সবুজ ব্যাঙ

সবুজ ব্যাঙ

সে অনেককাল আগেরকথা এক ছোট্টপুকুরে বাস করত এক সবুজব্যাঙ আর তার মা। সবুজব্যাঙ ছিল বড্ড দুষ্টু আর বেয়াড়া,সে তার মায়ের কোন কথাতেই কর্ণপাত করতনা। বরং তার মা তাকে যা বলত সে ঠিক তার উল্টোটাই করত।যদি তার মা বলত, যা বাছা আজ তুই পাহাড়ের ঢালে খেলতে যা, সে করত কি জান? সে চলে যেত নদীর পাড়ে খেলতে। এমন ধারা ছিল তার স্বভাব, ডানে যেতে বললে যাবে সে বামে।

এহেন দুষ্ট আর বেয়াড়া ছেলে নিয়ে মায়ের দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। প্রায়শ ছেলের কারনে মা ব্যাঙকে বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হত। এ নিয়ে মার মনে ছিল ভীষণ দুঃখ। মা ব্যাঙ নিজের মনে নিজেই ভাবত ,আহ কেন যে আমার ছেলেটা আর দশটা ব্যাঙ ছেলের মত না। কেন সে বড়দের কথা শুনেনা মানেনা !! মা ব্যাঙ মনে মনে ভাবতে লাগল কি করে ছেলের এই বাজে স্বভাব দূর করা যায়। তার মৃত্যুর পর ছেলের কি হবে এই ভাবনায় মায়ের ঘুম হারাম।

দিনের পর দিন, মাসের পর মাস মা ব্যাঙ তার ছেলে সবুজ ব্যাঙকে বকাঝকা করে ঠিক পথে আনার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ছেলেকে শোধরান সম্ভব হচ্ছিল না। সবুজ ব্যাঙ যথারীতি মায়ের কথা, আদেশ, উপদেশ অমান্য করে নিজের খেয়াল খুশি মত চলছিল।

এদিকে মায়ের বয়সও বাড়ছিল আর ছেলের জন্য দুশ্চিন্তা করতে করতে একসময় মা ব্যাঙ ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ল। কিন্তু ছেলের সেদিকে কোন ভ্রূক্ষেপ নাই। সে তার নিজের খেয়ালখুশি মত চলতে লাগল। এদিকে জীবন সায়াহ্নে এসে মা ব্যাঙ পড়ল মহা মুশকিলে । সে বুঝতে পারল সুন্দর এই পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকার দিন ফুরিয়ে আসছে । তার মনে একটা সুপ্ত বাসনা ছিল যেন মৃত্যুর পর তাকে পাহাড়ের ঢালে সমাহিত করা হয় ।

কিন্তু কাকে জানাবে সে মনের এই কথা ? বেয়াড়া ছেলে তো মায়ের কোন কথাই শুনে না । মা যা বলে সে করে ঠিক তার উল্টোটা ।

অবশেষে মা ব্যাঙ মনে মনে এক বুদ্ধি আঁটল । সে তার ছেলেকে কাছে ডেকে পাঠাল । অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবুজ ব্যাঙ ভ্রু কুঁচকে মা সামনে এসে দাড়াল ।

দেখ বাছা আমি মনে হয় আর বেশীদিন বাঁচব না , দুর্বল কন্ঠে বলল মা ব্যাঙ ।

আমার মৃত্যুর পর তুমি আমাকে নদীর তীরে সমাহিত কর কেমন ,

মাথা নেড়ে সায় জানাল সবুজ ব্যাঙ ।

মা জানত সে যা বলছে ছেলে তার বিপরীত কাজ টাই করবে ।

তুমি আমাকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা কর বাছা আমায় নদীর তীরেই সমাহিত করবে , বলল মা তার ছেলেকে ।

হ্যাঁ মা ,আমি তাই করব যা তুমি বলছ ,উত্তর দিল ছেলে মাথা নিচু করেই ।

এর দিন চারেক পর এক বর্ষণ মুখর দিনে মা ব্যাঙ মারা গেল । মায়ের মৃত্যুর পর সবুজ ব্যাঙ বুঝতে পারল সে কি হারিয়েছে । দুঃখে অনুতাপে সে একদম ভেঙ্গে পরল ।

মায়ের মৃত্যুর জন্য সে নিজেকেই নিজে দোষারোপ করতে থাকল ।

আহা ! কি কষ্টই না দিয়েছি মায়ের মনে , আমার জন্যই সে কষ্টে অনুতাপে মরে গেল ,ভাবল সবুজ ব্যাঙ ।

কেন যে আমি মায়ের কথার অবাধ্য হয়েছি বার বার , আফসোস আর অনুতাপে মরমে মরে যেতে থাকল সবুজ ব্যাঙ ।

চোখের পানি মুছতে মুছতে সে নিজের কাছেই নিজে প্রতিজ্ঞা করল ,যা হবার হয়েছে এখন থেকে সে তার মায়ের বলা প্রতিটা কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে ।

তাই মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে সে মাকে নিয়ে চলল নদী তীরে সমাহিত করতে ।

মুরুব্বিরা সব্বাই তাকে নিষেধ করল এই কাজ করতে ।

আরে বোকা, বেয়াড়া ছেলে বৃষ্টি এলেই নদীর পানি বাড়বে আর তোর মায়ের সমাধি ভেসে যাবে তখন, বলল এক বিজ্ঞ বুড়ো ব্যাঙ।

কিন্তু সে কারও কথা শুনল না ,কারন মায়ের কাছে যে সে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ ।

খুবই বাজে এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ জেনেও সে নদীর তীরেই মাকে সমাহিত করল ।

তারপর সে দিন সন্ধ্যায় যখন আকাশ কাল করে মেঘ জমল ,সে ছুটে গেল নদী তীরে ।

হে ঈশ্বর তুমি নদীর পানি বাড়তে দিয় না ,কাঁদতে কাঁদতে প্রাথনা করতে থাকল সবুজ ব্যাঙ ।

কিন্তু তাই কি হয় ? বৃষ্টিতে নদীর পানি বাড়তে বাড়তে কিছুক্ষণের ভিতর দুকূল প্লাবিত করে ফেলল ।

আর সেই সাথে ধুয়ে মুছে নিশ্চিহ্ন করে ফেলল সবুজ ব্যাঙ মায়ের কবর।

আহা বেচারা ব্যাঙ মনের দুঃখে ভারী বৃষ্টির মাঝে পাথরের উপর বসে মায়ের জন্য হাপুশ নয়নে কাঁদতে লাগল।

আরে এই জন্যই আজও যখন ঝুম বৃষ্টি নামে পুকুর পারে আর নদীর তীরে সবুজ ব্যাঙ ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ করে কাঁদে। শশশ…………………… ওই শোন সবুজ ব্যাঙ এর কান্না ,শুনতে পাচ্ছ তো?……

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত