আমাদের গল্প

আমাদের গল্প

দেখোতো কেমন লাগে?

মিহিনের কথায় আমি হাতে রাখা চশমার ফ্রেমটা রেখে ওর দিকে তাকালাম।মেয়েটা একটা রঙিন সানগ্লাস চোখে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তবে ঠোটের কোনে সেই চিরচেনা মুচকি হাসিটা ঠিকই ফুটে উঠেছে।
আমার চুপ থাকা দেখে মিহিন আবারও বললো,
-এই বলো না কেমন লাগছে?

মিহিনের কথায় আমি এবার ওর দিকে বেশ ভালভাবেই তাকালাম।মিহিনকে যে কোন সানগ্লাসেই ভাল লাগে কিন্তু আজ কেমন যেন এটাতে মানাচ্ছে না।আমি কি বলবো ওকে এটা,নাকি মেয়েটা রাগ করবে।আমি যখনি মিহিনকে কিছু বলতে যাব তখনি দোকানদার মশাই বলে উঠলেন,

-ভাল মানিয়েছে আপনাকে এটা।এটা আপনার জন্যেই বানানো।একদম পারফেক্ট।
দোকানদারের কথায় মিহিনের ঠোটের মুচকি হাসিটা একটু চওড়া হয়ে গেলো।আর এদিকে দোকানদারের কথায় আমার রাগটাও একটু বেড়ে গেলো।তবে মিহিনের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলাম না।

কাল যখন বাসায় ফিরলাম তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে।প্রতিদিন অফিস থেকে বিকেলের দিকে আসলেও আজ কাজের চাপে একটু দেড়ি হয়ে গেছে।তবে কাজের চাপটা যে ভুল সময়েই এসেছে এইটা বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারছি।আজ মিহিনকে নিয়ে বের হওয়ার কথা থাকলেও কেমন যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো।তবে বাসায় ঢুকলে যে এলোমেলোর মাত্রাটা বেড়ে যাবে এইটা কয়েকবার কলিংবেল চেপেই বুঝেছি।
প্রতিদিনের মত দড়জা খুলে মিহিন মুচকি হাসলেও আজ ওর মুখটা বেশ মলিন।আমি রুমে ঢুকতেই দেখি বিছানায় কালো শাড়িটা বেশ এলোমেলো ভাবেই পড়ে আছে।মেয়েটাকে বলেছিলাম কালো শাড়ি পড়তে।হয়তো পড়েছিল,আসতে দেড়ি হওয়ায় খুলে ফেলেছে।

আমি ফ্রেশ হতে যাওয়ার আগে মিহিনের রাগটা কোন মতেই কমাতে পারলাম না।ওর সব পছন্দের জিনিসের লোভ দেখিয়েও যখন কাজ হলো না তখন ফ্রেশ হওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না।

ফ্রেশ হয়ে বের হতে মাথায় একটা জিনিসই কাজ করলো,সেটা হলো এখন কিছু খেতে হবে।মাথাটা কেমন যেন ঘুরাচ্ছিল,কিন্তু এই মেয়েটা কোই গেলো।আমি একটু এগুতেই দেখি মিহিন বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য মিহিনের রাগ করাটা অস্বাভাবিক কিছু না।সারাদিন রুমে একা একা কারই বা ভাল লাগে।

আমি বেলকুনির দিকে একটু এগিয়ে মিহিনকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।কিন্তু এতেও মেয়েটার রাগ বিন্দুমাত্র কমলো না।আমার হাতটা ছাড়াতে চাইলেও যখন পেরে উঠছিল না তখনি ওর হাতটা এসে লাগলো চোখের উপর।সাথে সাথে চোখের চশমাটাও দু টুকরো হয়ে মেঝেতে পড়ে গেলো।

মিহিনের এমন আচরনে এবার আমার রাগটা একটু বেড়েই গেলো।মেয়েটা এতটা না করলেও পারতো।আমি মিহিনকে ছেড়ে দিতেই মেয়েটা এবার আমার দিকে একটু মলিন মুখেই তাকালো।মিহিনের মুখ দেখে এটুকু বুঝতে পেরেছি যে ও আর রেগে নেই,এখন রাগ ভাঙানোর চেষ্টায় আছে।আমাকে যদি বলা হয় তোমার কোনটা আগে দরকার।আমি কোন কিছু না ভেবে চশমার নামটাই বলে দেবো।কারন এটা ছাড়া অন্য সবকিছুই অন্ধকার।
যে মেয়েটা এতক্ষণ রেগে ছিল সে এখন আমার রাগ ভাঙানোয় ব্যস্ত।কিন্তু মিহিনের মুখটা দেখে যে আমি রেগে থাকতে পারিনা এইটা হয়তো ও জানে না।আমি মিহিনের মুখে হাত রেখে বললাম,

-এত অস্থির হওয়ার কিছু নেই,আজ ভেঙেছে কাল আরেকটা বানিয়ে আনলেই হবে।
কিন্তু আমার কথায় মিহিনের মুখের একটুও পরিবর্তন হলো না।মেয়েটা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
-আমি তোমারটা ভেঙেছি তুমি আমারটা ভাঙো।

কথাটি বলেই মিহিন ওর চোখ থেকে চশমাটা খুলে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল।আমি চশমাটা হাতে নিয়ে মিহিনের দিকে তাকিয়ে বললাম,

-যদি তোমারটাও ভেঙে ফেলি তাহলে তো দুজনেরই সমস্যা।
আমি মিহিনের চোখে চশমাটা পড়িয়ে দিতে দিতে বললাম,
-আমি তোমার চোখ দিয়ে সবকিছু দেখতে চাই।
আমার কথায় মিহিন কিছু বললো না।আমাকে শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলো।হয়তো রাগটা আর নেই।

চশমা বানাতে পনেরো মিনিট সময় লাগলেও এদিকে মিহিনের কয়েকটা সানগ্লাস পছন্দ করা হয়ে গেছে।যে মেয়েটা চশমা ছাড়া কিছু দেখতে পায় না সে এতগুলা সানগ্লাস দিয়ে কি করবে আমার মাথায় আসে না।কিছু বললেও গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।অবশ্য মিহিন যখন রাগ করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে তখন মেয়েটাকে দেখতে বেশ লাগে।একদম বাচ্চা বাচ্চা।

মিহিনকে নিয়ে চশমার দোকান থেকে বের হতেই মিম্নির সাথে দেখা।মিহিনের ফ্রেন্ড।এই মেয়েটার সাথে এর আগেও কয়েকবার কথা হয়েছে।বেশ মিশুক একটা মেয়ে।

আমাদের বিয়ের পর ওদের বাসায় ও একবার গিয়েছিলাম।মেয়েটা যে বেশ ভাল বিরিয়ানি রান্না করতে পারে এটা সেদিনই বুঝেছিলাম।

মিম্নির সাথে কথা বলে যখনি পা বাড়ালাম তখনি মেয়েটা বললো,
-বাসায় আসবেন কিন্তু।
আমি ঘুরে মুচকি হেসে বললাম,
-অবশ্যই,আর যাই হোক বিরিয়ানি খেতে অবশ্যই যাব।
কথাটি বলেই আমি যখন মিহিনের দিকে তাকালাম তখন আমার হাসিমাখা মুখটা একদম মলিন হয়ে গেলো।অবশ্য এটা মিহিনের রাগ মাখা মুখটা দেখেই।আমি কিছু বলার আগেই মিহিন বললো,
-চলো, খাওয়াচ্ছি তোমার বিরিয়ানি।

কথাটি বলে মিহিন আর দাড়ালো না।চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসলো।অন্যদিন হলে মেয়েটা আমার কান ঝালাপালা করে দিত গান চেঞ্জ করার জন্যে।কিন্তু মেয়েটা আজ কিছুই বলছে না,বেশ রেগে গেছে।

মিহিন যে বিরিয়ানি রান্না করতে পারে না,তেমন না।বেশ ভাল বিরিয়ানি রান্না করে।কিন্তু মাঝে মাঝে একটু অন্যরকম হলে একটু বেশিই ভাললাগে।

বাসায় এসে মেয়েটা চেঞ্জ না করেই রান্না ঘরে ঢুকেছে।মিহিনের রাগটা যে এখনও কমেনি এটা রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা শব্দতেই বেশ ভাল বোঝা যাচ্ছে।এদিকে টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে দিয়েও কাজ হচ্ছে না।
কিন্তু কিছুক্ষন পরেই যে সুবাস টা আমার নাকে এতে করে আর টিভির সামনে বসে থাকতে পারলাম না।টিভিটা অফ করে রান্না ঘরের দিকে গেলাম।দড়জার পাশে আমাকে দেখে মিহিন গোমরা মুখে বললো,
-টেবিলে বসো,খেতে দিচ্ছি।
মিহিনের কথায় আমি কিছু বললাম না।ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটাকে শক্ত করেই জড়িয়ে ধরে বললাম,
-সরি।
আমার কথায় মিহিন একটু চুপ থেকে কান্না জড়িত কণ্ঠে বললো,
-ভালবাসি,অনেক ভালবাসি।

মিহিনকে বিরিয়ানি খায়িয়ে দিচ্ছি আর ভাবছি কখন মেয়েটার খাওয়া শেষ হবে।নিজেকে আর আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।তবে আমার মনের কথা মিহিন কিভাবে বুঝে গেলো বুঝলাম না।
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

এই খাওয়া কখনো শেষ হবে না।কখনই না।কোন ভাবেই না,কোন মতেই না।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত