সে অনেক কাল আগের কথা । এক দেশে বাস করত দুই ভাই । বড় ভাই এর নাম ছিল নলবু আর ছোট ভাই এর নাম ছিল হাংবু ।
দুই ভাই হলে কি হবে তারা দুজন চরিত্র ,আচার আচরণ আর স্বভাবে ছিল একে অন্যের বিপরীত ।
বড় ভাইটি ছিল অনেক ধনী কিন্তু অত্যন্ত লোভী আর প্রতিহিংসা পরায়ণ । তার যন্ত্রণায় পাড়া পড়শিরা ছিল অতিষ্ঠ । আর অন্যদিকে ছোট ভাইটি গরীব হওয়া সত্ত্বেও ছিল অনেক দয়ালু । কিন্তু ভাগ্যদেবী তার প্রতি সুপ্রসন্ন ছিল না । প্রায় দিন সে তার পরিবার নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাত।
এক সন্ধ্যায় যখন হাংবু কাজ শেষে বাসায় ফিরছিল,দেখল এক হিংস্র সাপ চড়ুই পাখির বাসায় আক্রমন করছে । কুটিল সাপ একে একে পাখির সব ছানাকে খেয়ে ফেলছিল। হাংবু কিছু করার আগেই সব শেষ শুধু একটি মাত্র ছানা পালিয়ে যেতে পেরেছিল। কিন্তু পালাতে গিয়ে পাখিটির পা ভেঙ্গে জায় । তাই দেখে দয়ালু হাংবু পরম মমতায় পাখিটিকে হাতে তুলে নেয়।
এরপর সে দৌড়ে চলে আসে বাসায় । বাসায় এসে সে আর বউ মিলে পাখিটির অনেক সেবা যত্ন করে । পাখিটি হাংবুর পরিবারের সাথে থাকে। আস্তে আস্তে শীত চলে যায় আর বসন্ত চলে আসে।
তারপর একদিন তৃতীয় চন্দ্র মাসের তৃতীয় দিনে পাখিটি দক্ষিণে উড়ে চলে যায় ।
যাবার আগে সে হাংবু কে তিনটি বীজ দিয়ে যায় । হাংবু খুব অবাক হলেও মুখে কিছু বলে না। সে পাখিটিকে কিচিরমিচির করে উড়ে যেতে দেখে ভীষণ খুশি হয় ।
বাড়িতে সে তার বউ এর সাথে শলা পরামর্শ করে বীজগুলো ক্ষেতে ছড়িয়ে দিল। কয়েকদিন এর মধ্যেই বীজ থেকে চারা গজাল আর তারপর দেখতে না দেখতেই সেগুলো থেকে পাঁচটি বড় বড় কুমড়ো জন্মাল।
হাংবু আর তার বউ তো কুমড়ো দেখে দারুন খুশি হল । তারা প্রথমে একটা কুমড়ো কাটল । ওমা একি তাজ্জব ঘটনা !! কুমড়োর ভিতর থেকে শস্যদানা গড়িয়ে পরতে লাগল । তারা বিশাল বিশাল পাত্র আর বস্তা ভরে শস্যদানা মজুদ করে রাখল ।
এরপর তারা সাহস করে দ্বিতীয় কুমড়ো টা কাটল । এর ভিতর থেকে বেরিয়ে এল রাশি রাশি সোনাদানা। খুশিতে আত্মহারা হয়ে হাংবু আর তার বউ নাচতে আরম্ভ করল ।
এরপর তারা যখন তৃতীয় কুমড়ো টা কাটল এর ভিতর থেকে বের হয়ে এল এক পরি ।
বের হয়েই সে বাকি দুই কুমড়োর দিকে তাকিয়ে বলতে থাকল ,বের হয়ে আস …… বের হয়ে আস …… । পরির কথা শুনে কুমড়ো দুইটা মাটিতে গড়াগড়ি করতে লাগল আর তার ভিতর থেকে বের হয়ে আসল একটা লাল আর একটা নীল বোতল ।
এবার পরি তাদের হুলুম করল একটা সুন্দর বাড়ি বানাবার । চোখের পলকেই তারা সেখানে খুব সুন্দর একটা বাড়ি বানিয়ে দিল ।
বাড়ি বানানো শেষ করে পরি আর তার লাল নীল বোতল হাওয়ায় মিশে গেল ।এখন হাংবু একজন ধনী মানুষ । সে তার বউ আর ছেলেপুলে নিয়ে আনন্দে দিন কাটাতে লাগল ।
হাংবুর সুখ আর ধনসম্পদের কথা একদিন তার হিংসুটে বড় ভাই এর কানে পৌছাল।সে তখন ঘটনা জানার জন্য এসে হাজির হল হাংবুর বাসায় । নলবু এসে কর্কশ ভাষায় হাংবু কে জিগ্যেস করল , কি ব্যাপার ? তুমি কেমন করে এত্ত এত্ত ধনসম্পদের মালিক হলে? হাংবু তখন বড় ভাইকে সব কথা খুলে বলল । সব শুনে তক্ষুনি নলবু বাড়ি চলে গেল । বাড়ি গিয়ে সে তার বাগানে বানাল এক পাখির বাসা ।
কিছুদিনের মধ্যেই এক চড়ুই এসে সেখানে ঘর বাঁধল আর তার কয়েকটা ছানাপুনাও হল । এখন সেই লোভী নলবু একটা ছানাকে ছুড়ে ফেলে তার পা ভেঙ্গে দিল আর তারপর নিজেই সে পা ভাঙ্গা পাখির সেবা যত্ন করতে লাগল ।
এরপর সে ছানাটিকে আবার পাখির বাসায় রেখে দিল । এরপর শীত গিয়ে ফিরে এল বসন্ত । নলবুর সেই পাখির ছানাটি বাগানে ফিরে এসে তাকে দিয়ে গেল তিনটি বীজ ।
লোভী নলবু তো মহা খুশি ।যাইহোক সে তার ক্ষেতে গিয়ে বীজ তিনটা বপন করল আর অপেক্ষা করতে লাগল । যথাসময়ে তার ক্ষেতেও জন্মাল কুমড়ো ।
সে যখন প্রথম কুমড়ো টা কাটল ভিতর থেকে বেরিয়ে এল ময়লা নোংরা পানি আর সেই পানি তার ঘরদোর সব ভাসিয়ে দিল ।
সে খুব অবাক হলেও কাটল দ্বিতীয় কুমড়োটা । অমনি ওর ভিতর থেকে বেরিয়ে এল একদল বামন । তারা তাকে বলতে লাগল,তুই অনেক পাঁজি ,সবাইকে ভীষণ জ্বালাস ,ধার নিয়ে শোধ দিস না । দে দে সবার পাওনা টাকা ফেরত দে। কি আর করা, নিরুপায় হয়ে দুস্টু নলবু তাই করল । এবার অনেক অনেক সাহস সঞ্চয় করে সে কাটল শেষ কুমড়োটা ।
কাটতে না কাটতেই ওর ভিতর থেকে বের হয়ে আসল এক লাল দৈত্য ।
এসেই সে নল্বুকে দিতে শুরু করল ভীষণ পিটুনি। আর না পেরে নলবু দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিল ভাই এর বাসায়।
তার দয়ালু ভাই সব শুনে ভাইকে শুধু আশ্রয় দিল না সাথে তার সম্পদ ও ভাগ করে দিল। এরপর তারা দুই ভাই পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বাস করতে লাগল ।