পড়াশুনার মর্মতা

পড়াশুনার মর্মতা

পরিবারের সম্মতিক্রমে ছোট থেকেই চালিয়ে আসছে নিত্যনতুন শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সাথেই শাহিনের পড়াশুনা। মানুষ নিজের জ্ঞানের চিন্তাজগত থেকে বিশ্বাস করেন”লেখাপড়া করে যে গাড়ি-ঘোঁড়ায় চলে সে”। অর্থাৎ লেখা পড়া করে উঁচ্চু শিক্ষিত হলেই সমাজের বসাবাসরত মানুষের সাথে যেমন তার আচরনের পরিবর্তন দেখা যায় সেই সাথে মানুষের কাছে তার সম্মানীয় খুঁজে পাওয়া যায়। আর লেখাপড়া করে মানুষ নিত্যকাল প্রযুক্তির সাথে মানিতে নিতে সক্ষম হচ্ছে, তাদের কোন প্রকার সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে না। পড়াশুনা ছাড়া যে সমাজে মূল্যহীন মানুষ হিসেবে বসাবাস করতে হয় তা শাহিন মনে প্রানে বিশ্বাস করেন। তাই বলে তার নিজ এবং পরিবারের সম্মতিদান চেষ্টায় পড়াশুনা চালিয়ে পাড় করেছেন প্রাইমারীও হাই স্কুলভবন। শাহিন জানে যে, পড়াশুনা ছাড়া এই সমাজে মানুষ মূল্যহীন। তাই তার চিন্তাজগত কে কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র হবার।

অতঃপরে ভর্তি হলেন মুন্সিগঞ্জের সেরেজাবাদ রানা সফিউল্লাহ কলেজে। কিছুদিন কেঁটে গেলো নতুন বন্দুদের সাথে পরিচয় আর আনন্দ উল্লাসের মধ্যে দিয়ে। দিনে কলেজে আসা, বিকেলে কোন এক ক্রিকেট মাঠের কোনে বসে অথবা এলাকার কিসলু মামার টং দোকানে বসে আড্ডা আর রাতে বই পড়াই ছিলো তার নিত্যদিনের রুটিন। যদি ও সে অনিয়নিত ছাত্র তার পরেও নিজেকে মনে করেন একজন কলেজ পড়ুয়া ছাত্র। কলেজের নিত্যনতুন বন্দুদের সাথে আড্ডা আর পড়াশুনার পাশা-পাশি চলে গেলো কলেজ জীবন থেকে একটি বছর। আর পড়াশুনাও তেমন চাপ দিয়ে করিনি কারন কলেজ জীবন দুই বছর মনে করে। এভাবেই চলে যাচ্ছে প্রায় আরেকটি বছর। অলরেডি ছয় মাস অতিবাহীত হয়ে গেলো দ্বাদশ শ্রেনীর। দিন শেষে রাত আসে, আর এই রাতের আধারে ঘুমাতে পাড়ছি না। মনের মধ্যে ঝড় তুলেছে আমার স্বপ্ন,আমার আশা। এভাবে পড়াশুনা আর আড্ডাবাজিতে তো আমার জীবন চলে যাচ্ছে আধারের নীলাচলে(মনে মনে চিন্তা করে)।

মনটাকে আর ক্লান্ত না করে ঐ সময়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তুু ঘুমোতে দিচ্ছে না আমার স্বপ্ন। ভোরে মোয়াজ্জিন এর আজান শুনে ওযু করে চলতে শুরু করলাম মেঠুপথের ধুলোমাখা রাস্তায় মসজিদে। নামাজ শেষে ইমামের কিছু বয়ান শুনে বাড়ির উদ্দ্যেশে ফিরে আসলাম। এসে একটু বিশ্রাম এর জন্য নিজে রুমে গিয়ে দেয়ালের সাথে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে আছি, এমতাবস্থায় ফোন বেঁজে উঠলো, ফোনের স্কেনের দিকে তাকিয়ে দেখি সিথীল কল কেরেছে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে….
-মামা কলেজে আসবিনা আজকে?(সিথীল)
-হুম মামা আসবো,তয় তুই একটু আগে আসিস..!!!(শাহিন)
-আচ্ছা তুই আয় বেশি লেট করিস না কিন্তুু।
-আচ্ছা রে….

সময় প্রায় ৭:৩০ মিনিট। কলেজে যাওয়ার জন্য খাবার খেয়ে রেডি হচ্ছি। যদিও আমার ক্লাস শুরু ১০ টায়, তবে আমাকে কলেজে পৌছাতে পৌছাতে বেজে যায় প্রায় ৯:৪৫ মিনিট। এতোটা সময় অতিক্রম করে কলেজে যেতে হয়, কারন আমি আমার বাসা থেকে কলেজে যাই। এভাবে প্রায় ১ বছর ৬ মাস এর মতো হয়েছে বাসা থেকে গিয়েই পড়াশুনা করতে হতো। কিন্তুু কি আর করার সব নিয়তির খেলা। আর কোন বিষয়ে প্রাইভেট পড়ার মতো সময়টা আমার হাতে থাকছে না। আর কলেজের পাশে যে একটি হোস্টেলে ওঠে পড়াশুনা করবো তা ও হচ্ছে না, তার প্রধান কারন মধ্যবৃত্ত পরিবারের সন্তান। বাবা একজন কৃষক। পরিবারের খরচ মিটিয়ে তার পক্ষে আমাকে এতোগুলো টাকা দেওয়া সক্ষম যেনো হারিয়ে বসেছে এমতাবস্থায়। কলেজের পাশে না পাচ্ছি কোন টিউশনি। হাজারো চেষ্টার ফলে আজ হারিয়েছি ছাত্র জীবন।
চিন্তাভাবনা করে দেখলাম যদিও একটি কাজ কর্মে যোগদান করতে পারতাম তাহলে হয়তো পড়াশুনা চালিয়ে নিতে পারতাম। কিন্তুুু এই বর্তমানের ডিজিটাল বাংলার মাটিতে এতোটুকু পড়াশুনায় গার্মেন্টস এর হেল্পার পদেও নিতে চায় না।
পড়াশুনা ছাড়া যে সমাজে কতোটুকু মূল্য মানুষের তা আর শাহিনের বুঝতে বাকি রইলো না।
শিক্ষা বিহীন মানুষের স্থান সমাজের নিম্নস্তরে। যে জাতি যতো শিক্ষিত সে জাতি ততো উন্নত।
আমি চাই না আমার মতো কেউ অল্প শিক্ষিত হয়ে পিছিয়ে যাক।
শিক্ষা এ সমাজের প্রধান চাবিকাঁঠি।

পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই তা হলো দৈনদিন জীবনে দেখা যাচ্ছে মানুষ মাধ্যমিক পর্যায়ে এসেই ছেড়ে দিচ্ছে পড়াশুনা। কিন্তুু কখনো চিন্তা করেছে না তাদের সামনের দিনগুলি যে বাধ্য হয়েই অন্ধকার হিসেবে মনে নিতে হবে।
শাহিনের মনে এখন একটাই কথা হয় শিক্ষার সাথে লড়ো, আর না হয় আগে থেকেই তুমি শিক্ষা থেকে সরে যাও। কোন এক কাজ কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ো, তাহলে পড়ে হয়তো একটু আলো খুঁজে পাবে, আর না হয় পড়ে অন্ধকার এর মধ্যে ডুবে থাকতে হবে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত