কবরস্থানে কিছুক্ষণ

কবরস্থানে কিছুক্ষণ

কাজ শেষ করতে আমিন সাহেব এর আজ প্রায় রাত দশটা বেজে গিয়েছে। সব ডেস্ক কাগজ পত্র গোছাতে আর ও আধা ঘন্টা ব্যয় হল। রেগুলার বাস না থাকায় চিন্তা করলেন আজ ট্যাক্সি তে বাসায় যাবেন। অনেকক্ষণ দাড়িয়ে ট্যাক্সির দেখা পেলেন দেখে হাটতে শুরু করলেন।মাত্র বাজছে দশটা চল্লিশ। এর মধ্যে মনে হচ্ছে গভীর নিশুতি রাত। মানুষ জন কি টিভি দেখছেনা। অধিকাংশের বাড়ি ঘর এ বাতি নিভান। তাই রাস্তার বাতিকে কিছু ভৌতিক দেখা যাচ্ছে। জোরে পা চালালেন তিনি। সারা রাস্তায় কোন মানুষজন দেখা যাচ্ছেনা।একটু দুরে দেখা যাচ্ছে কে ও একজন ধীরে সুস্থে হেটে যাচ্ছে। হাটার ভঙ্গিতে শিথিলতা। মদখোর বা আয়েশী মানুষের হাটার ধরন। সাধারণত অফিস ফেরত কর্মজীবী রা এইসময় দ্রুত হাটে। বাসায় যাওয়ার তাড়া থাকে।

একা রাস্তায় হাটতে গিয়ে ওনার গা ছমছম করে উঠল। দ্রুত এসে সামনে র লোক এর পাশাপাশি আসতে চেষ্টা করল। এখন লোকটির হাটা খুব দ্রুত হয়ে গেল। চেষ্টা করে তার কাছে পৌছান যাচ্ছেনা দেখে একপর্যায়ে দৌড়ান শুরু করলেন আমিন সাহেব। অবশেষে কাছে পৌছলেন। সালাম বলে মুখ দেখার চেষ্টা করলেন। লোকটির পুরা মুখ মাফলার এ ঢাকা। শুধু চোখ টা জলজল করছে। অন্ধকার এ অস্বাভাবিক জলজলে চোখ দেখে নিজের অজান্তে আতকে উঠে এক পা পিছিয়ে গেলেন তিনি।

ওয়ালাইকুম ফ্যাসফ্যাসে গলার আওয়াজ। খুক খুক করে কাশল কিছুক্ষণ তারপর একই কন্ঠস্বরে বলে উঠল খুব ঠান্ডা লাগছে ভাইজান।

আবার ও আতকে উঠলেন আমিন সাহেব নিজের অজান্তে।

সারা রাস্তায় কেও নেই তো তাই ভাবলাম গল্প করতে করতে যাই বললেন আমিন সাহেব নিরবতা ভেঙ্গে।

অসুবিধা নাই লোকটি বলল ,আপনি কোন দিকে যাইবেন আমিত এখন এই কবরস্থান দিয়ে যাব। শর্টকাট রাস্তা আছে। আপনি আবার ভয় পাবেন না তো ? বলে অদ্ভূত জলজলে চোখে তাকাল আবার।

না না ভয় কিসের বললে ও মনে মনে তিনি একটু ভয় পেলেন। একটু হাটার পর তারা বনানী কবরস্থানে ঢুকল।

ভাইজান সিগারেট খান নাকি ? চলেন একটু বসি পাথরটার উপর। অনেক ক্লান্ত বলে সামনের পাথরে বসলেন।

আজকে লং ডে গেল ? আমিন সাহেব জিজ্ঞাসা করেন হেসে।

না ভাই বহুকাল ঘুমাইনা। লোকটি বলল মাথা নেড়ে।

আসুন আজকে আপনাকে জীবনের গল্প শোনাব তারপর ঘুমাতে চলে যাব ভাই। আবার ও বলে উঠে লোকটি।

তিনি নিজেও পাশে বসলেন লোকটির। একটা সিগারেট ধরিয়ে লোকটির হাতে ধরিয়ে দিলেন। সিগারেট এর ধুয়া উড়াতে উড়াতে বলল লোকটি

এইযে এই জায়গা ভাই এখানে আমার বন্ধু আর স্ত্রী কত টুকরা করে কেটে মারছে। আমার পায়ের নিচে মাটি এখানে আমার লাশ আছে ভাইজান।

মানি চিত্কার দিয়ে উঠে দাড়ালেন তিনি। লাহাওলা পড়তে শুরু করলেন। আমি সব ভুল দেখছি ভুল শুনছি বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন।

আপনি ঠিক শুনছেন ভাইজান। একটা অনুরোধ ভাইজান এখানে এই কাগজে আমার ঠিকানা আছে , আমার স্ত্রীর। কষ্ট করে বাসায় গিয়ে বলেন আমারে ঠিক মত দাফন করতে। আমার আত্মা কষ্ট পাইতাছে বলে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিল।

পরক্ষণে প্রবল বাতাসে কাপন ধরে গেল আমিন সাহেব এর। লোকটির ভোজভাজির মত উধাও। তার বসে যাওয়া স্থানে একটুকরা কাগজ পরে আছে যাতে লিখা কোন ঠিকানা। কাগজ নিয়ে কাপতে কাপতে বাসায় এসে পৌছলেন রাত এগারটায়।

পরিশিস্ট : আমিন সাহেব এর ও মাস খানিক পরে নির্ধারিত ঠিকানায় গিয়ে পেলেন এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোক তার স্ত্রী এবং তাদের দুই ছেলে মেয়ে।

ভদ্র মহিলা প্রথমে তার নাম বলে বিস্মিত ঠিক চিনতে পারছিনা আপনি কে ?

আমাকে চেনার দরকার নেই একটু রুড ভাবে বললেন তিনি। আমি পুলিশ এ ইনফর্ম করবনা। তবে আমি চাই আপনারা অনেক বছর আগে যে ব্যক্তিকে মেরে এলোপাথাড়ি কবর দিয়ে এসেছেন তার যথাযথ সমাধির ব্যবস্থা করবেন। তার আগে মিলাদ মাহফিল পরিয়ে হতভাগ্য লোকটির আত্মার মাগফেরাত কামনা করবেন। আমি মাপ করে দিয়েছি আপনাদের। প্রার্থনা আল্লাহ যেন আপনাদের মাপ করে দেয়।

বলে তাদের হতভম্ব বিপর্যস্ত মুখের সামনে বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে এবং ঠিকানা টি কুচি কুচি করে ছিড়ে ফেললেন।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত