আম্মা

আম্মা

আম্মা ঘুম থেকে উঠে চিল্লানি শুরু করেছে “তোর মত মেয়ে থাকতে আমাকে এসব করতে হয়? কোনো আক্কাল নাই তোর, শুধু খাস,ফেসবুক চালাস আর ঘুমাস, আর কি করস তুই? এত ঠান্ডা নাড়াচাড়া করে যেদিন বিছানায় পড়বো সেদিন বুঝবি, রান্না করে মুখে সামনে খাবার ধরার মত কাউকে পাবি না”।
আম্মার কথা শুনে আমি নড়েচড়ে উঠলাম।
কম্বলের নিচ থেকে কোন রকম মাথা বের করে বললাম-

” আম্মা কারিনা কাপুর সবে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়েছে ওমনি তুমি চিল্লাপাল্লা করে স্বপ্নটা ভেঙ্গে দিলে?”
“মরবি রে ফাতু মরবি! তুই এই ফেসবুক ফেসবুক করেই মরবি!”
আম্মা আরো জোরে চিল্লানি দিচ্ছে।
থালাবাসন ধুচ্ছে না বরং মনে হচ্ছে থালাবাসন ভাঙ্গছে, কিছু না বলে কম্বল টেনে শুয়ে রইলাম।
আব্বা সেভ করে।
আম্মা চিল্লায় আর বলে->
“বুড়া কালে আবার সেভ করে! যৌবন কি হোঁচট খেয়ে পড়ছে নাকি নতুন করে!”
“ফাতুর মা তুমি ফাতুর রাগ আমাকে দেখাবা না বলে দিলাম”
“আমার হয়েছে মরন! বাপ যেমন,মেয়েও তেমন”
আমি শুয়ে শুয়ে মুচকি হাসি।
আম্মার মাথা সকল সকল গরম হলো হঠাৎ!

অন্য সময় তো দুপুরে মাথা গরম হয় আমাকে গোসল করাতে গিয়ে! আজ হঠাৎ সকাল সকাল মাথা গরম হলো কেন বুঝলাম না! যাইহোক ১০ টা বাজলে ঘুম থেকে উঠবো ব্যস!
আব্বার সাথে যখন আম্মার বিয়ে হয়েছিলো তখন আম্মার বয়স ২০ বছর ছিলো।
শুনেছিলাম আব্বা-আম্মার বিয়ে লাভ কেস।

আমি যখন দুনিয়াতে আসি তখন আব্বা অতিরিক্ত ভালোবেসে আমার নাম রাখে ফাতেমা কিন্তু আম্মা! আম্মা আমাকে বকতে বকতে নাম বানিয়ে দেয় ফাতু, এখন জগৎ বাসি আমাকে ফাতু নামেই বেশি জানে। আব্বা-আম্মার আদরে বাদর হয়েছি বটে! অল্প বয়সে ফেসবুকের নেশা ধরেছি, ফেসবুক ছাড়া কিছু ভালো লাগে না।
আগে তবুও আম্মাকে কাজে কামে একটু সাহায্য করতাম কিন্তু এখন আর সময় হয় না। যতক্ষণ জেগে থাকি ততক্ষণ ফেসবুকে পড়ে থাকি।

আমার একটাই কথা “আমি না খেয়ে ১০ দিন থাকতে পারবো কিন্তু ফেসবুক না চালিয়ে ১০ মিনিটও থাকতে পারবো না”। আম্মার সাথে এখানেই আমার মতের অমিল!

আম্মা বলে “এই বয়সে তুই পুতুলের মত সেজে থাকবি, স্কুলে যাবি, ঠিক মত পড়াশুনা করবি, গোসল করবি,খাওয়া-দাওয়া করবি কিন্তু তুই কি করিস! পড়তে বসলে বইয়ের মধ্যে মোবাইল রেখে ফেসবুকিং করিস, স্কুলে গেলে মোবাইল সাইলেন্ট মুডে রেখে নিয়ে চাস, গোসল করতে বললে ‘একটু পর, একটু পর করে আর গোসল করিস না, খেতে বললে বলিস স্ট্যাটাসটা পোস্ট করেই আসছি, পরে কমেন্ট পড়ার লোভে খাওয়ার সময় ভুলে যাস”।
আম্মার অভিযোগের সাথে আমি একমত কিন্তু তাই বলে আমি ফেসবুক ছাড়তে পারবো না।
সারাদিন কোনোরকম যাওয়ার পর রাতে আম্মার পাশে শুলাম, একা ঘুমালে আমার প্রচুর ভয় লাগে তাই জোর করে হলেও আম্মার পাশে ঘুমাই। আম্মার পাশে শুয়ে ডাটা অন করলাম, ওমনি আম্মা বলে->
“দেখি দে ফোন আমার কাছে দে”
“কেন আম্মা? কি দেখবা?”
“দেখি এই ফেসবুকে কতখানি মধু আছে যে তুই সারাদিন এখানে পড়ে থাকিস”
আমি হেসে দিলাম, নির্ভয়ে আম্মাকে বললাম->
“আম্মা এখনো প্রেম করে উঠতে পারিনি, দেখো আম্মা তুমি নিজের চোখেই দেখো,আমি গল্প ছাড়া আর কিছুই পড়ি না”
আম্মার দিকে মোবাইল এগিয়ে দিলাম।
আম্মা মোবাইল হাতে নিয়ে নিউজফিড দেখছে।
হঠাৎ আম্মা চিল্লানি দিয়ে বলে উঠলো->
“হায় হায় ফাতু! তুই কোন পথে চলে গেছিস রে ফাতু? তুই এতটা খারাপ পথে যাবি আমি ভাবতেই পারিনি”
আম্মা কান্না শুরু করেছে।
আম্মার কথা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম।
হঠাৎ আম্মা এগুলো কি বলে! আম্মা কান্নাই বা করছে কেন!
আমি আম্মাকে বললাম->
“কি হইছে আম্মা?”

“ছিঃ ছিঃ ছিঃ ফাতুরে তুই এই ছেলের সাথে এত ঘনিষ্ঠ হইলি কীভাবে? ফাতুরে আমাদের মানসন্মান নিয়ে খেলিস না”
আম্মার কথা শুনে আমি খপ করে মোবাইল কেড়ে নিয়ে নিজেই নিজের জ্বিবাহয় কামড় দিলাম, কিছু কিছু ফেইক আইডি থাকে ফেসবুকে, চেনা নেই জানা নেই তবুও এমন কিছু নোংরা ছবি দেয় যে আমরা বেশিরভাগ মেয়েরা অস্তিতে পড়ি।
এমনি এক ফেইক আইডির শিকার আমি!
আম্মা কান্না থামায় না, আম্মার কান্না শুনে আব্বা রুমে এসে বলে->
“ফাতুর মা গো তুমি কান্না করো কেন?”
“ফাতুর বাপ! ও ফাতুর বাপ গো! ”
“ফাতুর মা কান্না থামাও এবার,কি হয়েছে বলো?”
“আমাদের মেয়ে ভুল পথে চলে গেছে ফাতুর বাপ!”
আব্বা আমার দিকে তাকিয়ে বলে->
“ফাতু তোর মা এগুলা কি বলে?”
“আব্বা, আম্মা আমারে ভুল বুঝছে, আমি ওই ছেলেকে চিনি না”
“তুই চিনিস না তাহলে ওই ছেলে এমন ছবি কেন দিলো রে ফাতু….”
বলেই আম্মা আরো কান্না শুরু করে।
আব্বা আম্মারে তার রুমে নিয়ে গেছে।
আমি মাথা নিচু করে বসে আছি।
ছিঃ ছিঃ আম্মা আমারে কি না কি ভাবলো!
সারারাত টেনশনে ঘুমাতে পারিনি।

সকাল সকাল উঠে টেনশনের চাপ কমাতে বাথরুমে গেলাম, বাথরুমের দরজায় জোরে কিছু পড়ার শব্দ হলো! আমি ঘাবড়ানো মুখ নিয়ে বাহিরে বের হয়ে দেখি আম্মা দরজার সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, আব্বা আর আমি আম্মাকে তুলে চোখে-মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরালাম, আম্মা স্বাভাবিক হয়েছে দেখে চাপা কণ্ঠে আব্বাকে বললাম-
“আব্বা বাথরুমে অনেক ময়লা হয়েছে, পরিষ্কার করা দরকার আব্বা”
“কি কস ফাতু? সত্যি নাকি?
” জ্বি আব্বা”
আম্মা পাশ থেকে উঠে বলে->

“ফাতুর বাপ এই বাথরুমে আমার ভালো লাগে না, তুমি মাটি পেলে বাথরুম ভরিয়ে দাও, আমরা নতুন বাথরুম বানবো একদম ফাতুর মন মত করে”

“হ ফাতুর মা ঠিক বলেছো, ফাতুর মন মত নতুর বাথরুম বানাবো”
আব্বা-আম্মার কথা শুনে মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে আসলাম, আর বুঝি কোন উপায় রইলো না! এতক্ষণে মোবাইলের যা হওয়ার হয়ে গেছে!
মন খারাপ নিয়ে কয়েকদিন কেটে যায়।
একদিন ভোরে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায়।

ঘুম ভাঙ্গার কারণে শুনতে পাই আম্মা কার সাথে জেনো ফিসফিস করে কথা বলছে, আমি আস্তে আস্তে হেঁটে এসে আম্মার পেছনে দাড়ালাম, আম্মা কাকে যেনো বলছে->

“সেদিন যদি বাথরুমের দরজার ওপর পড়ে জ্ঞান হারানোর নাটক না করতাম তবে কি ওই ছেলের কবল থেকে ফাতুরে উদ্ধার করতে পারতাম রে”
আম্মার কথা শুনে আমি হা হয়ে গেলাম।

তার মানে শুধু আমি না আম্মাও জানে আমি সেদিন ফেসবুকের ঘোরে মোবাইল নিয়ে বাথরুমে গিয়েছিলাম আর মোবাইল এখন বাথরুমে মাটি চাপা পড়ে আছে!

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত