বাসার পাশে ছোট একটি স্লাবের নিচে ককুর ছানা হয়েছে। প্রথম দিকে মা বলেছিল সাতটা হয়েছে। কিন্তু গতকাল ছোট বোন তমা “মিমি চকলেট” খাওয়াতে গিয়ে দেখে ,বাচ্চা একটি কমে গেছে। সেটি ও কাওকে বলেনি।
রাতের বেলায় ঘুমোনোর জন্য বিছানা গুছাচ্ছিলাম। কিন্তু তমার মনটা দেখি তেমন হাসি খুশি নেই। এটা কালকে থেকেই খেয়াল করছি। স্বাভাবিক ভাবেই তমাকে জিজ্ঞেস করলাম।
– কিরে,কালকে থেকেই কেমন যেন চুপ মেরে আছিস। মা কি কিছু বলেছে ?
প্রশ্নটা শোনার পরে তমা অনেক্ষন চুপ ছিল। তারপর মুখ ফুটে ও পাল্টা প্রশ্ন করলো।
– আচ্ছা ভাইয়া,শিয়াল গুলো এত বদজাত কেন । ওদের কি কোনো খাওয়ার নাই। এত খাওয়ারের অভাব ওদের?
তমার প্রশ্নটা প্রথমে ভাল করে বুঝতে পারিনি। যখন তার প্রশ্নটা ভাল করে আবার মনে করতে থাকলাম। তখন প্রশ্নটা মনে পরলো ঠিকি। কিন্তু কারনটা খুঁজে পেলাম না।
– খাওয়ারের অভাব হতে যাবে কেন। আল্লাহর দুনিয়াতে কি খাওয়ারের অভাব হয়েছে নাকি। কেন তোকে আবার কোন শিয়াল কি করলো?
– কুকুরের একটা বাচ্চা খেয়ে ফেলেছে শিয়াল!
তমা কথাটা শেষ করেই মুখ ঢেকে ফেললো। আমারও এবার টায়ার ব্লাস্ট হয়ে গেছে। আব্বু আম্মু যদি তমার কান্নার আওয়াজ শুনে ফেলে,এসে আমাকে ঝারবে। হায় খোদা ,কি বিপদ !
– এই গাধী,কি হইসে তোর। কুকুরের একটা বাচ্চাও শিয়াল খায়নি। সবই আছে। তুই গুনতে ভুল করেছিস । কালকে সকালে আবার গুনিয়ে আনবো তোকে । এখন চুপ কর।
কাঁদতে কাঁদতে তমা বলে।
– জ্বি না। আমি গুনতে ভুল করিনা। প্রত্যেকবার আমার কুকুর ছানা গুলোকে বদজাত শিয়াল খেয়ে ফেলে।
– আচ্ছা,তুই কালকে কী করে গুনেছিস?
– আমি স্কুল থেকে আসার সময় আম্মুকে দিয়ে একটা মিমি চকলেট কিনিয়েছিলাম। সেটা কালকে খাওয়াতে গিয়ে দেখি ,ছয়টা খেতে এসেছে। আর একটা আসেনি।
আমি মনে মনে ভাবছি। যদি সত্যি শিয়ালে খেয়ে থাকে,তাহলে হয়ত তমাকে কোনো ভাবে বোঝানো যাবে। ওভাবে বোঝানো ব্যাপার না। কিন্তু,আম্মু যে,বাচ্চা গুলোকে দেখে হিসাব করে বলেছিল,বাচ্চা সাতটাই হয়েছে। সেটার’ই বা গ্যারেন্টি কি?
আম্মু যদিও কুকুরের বাচ্চা ভীষণ পছন্দ করে।
তমাকে কোনে ভাবে বুঝিয়ে রাতে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছি। চোখে হালকা ঘুম ঘুম ভাব।
এমন সময় একটা স্বপ্ন শুরু হলো।
সাতটা কুকুর ছানা এসেছে। তিনজন মিলে আমাকে শক্ত করে একটি গাছের বেধে রেখেছে। সাদা একটি কুকুর ছানার হাতে লম্বা বাঁশ।
আমার নাকের সামনে বাঁশটা ঘুরাতে ঘুরাতে বলছে। তোরতো সাহস কমনা। ক্লাস ওয়ানে পড়া একটি বাচ্চা মেয়েকে তুই ঘোল খাওয়ানোর পরিকল্পনা করছিস ?
তোকে এক্ষনি এই গাছটার সাথে এই পাহার থেকে ফেলে দেওয়া হবে।
এই বলে সাদা কুকুর ছানাটা গাছটা টুকুশ করে একটি টোকা মেরে ফেলে দিল।
আর ওমনি আমি এমন জোড়ে বিছানার উপরে লাফিয়ে উঠলাম,যেন মনে হলো আমি সত্যি সত্যি পাহার থেকে পরে গেছি।
উফ,মাঝে মাঝে হালকা ঘুমে কিছু স্বপ্ন হাজির হয়। এসব যে এত বিদ্ঘুটে হয়। শুধু ভাষাতে নয়,বাসাতেও প্রকাশ করা অসম্ভব।
তখন শরীরটা এমন জোরে ঝাকুনি দেয়,মনে হয় খাট টা হয়ত ভেঙ্গেই গেছে।
হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গার পরে এবার বেশ ভাল করেই ঘুম চেপে বসলো।
ঘড়িতে তখন বোধহয় সাড়ে তিনটে বাজে।নতুন করে আবার একটি কুকুর ছানার স্বপ্ন শুরু হয়েছে।
একটি কুকুর ছানা আমার পাশে বসে থেকে চিৎকার করে কাঁদছে।
ঠিক এমন সময় পায়ের তলায় কারো হাতের স্পর্শে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। তাকিয়ে দেখি তমা তিরিং বিরিং করে লাফাচ্ছে।
ও ভাইয়াগো,,,,শিয়াল সব বাচ্চা খেয়ে ফেললো । তারাতারি উঠো গো ভাইয়া। আমার সব বাচ্চা খেয়ে ফেললো।
আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল,আমি তখনও স্বপ্ন দেখছি।
তা না হলেতো তমার এমন পাগলা হয়ে যাওয়ার কথা না।
কিন্তু আসলে এটা স্বপ্ন ছিল না। সেটা বুঝতে পারলাম আম্মুর কন্ঠে।
ইমতি,তারাতারি উঠ। সব বাচ্চা সাভারে পাঠিয়ে দিল।
অসহ্যকর একটা অবস্থা। উঠে গিয়ে যখন মেঝেতে পা রাখলাম। তখন কানে এলো কুকুর ছানার চিৎকার গুলো।
এবার বুঝতে পেরেছি। এই চিৎকার ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছিল,পাশেই কেউ চিল্লাচ্ছে।
হাতে রড নিয়ে দৌড় দিয়ে নিচে গেলাম। আমার পেছন পেছন আব্বুও আসলো টর্চ লাইট নিয়ে।
স্লাবের কাছে এসে দেখি,একটা বাচ্চা কাৎরাচ্ছে। আর পাশে পাঁচটা বাচ্চা চোখ বন্ধ করে চিল্লাচ্ছে।
এমনিতেই শরীর কাঁপছিল। তার উপর আব্বুর একটি কথা শুনে শরীরের কাঁপুনি যেন আরো বেড়ে গেল।
“আহারে,বাচ্চাটাকে অর্ধেক খেয়ে পালিয়ে গেছে শিয়ালটা।”
মাথা তখন কাজ করছিল না। কি করবো,সেটাও বুঝতে পারছি না। হঠাৎ মনে হলো,বাচ্চাটা যখন কাৎরাচ্ছে,পাশের একটা দড়িও তার সাথে নড়ছে।
আরো এক মিনিট ভাল করে দেখলাম কাহিনীটা। হুম ঠিক তাই।
কৌতুহলবশত দড়িটা টান দিতেই দেখা গেল ,বাচ্চাটার গলাতে টান পরছে।
এবার আব্বুর দিকে আঢ় চোখে তাকালাম। আব্বুও আমার দিকে,চশমার ফাক দিয়ে তাকিয়ে আছে।
” এহম,মানে,শিয়াল কি তাহলে বাচ্চাটাকে কিছুই করেনি ?
জ্বি না,এই এলাকাতে কোনে শিয়াল হামলা করেইনি।
কথাটা বলেই নিচে নেমে পরলাম। খুব মায়া হলো বাচ্চাটাকে দেখে। আমি এমনিতেই এসব থেকে একটু দুরেই থাকি। কিন্তু আজ কিনা একটা কুকুর ছানাকেই উদ্ধার করতে হচ্ছে আমাকে।
গলা থেকে দড়িটার প্যাচ সরিয়ে মুখের সামনে আনলাম বেটা কুকুর ছানাকে।
ঝারি মেরে বললাম। শুধু তোর জন্য গোটা বাড়িতে কিয়ামত হয়ে গেছে। এদিকে কি কারনে ফাঁসি দিতে এসেছিস বেটা।
তাকে কমান্ডো বাহিনীর মত উদ্ধার করে যখন বাসাতে পৌছিয়ে দিতে যাচ্ছি।
তখন দেখি,সামনে পাঁচটা কুকুর ছানা সিরিয়াল ভাবে দাড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছিল,তারা আমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিল।
তাদের ভাইকে কাছে পাওয়ার পরে সবাই কি আদর।
এমন দৃশ্য দেখে পাশে থেকে ছোট একটি কন্ঠে হাসির আওয়াজ ভেসে আসলো।
তাকিয়ে দেখি তমা। গায়ে চাদর মুরি দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমাকে দেখিয়ে বললো।
ভাইয়া,একটা বাচ্চা তুলে দাওনা। একটু ধরে আদর করবো।
মনে মনে বলছি,এমনিতেই নাচন বুড়ি। তার উপর ঢোলের ঢুগঢুগি।
রাগ করে সব বাচ্চাই উপরে তুলে দিলাম।
কিন্তু তমা আবার গুনে দেখে সেই ছয়টা বাচ্চাই আছে।
আমি তখন বললাম। আম্মু গুনতে ভুল করেছে।বাচ্চা ছয়টাই।
যাক,খুব সহজেই বিশ্বাস করে ফেলেছে।
তখন তমা বললো,
কুকুর ছানা গুলো আসলেউ গুদুম গুদুম
দেখতে যা দারুন না । সব সময় কোলে বসিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ভাইয়া,ওরাতো বড় হলে কুত্তা হয়ে যাবে। তাইনা ?
এই প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নেই। কারণ আমিও কুকুর ও কুত্তার পার্থক্য করতে সক্ষম নই।