নাসিমা ভোর ভোর বাপের বাড়ির দিকে রওনা হয়। আলিনগর, পলয়াঘোনা, মান্দারীটোলা, গোপ্তাখালী এরপর তার বাপের গ্রাম হাসনাবাদ। পুরো পথ যেতে হবে হেঁটে। চা-মুড়ি অল্প খেয়ে রোদ তেতে উঠবার আগে আগে বোরকা পড়ে ঘর থেকে বের হয় সে। তার স্বামী নিজাম হুজুরের সঙ্গে গেছে সন্দীপে। কালাপানিয়ায় জাবেদ মাস্টারের বউয়ের কিসের বাতাস লেগেছে, তা সারাতে। তিনদিনের আগে আসবার সম্ভাবনা নাই। নাসিমার অবশ্য বাপের বাড়ি থাকবার নিয়ত আরো বেশি দিনের। স্বামী আকবর ফিরে আসলেও অসুবিধা হবে না। বড় জা ফরিদাকে বলা আছে। আর সেও ত বাপের বাড়ি যাচ্ছে একরকম আকবরের চাপেই।
বিয়ের সময় পাওয়া রেকসিনের সুটকেসে এক মাস অথবা এক সপ্তাহ থাকার মতো জামা-কাপড় গুছিয়ে নেয় নাসিমা। ঘরে তালা মেরে চাবি দেয়ার জন্য পাশের ঘরের বড় জা-কে খুঁজলে কোথাও পাওয়া যায় না। বড় জা গত রাতের এঁটো থালা বাসন ধুতে গেছে ঘাটার পুকুরে। নাসিমা ঘাটে গিয়ে বলে, বড় ভাবি, আই আইয়ের।
ফরিদা ছোট জা নাসিমার দিকে তাকায়। বলে, এত সরে কৈ যাস? নাস্তা পানি খাই যা। নাসিমা খেয়েছে বললে সে বলে ক’দিন থাকবি মার কাছে? নাসিমা হসে, আগে যাই বড় ভাবি।
বলে খেজুর গাছের থাক দেয়া ঘাটে নিচে নামে। ফরিদাকে তালার চাবি দিয়ে জানায়, তোঁয়ার দর আইলে দিও।
ফরিদা শাড়ির আচলের গিটে চাবি বেঁধে নিয়ে বলে, ভালমত যাইস, ফি আমানিল্লাহ।
জা থেকে বিদায় নিয়ে গ্রামের টেক্সি স্ট্যান্ডের মোড়ে আসলে দেখে ভাসুর দাঁড়িয়ে আছে। নাসিমার ভাসুর হাটে হাটে ফল বিক্রি করে। স্ট্যান্ড থেকে উত্তরে টেক নেয়া রাস্তাটা গেছে তার বাপের বাড়ির দিকে। খুব বেশি বেলা হয় নি। সবে সকাল সাতটা। চা আর মুদি দোকান ছাড়া বাকি সবের ঝাপ বন্ধ। ভাসুর নাসিমাকে দেখে জিজ্ঞাস করে, কৈ যওর?
সে হয়তো ভেবেছিল নাসিমা কাঠগড় বাজার পর্যন্ত যাবে। কিন্তু নাসিমা জানায়, সে যাবে বাপের বাড়ি। হাঁটা পথ ছাড়াও টেক্সি করে তার বাপের বাড়ি যাওয়া যায়। তাতে তিনবার গাড়ি বদলাতে হয়। প্রথম টেক্সি এখান থেকে কাঠগড় বাজার, দ্বিতীয় টেক্সি কাঠগড় বাজার থেকে সীতাকুণ্ড বাজার, তৃতীয় টেক্সিতে সীতাকুণ্ড বাজার টু তার বাপের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার আগে মুরাদপুর টেক্সি স্টপেজ। এতবার ভাঙাভাঙির যাত্রার চেয়ে হেঁটে গেলে সময় আর খরচ লাগে কম। ভাসুরকে পাশ কেটে এসে জোরে জোরে হাঁটে নাসিমা। পলইয়াঘোনা পর্যন্ত রাস্তার পাশে ঘরবাড়ি আছে। পলইয়াঘোনা থেকে গোপ্তাখালী ব্রিজ পর্যন্ত টানা ক্ষেতের ভিতর দিয়ে পথ। সকাল সকাল পেরুতে না পারলে ঠা ঠা রোদের ভেতর পড়তে হবে। সুটকেস নিয়েছে বলে ছাতাও নিতে পারে নি।
এই সকালে হাঁটতে হাঁটতে ভাবনার দোলার ভেতরও থাকে নাসিমা। বিয়ে হবার আগে থেকেই বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলে ঘা আর ব্যথা ছিল আকবরের। এমনিতে তার গায়ের রং ফর্সা, নাক নকসা সুন্দর। দেখতে এসেছিল নাসিমার মেঝো ভাই আরবান আলী। কাঠগড় মসজিদের সামনে তাবিজের ঠোল, তাইগ্যার দোকান আকবরের। নিজাম হুজুরের সঙ্গে নানা কাজে জোগালির কাজ করে। দেখতে এলে পাশে কোব্বাত সওদাগরের দোকানে চা সিঙ্গারা খাইয়েছিল আরবান আলীকে। নিজাম হুজুরের সঙ্গে দেখা করলে সেও ভালো মত দেয় ছেলের। বলে, ছেলে ভালো। বাকি সব আল্লার ইচ্ছা।
বড় ভাই ইউসুফের বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স, গার্মেন্টসের নিটিংয়ে তখন কাজ করছে নাসিমা। সকাল সাতটায় ঢুকে, বের হয় সন্ধ্যা সাতটায়।
হাঁটতে হাঁটতে ভাবনার ভেতর পলইয়াঘোনা টেক পেরিয়ে মাটির রাস্তায় নামে নাসিমা। ক্ষেতের ভেতর দিয়ে পথ। মাটির রাস্তা। দুপাশে শিম গাছ লাগানো। নাসিমার হাঁটায় সীম গাছগুলো আড়ালের কাজ করে। কদিন বাদেই খৈয়ের মতো শিমফুল আসবে গাছে। হাঁটতে হাঁটতে মাঠে চোখ যায় তার। সারা বিলে শাইল খোন্দের ধান। বিলের মাঝে কোথাও কোথাও কালো আর লালচে রং, জামাইগুড়া আর তিলককস্তুরী ধান, গুড়া চালের। তিলককস্তুরীর কয়েক টোয়াল পর জমিনে গা এলিয়ে দিয়েছে ধান ক্ষেত, এ কালিমোটল। মোটা চালের দেশি ধান। নাসিমা হাঁটতে হাঁটতে ধান ক্ষেত দেখে। দুয়েক টোয়াল জমির ক্ষেত ছাড়া বাকি সব বিআর ২০, বিআর ২২ এর ধান । হাইব্রিড। এরকম পথের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিলকে বিল ধানক্ষেত দেখেও সুখ। অথচ আকবরের বউ হবার পর থেকে ধানক্ষেত দূরে থাক, সিদ্ধ ধানের ঘ্রাণের নাগালও পায় নি সে।
আকবর নিজাম হুজুরের জোগালির সাথে সাথে মসজিদের সামনে ঠোল, তাইগ্যা, মোমবাতি নিয়ে বসলেও তার আয়ে সংসার চলে না। নাসিমা তার গ্রাম সম্পর্কের খালা রাশেদার ঘরে গৃহস্থলীর কাজ করে। পানি পুরানো, কাপড় ধোয়া, ঘর মোছার কাজ থাকলেও জায়গা জমি সব চৈত্র টু চৈত্র ইজারা দেয়া বলে ক্ষেতকৃষ্টির কাজ নাই। তাই বিলকে বিল ধানক্ষেত দেখতে যেতেও নাসিমা অন্যরকম সুখ পায়। এরকম সুখ পেত বিয়ের আগে ধানের কাজ করতে। ধানক্ষেতে কোনটায় থোড় বেরিয়েছে, কোনটায় বেরুরে, কোনটায় অল্প পাকার আভাস। এসব দেখতে দেখতে গোপ্তাখালী ব্রিজের একটু আগে খাটাইল্লারগো বাড়ির ঘাটায় আসে সে। এ রাস্তা গোপ্তাখালী খালের দক্ষিণ পাশ ধরে। তার শ্বশুর বাড়ি থেকে যেমন এ রাস্তায় আসা যায়, তেমনি আসা যায় শুকলাল হাট থেকেও। রবি বুধ হাটবার। হাটের কারণেই এ রাস্তার চল বেশি।
নাসিমা গোপ্তাখালী ব্রিজে আসলে দেখে তাদের গ্রামের জাহাঙ্গীরও তার পেছন পেছন আসছে। জাহাঙ্গীর মানে লম্বা জাহাঙ্গীর। গ্রামে একই নামে আরো দুজন আছে বলে আরেকটু চিহ্নিত করে বললে, খায়েরুল্লারগো জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গীরকে দেখে নাসিমা হাঁটার গতি কমিয়ে দেয়। তাতে জাহাঙ্গীর তার পাশাপাশি আসলে জিজ্ঞাস করে, ইয়ে কডেত্তে আইয়ের?
জাহাঙ্গীর নাসিমাকে আগেই দেখেছে। খাটাইল্লারগো বাড়ির ঘাটায়, তাকে মান্দারীটোলা থেকে আসা রাস্তা থেকে শুকলাল হাটের রাস্তায় উঠতে দেখেছে। নাসিমা তার মায়ের মতো লম্বা। শরীর স্বাস্থ্য ভালো। জাহাঙ্গীর দূর থেকে দেখেই তাকে চিনেছে। যেটুকু সংশয় ছিল নাসিমার জিজ্ঞাসায় তাও কেটে গেছে।
পাল বাড়িতে মঙ্গলবার সকাল বেলা দাঁতের ওষুধ দেয়। শুকলাল হাটের পেছনে পাল বাড়ি। ডান পাশের আক্কেল দাঁতে ব্যথা। জাহাঙ্গীর ভোর ভোর গিয়েছিল দাঁতের ওষুধ নিতে। হারু সুকানির ছেলে মহিউদ্দিন, রাত ভর লরকা মাছ ধরে কাঁড়িতে, সেই খোঁজ দিয়েছিল ওষুধের।গেল হাটবারে শুকলাল হাটে ভেণ্ডি বেচতে গিয়ে দেখা। দাঁতে ব্যথার কথায় বলে, মঙ্গলবার পাল বাড়িত্যুন ওষুধ লইলে ভালা হৈ যাইব।
নাসিমার জিজ্ঞাসায় জাহাঙ্গীর বলে, পাল বাড়িত গেছিলাম দাঁতের অসুধের লাই।
তারা এখন গোপ্তাখালী খালের ব্রিজের উপর। জাহাঙ্গীরের গায়ে টিয়া রং শার্ট। মাথার চুল কোঁকড়ানো। নাসিমা লম্বা, কিন্তু সে আরো লম্বা, প্রায় ৬ ফিট। জাহাঙ্গীরের জবাবে নাসিমা একটু থমকায়। কিন্তু হাঁটা থামায় না। ব্রিজের পরেই ৩/৪ টে দোকান। চা মুদির। ডান পাশে প্রাইমারি স্কুল। সৌদি অনুদানে দোতালা। কাছেই সমুদ্র বলে, ঘূর্ণিঝড়ের সিগন্যালে আশ্রয়কেন্দ্রের কাজও চলে।
নাসিমার বিয়ের প্রায় দু’বছর পর জাহাঙ্গীর বউ আনে। তখনো তার দাঁতে কোনো অসুখ ছিল না। উনুনে টালা ভুষি, কাপুর, নিমপাতার মিশ্রনে বানানো মাজনে দাঁত মাজত। হাসলে ঝকঝকে, মুড়ি খাবার জন্য তোলা নাড়কেল ফালির মতো দাঁত চোখে পড়ত। দাঁতে কোনো ফাঁক ছিল না।
জাহাঙ্গীর জিজ্ঞাস করে, হোরগো বাইত্তে আইয়র নে।
নাসিমা তখনো তার দাঁতের ভেতর। বড় নাকফুল নাকে। হাতে সুটকেস। তা দেখে জাহাঙ্গীর আবার বলে, নাইয়র কদিনের লাই আইছে।
ব্রিজের পর দোকান পেরুলেই লক্ষনের গোলা। পশ্চিম মুখী হয়ে গোলা পার হলেই হাসনাবাদ। অগ্রহায়ণের পর শাইলখোন্দের ধান কাটা হলে, আড়াআড়ি হাঁটা পথের দূর পরে। কিন্তু এখন রাস্তা ধরে হেঁটে যেতে হবে। শাইলখোন্দ উঠবার মাস বাকি। গোপ্তাখালী ব্রিজের দোকানের পর হাসনাবাদ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় আর কোনো দোকান নাই। দুপাশেই ক্ষেতি জমি।
নাসিমা হাঁটে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। তার গায়ে কালো বোরখা। লক্ষণের গোলার ধান গত সনের মতো পেকে উঠতে আরো মাস বাকি। বিয়ের আগে এসহাক মেম্বরদের উঠানে লক্ষণের গোলার এগারোগণ্ডিয়ার, ষোলাগণ্ডিয়ার কালিমোটল ধান পাড়া দিত। জাহাঙ্গীরের ভোর হতেই গরুতে মাড়াই, হোড়া দেবার তাড়া। পাঁচজন কামলা কাজ করে। সবচেয়ে লম্বা জাহাঙ্গীর। কথা বললে মুখে বিশ্রী ঘ্রাণ নেই। ষোলগণ্ডিয়ার কালিমোটল, এগারগণ্ডিয়ার জুম্মা চিকনাল বৃত্তের মতো করে পাড়া দিয়ে, গা ধুয়ে জাহাঙ্গীর এসে বসে নাসিমার পাশে। নাসিমা তখন ডোঙ্গায় ধান সিদ্ধ করছে। জাহাঙ্গীর উঠানের একপাশে ধান সিদ্ধ করার আগুনে গা তাতায়। এসহাক মেম্বরের বাড়ির বছর ঠিকা কামলা সে। নাসিমা ধানের কাজ শেষ করে রাতে বাড়ি ফিরে যাবে। জাহাঙ্গীর থাকে কাছারিতে।
ধান সিদ্ধ করা আলোয় জাহাঙ্গীরকে দেখে নাসিমা। ডোঙ্গার এইপার আর ঐপার। শাদা দাঁত। মুখে কোনো বাজে ঘ্রাণ নেই। জাহাঙ্গীরের চোখ তখন নাসিমার কপালে।
সে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে নাসিমা ইউসুফ আলী সেরাঙ্গের বাড়ির ঘাটায় আসে। এখান থেকে আবার ঘনবসতি শুরু। একটু পরেই হাসনাবাদ। জাহাঙ্গীর জিজ্ঞাস করে, কদিন থাকবা ?
রাস্তার দুপাশে সীম গাছের শাদা ফুল। নাসিমা বলে তার স্বামী নিজাম হুজুরের সঙ্গে গেছে সন্দ্বীপে। আসার খবর পাঠালে চলে যাবে।
জাহাঙ্গীর পূর্ণ দৃষ্টি মেলে নাসিমার দিকে তাকায়। গ্রামে ঢুকবার আগেই যেন পুরো দেখে নিতে চায়। তার চোখ নাসিমার নাকফুলে।
একজনকে আরেকজন দেখতে দেখতেই তারা হাসনাবাদ ঢুকে পড়ে। দুজনের বাড়ি দু রাস্তায়। জাহাঙ্গীর আলাদা রাস্তা নেয়ার আগে বলে, আরবান আলী ভাইর বাড়ির পিছে ভেণ্ডি করছি। বিকালে যামু চাই।
নাসিমা শুনেছে কি শুনে নাই, তার কোনো ইশারা না দিয়ে আলাদা রাস্তা ধরে।
জাহাঙ্গীরের চোখে তখনো হাতে সুটকেস, গায়ে কালো বোরখা। অনেকদিন পর নাসিমার সঙ্গে তার দেখা হয়ে গেল।
অথচ আজ সকালবেলা বেরুবার সময় নাসিমার মন কেন জানি বলছিল জাহাঙ্গীরের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে। লম্বা ফাঁক নাই দাঁতের জাহাঙ্গীর। তার এখন বড় মেয়ে আছে। গতবার বাপের বাড়ি এলে লাল ফ্রক পড়ে যেতে দেখেছে। আরবান আলীর বউ বলেছিল, ঝুমুর, জাহাঙ্গীরের মেয়ে। নাসিমাদের ঘরের পেছনে তখন ঝিঙে ক্ষেত ছিল তার। সেবার দুদিন থেকেছিল আকবরসহ।
হাসনাবাদ মসজিদের সামনে আসলে নাসিমা দেখে তার মা আসছে। পাঁচ টাকা নিয়ে যাচ্ছে মহিবুল্লাশাহ’র মাজারে দানবাক্সে। কাল স্বপ্ন দেখেছে নাসিমা হাওয়ার ভেতর লাল চাদরে উড়ছে। তাই ঘুম থেকে উঠেই ছুটে এসেছে। এসে দেখে নাসিমাই আসছে।
নাসিমা বলে, ও মা, তোয়ারগো জামাই গেছে সন্দ্বীপ। কদিন থাইকব। হেল্লাই আই কদিনের লাই নাইয়র আইলাম। মা সহ ঘরে গিয়ে দেখে আরবান আলীর বউ মেলা চিতল পিঠা বানাচ্ছে। ভাবিকে দেখে নাসিমা বলে, কদিন থাকবে সে। নাসিমা এসেছে আকবরের পায়ের ঘাঁয়ের ডাক্তার দেখানোর টাকা জোগাড় করতে।
নামার বাজার মসজিদের সামনে আগরবাতি, তাবিজের ঠোল, মোমবাতি, তাইগ্যার টং দোকান আকবরের। পাশাপাশি নিজাম হুজুরের সঙ্গে বান কাটানো, তাবিজ তোলা, ঝাড়ফুক, গাছা বসানোতে সহকারীর কাজ করে। ডাক্তারি ওষুধের পাশাপাশি মানুষ এখনো বাতাস লাগা, বান টোনা সহ নানা আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী। সেরকম রোগী প্রতিদিনই আসে নিজাম হুজুরের কাছে।
এ আয়ে নিজাম হুজুরের সাথে আকবরেরও চলে যায়। কিন্তু বিয়ের আগের ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের ঘা ক’ মাস ধরে বেড়ে গেছে। নামার বাজারের অজিত ডাক্তার বলে দিয়েছে শহরের বড় ডাক্তার দেখাতে। আকবর বলে, নাসিমা, তুই একবার আরবানদারে কই চাইবি নি কোন?
ঝাড়ফুক, বান টোনার সহকারীর আয়ে সংসার চললেও জমাজাতি নাই আকবরের। তার পায়ের ঘা দিন দিন বড় হয়ে পুরো পা-টাকেই গ্রাস করে নিচ্ছে যেন। আকবর সন্দ্বীপ যাওয়াতে নাসিমা তাই এসেছে ঘা-য়ের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে।
বাপের বাড়ি আসার দিনেই, বিকালে আবার জাহাঙ্গীরের সঙ্গে দেখা হয় নাসিমার। পেছনের ভেণ্ডি ক্ষেতে এসেছে। নাসিমাদের ঘরের পেছনেই ভিটের মতো উচু জায়গা। আবদুল হক সুকানীদের খামার বাড়ি ছিল। তার বাবা বলত, সেই সব ব্রিটিশ আমলের কথা। এখন জাহাঙ্গীর ইজারা নিয়ে সবজি ফলায়। এবার লাগিয়েছে ভেণ্ডি। জাহাঙ্গীর বিকেলে ক্ষেতে দাঁড়িয়ে নাসিমাকে দেখে।
শ্যামাঙ্গী, কিন্তু আগের চেয়ে অনেক সুন্দরী লাগছে তাকে। নাসিমা দাঁড়িয়েছিল দাওয়ায়। ঘরের পেছনের দাওয়া। দাওয়ায় দাঁড়ালে ভেণ্ডি ক্ষেত পরিষ্কার দেখা যায়। নাসিমা হলুদ ভেণ্ডি ফুলের সঙ্গে জাহাঙ্গীরকে দেখে। দেখে তার ফাঁকহীন দাত।
ভেণ্ডি ক্ষেতের হলুদ ফুল যেন হলুদ প্রজাপতি, ভাবে নাসিমা।