সন্ধ্যার দিকে শুভ্রদা এসে বললো সাকিব চল দিনাদের বাসায় যাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, – ওখানে কেন?
শুভ্রদা বললো, – একটু কাজ আছে চল।
– কিন্তু দাদা দিনাকে দেখলেই আমার কেমন কেমন লাগে।
– কেমন লাগে?
– বলতে পারবো না। তবে কেমন যেন।
– হা হা হা।
শুভ্রদার হাসিটা খুব সুন্দর কিন্তু এই হাসির মধ্যে কোনো সৌন্দর্য নেই। আছে রহস্য। ঘোর রহস্য।
আমি আর শুভ্রদা হাঁটতে হাঁটতে দিনাদের বাসায় গেলাম। দিনার মা আমাকে খুব আদর করে। নিজের ছেলের মত দেখে। কিন্তু মেয়েটা কখনো আমার সামনেই আসে না। আজকে বাসায় যেয়ে বসতেই দিনার মা ডাক দিয়ে বললো, – ‘দিনা তোর শুভ্র দাদা আর সাকিব আসছে। কিছু চা নাস্তার ব্যবস্থা কর।’
দিনা অন্যরুম থেকে আমাদের সামনে আসলো। বললো, – দাদা কেমন আছেন?
শুভ্রদা বললো, – ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?
– আমি সবসময় ভালো। আর আপনি? ‘আড়চোখে আমার দিকে চেয়ে বললো।’
আমি কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম তারপর বললাম,
– ‘জ্বি ভালো।’
– আচ্ছা আপনারা বসেন। আমি চা নাস্তা নিয়ে আসছি।
দিনার আড়চোখা চাহনি দেখে আমার হার্টবিট বেড়ে গেছে। একটা মানুষ কিভাবে এতো সুন্দর করে তাকায়?! এই তাকানোর মধ্যে ছন্দ আছে, নেশা আছে, একটা পুলকিত ভাব আছে। এই ভাবটাতেই আসক্ত। কি ভীষণ আসক্তি!
গত সপ্তাহে দিনাকে একটা চিরকুট লিখেছিলাম, “দিনা তোমাকে দেখার পর আমি কেমন যেন হয়ে যাই। প্লিজ এমনভাবে আর তাকিও না।”
এই চিরকুটের কোনো উত্তর এখনো পাইনি। কিন্তু পরবর্তী চাহনিগুলো ছিলো ভয়ংকর রকমের সুন্দর। মেয়েটার চোখদুটো ধারালো অস্ত্রের চেয়েও বেশী সংঘাতিক! আমি বারবার রক্তাক্ত হই।
নাস্তা করে উঠতে যাব। এমন সময় দিনার মা বলে উঠলো, – শুভ্র রাতের খাবারটা আমাদের সাথে সেরে যাও। অনেকদিন পর আসছো। এখোনি যেতে পারবে না।
শুভ্রদা হাসিমুখে বললো, – আচ্ছা।
দিনার মা বললো – ‘তোমরা একটু বিশ্রাম করো। আমি কিচেনে যাচ্ছি।’
এই বলে উনি কিচেনে চলে গেলেন। শুভ্রদার সিগারেটের নেশা পেয়েছে। প্রচন্ড নেশা। সে বাইরে চলে গেছে। এখন আপন মনে সিগারেট টানবে। রুমে আমি একা। মোবাইলেও চার্জ নেই। কিছু ভালো লাগছে না। হঠাৎ দিনা আসলো! কিছুটা ভাঙ্গ করে বললো, – ‘কি ব্যাপার সাকিব সাহেব?’
আমি থতমত হয়ে গেলাম। দিনা হেঁটে হেঁটে আমার কাছে আসছে। আমার চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে! আমি ভয় পাচ্ছি। সে পাচ্ছে না। খুব কাছে এসে বললো,
– ‘আমি তোমার চোখের দিকে তাকালে কেমন হয়ে যাও তুমি?’
দিনার মুখে ‘তুমি’ ডাক শুনে অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছে। ভয় কমছে। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললাম, – ‘কেমন যেন!’
– কেমন?
– পাগল পাগল!
দিনা কিছুটা লজ্জা পেয়েছে। তারপর বললো, – যদি ছুঁয়ে দিই?
আমি তার চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ দিনা বলে উঠলো, “ভীতু একটা।” বলেই চলে যাচ্ছে। পিছন দিক থেকে আমি ওর হাতটা ধরে ফেললাম! বললাম, “ভয়টা কেটে গেছে!”
শুভ্রদার গলা খাকারি কাশির শব্দে আমার সুন্দর মুহূর্তটা নষ্ট হয়ে গেল। দিনা নিজের রুমে চলে গেছে।
শুভ্রদা এসে জিজ্ঞেস করলো,
– কিরে দিনা এসেছিলো নাকি?
– হ্যা এসেছিলো, জিজ্ঞেস করছিলো কিছু লাগবে কিনা?!
– কি বলেছিস?
– লাগবে না।
রাতের খাবার শেষ করে রাত ১০টার দিকে বের হলাম। পথিমধ্যে শুভ্রদাকে জিজ্ঞেস করলাম, – দাদা এখানে কেন এসেছিলে? শুভ্রদা বললো, – দিনা বলছিলো তোকে নিয়ে আসতে।
– কেন?
– সেটাও কি বলতে হবে?
শুভ্রদার মুখে মৃদ্যু হাসি; আমার মুখে লজ্জার ছাপ। ছেলেদের লজ্জা পেতে নেই। লজ্জা নারীর ভূষণ।