টেলিফোনে ভুলভাল কল এলে, যদি আমার হাতে সময় থাকে, আমি তখন ফোনের অপর প্রান্তে থাকা মানুষটির সঙ্গে একটু খেজুরে-গপ্পো জুড়ে দিই । ততক্ষণে সে বুঝতে পারে যে ভুল লোকের সাথে কথা বলে অযথা সময় এবং অর্থব্যয় হচ্ছে। একটি অভিজ্ঞতার কথা জানাই।
অফিসে বসে কাজ করতে করতে হঠাৎ আমার মনে পড়ল আমার একটি জরুরী ফোন করা দরকার। ফোন নম্বরটি বার করে রিসিভার তুলে ডায়াল করে বললাম
“ফ্রেড বলছি, আমি কি রবিন কার্টারের সাথে কথা বলছি ?” ফোনটা দড়াম করে রাখবার আওয়াজ পেলাম ! যেন মনে হল গালে এক সপাট চড় খেলাম । ভাবতেই পারলামনা যে মানুষ এত রূঢ় হতে পারে ! এর পরে ডাইরেক্টরী খুঁজে রবিনের সঠিক নম্বর বার করে ডায়াল করি। ও ভুল করে শেষ দুটো নাম্বার উল্টো বলেছিল আমাকে।
রবিনের সঙ্গে কথা শেষ হতেই আবার সেই রংনাম্বার লেখা চিরকূটটা টেবিলে রাখা আছে দেখতে পাই; সঙ্গে সঙ্গে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চেপে বসে আমার। আমি ঐ নম্বরে আবার ফোন করি, যেই সে বলে উঠলো “হ্যালো” , আমি তাকে বলি “ তুই একটা আস্ত ষাঁড়” , বলেই লাইন কেটে দিই। আমি আমার টেলিফোন ডিরেক্টরিতে ষাঁড় লিখে তারপর ঐ নম্বরটা লিখে রেখে দিই। কিছুদিন ছাড়া ছাড়া , যেদিন আমার খুব খরচাপাতি হয়ে যায় কিংবা একটা বাজে দিন যায়, সেদিনই ওই লোকটিকে একবার আমি ফোন করি আর হ্যালো শুনলেই বলি “ষাঁড় কোথাকার”। এরকম করে আমি বেজায় তৃপ্তি পাচ্ছিলাম।
কিছুদিন পরে টেলিফোন কোম্পানী কলার আই ডি চালু করে, যা, আমার আনন্দ পাওয়ার পথের কাঁটা হয়ে দেখা দেয়। একদিন, আমার মাথায় একটা আইডিয়া এল। আমি ষাঁড়টাকে ফোন করে মোলায়েম সুরে বলি “ আমি টেলিফোন কোম্পানী থেকে বলছি, আপনার কি কলার আই ডি দরকার?” লোকটি খুব ক্রুদ্ধস্বরে খেঁকিয়ে “না না” বলে সেরকমই দড়াম করে ফোনটা রেখে দিল । আমি বুঝলাম এই সুযোগ, তাকে আবার যথারীতি ফোন করে ষাঁড় বলামাত্রই সে চেঁচাতে শুরু করে দিল।
পড়তে থাকুন, আরও আছে।
একদিন, একটি শপিং মলের ভেতরে পার্কিং প্লেসে আমি গাড়ি নিয়ে ঢুকি , দেখি এক মহিলা তাঁর গাড়িটা বার করবার কসরত করছে; দেখে মনে হচ্ছিল এ জীবনে বোধহয় আর গাড়িটা বেরোবেনা ! শেষ পর্যন্ত গাড়িটা বেরোয়, হঠাৎই আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এক বি এম ডবল্যু সেই ফাঁকা প্লেসটাতে ঢুকে যায়, ভাবটা এমন যেন আমার কোনো অস্তিত্বই নেই! আমি নিজেকে প্রবোধ দিলাম ‘ এ ব্যাটা আরেক ষাঁড়’। দুম করে আমার চোখে পড়ে, গাড়িটার পেছনে ফোন নম্বর সহ লেখা আছে “ ফর সেল”। নম্বরটি আমি টুকে নিই।
পরেরদিন অফিসে বসে বি এম ডবল্যু , মানে দ্বিতীয় ষাঁড়কে একটা ফোন করি, তাকে বলি আপনার গাড়িটা কি আপনি বেচবেন ? আপনার নাম কি ? থাকেন কোথায় ? কখন দেখা করা যাবে” ? সে বলে “হ্যাঁ মশাই, গাড়িটা বিক্রী করবার ইচ্ছে আছে, আমার নাম রবার্ট, থাকি ১৮০, থার্টিফোর্থ স্ট্রীটে, হলুদ রং এর বাড়ি; বিকেলবেলা বাড়িতে থাকি”। কথা শেষ করতেই আমি বলি “ তুই একটা মাথামোটা ষাঁড়”।
আমি খুব খুশিতে ছিলাম; দুই ষাঁড়কে নিয়ে আমার দিন খুব ভালোই কাটছিল। শেষ মেষ ভাবলাম এর একটা গ্র্যাণ্ড ফিনালে হওয়া দরকার।
একদিন বিকেলে প্রথম ষাঁড়কে ফোন করে চটিয়ে দিয়ে ফোনটা ধরে বসে থাকি। তখন সে বলে “ তুই কি এখনো আছিস?”
আমি বলি “ইয়েস” ।
“ তোকে সামনে পেলে…”
“ কী করবি?”
“পাছায় কষে লাথি কষাব”
“চলে আয়, ঠিকানা দিচ্ছি…” এই বলে আমি তাকে দ্বিতীয় ষাঁড়ের ঠিকানাটা বলে দিই।
“ আমি আসছি, আজ তোর গুষ্টির….”
এরপর আমি দ্রুত দ্বিতীয় ষাঁড়কে ফোন করে ক্ষেপিয়ে তুলি, সে বলে,
“তোকে যেদিন পাবো সেদিন তুই শেষ..”
“আমি আসছি তোর বাড়ি, দেখি তুই কী করতে পারিস!”
এরপর আমার কয়েকটা কাজ ছিল। প্রথমে আমি পুলিশকে,তারপর দমকল , তারপর একটা নিউজ চ্যানেলকে ফোন করে বলি “ থার্টিফোর্থ স্ট্রীটের ১৮০ নম্বর বাড়িটিতে গ্যাং ওয়ার লেগেছে, শীগগির যান।“
কিছুক্ষণ পরে আমি সেখানে যাই, দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে, গাড়ির ছাদে চেপে উঠে আমি দেখি কি, পুলিশ স্কোয়াডের সামনেই দুজনে মারামারি করছে, ও বি ভ্যান এসে গেছে, মায় মাথার উপরে একটা হেলিকপ্টার ও চক্কর মারছে ! যা দেখেছি, তা ইহজীবনে আর ভুলবোনা।