে ঘুরে দেখলাম আর ছবি দেখলাম। হঠাৎ দেখলাম মানুষের কোলাহল তখন একটু এগিয়ে দেখলাম অনেকগুলো বৃদ্ধ মানুষ প্রথমে ব্যাপারটা না বুঝলেও পরে ঠিক বুঝলাম ওটা বৃদ্ধাশ্রম। ওখানেও অনেকগুলা ছবি তুললাম।

রাজবাড়ি থেকে বেরিয়ে এবার রামসাগর যাওয়ার পালা একটা অটোকে ডাকলাম তিনি বললেন সুখ সাগর যাবেন, আমরা তো অবাক হয়ে গেলাম বললাম কতদুর তখন তিনি বললেন এই তো ১কিঃমিঃ হবে। তখন বললাম চলেন। একটু সমায় অটোতে বসে থাকতেই পৌছে গেলাম সুখসাগরে সেখানে দেখার মতত বেশি কিছু ছিলোনা একটা বড় পুকুর ছিলো আর চারিদিকে সুন্দর সুন্দর রং করা ব্রেন্চ। আর কয়েকটা ফুছকার দোকান ওখানে ফুচকা খেয়ে কয়েকটা ছবি তুলে আবার দিনাজপুর বাস টার্মিনালে আসলাম।

তারপর ওখানে একটা অটোকে রিজার্ব নিলাম রাম সাগর যাওয়ার জন্য ২০০টাকা ঠিক হলো যাওয়া আসার জন্য। অটোতে চরে ৩কিঃমিঃ যেতে না যেতেই হঠাৎ হালকা হালকা বৃষ্টি পরতে লাগলো তখন ভালো লাগতেছিলো না প্রায় ১ ঘন্টা পর রামসাগরের গেটে পৌছালাম ওখানে নেমে তিনটা টিকিট কিনলাম আমি আমার বন্ধু ও অটো ড্রাইভারের জন্য। গেট থেকে একটু যেতেই চোখে পরলো অনেক বড় একটা পুকুর। আর চারদিকটা এত সুন্দর ওটোতে চরেই ধিরে ধিরে একটা দোকানের কাছে গেলাম সেখানে ভাত খেলাম মাছ দিয়ে কারন মাংস ছিলো না।

তারপর তিনটা বাটি আইসক্রিম নিয়ে তিনজনে খেতে খেতে ঘুরতে লাগলাম। প্রায় দুই ঘন্টা ঘুরলাম অনেক ছবি তুললাম দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে গেলো তখন ওকে বললাম চলো এবার যাই অটোতে চরার সমায় দেখি কিসের যেন একটা গোলোযোগ লেগেছে দুজনে নেমে ওদের কাছে গেলাম দেখতেছি ঝগড়া লেগেছে তখন আর একটু থাকতেই আরো মানুষ চলে আসলো আমাদের গা ঘেসে। তখন ওখান থেকে বেরিয়ে এসে অটোতে চরলাম ১ঘন্টা লাগলো বাসটার্মিনাল আসতে। তখন অটো আলাকে টাকা দিলাম।

টাকা দিয়ে দেখলাম আমার কাছে আর টাকা নেই কারন এখন পর্যুন্ত যতটাকা খরচ হয়েছে সবটাকা আমি খরচ করেছি। এখন যা খরচ হবে আমার বন্ধর সকাল বেলা ওরকাছে ৫০০ টাকা দেখেছি পার্সে। হঠাৎ করে চোখে পরলো পারভেজের পিছনের পকেটটা ব্লেড দিয়ে কাটা ওকে বললাম তোর পকেট কেন কাটারে ও সাথে সাথে পকেটে হাত দিয়ে দেখলো ওর পার্স পকেটমার নিয়ে নিছে। তখন মনে পরলো আমরা তো রামসাগরে গোলোযোগের সমায় ওদের কাছে গেছিলাম তখন হয়তো পকেট মেরে নিছে।

তখন মাথাটা দুজনেরি খারাপ হয়ে গেছিলো কারন আমাদের কাছে বাড়ি আসার টাকা ছিলো না। কি করব ভেবে পাইতেছিলাম না তখন বাসটার্মিনাল থেকে একটু হেটে হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাম আর হাটতে পারতেছি না তখন ওখানে দারিয়ে পরলাম ওকে বললাম কোন একটা মটর সাইকেলকে দার করাতে হবে। অনেক গুলোকে হাত দেখাও কেউ দারালো না। কিন্তু একজনকে হাত দেখাতেই তিনি দারিয়ে পরলেন আর আমাদের বললেন কি হয়েছে বাবা। তকে বললাম আমাদেরকে দশমাইল পর্যুন্ত নিয়ে চলুন তো তিনি বললেন চরো বাবা। ওনার গাড়িতে চরে ভালো লাগতেছিলো কারন বাড়ি যেতে পারব।

তখন তার নাম জিগ্যেস করলাম তার নাম হলো তিতুমীর তার বাসা দিনাজপুর আর তিনি বীরগন্জ ডে লাইট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের একজন শিক্ষক।তাকে আংকেল বললে সম্ধন করলাম। তাকে আমাদের সব কথা খুলে বললাম। তিনি আমাদের বললে অচেনা সাবধানে বেরাতে হয়।

তার সাথে গল্প করতে করতে দশমাইল পর্যুন্ত এলাম। দশমাইলে দারিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানালাম তিনি তার পকেট থেকে বাড়ি আসতে যতো টাকা লাগে আমাদের দিলেন আর বললেন সাবধানে যেও বাবা। তখন তার নাম্বার টা নিলাম। তিনি বললেন এবার যাও বাবা। মনে মনে অন্যরকম একটা ভাবনা এলো। তিতুমীর আংকেলকে যেন খোদা আমাদের বাড়ির ফেরার জন্য।

তার টাকা দিয়েই বাড়ি পর্যুন্ত আসলাম আর পরের দিন তিতুমীর আংকেলকে ফোন দিয়ে বললাম আমরা এসে গেছি আংকেল আপনি না হলে হয়ত আসতে পারতাম না তিনি বললেন বাবা আমি তোমার সাহায্য করেছি সেটাকে বড়ো করে দেখিও না । আমার জন্য দোয়া করিও।

তখন থেকে আজ পর্যুন্ত হৃদয়ের মাঝে তার নামটা যেন চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। ধন্যাবাদ আংকেল আপনি দুজন অসহায় ছেলেকে সাহায্য করেছেন।

—সমাপ্ত—

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত