অদৃশ্য খুনী

অদৃশ্য খুনী

অনেক দিন পর আজ সেই কলম আর ডাইরিটা নিয়ে লিখতে বসেছি.!মনের দেয়ালে কিছু কথা লিখে রেখেছি,সময় সুযোগের দেখা পাইনি তাই লেখা হয়নি.!
প্রতিটা মানুষের ভেতরে কিছু না বলা কথা থাকে,বলতে চেয়েও হয়তো বলা হয় না.!

আমি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের অনেক গল্প পড়েছি।শুধু তিনি নয় আরও অনেক বড় বড় লেখকের গল্প বা কবিতা পড়েছি।কাজী নজরুল,রবীন্দনাথ ঠাকুর আরও অনেকে, সবার গল্পেই ভিন্ন রকম মজা পেয়েছি.!
তাদের কিছু উপন্যাসে যে সব নারী চরিত্রগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, তারা প্রত্যকেই নাকি অসম্ভব সুন্দরী ছিলো.!
সত্যি বলতে কি আমার মনে প্রশ্ন জাগে ঐ সব মেয়েগুলো সত্যি কি অসম্ভব সুন্দরী ছিলো.?
নাকি তারা তাদের গল্পে তাদের সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন. ?
লেকখ বা কবিরা তাদের সুন্দর চোখ দিয়ে সুন্দর ভাবে তুলে ধরতেন, সেটা আমার কাছে অনেক বড় একটা প্রশ্ন. !

এটাও একটা প্রশ্ন যে, তারা শুধু সুন্দর মেয়েদের কে নিয়েই উপন্যাস বা গল্প লিখেননি তো.?
তাহলে যারা সুন্দর নয়, সে সব মেয়েদের নিয়ে কি কোন উপন্যাস লেখা হবে না.?
তাদের কে নিয়ে লেখার মত কোন লেখকের কি জন্ম হবে না..?

রবীন্দ্রনাথের একটা লেখায় পড়েছিলাম, সবাই নাকি সুন্দরের পূজারী ..!
আচ্ছা তাহলে কি তারা শুধু সুন্দর মেয়েদে কেই গল্পের প্রধাণ চরিত্রে ব্যবহার করতেন ..?
তারা তো কেউ বেঁচে নেই.!
ইচ্ছে ছিলো যদি তাদের কোন দিন সামনে পেতাম তাহলে এই প্রশ্নটা করতাম “আপনাদের উপন্যাসে বা গল্পের সব মেয়ে গুলোই কি রূপবতী, পরীর মত সুন্দর ..?
জানি না তারা কি উত্তর দিতেন, সেটা আজও অজানাই রয়েছে..!

তবে আমি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের একটা লেখা পড়েছিলাম সেখানে তিনি বলেছেন ” গল্পের প্রধান চরিত্রের নারীকে সৌন্দর্যরূপ দেওয়ার ক্ষমতা তো আমার হাতে”।
এখান থেকে এটা ধারনা করতে পারি যে, তারা গল্পের নায়কাদের সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতেন,মানুষের মন ছুঁয়ে যাওয়ার জন্য..!যেনো যুগ যুগ ধরে সবার মাঝে ঐ নায়কা গুলো
জায়গা করে নিতে পারে.!

অনেক বড় বড় লেখকের বিষাদের যে সব গল্প বা উপন্যাস পড়েছি সেখানে তারা কোন জায়গাতে গল্পের সমাপ্তিতে প্রধাণ চরিত্রগুলো আলাদা করেছেন,তাদের মিলিত করে দেননি.!কোন কোন জায়গাতে অনেক কষ্ট দিয়ে তাদের মিলিত করেছেন,আবার কোথাও কোথাও হয়তো তারা ঐ রূপবতী নারী কিংবা ছেলেকে হত্যা করেছেন.!
কারণ হয়তো ঐ একটাই,গল্প প্রেমী মানুষ সুখের চেয়ে বিষাদের গল্পটা বেশি পছন্দ করে.!
কারণ সুখের কথা সবাই ভুলে যায়,কিন্তুুু দুঃখটা হৃদয়ে গেঁথে যায় ,চাইলেও তো ভোলা যায় না..!

কিন্তুু আমরা এটা বলতে পারি তারাও তো খুনী.!
হোক গল্পে বা উপন্যাসে ,কিন্তুু আবেগের বশে বলে ফেলি বাঁচিয়ে রাখলেও তো পারতো..!
কারণ কষ্টটা হৃদয়ে যে গেঁথে যায় তাই..!তারা যে তাদের লেখার মাঝে কত খুন করেছে তার হিসেব তো কেউ জানে না..!লেখকগণ যেভাবে তাদের গল্প সাজিয়েছেন, ঠিক সেভাবেই গল্পটা ফুটিয়ে তোলার জন্য সুন্দর ভাবে সমাপ্তি করেছেন.!তাই তো কখনও করেছেন রূপবতী ,আবার কখনও বা অদৃশ্য হাতে খুন করেছেন..!তাদের এই খুনের হয়তো কোন দিনও বিচার হবে না,কারণ না আছে মামলা,না বাদীপক্ষ,না আছে সাক্ষী, না কোন আদালত ..!
কিন্তুু এভাবে হয়তো যুগের পর যুগ লেখকগণ তাদের কলমের দ্বারা অদৃশ্য ভাবে খুন করেই চলবে,তাদের হয়তো কোন দিন বিচারও হবে না..!
এবিষয় নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই,থাক সে সব কথা ..!

তবে একটা কথা,
আচ্ছা শুধু কি লেখকরাই তাদের কলমের কালিতে খুন করে, তাদের কি কেউ খুন করে না..?
সবাইতো লেখকদের হত্যাটা দেখতে পাই,কিন্তুু হাজারও লেখক যে নিরবে নির্যাতনে অদৃশ্য হাতের দ্বারা হত্যার স্বীকার হয়, তা কি কেউ কখনও দেখেছে..?
একটা লেখক কীভাবে তীলে তীলে নিঃশেষ হয় সে গল্প কি কেউ কখনও পড়েছে..?
কেনো একটা লেখক একা রাতের অন্ধকারের মত শূন্য মিলে যায়.?
কেনো সে শত চেষ্টা করেও ডায়রির পাতায় একটা শব্দও লিখতে পারে না.?
কেনো কলমের কালির পরিবর্তে ডায়রির প্রতিটা পাতায় পাতায় চোখের জলের চিহ্ন পাওয়া যায়?
সে খবর কি কেউ কখনও রাখে.?
গল্পের নায়কা কি লেখকের কষ্টটা কখনও বোঝে.?

সে তো তার গল্প দিয়ে গল্প প্রেমীদের আন্দন দেয়.!কিন্তুু একটা লেখকের মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা গল্পটা কি কেউ কখনো পড়ে.?
লেখক যেমন তার গল্পের নায়কাকে হত্যা করে কলম দিয়ে,মাঝে মাঝে গল্পের নায়কাও তো লেখকে হত্যা করে, কিন্তুু কোনও অস্ত্র দিয়ে নয়.!অদৃশ্য একটা কিছু দিয়ে,যেটা একদম হৃদয়ের গভীরে আঘাত করে.!আর সেই অস্ত্রটা হলো ভালবাসা.!
লেখক নায়কাকে যে ভালবাসা দিয়ে পূর্ণ করে,নায়কা সেই ভালবাসা নামক অস্ত্র দিয়েই তাকে হত্যা করে..!

গল্পকার কাউকে হত্যা করলে সবাই তা দেখে,সেটা সবার চোখে পরে।কিন্তুু একজন লেখকে যে অদৃশ্য ভাবে হত্যার স্বীকার হয় তা কারও চোখেই পরে না,হয়তো কোন দিন পরবেও না.!
কীভাবে একটা রাইটার তার গল্প বা কবিতার ভাষা হারিয়ে ফেলে,কিভাবে তার গল্পের ছন্দ পতন ঘটে তা কি কেউ জানে.?
শুধু জানে সেই একজন, যে কিনা রাইটারের গল্পের স্বপ্নের স্বপ্নবিলাসী ,যে কিনা রাইটারের গল্পের নায়কা.!

সে তো আমার থেকেও বড় খুনী..!আমাকে যে হত্যা করেছো,আমার ভেতরে যে রাইটার ছিলো তাকে যে হত্যা করেছো,সে তো মারা গেছে.!না আছে সাক্ষী, না কোন প্রমাণ.!তবুও বিচার দিলাম, সৃষ্টিকর্তার আদালতে নয়,এ দেশের আদালতেও নয়,বিচার দিলাম তোমার বিবেগের আদালতে.!সেখানে তুমি নিজেই জর্জ, নিজেই উকিল, নিজেই অদশ্য খুনী..!যতই পালিয়ে বেড়াও ধরা কিন্তুু একদিন পরতেই হবে,আর সেদিন বিচারের রায়টা তোমাকেই লিখতে হবে,সে রায় হয়তো কেউ জানবে না.!
অদৃশ্য খুনীর কি শাস্তি হয় কখনও. ?
আমার খুনী আর কেউ নয়,সেই অদৃশ্য খুনী নায়কা তুমি…!

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত