জীবন অনুগল্প

জীবন অনুগল্প

এই হচ্ছে এক জ্বালা। সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে স্বামী স্ত্রী দুইজনকেই বাইরের জীবনে পা রাখতে হয়। দুই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করলে তো আর কথাই নেই। আজ এ জায়গায় তো কাল ও জায়গায়। বদলী চাকুরীর জ্বালা অন্য রকম। স্থায়ীভাবে সংসারই গড়ে উঠে না।

কষ্ট সৃষ্ট করে সংসার করতে করতে এক সময় বাচ্চার মা বাবা হয়ে উঠে একেকজন । তখন শুরু হয় সন্তান মানুষ করার যুদ্ধ। হাঁপিয়ে উঠা মানুষগুলো খুঁজে তখন আপনজনদের ওম। পেতে চায় ভালবাসার স্পর্শ। কাছ ঘেষে থাকতে প্রাণের আকূলতা সেকি আর সবাই বুঝবে। একান্ত কিছু সময় নিজের করে কে না পেতে চায়!

রোকেয়া চাকুরী জীবনের শেষ প্রান্তে এসে গেছেন। রোকেয়ার স্বামী থাকেন নোয়াখালী। তিনি ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক। রোকেয়ার ঘর আলো করা দুই ছেলে। কষ্টে সৃষ্টে মানুষ করা ছেলেদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ভর্তি করিয়েছেন নামী দামী ক্যাডেট কলেজে। এক ছেলে পতেঙ্গায় আর এক ছেলে টাঙ্গাইলে। রোকেয়ার চাকুরী জীবনের বেশীর ভাগ সময়ই কেটেছে একাকিত্বে। জীবনের সব প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে, অসুখ বিসুখে তিনিই তার সঙ্গী। কি দরকার বাবা! বাচ্চাদের দূরে সরিয়ে। কাছে থেকে যতটুক মানুষ হয় হোক না। এত বেশী চাওয়া চাইতে গেলে তো সারাজীবন একাই থাকতে হয় রোকেয়া আপার মতই।

বিষন্নতা তার আরেক সঙ্গী। ছেলে স্বামী মাঝে মাঝে বেড়াতে আসেন তার বাসায়। এই সময়গুলোই তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। রান্না বান্না সব নিজের হাতে করে গোটা কয়েকদিন আনন্দ উল্লাসে কাটিয়ে দেন। সবাই চলে গেলে সেই আবার একাকিত্ব।

খাওয়া দাওয়া সাড়েন প্রায়ই হোটেল থেকে কিনে। নিজের একার জন্য রান্না করতে কেমন জানি আলসি লাগে। অই তো কালই মিষ্টির দোকান থেকে এক হাড়ি দই কিনেছেন। দইয়ের সাথে চিড়া দিয়ে দুপুরের খাবার সাড়বেন বলে।

মুদি দোকানে গিয়ে রোকেয়া দোকানীর কাছে বললেন ভাই আধাকেজি চিড়া দেন। দোকানীকে চিড়ার দাম দিয়ে বাসায় আসেন। ছুটির দিন। ঘরকন্যার কাজ কর্ম সব সেড়ে দুপুরের গোসল সেড়ে নামাজ পড়ে আয়েস করে বসেছেন চিড়া দই খাবেন বলে।

ঠান্ডা দই ঢেলেছেন থালায়। চিড়ার প্যাকেট খুলছেন আর একা একাই বলতেছেন খুব খিদা পেয়েছে। খেয়ে একটা ঘুম দেয়া যাবে।

সব রেডী করে চিড়ার প্যাকেট খুলতেই কিসের যেনো ঘ্রান পেলেন, অন্যরকম লাগতে লাগল তার। কপাল কুঁচকিয়ে প্যাকেটে চোখ রাখতেই তিনি সেখানে দেখতে পেলেন দোকানী তাকে চিড়া না দিয়ে জিরা দিয়ে দিয়েছে। ক্ষিদার পেটে তিনি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন। শুধু দই খেয়েই সেদিন দুপুরের লাঞ্চ সাড়লেন। বিকেলে দোকানে গিয়ে বললেন ভাই আপনি এটা কি করলেন , চিড়া না দিয়ে জিরা দিলেন যে।

-অহহো, ভুল হয়ে গিয়েছে মেডাম। মাফ করবেন।

তিনি আর উচ্চবাচ্য করলেন না আর। চিড়া নিয়ে বাসায় ফিরলেন। আড়চোখে দেখলেন দোকানদার হাসছে ।

রোকেয়া মুচকি হেসে বলেন ব্যাপার না! সশব্দে হেসে উঠেন তিনি । হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যায়। তিনি যতবারই একথা মনে করেন ততবারই হাসেন আর ভাবেন মুহুর্তটা কষ্টের হলেও ব্যাপারটা খুব মজার ছিল। তিনি মনে কষ্ট না নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে পা রাখেন আবার। একাকীত্বের হাত ধরে নীড়ের আঁধারে ফিরে যান ।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত