– তুই যে এতবড় শয়তান আমি জানতাম না। (আম্মু)
– কেনো আম্মু আমি আবার কি করলাম?
– ঐ থাপ্পড় চিনোস?
– হ্যাঁ চিনি তো… স্কুলে বান্দরগিরীর জন্য কত খাইছি। হিহিহি
– ফাজিল, আবার দাঁত বের করে হাসা হচ্ছে? আর এইবার খাবি থাপ্পড় আমার কাছে।
– কেনো আম্মু?
– আবার জিজ্ঞেস করছিস কেনো? হতচ্ছাড়া… কত কষ্টে তোর জন্য আমার বান্ধবিকে রাজি করলাম তোর সাথে নিধির বিয়েটা দেবো বলে। কিন্তু তুই…
– আম্মু তুমি এসব ভেবো না, ওটা কোনো ফ্যাক্ট না। আরো মেয়ে আছে তো।
– তোর আরো মেয়ের কি বলি, তুই যে সেই আরো মেয়েদেরকে ভাগাবি না তার কি গ্যারন্টি আছে?
– আম্মু তুমি থাকো আমি রুমে গেলাম।
– তোর কপালে খারাপই আছে বলে দিলাম।
আমি আর দাঁড়ালাম না। রুমে দৌড়ে চলে আসলাম। জানি এখন আম্মুর সামনে থাকলে নেহাতই কপালে মাইর ছাড়া কিছুই জুটবে না। কিন্তু বিয়েটা ভেঙে গেছে এটা ভেবেই এক পৈশাচিক হাসি দিলাম মনে মনে। কিন্তু এখনো সিওর হতে পারছি না নিধির আম্মু ভেঙে দিয়েছে কিনা বিয়েটা। তবে আম্মুর কথা শুনে বুঝলাম কাজ হয়েছে।
(রাতের বেলা)
– ঐ ফইন্নি খেতে আই..(আম্মু)
– আম্মিজান, আমাকে ফইন্নি বলবে না। ফইন্নি আমার বাপ হতে পারে কিন্তু আমি না।
– ঐ তোর বাপ আমার স্বামী হয়।
– হিহিহি। তাহলে তোমরা দুজনেই ফইন্নি…
কথাটি বলেই খাবার টেবিলের দিকে দৌড় দিলাম। খাবার টেবিলে রাতের খাবার এর জন্য বসতেই-
– আবির, তুই নাকি নিধিকে বিয়ে করবি না? (আব্বু)
– আমি নাকি, ওরাই তো না করে দিছে।
– তাই না? ওরা না করে দিছে? তুই তো যতকাজের গোড়া। (আম্মু)
এই রে পাশে আম্মু কখন যে চলে এসেছে বুঝতে পারিনি।
– হিহিহি, এখন ঠেলা সামলা…(আব্বু আসতে আসতে বললো)
– কি হল বল হাদারাম, বিয়েটা তারা ভাঙছে নাকি তুই? অবশ্য তারা এখনো জানায়নি। কিন্তু নিধি ফোন দিয়ে তোর ব্যাপারে বলেছিলো।
খাইছেরে, নিধির মা এসব জানে না তাহলে? নিধি এখনো বলেনি? ঠিক তখনি বুঝে নিলাম এটা আমার আম্মুর চাল।
– আম্মু আমি আর খাবো না।
– কেনো?
আর কিছু না বলেই চলে আসলাম ওখান থেকে। তার মানে আমাকে কি সত্যিই বিয়ের দড়ি গলায় পরতে হবে? না না না, এ হতে পারে না আবির। নিজেকে শক্ত কর। মনে মনে এসব কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গেলাম।
(পরেরদিন)
বাপের অফিসে বসে আছি। তখনি নিধির ফোন পাই। কিন্তু এ মেয়ে আমাকে কল কেনো দিলো? ফোন ধরেই বললাম-
– আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এই মুহুর্তে ব্যস্ত আছে, আপনি যদি ওর কাছের কেউ না হন তাহলে পরে কল না দিলেও চলবে। টুট টুট…
– ঐ বান্দর ফোন রাখবেন তো গুলি করে আপনার মাথা ভর্তি চুল উড়িয়ে দেবে।
– হা হা হা হা
– ঐ হাসেন কেনো?
– শুনেছি মাথার খুলি উড়িয়ে দেয় গুলি করে, আপনি চুল উড়াবেন… এ কেমন প্রতিশোধ?
– বোঝাবো পরে কেমন প্রতিশোধ।
হুট করেই লাইনটা কেটে দিলাম। তখনি মনে পড়লো দুইদিন আগের কথা। আসলে নিধিকে যেদিন দেখতে যাবো সেদিনের কথা। নিধি হল আমার আদরের ও ঘসেটি বেগমের মত আম্মুর বান্ধবীর মেয়ে। দেখতে মাশাল্লাহ, কিন্তু কথা হল- বিয়ের দড়ি গলাতে নিতে চাই না। তাই দুইদিন আগে যখন দেখতে গেছি…
– কেমন আছো বাবা? (নিধির বাপ)
– জ্বি কাকু ভালো আছি… আপনি?
– ঐ বান্দর, আংকেল বলতে পারিস না? (আম্মু কানে কানে বললো)
– হুমম ভালো আছি আমরা।
– ভাই সাহেব নিধিকে আনুন (আম্মু)
– হুমম ঠিক।
নিধি আসলো ইয়া বড় একখান ঘোমটা দিয়ে, এসে সোজাসুজি আমার সামনে বসলো।
– নিধি মা, তোমার মুখটা দেখাও। (ওর আম্মু)
(ঘোমটা তুললো… দেখে বুঝলাম আটা ময়দা নাই মুখে)
– মাশাল্লাহ, মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে। (আব্বু)
– আবির বাবা, তোমার পছন্দ হয়েছে?
– কাকু… সরি… আংকেল, আমি কি একটু আলাদা কথা বলতে পারি ওর সাথে?
– ঐ তোর লাজ লজ্জা কোথায় গেছে? এটা তো আমাদের বলার কথা, আর তুই যদি আলাদা কথা বলিস তো জানি এ মেয়েও যাবে। (আম্মু কানে কানে বললো)
ধুরর মেয়ে দেখতে এসে আম্মুর পাশে বসতে কেনো যে গেলাম খালি ফ্রী জ্ঞান দেয়।
– হুমম বাবা যাও (নিধির মা)
(নিধির ঘরে আসতেই)
চারিদিক ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। বললাম…
– বাহ, সুন্দর।
– হুমম জানি। আমি সুন্দর, সে সবাই বলে।
– ধুরর কে বলেছে, আর আমি তো আপনার রুমের কথা বলছি, রুমটা সুন্দর।
কথাটি শোনার পর নিধির হাসি ফাসি হয়ে গেলো। তবে তখনি বললে..
– আমাকে পছন্দ হয়েছে? (নিধি)
একটু চুপ থেকেই বললাম…
– আপনার ব্লড রিপোর্টটা দেন তো।
– মানে?!! (অবাক)
– আরে আপনাকে বিয়ে করবো, তা আপনার ব্লড রিপোর্ট না দেখলে হয়? যদি আপনার ব্লডে HIV থাকে? তখন কি হবে আমার? আমি যে শেষ হয়ে যাবো! তা কি হয়?
কথাটি শোনা মাত্রই নিধি বেডে ধপ করে বসে পড়লো। মুখের দিকে তাকাতেই দেখি ফ্যাকাসে রং ধারন করেছে। ঠিক সে সময় বাইরে আসলাম..
– কিরে মেয়ের সাথে কথা বলেছিস? ভালো লাগলো? আর বিয়ের তারিখ ঠিক করবো?
– নিধি বলবে পরে, আমার মনে হয় ওর বয়ফ্রেন্ড আছে। তাই বসে বসে তার কথা ভাবছে, তাছাড়া সেতো কোনো কথায় বলেনি। (সবাই অবাক)
কথাটি বলেই চলে আসলাম, পরে আম্মু কিসে কি করেছে কে জানে? কিন্তু দিব্যিই বুঝতে পারছি আমার বাপ মীর জাফরি করেছে আর আম্মু ঘষেটি বেগমী করেছে। মাঝখানে থেকে আমি নবাব হয়ে ফাইসা গেছি।
– আবির…
বাপের ডাকে বাস্তবে আসলাম।
– কি কও?
– বাপ এই কাজটা একটু করে দিস। আমি গেলাম, তোর আম্মু ডাকছে।
তখনি বাপের মুখের দিকে তাকালাম। আমার দিকে চেয়ে উনি এক পৈশাচিক হাসি দিলেন। বুঝে নিলাম আমার সিংহাসন এইবার গেল। ঠেলা সামলাও।
যাই হোক কাজ শেষ করে বাড়িতে আসলাম। অনেক ক্লান্ত থাকাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
(সকালে)
– ঐ কে রে…
ঘুমিয়ে ছিলাম। তখনি মনে হয় কেউ একবালতি পানি মেরে দিছে। লাফ দিয়ে কথাটি বললাম।
– আমি গো..
চোখ কচলিয়ে তাকাতেই, “সকাল বেলা নিধি এসে দিলো আমার ডাক…
ধুর শালা! এখন কি হবে, আমি তো অবাক!”
– ঐ কি ভাবছেন…
– আ..আ..আপনি এখানে??
– হুমমম…
কথাটি শেষ করেই দেখলাম নিধি উঠে গেলো। আমিও উঠে দাঁড়ালাম। তখনি ওর ব্যাগ থেকে একটি সাদা কাগজ বের করলো..
– কি এটা?(আমি)
– খুলেই দেখেন।
(কাগজটি খুলেই শালা আমি আবার অবাক)
– ব্লড রিপোর্ট?
– হুমম।
– এমা এটা তো আপনার। (আমি)
– হুমম।
– কিন্তু আমাকে কেন দিচ্ছেন?
– কেনো দিছে জানো না চাঁদ?? (আম্মু)
হুটট করেই আম্মু রুমে ঢুকে কান টেনে ধরে বললো কথাটি।
– আপনি না আমার ব্লড রিপোর্ট দেখতে চেয়েছিলেন? (নিধি)
– আরে আমি তো বিয়ে করবো না বলেই এটা বলেছিলা…
– কেন?
– আরে কে চাই এত তাড়াতাড়ি বিয়ের দড়ি গলায় পরাতে?
– তোকে পরতেই হবে বাপ। (আব্বু)
তখনি বুঝলাম আমার পাশে কেউ নেই, চারিদিকে সব সৈন্য, কিন্তু আমি একা। সৈন্যগুলো সব মীর জাফরের আর ঘষেটি বেগমের।
– কিন্তু আপনি তবুও বিয়ে করছেন?
– তা করবে না? সব তো আমাদের প্লান করা। আমরা জানতাম তুই ভেজাল করবি।
সবাই হো হো হো করে পৈশাচিক হাসি দিলো। কিন্তু আমি পারলাম না হাসতে। তখনি স্মৃতির পাতায় কড়া নেড়ে বলে দিল, “গেলো রে তোর সিংহাসন, এইবার ঠেলা সামলাও…