ছোট বোনের বিয়ের জন্য কয়েকজন বিবাহযোগ্য পাত্রের ছবি নিয়ে এসেছেন এলাকার নামকরা ঘটক শহীদ ভাই। এর মাঝে একটা ছবি হাতে নেওয়ার পর আমার মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হচ্ছেনা। ঠিক গলার মাঝে নি:শ্বাসটুকু কোন্দল পাকিয়ে আটকে রয়েছে।
“বুঝলেন আপা, ছেলে তো নয়, যেনো চাদের টুকরা। হাসিটা দেখেছেন, কি পবিত্র! চেহারার মাঝে মায়া দেখছেন? ছেলে উচ্চ শিক্ষিত, বাহির থেকে পড়াশোনা করে এসেছে। আর এখন দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। আর ব্যবহার, অমায়িক! আহ, এই যুগেও এমন ছেলে পাওয়া যায়!”
আরো কিছু বলতে যাওয়ার আগে উনাকে থামিয়ে পাত্রের বায়োডাটা চাইলাম। বায়োডাটা হাতে নিয়ে দেখি এটা আর কেউ নয়, আমার স্বামি, রায়হানের বায়োডাটা। এই বুড়া বয়সে ওর বুঝি আবার বিয়ে করার ভীমরতি ধরেছে! এই সাত বছর কি তাহলে একটা ধোকাবাজের সাথে আমি সংসার করলাম?
ঘটককে জিজ্ঞেস করলাম,
“শেষ কবে আপনার সাথে উনার কথা হয়েছে?”
“আরে বইলেন না আপা, কাল বিকেলেই রায়হান ভাই তার অফিসে আমাকে ডেকে আদর যত্ন করে খাওয়ালেন। কি সুন্দর অফিস! সাজানো, গোছানো, একদম ফিটফাট। কয়েকটা মেয়ের বায়োডাটাও আমি তাকে দিয়ে এলাম। ভালো পাত্রের প্রচুর ডিমান্ড, বুঝলেন? আর এমন পাত্র হলে তো কোন কথাই নেই!”
এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠতেই দেখি রায়হান এসেছে। ঘরে ঢুকে ঘটককে দেখেই সালাম দিল।
এটার পর আমি আরো শিওর হলাম যে রায়হান আমাকে ধোকা দিচ্ছে!
কিন্তু কোন এক আশ্চর্য কারণে, ঘটক তার মুখ লুকানোর চেষ্টা করছেন।
রায়হান আমাকে ডেকে বল্লো,
“যাক ভালোই হয়েছে, শহীদ ভাই এখন এসেছেন। নীরার বিয়ের দায়িত্ব তাহলে উনাকেই দিয়ে দেওয়া যায়, কি বল? তাছাড়া, তোমার আর আমার বিয়েরর ঘটকালীতো তো শহীদভাই নিজ দায়িত্বেই করিয়েছিলো। মনে আছে?”
এটা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো। কেঁদে বললাম, “শুধু নীরার বিয়েই, নাকি সাথে তোমারও বিয়ে করার ভীমরতি জেগেছে!”
“কি বলছো এসব?” রায়হান কৌতুহলী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমার নেকাবটা খুলে, রায়হানের বায়োডাটা ওর হাতে দিলাম। ও হাতে নিয়ে হেসে বল্লো, এই বায়োডাটা তুমি এখনো রেখে দিয়েছো?”
খুব রাগ নিয়েই বললাম, “তুমি নাকি তোমার জন্য নতুন পাত্রী খোঁজার দায়িত্ব শহীদ ভাই এর কাছেই দিয়েছো?”
“কি বলছো এসব, শহীদ ভাই এর সাথে আমাদের বিয়ের পর আজই প্রথম দেখা হলো।”
“কাল নাকি শহীদ ভাই তোমার সাথে বিকেল বেলা তোমার অফিসে দেখা করে কয়েকটি মেয়ের বায়োডাটা দিয়ে এসেছে?”
“আরে কাল বিকেলে তো আমি তোমার সাথেই ছিলাম, ভুলে গিয়েছো?”
এমন সময় মনে পড়লো, কাল বিকেলে রায়হান তো আমার সাথেই ছিলো। দুজনেই কৌতুহল নিয়ে শহীদ ভাই এর দিকে তাকিয়ে আছি।
শহীদ ভাই এর মুখে ঘামের ছাপ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই, টিস্যু দিয়ে ঘাম মুছে নিচ্ছে!
কিছুটা লজ্জিত মুখে বল্লো-
“আসলে আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। ব্যবসার খাতিরে কিছু হাই প্রোফাইল কাস্টমারের বায়োডাটা আমাদের রেখে দিতে হয়। এগুলো না দেখালে কোন পক্ষ আমাদের দাম দিতে চায় না। আর আপনি নেকাব পড়া ছিলেন, তাই চিনতে পারি নাই! এবারের মত আমাকে মাফ করে দেন, প্লিজ?”