মাত্র তিন বছর হলো ইরা আর আমার রিলেশনশিপ, এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেলো বিয়ে কখন করবা বিয়ে কখন করবা এসব। শুধু বিয়ে না একটা চাকরি পেয়ে দ্যান প্রস্তাব পাঠাতে বলছে। মেয়েরা এতো সহজ চিন্তা কিভাবে করে? অবাক হয়ে যাই। আমি কেবল অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করলাম আমার একটু সময় লাগবে। তারউপর এই দেশে চাকর খাটার জন্য চাকরী পাওয়া কতটা অসাধ্য সাধন করা তা সবারই জানা। আমি তাও ইরার অবস্থাটা বুঝতে পারছি, ফ্যামিলি থেকে ছেলে দেখতেছে। আজকেও বলেছি, ইরা প্লিজ তুমি তোমার ফ্যামিলিকে এনিহাউ একটু কনভিন্স করার চেষ্টা করো, কিছুটা দিন ওয়েট করতে বলো। দেখো আমিওতো বসে নেই, চেষ্টা করতেছি তাইনা?
এমবিএ এডমিশন না নিয়ে হন্যে হয়ে চাকরী খুঁজতেছি। হা আমি একটা চাকরি পেয়েওছিলাম, একটা ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটিভ। কিন্তু না এই চাকরি করা ছেলে ইরার বর হবে এটা নাকি ইমপসিবল। ইরার ফ্যামিলির সবাই সরকারি চাকুরিজীবী, ইভেন ইরার বড়ো বোনের স্বামীও একজন এএসপি। আমি ইরাকে অনেক বুঝালাম সরকারি চাকরি আর বিসিএস এসব মুখের কথা নয়। আর আমার দ্বারা এসব সম্ভবও না। আমি পড়াশোনায় এতটা কনচার্ন না, প্লিজ কিছুটা সময় অপেক্ষা করো। আর আমি এখান থেকে ভালো মোভ করতে পারবো। তুমি জাস্ট একটু সঙ্গ দাও প্লিজ। ইরা মুখের উপর বলে দিলো, নেকামি ছেড়ে দাও। আমার পক্ষে এই রিলেশনশিপ আর রান করা পসিবল না, আমি আর পারবো না।
সেদিন অনেক চেষ্টা করেছিলাম ইরার কাছে আমাকে বুঝাতে। ইরা বুঝতে রাজি হলো না। আসলে ইরা জানতো আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য আমার দূর্বল আর মূখ্য সময়টা এখনই। ইরাকে আমি প্রপোজ করি নাই। ইরাই আমার প্রেমে পরেছিলো। আমি ওদের পারার গলিতে ক্রিকেট খেলতাম, ইরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতো আমায়। ইরা যথেষ্ট সুন্দরী ছিলো। হাসলে গালে টোল পরতো। একদিন নিজ থেকেই একটা চিরকুটে ওর নাম্বার লিখে দিয়েছিলো। ইরা হয়তো আমার অবস্থানটা অনেক কিছু টাইপ ভেবেছিলো। বাট আমি তার তুলনায় কিছুই না। ওর বাসার দারোয়ানটাও আমার চাইতে কমফোর্ট লাইফ লিড করে।
আমি অনেক স্বাধীন প্রিয় মানুষ। আমি হাসতে পছন্দ করি হাসাতে পছন্দ করি। মাঝে মাঝে ইরাকে রাতের জোছনা মাখিয়ে দিতে চাইতাম। বিশাল নদীর বুকে লঞ্চের ছাদে শুয়ে চাঁদনী রাতের আকাশ দেখাতে চাইতাম। ভোরের শিশির ভেজা ঘাসে খালি পায়ে হাঁটার সুখ অনুভব করাতে চাইতাম। বৃষ্টির জলে ভিজে রিকশার হুড নামিয়ে শহর ঘুরতে চাইতাম। শীতের সন্ধ্যায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গরম বাপা পিঠা খাওয়াতে চাইতাম। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে বসে দূরের মেঘ দেখাতে চাইতাম। আমার দূরান্তপনা অনুভূতিগুলোকে বিচ্ছিরিভাবে ইরা তাচ্ছিল্য করতো। একবার ইরাকে ভোরে ঘুম থেকে জাগিয়ে ওর বাসার নিচে নামিয়ে ছিলাম খেজুরের রস খাওয়ানোর জন্য। খুব কষ্ট করে জোগাড় করেছিলাম। এক চুমুক খেয়ে ওয়াক থু করে ফেলে দিয়েছিলো। বলেছিলো তুমি যেমন গাইয়ে ভূত তেমনি তোমার কাজকারবার। মিছে মিছে ঘুমটা নষ্ট করলে। আমার কাছে ব্যাপারটা খুব একটা গায়ে লাগেনি। কারন আমি জানতাম ইরা আমার চিন্তা ভাবনার অনেক বিপরীত অবস্থানে। তাও আমার মত করে গড়ে তোলার বৃথা চেষ্টা করেছিলাম। পরে যখন ভাবলাম তার মতো করে নিজেকে গড়ি নাহয়, সব পাগলামি ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেটাও হলো না। ইরা আমাকে ভূলে গেছে। চলে গেছে। কোথায় গেছে জানিনা। ওর সুখ আমাতে নেই।
আজকে আমি সেই ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটিভ থেকেই এমবিএ কমপ্লিট করে একটা বিভাগে ম্যানেজার পদে উন্নীত। মাল্টিন্যাশনাল ড্রাগস কোম্পানি হওয়ায় প্রায়ই দেশের বাইরে যাচ্ছি ড্রাগস এক্সপোর্ট করার জন্য ডিল করতে। স্যালারি একটা সরকারী কর্মকর্তার চাইতেও একটু বেশিই হ্যান্ডসাম। আমার কোন কিছুই খারাপ চলছে না। কোনো কিছুরই অভাব হচ্ছে না। আর হা ইরা নাই আমার লাইফে, কিন্তু আমার একটা মায়া আছে। মায়া আমার ওয়াইফ। আমার লিখার বিশাল বড় একটা ফ্যান। মায়ার মায়াবী গোল গোল দুটো চোখ আমাকে প্রতিদিন হত্যা করে। মেয়েটা পাগলও বটে। আমার একাকিত্বের সময়ে কোত্থেকে এসে হাজির হয় আমার লাইফে, ডেইলি ইনবক্সে পাগলামি করতো। খুব সহজ সরল একটা মেয়ে। এই মেয়ে আমাকে ধোঁকা দিতে পারে না। সব সময় আমার খোঁজ রাখতো। অদ্ভুতভাবে একদিন আমিও ওরে প্রপোজ করে বসি। রাজি হবার আগেই ডিরেক্ট ঠিকানা নিয়ে সব কিছু এরেঞ্জ করে বিয়েটাও সেরে ফেলি।
ভুল করি নাই। মেয়েটা পাগল খুব, বৃষ্টি হলেই টেনে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে চায়। ভোরের শিশির ভেজা ঘাসে হাটতে চায়, শীতের সন্ধ্যায় বাপা পিঠা খাওয়ার আবদার করে। অদ্ভুতভাবে আজকে খেজুরের রস কোত্থেকে ওর ভাইকে দিয়ে নিয়ে এসেছে আমাকে খাওয়ানোর জন্য। আমি মায়ার অদ্ভুত সব কাজকারবারের মায়ায় পরতে চাচ্ছি। খুব ভালোবাসতে চাচ্ছি আমার সেই ফিরে পাওয়া সপ্নগুলোকে। কিন্তু পারছি না। আমি অনেক পাল্টে গেছি। কেউ একজন আমাকে পাল্টে ফেলেছিলো কোন একসময়। সপ্নগুলোকে গলা টিপে হত্যা করতে চেয়েছিল।