সকাল দশটা বাজলেই বড়গিন্নীর ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।ঐসময় দুটি ঘন্টা না ঘুমোলে ওর শরীর ম্যাজ-ম্যাজ করে।সে মধুরা ব্যানার্জ্জী।কে যে এর নাম মধুরা রেখেছিল কে জানে।একফোঁটা মধুও এর অন্তর বাইরে কোথাও খুঁজলে পাওয়া যাবে না।বরং তার মনের গরল ব্যানার্জ্জী পরিবারের পরতে-পরতে ছড়িয়ে পড়ছে দিন দিন।সেকথা পরে হবে।কিন্তু মধুরা ব্যানার্জ্জী নিজেই নিজেকে সবরকম সার্টিফিকেট দিয়ে বসে আছে।কোনকিছুতেই সে হারবে না।সে মনে করে সে জ্ঞানী,রূপসী,অভিজ্ঞা,বিদূষী,গায়িকা,
পরোপকারী,কোমল হৃদয়ের অধিকারিনী,মমতাময়ী সব- সব।সেই-ই সমস্ত গুণের আধার, প্রণম্য।প্রণম্যই বটে।আসলে রূপবতী মাকাল ফল বলতে যা বোঝায় ব্যানার্জ্জী বাড়ীর বড় গিন্নী হল তাই।বিয়ে হয়ে পর্যন্ত অজন্তা দেখছে বড় গিন্নীর দাপটে বাড়ীর প্রতিটি সদস্য থেকে কাজের লোক সকলেই একেবারে তটস্থ।
অজন্তা ব্যানার্জ্জী এ বাড়ীর মেজ বৌ।বেশীদিন বিয়ে হয়নি তার।ছোটজন ইন্দু মানে ইন্দুলেখা ব্যানার্জ্জী।তবে ইন্দুলেখার বিয়ে অজন্তার বিয়ের অনেক আগেই হয়ে গেছে।তার বিয়েতে কি সব নাকি গোলমাল হয়েছিল।সে ব্যাপারে কেউ এখনও মুখ খোলেনি অজন্তার কাছে।অজন্তা ব্যানার্জ্জী এই পরিবারের প্রথম বৌ যে কিনা চাকরি করে।যদিও শেষ পর্যন্ত চাকরি সে বজায় রাখতে পারেনি।মধুরা,অজন্তা আর ইন্দুলেখা ব্যানার্জ্জী পরিবারের তিন বৌ। এছাড়া রয়েছে কাজের লোকজন সরকার মশাই দু একজন আশ্রিতা।
শাশুড়ী অমিয়া ভালমানুষ।শ্বশুরমশাই বিরাট বনেদী বাড়ী আর ‘রক্তরাগ’ আলতা সিঁদূরের ব্যবসা ছেলেদের হাতে দিয়ে অল্প বয়সে মারা গেছেন।অজন্তা বা ইন্দুলেখা শ্বশুরমশাইকে কেউই দেখেনি।শ্বশুরকে দেখেছে কেবল মধুরা।অজন্তার চাকরি করাতে তার শাশুড়ী মায়ের কোনো আপত্তি ছিল না।শ্বশুর অকালে চলে যাওয়ায় শাশুড়ীর অনেক মনোবাসনা অপূর্ণ থেকে গেছিল। তাই উনি সবসময় চেয়েছেন বা সবসময় চান তাঁর বৌমারা যেন মনের সব শখ পূর্ণ করতে পারে।আর শাশুড়ীর আস্কারাতেই বোধহয় মধুরার এত বাড়-বাড়ন্ত।আসলে তার হাবাগোবা বড় সন্তানটিকে মধুরা যে বিয়ে করেছে,এতেই অমিয়া দেবী কৃতার্থ।শাশুড়ীর স্কুলে পড়ার ইচ্ছে ছিল।কিন্তু তখনকার দিনে মেয়েদের বাড়ীর বাইরে বের হওয়া মুখের কথা ছিল না।তাই তাঁর আর স্কুলে পড়া হয়নি।পড়াশোনা শিখলে নাকি মেয়েমানুষ বিধবা হয়।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় স্কুলে না গিয়ে আর পড়াশোনা না শিখেও অমিয়া দেবীর বৈধব্য যোগ কেউ আটকাতে পারেনি।বড় গিন্নী মানে মধুরা ব্যানার্জ্জী তার বিচক্ষণতা আর প্রখর বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে বিশ্বস্ত সূত্রে একবার জানিয়েছিল যে-
”মা যে লুকিয়ে-লুকিয়ে এত বই পড়েছেন সে জন্যই মায়ের এমন পোড়া কপাল।উনি স্বামীকে ধরে রাখতে পারেননি। ”
তার রুচি আর স্পর্ধা দেখে অজন্তা অবাক হয়ে গেছিল।কিন্তু তখন সে সবে নতুন বৌ তাই এই কথার কোনো মন্তব্য করেনি।বিয়ে ঠিক হওয়ার পর যেদিন পাকা কথা হল,সেদিন বাড়ীর আত্মীয়-স্বজন আর সব সদস্যদের থেকে যে সবচেয়ে বেশী সক্রিয় ছিল সে মধুরা ব্যানার্জ্জী।মধুরা অজন্তার বাবাকে বলেছিল-
”শুনুন চাকরি করছে সে ভাল কথা এখনকার দিনে মেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়াবে,চাকরি করবে এ আর এমন কি বাহাদুরি?এই তো এখনকার যুগের দেখনদারিপনা।কত মেয়েই তো আকছাড় সংসার সামলে চাকরি করছে।তবে একটা কথা মনে রাখবেন ,যে মেয়ে সংসারের জন্য মহান আত্মত্যাগ করে চাকরি ছেড়ে দিতে পারে সেই সংসারের প্রকৃত মঙ্গল চায়।আমার একমাত্র পিসতুতো বৌদি ছেলেকে ঠিক করে মানুষ করবে বলে,সংসারের দেখভাল করবে বলে, কত্ত দামী একটা চাকরি এক লহমায় ছেড়ে দিয়েছিল।আমার পিসি অনেক বলা সত্ত্বেও কিছুতেই আর চাকরি করেনি।এই হল বৌ বুঝলেন!সে যাকগে!আপনাদের মেয়ে চাকরি করুক না করুক আমার বলার কি দরকার।সংসারের কর্তব্য সব ঠিকভাবে পালন করলেই হল।”
লম্বা বক্তৃতা দিয়ে মধুরা যখন থামলো তখন ঘরের পরিবেশ বেশ থমথমে।অন্য কেউ শুনলে বলবে এরকম বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কি দরকার? কিন্তু জামাই প্রভাস অত্যন্ত রুচিশীল, উচ্চ শিক্ষিত আর অমায়িক।তাই অজন্তার বাবা বা অজন্তা কেউ আর মধুরার কথা শুনে এই বিয়েতে আপত্তি করেনি।অজন্তার মা নেই।বাবা একলা মানুষ এত কিছু কথার মারপ্যাঁচ বোঝেন না।তবে মা চলে যাওয়ার পর থেকে অজন্তাই সংসারটা আগলে রেখেছে।চাকরি তো সবে বছর দুয়েক হল পেয়েছে।অজন্তার বাবা বললেন-
”মেয়ে আমার খুবই কর্তব্যপরায়ণ।দেখবেন আপনাদের সংসার ও ঠিক সামলে গুছিয়ে রাখবে।মধুরা চটজলদি উত্তর দেয়-
”কি করবে না করবে জানি না বাবা!চাকরি করবে নাকি সংসার সামলাবে!বাপের বাড়ীতে সবাই ভাল।সেখানকার ধুলোকেও সোনা মনে হয় আর শ্বশুরবাড়ীর সোনাকেও লোহা মনে হয়।বাপের বাড়ীতে ওসব করিৎকর্মা সবজান্তা মেয়ে অনেক থাকে।শ্বশুরবাড়ীতে এসে কাজের বেলায় ওইসব মেয়েরাই একেবারে গোল্লা।তখন শুধু বরটি, বাচ্ছাটি ,নিজের ঘরটি।কালে-কালে কত দেখলাম।”
বলে বড় গিন্নী কেমন মুখ টিপে-টিপে হাসতে লাগলো।সেদিনই অজন্তা বুঝেছিল এই মহিলাকে বাগে আনতে বেশ বেগ পেতে হবে।অজন্তা চুপ-চাপ স্বভাবের হলেও মনের দিক থেকে খুব দৃঢ় আর জেদী।সে নিজের মনোভাব কাউকে বুঝতে দেয় না।মা ছাড়া অনেকদিন জীবনের পথ হেঁটেছে অজন্তা ,তাই বাস্তব তার কাছে অনেকটা তার কঠিন রূপ নিয়ে ধরা পড়েছে। বিয়ের পর অজন্তা কতবার ভেবেছে –
”বাবা! মধুরাকে তার স্বামী সহ্য করে কি করে?দুজনে আজ বহুবছর আলাদা-আলাদা ঘরে থাকে কেন?কেমন যেন অস্বাভাবিক সম্পর্ক ওদের!”
কিন্তু কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি অজন্তা।
”ইন্দু ওষুধটা খেয়ে নাও।তোমার শরীরটা যে বড্ড খারাপ।”
আরোপ করা অত্যন্ত মধুর স্বরে ইন্দুর মাথায় হাত বুলিয়ে প্রতাপ মানে ইন্দুর স্বামী ইন্দুর মুখে দুটো ট্যাবলেট গুঁজে দেয়।জলের গেলাসটা ধরে ইন্দুর মুখে।যেন এমন যত্ন আর ভালবাসা আর কেউ কখনও ইন্দুকে করতেই পারবে না।ইন্দু জলটা মুখে নিয়ে ওষুধটা গিলে নেয়।ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায় স্বামী প্রতাপের মুখের দিকে।প্রতিদিনকার মত অসহায় ভাবে ওষুধটা খেয়ে নিয়ে ইন্দু ভাবে-
”এইভাবে বেঁচে থেকে কি লাভ?আমার তো মরে যাওয়াই ভাল!কেন এমন বোঝা হয়ে গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকা?এত বছর ধরে তিল তিল করে মরার চেয়ে একেবারে মরাই তো ভাল।হোক হোক মরণ হোক আমার!”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইন্দু জোর করে চোখটা বন্ধ করে যথারীতি বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে।ইন্দু জানে এরপর তার সুপুরুষ, বলিষ্ঠ চেহারা, ফর্সা, লম্বা স্বামীটি সযত্নে তার গায়ে চাদর চাপা দিয়ে দেবে।ঝাড়লন্ঠন নিভিয়ে ঘরে-জ্বেলে দেবে নীলাভ রাত বাতি।ঘরের নীলচে রহস্যময়তায় অন্ধকার তার তীক্ষ্ণ ধারালো দাঁত বের করে নিষ্ঠুর চাপা হাসি হাসতে-হাসতে ইন্দুকে যেন বলতে থাকবে ইন্দু ঘুমোও !ঘুমোও !জেগে থেকে কিছু লাভ নেই।ভয়ার্ত একটা অসহ্য ভাব জেগে উঠবে ঘরের ভেতর।ইন্দুর স্নায়ুগুলো নিস্তেজ হতে- হতে- হতে-হতে ক্রমে পুরো নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। তার চোখে নেমে আসবে কাল ঘুম!ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে প্রতাপ চলে যাবে-চলে যাবে পাশের ঘরে।পাশের ঘরে অপেক্ষা করে আছে মধুরা ব্যানার্জ্জী প্রতাপের বড় বৌদি।
প্রতাপ তার বড় বৌদির হাতের পুতুল।বড় বৌদি যা বলবে মরে গেলেও সেকথার নড়চড় হবে না।মধুরা ব্যানার্জ্জীর স্বামী প্রভাত।সাদা-সিধে গোবেচারা মানুষ।ছেলেবেলায় কি একটা কঠিন অসুখে বুদ্ধিটা তেমন ধারালো হতে পারেনি প্রভাতের।হয়তো সে কারণেই প্রভাতের আচার-আচরণ, বোকা-বোকা কথা,কোনোটাই মধুরার পছন্দের বিষয় ছিল না।সে মনে করত তার চরম দুর্ভাগ্য যে এমন অপদার্থ স্বামীকে নিয়ে তাকে এত বছর কাটাতে হল।অবশ্য সেটা নেহাৎ লোকদেখানো।
ব্যানার্জ্জী পরিবারের বিরাট বড় ‘রক্তরাগ’আলতা-সিঁদূরের কারবার।সে সব বলতে গেলে প্রতাপকে একাই সামলাতে হয়। কেননা প্রভাত তো থেকেও নেই তার মোটা বুদ্ধির জন্য কোনো ভাবেই তার ওপর ভরসা করা যায় না।প্রভাস বাইরে চাকরি করে।মাঝে-মাঝে বাড়ীতে আসে।তাই ব্যবসার সঙ্গে তার কোনো যোগ নেই।তবু পৈর্তৃক ব্যবসা হওয়ার সুবাদে মাস গেলে কিছুটা টাকা তার নামে জমা পড়ে।কোনো মাসে কম কোনো মাসে বেশী।উদারমনা প্রভাস সে সব তাকিয়ে দেখে না। কিন্তু অজন্তা সব বোঝে।সে মনে-মনে জানে তাকে সব দিক থেকে নিজেকে আর তার স্বামীকে তথা ইন্দুকে ঠিক রাখতে হবে।
ইন্দুলেখা অত্যন্ত গরীব ঘরের মেয়ে।’রক্তরাগ’আলতা সিঁদূরের কারখানার পাশের বস্তি থেকে কারখানায় কাজে আসতো।অনেকগুলো ভাই বোন পেট চলে না।লেখাপড়াও তেমন জানেনা।প্রতাপকে অনেক ধরে-করে কারখানার কাজটা পেয়েছিল সে।দেখতে-শুনতে ইন্দুকে ভালই ছিল,তাই তো প্রতাপের নজরে পড়ে গেল মেয়েটা।ভালবাসাবাসির মোহে কাজ জুটলো তার কারখানায়।আলতায় ছিপি পরানো আর বাক্সে ভরার কাজ।শুধু হাতে তো আর এমন ডাগর-সোমত্ত মেয়েকে কাজ পাইয়ে দেওয়া যায়না,তাই সন্ধ্যের পর কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে ইন্দুকে অনেকটা সময়ই প্রতাপের সঙ্গে কাটাতে হত।এরপরই ইন্দুর সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে বস্তির লোকেদের সাথে প্রতাপদের ভীষণ গন্ডগোল লাগে।সে এক কেলেঙ্কারী কান্ড!ব্যানার্জ্জী বাড়ীর মান-সম্মান যাবার জোগাড়।অবশেষে ইন্দুর সঙ্গে প্রতাপের বিয়ে।
অবশ্য সেসব এখন ইতিহাসের পাতায়।এ নিয়ে কারো কোনো অনুতাপ নেই।বড়- বড় বাড়ীর ইঁট-পাথরের খাঁজে অমন দু-চারটে ইতিহাস থাকে।এগুলো তাদের বংশগৌরবের মত পাশে-পাশে হাত ধরে চলে।মধুরার মধুপানে মত্ত প্রতাপ যখন ভেবেছিল এ জীবনে বিয়ে করার আর তার দরকার নেই।তার মন-প্রাণ শরীর সবই মধুরার মদির নেশায় ভরে আছে।সে সময়ই ইন্দুর দৌলতে তার কপালে আঁকা হল কলঙ্কের রাজটীকা।সে কালি মুছতেই ব্যানার্জ্জী বাড়ী সুলভ অঢেল জাঁকজমকে আত্মীয়-অনাত্মীয়-পাড়া-প্রতিবেশীর হৃদয় জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে প্রতাপ ব্যানার্জ্জী তখন অনিচ্ছাসত্ত্বেও সন্তানসম্ভবা ইন্দুলেখাকে বিয়ে করল।বিয়ের আগে যে মেয়ে সন্তানসম্ভবা হয় তার জন্য শ্বশুরবাড়ীতে কিরকম উষ্ণ অভ্যর্থনা তোলা থাকে সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না।সেখানে উপরি পাওনা মধুরার মত বড় জায়ের বাক্যবাণ।সেসব বাক্যবাণের ছটা, অনাদর সহ্য করতে না পেরেই হয়তো কিছুদিনের মধ্যে ইন্দু মৃত সন্তান প্রসব করে গভীর অবসাদের শিকার হয়ে পড়ল।মধুরার সুচতুর বুদ্ধিতে সেই সুযোগকে কাজে লাগাল প্রতাপ। মানসিক রোগী ইন্দুকে সুস্থ করার অছিলায় ঘুমের ওষুধ আর মানসিক অবসাদের ওষুধের আগুনে ইন্দুর জীবনের ইচ্ছে-অনিচ্ছে যৌবনের কামনা-বাসনা-ভালবাসা আর সুখের স্বপ্নগুলোকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে দিল।
বস্তি থেকে উঠে আসা সহায়-সম্বলহীন অশিক্ষিত একটা মেয়ে ইন্দু।কপালজোরে এমন বনেদী পরিবারের সুযোগ্য পাত্রকে স্বামী হিসেবে পেয়েছে।ব্যানার্জ্জী বাড়ীর বৌ হয়ে চারবেলা খাওয়া-পরা পাচ্ছে।বিয়ের আগে সন্তানসম্ভবা হওয়া সত্ত্বেও এই ব্যানার্জ্জী পরিবার তাকে মেনে নিয়েছে,এর থেকে আর কি-ই বা আশা-আকাঙ্খা থাকতে পারে একটা গরীব অশিক্ষিত অযোগ্য মেয়ের মনে?আর থাকলেই বা কে তা পূরণ করবে?
মধুরার একমাত্র সন্তান রূপম।বিদেশে পড়াশোনা করে।তার হাব-ভাব রকম-সকম পুরোটাই প্রতাপের মত।যে-কেউ প্রথম দর্শনেই ভাববে এ প্রতাপেরই সন্তান।প্রতাপেরও রূপমের প্রতি পক্ষপাতিত্ব আর ভালবাসার অন্ত নেই।একদিকে ইন্দু অন্যদিকে প্রভাত এই দুজনকে যদি নিষ্কিয় করে রাখা যায় তবে ওদের সম্পত্তির পুরো ভাগটাই মধুরা আর প্রতাপের অবৈধ সন্তান রূপমকে অনায়াসে পাইয়ে দেওয়া যায়।ইন্দুর জীবনদীপ আর বেশীদিন আলো দিতে পারবে না।এ ব্যাপারে প্রতাপ আর মধুরা নিঃসন্দেহ।প্রভাস-অজন্তা নির্বিবাদী চরিত্র।ব্যবসার থেকে মাসিক একটা টাকা পেলেই নিশ্চিন্ত।আর কাউকে ঘাঁটাবে না।
এইরকম অবস্থায় মধুরা-প্রতাপের অবৈধ প্রণয়লীলা তখন অবাধ দুরন্ত গতিতে সাতরঙের কামনা-বাসনার রঙে সেজে চরম সুখভোগের স্বর্গলোকে পাড়ি জমাতে লাগল।মধুরার অসীম কামনার আগুন প্রতাপের দেহ -মনকে ঝলসে দিতে লাগল। এই আগুনে সব কিছু পুড়ে ছারখার হয়ে গেলে না জানি কি হবে!কিন্তু আগুনের আকর্ষণে ধাবিত পতঙ্গ সে কথা মনে রাখে না।আগুনের মোহ তাকে ভাল-মন্দ সব ভুলিয়ে দেয়।
প্রতাপ-আর মধুরা ভেবেছিল সংসারের যাবতীয় কাজ-কর্মের দায়-ভার অনায়াসে ইন্দুর উপর চাপিয়ে দিন কাটিয়ে দেবে।কিন্তু ইন্দু মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে অন্ধকার ঘরে নিজের জায়গা করে নেওয়ায় মধুরার সে পরিকল্পনা ভেস্তে গেল।অজন্তার বিয়ের পর তাই সংসারের বেশীরভাগ দায়-দায়িত্ব এসে পড়ল অজন্তার কাঁধে।শাশুড়ীর দেখাশোনা,ঠাকুরঘরের কাজ,পূজো-পার্ব্বণ,রান্না-বান্নার তদারকী এইসব নিত্য নতুন কাজে কেমন করে অজন্তা জড়িয়ে পড়ল তা সে নিজেও বুঝতে পারল না।মধুরার কূটবুদ্ধিতে অজন্তাকে চাকরিটা ছেড়ে দিতে হল।শুধু এই কারণে নয়-ইন্দু যেন ছোট মেয়ের মত অজন্তাকে আঁকড়ে ধরল।তার মনের দুঃখ- জ্বালা-যন্ত্রণার কথা অজন্তার বুকের ওপর চোখের জলের বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে লাগল।অজন্তাকে ছেড়ে থাকার কথা ইন্দু একবারও ভাবতে পারে না। কেমন করে ইন্দুদের বস্তি পুড়ে গেল চোখের সামনে পুড়ে মরে গেল ওর মা-ভাই-বোনরা-কেমন করে বস্তির জমি ঢুকে গেল ‘রক্তরাগ’ আলতা-সিঁদূরের কারখানার জমিতে,কেমন করে প্রতাপ ইন্দুর ওপর অত্যাচার করে চলেছে,তাকে ওষুধ খাইয়ে-খাইয়ে জড়ভরতে পরিণত করছে-সে সব কথা অজন্তার মনে তুষের আগুনের মত জ্বলতে লাগল।চাকরির চেয়ে ইন্দুকে বাঁচানোটাই তার কাছে তখন মুখ্য কাজ বলে মনে হল।একজনের নতুন বিবাহিত জীবন,এদিকে স্বামী বাইরে অন্যজনের স্বামী থেকেও নেই।চোখের সামনে স্বামী অন্যজনের সঙ্গে শারীরিক ও মানসিকভাবে লিপ্ত।যে প্রতাপকে ভালবেসে ইন্দু সব দিয়েছিল;তার জন্যই কলঙ্কের আর অপমানের বোঝা মাথায় নিয়ে এবাড়ীতে প্রবেশ করেছিল, সেই প্রতাপ এমন চরিত্রহীন-নির্দয়-অমানুষ একথা কাকে বলবে সে?আর শোনার জন্য কে-ই বা আছে?আস্তে-আস্তে তার মন-বুদ্ধি- সব নিঃস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।সে বুঝতে পারছে এক অতল অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে সে,যেখান থেকে কোনোদিনই মুক্তি পাবে না।তার সেই অন্ধকারময় বিষাদ জগতে একচিলতে আলো হয়ে দেখা দিয়েছে অজন্তা।তাই ইদানীং মনের দুঃখ লাঘব করার একটা জায়গা খুঁজে পেয়েছে সে।চাকরির করার চেয়ে ইন্দুকে অন্ধকার জগৎ থেকে রক্ষা করাটা তার কাছে অনেক বড় মনে হয়েছে।তাই মনে-মনে তার একটা প্রস্তুতি চলছে অহরহ।
”রোজ-রোজ কিসের এত ওষুধ খাও ইন্দু?প্রতাপ রোজ তোমাকে নিজের হাতে ওষুধ খাইয়ে দেয় নাগো?”
বিয়ের প্রথম-প্রথমএইসব নানা প্রশ্ন করত অজন্তা ইন্দুকে।কিন্তু আস্তে-আস্তে পুরো ব্যাপারটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে তার কাছে।এই অন্যায়-অত্যাচার আর তীব্র অন্ধকারের জগৎ থেকে ইন্দুকে কি করে মুক্তি দেবে অজন্তা ভেবে পায়না।বাবাকে তো এসব কথা বলা যাবে না।প্রভাসকে দু-একবার আভাসে-ইঙ্গিতে অজন্তা এই ব্যাপারে দু একটা কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু প্রভাস আমল দেয়নি।বলেছে-
”নিজের জগৎ নিয়ে,কাজ নিয়ে থাক।সাংসারিক জটিলতায় যেচে ঢুকতে যেওনা।এতে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।”
অজন্তা চুপ করে যায় বটে কিন্তু ইন্দুকে নিয়ে মাঝে-মাঝে বেড়াতে যাওয়ার অছিলায় তার বাপের বাড়ীর ডাক্তারকে দেখায় সে।সেখানেই জানতে পেরেছে ইন্দুকে নিস্তেজ করে রাখার জন্য কত ওষুধ দেওয়া হয়। তবে অজন্তা চুপ করে থাকে।মুখে কিছু বলেনা কেননা ও জানে ওর মনোভাব জানতে পারলে ফল উল্টো হবে।এদের অনেক ক্ষমতা। মাঝে-মাঝে এই বাড়ীর এমন পরিবেশে অজন্তার অসহ্য লাগে।মনে হয় ছুটে প্রভাসের কাছে বাইরেই চলে যাবে এ বাড়ী ছেড়ে।কিন্তু ইন্দুর কি হবে তাহলে?সে তো সত্যি-সত্যি মরেই যাবে!সন্ধ্যে হলেই ঠাকুরঘরে সন্ধ্যা দীপ জ্বালে অজন্তা।শাঁখ বাজায়।শাঁখের ধ্বনি করুণ সুরে ঠাকুরঘরের পটগুলোতে যেন আছড়ে পড়ে। বাইরের আকাশ সেসবের দিকে তাকায় না।সে সন্ধ্যাতারার টিপ পরে সেজে ওঠে।বাগানের ঝাউ পাতায় হাওয়ায়-হাওয়ায় ঝুম্ ঝুম্ নূপুর বাজে। এরপর রান্নাঘরে রান্নার মাসীর সঙ্গে কাজকর্ম তদারকী করতে হয় অজন্তাকে।শাশুড়ীর নিরামিষ অন্যদের আমিষ।ইন্দু সবরকম খেতে পারে না আজকাল।আগে কেউ তার খাওয়ার দিকে নজর দিত না।অজন্তা আসার পর আর সব ব্যাপারটা বোঝার পর থেকে ইন্দুর রান্নাটা সে নিজেই করে।
প্রতি সন্ধ্যায় মধুরার ঘরে প্রেমের সুরবাহারে সুর ওঠে।প্রতাপের হাতে রঙীন পেয়ালায় উথলে ওঠা কামনার উচ্ছ্বাস ফেনিয়ে ফেনিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।কামনার আগুন দুজনকে পৌঁছে দেয় উষ্ণতার শিখরে।মাঝে-মাঝে প্রভাতকেও জোর করে কয়েক পাত্র রঙীন নেশায় ডুবিয়ে দেয় মধুরা আর প্রতাপ।নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকে সে। এক-একদিন প্রভাতের মনের অন্ধকুঠুরিতে জমা ক্ষোভ,ঘৃণা,বিরক্তি আগ্নেয়গিরির লাভার মত বাইরে বেরিয়ে আসে।সেই উত্তপ্ত লাভার স্পর্শ খান- খান করে দেয় প্রতাপ-মধুরার নিশ্চিন্ত প্রমোদখেলা।
এইরকম একদিন সন্ধ্যেবেলা মধুরার ঘরের সামনের বারান্দাটা দিয়ে অজন্তা রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে।হঠাৎ প্রভাতের কর্কশ গলার আওয়াজে থমকে দাঁড়ায় সে।প্রভাত মধুরাকে বলছে-
”হারামজাদী মেয়ে তোকে আমি শেষ করে ফেলব।তোর পিরীতের নাগরকেও আর বাঁচতে দেবো না।টিপে-টিপে মারব তোদের।ভেবেছিস আমার চোখে ধুলো দিয়ে দিনের পর দিন বেলেল্লাপনা চালাবি?আমি কিছু বুঝি না -না?আমি বোকা?আমার ছেলেকে কেড়েছিস বৌকে কেড়েছিস! আমি ছাড়ব না কাউকে।”
অন্যদিন অসহায় আস্ফালনে কিছুক্ষণ পরেই ঝিমিয়ে যায় প্রভাতের দেহ।তাই মধুরা আর প্রতাপ ভাবে এসব কথা অর্থহীন প্রলাপ।প্রভাতের কোনো ক্ষমতাই নেই।তার আস্ফালন দেশলাইয়ের মত ফস্ করে জ্বলেই নিভে যাবে।তবু সাবধানতার মার নেই।আজকাল মাঝে-মাঝেই প্রভাত বেসামাল কথা বলছে।তবে নির্বোধ প্রভাতের গলার আওয়াজ থামাতে প্রতাপের এক মিনিট লাগবে।আজ কিন্তু প্রভাত ঝিমিয়ে পড়ল না।একটু পরেই আবার উত্তপ্ত কথাবার্তা শুরু হল।অজন্তা দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে শুনতে লাগল।প্রতাপ বলছে-
”খুব গলার আওয়াজ বেরিয়েছে না তোর?আজকাল খুব কপচাচ্ছিস!দাঁড়া তোর ব্যবস্থা করছি আমি।কে কাকে টিপে মারে দেখছি!কালকের সকাল আর তোকে দেখতে হবে না।”
মধুরাও নানারকম কটূক্তি করতে থাকে সেদিন।প্রতাপ মধুরা আর প্রভাতের কথোপকথন শুনতে-শুনতে অজন্তার হাড় হিম হয়ে যায়।প্রভাত জড়ানো গলায় চিৎকার করতে থাকে-
”ছোট বৌদিকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তিল তিল করে মেরে ফেলছিস!আমার বৌকে নিয়ে তোর শরীরের খেলা!জানি !জানি! আমি সব জানি!আমি আর চুপ করে থাকব না!সব বলে দেবো সবাইকে সব-সব!দেখি তুই কি করিস!আমি বোকা—- শয়তান একটা! আমি বোকা—-আমি বোকা—”
এরপর আবার প্রভাতের কান্নার আওয়াজ।
অজন্তা ভাবে এখান থেকে সরে যাবে কেননা প্রভাস তাকে বার -বার এসব ঝামেলায় জড়াতে বারণ করে দিয়েছে।তবু কোন এক অদৃশ্য টানে অজন্তা সেখান থেকে নড়তে পারে না।তাকে এর শেষ দেখতে হবে।যা করার খুব বুদ্ধিবলে করতে হবে যাতে সাপও মরে আর লাঠিও না ভাঙে।এই অন্যায় দিনের পর দিন চলতে পারে না।তার নিঃশ্বাস দ্রুত ওঠা নামা করতে থাকে।প্রতাপ আবার বলে-
”বৌকে সুখী করার ক্ষমতা নেই! বড়-বড় কথা নপুংসক একটা অপদার্থ কোথাকার!”
মধুরার গলাও পাচ্ছে অজন্তা মধুরা বলছে-
”নির্বোধ পুরুষত্বহীন নিষ্কর্মা একটা!আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে।সবাইকে সব বলে দেবে!বলতে দিলে তো বলবে।এখনও তো স্পষ্ট উচ্চারণ বেরোয়নি মুখ থেকে।প্রতাপ কিছু একটা করো আমি আর পারছি না।চিরতরে ওর মুখ বন্ধ কর তুমি!ওর এত বড় আস্পর্ধা আমাদের টিপে মারার হুমকি দেয়!আরে প্রতাপ না থাকলে তো না খেয়ে মরতিস!কোনোকিছুর মুরোদ আছে তোর?”
মধুরা প্রতাপ প্রভাতের হাতাহাতি চেঁচামেচি আর জিনিসপত্র ভাঙাভাঙিতে ব্যানার্জ্জী পরিবারের ঐতিহ্য যেন ঝলমল করতে থাকে।বেশ কিছুক্ষণ পর উত্তেজনা কমে আসে।অজন্তা সেখান থেকে চলে যায়।
রাতে আজকাল অজন্তা ইন্দুলেখার কাছেই শোয়।প্রতাপের দেওয়া ঘুমের ওষুধ নার্ভকে নিস্তেজ করে রাখার ওষুধগুলো ফেলে দিয়ে তার দেখানো ডাক্তারের ওষুধগুলোই ইন্দুকে খাওয়ায় সে এখন।ভাল ব্যবহারের জাল বিছিয়ে প্রতাপের আস্থা অর্জন করে নিয়েছে সে বেশ সহজেই। সেদিন রাতে প্রতাপকে তাড়াতাড়ি বড় গিন্নীর ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে অজন্তা বলে-
” তুমি যাও প্রতাপ ইন্দুকে আমি ওষুধ খাইয়ে ঠিক ঘুম পাড়িয়ে দেব।”
প্রতাপ ভাবে নির্বিবাদী মিষ্টভাষী মেয়েটা কারো সাতে-পাঁচে থাকে না।মিষ্টি করে কথা বলে।কোনো ব্যাপারে বেশী কৌতূহল নেই।এই মেয়েটা প্রতাপ আর মধুরার জীবনে খুব একটা সমস্যা তৈরী করবে না বলেই মনে হয়।মা, ইন্দু আর সংসারের কাজকর্ম নিয়ে নিজের মনেই থাকে।আস্তে-আস্তে ইন্দুও বেশ অজন্তার অনুগত হয়ে উঠেছে।অজন্তার ওপর বেশ একটা বিশ্বাস জন্মে গেছে প্রতাপের।ওষুধ-টষুধগুলো আজকাল অজন্তাই খাইয়ে দেয় ইন্দুকে।অজন্তাকে দলে টেনে নিতে পারলেই প্রতাপ আর মধুরা নিশ্চিন্ত!রাতের জ্যোৎস্নার মদিরায় জগৎ-জীবন ঘুমিয়ে পড়ে।সেদিনকার মত সব চঞ্চলতা আর বিরোধের অবসান হয়।
পরেরদিন অজন্তার ঘুম ভাঙতে একটু দেরী হয়।ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় বেরিয়েই অজন্তা দেখে সারা বাড়ীতে হৈ-হৈ কান্ড!শাশুড়ী নাকি অজ্ঞান হয়ে গেছে।জ্ঞান আসছে না কিছুতেই।ডাক্তার দেখছে পাড়া প্রতিবেশী ভেঙে পড়েছে বাড়ীতে।শাশুড়ী তো মাঝে-মাঝেই উত্তেজনায় অজ্ঞান হয়ে যান।তখন ডাক্তার ডাকা হয়।কিন্তু বাড়ী জুড়ে এত লোকজন কেন?অজন্তা বুঝতে পারে না।হঠাৎ দেখে মধুরাকে ধরাধরি করে সকলে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠিয়ে নিয়ে আসছে।মধুরা বিকট চিৎকারে মড়াকান্না কাঁদছে।প্রতাপ কপালে হাত দিয়ে কেঁদে চলেছে।কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ীতে পুলিশ মিডিয়া সব এসে পড়ে।
আজ সকালে আলতা কারখানার পিছন থেকে প্রভাতের নিথর দেহটা উদ্ধার করেছে দরোয়ান কিষাণ আর রামজীবন।কি করে কি হল কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না।ইন্দু ভয়ে কাঁপছে।চেপে অজন্তার হাতটা ধরে আছে সে।হাতটা ঠান্ডা বরফ।
প্রভাতের বডি পোষ্টমর্টেম হবে।নিয়ে চলে যাবে এইবার।পুলিশরা তাদের কাজকর্ম ফরম্যালিটি জিজ্ঞাসাবাদ করছে।পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট দেখে তারপর জেরা শুরু হবে।ততদিন কেউ যেন স্টেশন লিভ না করে।হঠাৎ অজন্তা ইন্দুর হাতটা ছাড়িয়ে এগিয়ে এল পুলিশ অফিসারের সামনে।
”আমার কিছু বলার আছে।”
বলে গতকালের তিনজনের বচসার কথা সবিস্তারে পুলিশ অফিসারকে বলতে লাগল।শেষে মধুরা প্রভাত আর প্রতাপের কথোপকথনের মোবাইলে রেকর্ড করা পুরো অংশটা পুলিশ অফিসার এবং মিডিয়ার সামনে চালিয়ে দিল।
পুলিশ অফিসার সত্যম রায় অজন্তার প্রত্যুত্পন্নমতিত্বে অবাক তো হলেনই।খুশিও হলেন।বললেন –
”আপনি একটু আমাদের সঙ্গে থানায় চলুন কিছু কাজ আছে।”
অন্য একটা গাড়ীতে মধুরা আর প্রতাপকেও তোলা হল।কিছুদিন পর কাগজ আর টিভির খবরে শোনা গেল ব্যানার্জ্জী বাড়ীর বড় ছেলে প্রভাত ব্যানার্জ্জীর মৃত্যু হয়েছে অতিরিক্ত মদ্যপান আর সঙ্গে বিষক্রিয়ায়।