অণুর গল্প

অণুর গল্প

-তুই অণুর গায়ে হাত তুলেছিস?
বাবার কথাটার প্রতুত্তরে আমি কি বলব সেটা ভেবে পাই না৷ সারাদিন এই কথাটা জিজ্ঞেস করার ভয়ে বাবার আশেপাশেও ছিলাম না৷

শেষমেষ রাতে খাওয়ার টেবিলে ঠিকই জিজ্ঞেস করে বসলো৷
-আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি শুভ৷
আমার চুপ থাকা দেখে বাবা আরেকটু গম্ভীরভাবে কথা বলল৷
-হ্যা বাবা তুলেছি৷
-কেন তুলেছিস?
-বাবা হাত তুলেছি সেটা বলেছে৷ কেন তুলেছি সেটা বলেনি?”

বাবা তার মোটা ফ্রেমের চশমাটার উপর দিয়ে আমার দিকে আরেকবার তাকালেন৷ অদ্ভূত ব্যাপার আমার ভয় লাগছেনা৷

ছোট থেকেই বাবাকে প্রচন্ড পরিমাণের ভয় পাই৷ আমি জানিনা এই ভয়টা কেন৷
এমন না যে বাবা আমাকে মারধর করেছে ছোট থেকেই৷
যতটুকূ আদর দরকার ততটুকুই করেছে৷ যতটুকূ শাসন ততটুকুই করেছে৷”

-কারণ বলেনি৷ তাই তোর কাছে জিজ্ঞেস করছি৷

-বাবা অণুর পিচ্চি করে একটা বোন আছে না৷ মিলু নাম৷ক্লাস ওয়ানে পড়ে৷ জানো বাবা মেয়েটা খুব মিষ্টি করে কথা বলে৷ আমাকে সবসময় ভাষায় ভাইয়া বলে ডাকে৷ ছাদে গেলে প্রায়ই আমার কোলে বসে আকাশ দেখে৷ আমার মন খারাপের সময় যখন ছাদে বসে থাকি৷ নিজেকে বড্ড একা লাগে৷ আমার মনের ছোট্ট আকাশটাতে বিষণ্ণতার মেঘ জমে৷ আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়৷

ঠিক তখনই আমি পিচ্চিটার কথা মনে করি৷ আমাকে দেখামাত্রই কোলে উঠে আসবে৷ আমার চুল টানবে, নাক টানবে৷ আইসক্রিম চাইবে৷

জানো বাবা! এই পিচ্চিটার সাথে পরিচয়ের পর থেকে আমার কখনোই মন খারাপ থাকেনি৷
কিন্তু অণুর সাথে আমার একদমই হয়নি কখনো৷ কেন জানি আমাকে তার সহ্য হয় না৷

গত বিকেলে মিলু যখন ছাদে আমার কোলে বসে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে আদুরে গলায় গল্প করছিল৷ অণু হুট করে এসে মিলুর তুলতুলে গালগুলোতে থাপ্পর বসিয়ে দেয়৷

বাবা আমি কি অনুভব করেছিলাম জানি না৷ আমার কেন জানি মনে হয়েছে, চড়গুলো মিলুর গালে না৷ আমার হৃৎপিন্ডে গিয়ে লেগেছে৷

আমি আর নিজেকে সামলাতে পারিনি৷ কষে দু’টো লাগিয়ে দিয়েছি৷”
কথা শেষ করে বাবার দিকে তাকালাম৷ বাবা আমার উপর ভীষণ রেগে গেলে,
“হারামজাদা বেরিয়ে যা” কথাটা বলেন৷
কথাটা শোনার জন্য অবশ্য প্রস্তুত হয়ে আছি আমি৷ অণুকে থাপ্পর মারার পর থেকে৷

বাবা তার চেয়ার ছেড়ে উঠলেন৷ আমার হৃদপিন্ডটা চেপে ধরে রেখেছি আমি৷ এই বুঝি হাইপ্রেসারে বেরিয়ে পরবে৷
বাবার হাতের থাপ্পর খেলে এমনিতেই মরে যাবো৷”

-শুভ শুন!
-হ্যা বাবা বলো৷
-তুই ক’টা থাপ্পর দিয়েছিস?
-দু’টো!
-পরেরবার দেখা হলে আরো কয়েকটা দিয়ে দিবি বুঝলি৷ থাপ্পরের অপরাধে তোকে যদি পুলিশে দেয়৷ আমি সাথে সাথেই ছাড়িয়ে নিয়ে আসবো৷ কোনো টেনশন নেই৷ আর মিলুকে আরো বেশি করে আদর করবি!”
আমি ভ্রু কুঁচকে বাবার দিকে তাকালাম৷ না দেখে মনে হচ্ছে না মজা করছে৷
“যা ভালোমতো খেয়ে ঘুম দে৷ সকালে সব ঠিক হয়ে যাবে”৷

নিশ্বাসটা আটকে যেতেই ঘুম ভেঙে গেল৷ ধড়ফড় করে উঠে পরি আমি৷
পিচ্চি মিলুটাকে দেখে বিশ্বাস হলো না প্রথমে৷ চোখ দু’টো ভালোমতো কঁচলে মিলুর দিকে তাকালাম৷ পিচ্চিটা ফোকলা দাঁত বের করে হাসছে৷

আমি হাত দু’টো ছড়িয়ে দিতে বুকে এসে জায়গা করে নেয় পিচ্চিটা৷
আমি বুঝিনা এইটুকু একটা মেয়ে এত পাকনা কিভাবে হয়৷ আমি কিছু বলার আগেই করে নেয়৷
মিনিটখানেক বুকে জড়িয়ে রাখি পিচ্চিটাকে৷
কপালে আলতোভাবে চুমু খাই আমি৷
-নাক টিপে ধরলি ক্যান পিচ্চি?
-তোমার নাক টানতে ভালো লাগে আমার!
মিলু তার ছোট্ট মুখটা আমার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-ভাইয়া আপু আসছে৷ তোমার সাথে কথা বলবে৷
-তাই বুঝি!
-হু৷ ডাকি?
-হ্যা ডাকো৷

মিলুর হাত ধরে আমার রুমে ঢুকে অণু৷ পড়ার টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারটা টেনে আমার মুখোমুখি বসে অণু৷ অণূর কোলে মিলু৷

আমি হাত বাড়ালাম৷ আমাকে অবাক করে দিয়ে পিচ্চিটা আসলোনা৷
অণু মুচকি হেসে বলল,
-আমার শর্তগুলো না মানলে মিলু আপনার কাছে যাবে না!
অণুর কথা শুনে মিলুর দিকে তাকালাম আমি৷
পিচ্চিটাও দেখি মাথা নাড়ছে! একরাতেই বোনের ভক্ত হয়ে গেলি পিচ্চি মেয়ে!
তোর জন্যইতো তোর বোনের গুলুমুলূ গালগুলো লাল করে দিয়েছিলাম৷ নাহ ভুল হলো না তো!
মনে মনে বললাম৷”
-কিসের শর্ত?
-হুম বলছি৷
“শর্ত নাম্বার ১ হচ্ছে,

আপনার মন খারাপের সময় মিলুর সাথে যখন আড্ডা দেন৷ সেই আড্ডায় আমি থাকবো”
শর্ত নাম্বার ২হচ্ছে,

মিলুকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যান প্রতি বিকেলে৷ সেই ঘুরাঘুরিতেও আমি থাকবো”
শর্ত নাম্বার ৩হচ্ছে,

এই যে মিলুর গাল টানেন৷ আমার গালও টানতে হবে৷ আপনি জানেন? আপনি গুলুমুলু গাল টানতে পছন্দ করেন বলে, আমি বেশি বেশি খেয়ে আমার গালগুলো গুলুমুলু করেছি! সেইগুলা আপনার চোখে পরে না হ্যা?”
বেশি করে আমার গাল টানবেন বুঝলেন৷?”

৪নাম্বার শর্ত হচ্ছে,

মিলুকে যেমন হাওয়াই মিঠা কিনে দেন৷ এখন থেকে মিলুর সাথে সাথে আমাকেও কিনে দিবেন”৷
আপনি কি শর্তে রাজি?”

মেয়েটার এমন অাজগুবি শর্তশুনে আমার বড্ড হাসি চেপেছে৷
আমার হাসি দেখে অণু বিরক্ত হচ্ছে সেটা তার মুখ দেখেই বোঝ যায়৷
কোনোমতে হাসি চেপে রেখে বলি,
বিবেচনা করে পরে জানানো হবে৷
অণু ভেংচি কাটে একবার৷ তারপর মিলুকে নিয়ে হাঁটা ধরে৷
দরজার পাশে গিয়ে আবার পেছন ফিরে বলে অণু,
শুনুন! তারাতারি বিবেচনা করুন৷ নয়তো শোধ হিসেবে শর্ত বেড়ে যেতেও পারে কিন্তু”

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত