বন্ধ মুখ

বন্ধ মুখ

হটাৎ করে যখন ক্লাস রিপ্রেজেন্টিভ মশাই আমাকে এসে বললো যে মফিজ স্যার আমাকে নাকি তার চেম্বারে স্মরণ করেছেন। হার্টের দুইটা বিট আমি সাথে সাথেই মিস করে ফেললাম। এমনি তেই স্যার আমাকে দুই চোখে দেখতে পারেন না, গত সেমস্টারের ভাইভা বোর্ডের সেই বিভিষিকাময় মুহুর্ত গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে গলাটা শুকিয়ে একেবারে কাঠ হয়ে গেলো।কোনো মতে ঢোক গিলে তার চেম্বারের সামনে দাঁড়াতেই তিনি বললেন, ” কাম ইন”

স্যারের সামনে গেলেই কেন যেন আমার ঠ্যাং কাঁপতে থাকে। ক্লাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কাছে ( বিশেষ করে ছাত্রীদের কাছে) তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ বলে বিবেচিত হলেও আমার কাছে তিনি রাক্ষস খোক্ষসের চেয়ে ভালো কিছু নন। আর হবেন নাই বা কেন!! তার ওই চকোলেট বয় মার্কা চেহারার পিছে যে একটা রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার মার্কা চেহারা আছে সেটা তো আর আমি ছাড়া কেউ দেখতে পায় না…

-বাপ্পারাজ, শুনলাম তুমি নাকি বেশ কয়েকটা টিউশনি করাও?
-ইয়ে মানে, জ্বী স্যার। দুই একটা করাই।
-আমার শ্যালিকা এবার এইচ এস সি সেকেন্ড ইয়ারে উঠলো। তাকে কি ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রিটা পড়াতে পারবে?
-ইয়ে মানে স্যার…
-কি মানে মানে করছো? পারবে কিনা সেটা বলো…
-জ্বী স্যার। পারবো।
-গুড। না পারলে তোমাকে জুতিয়ে পারাতাম। আর টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা কর না। অন্যদের যা নিয়ে পড়াও তারচেয়ে বেশী পাবে।
-ছিঃ ছিঃ স্যার, আপনি আমার শিক্ষক। আপনার কাছ থেকে টাকা কেন নিবো স্যার।
-চুপ ব্যাটা ফাজিল!!আমারে তেল মারার চেষ্টা কইরো না। কাল সন্ধ্যা থেকে পড়ানো শুরু করবা।এখন আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে আমাকে উদ্ধার করো।

সালাম দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বের হয়ে আসলাম চেম্বার থেকে।সবকিছুই মাথার উপর দিয়ে গেলো আমার। স্যারের মাথায় যে কোন লেভেলের শয়তানি বুদ্ধী কাজ করছে সেটাই বুঝতে পারছি না। তা নাহলে যাকে কিনা প্রতি ক্লাসের পুরোটা সময় কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখে, তাকেই কেন তার শ্যালিকার পড়ানোর দায়িত্ব দিতে হবে!! ফালানো, ডিজে হুজুর, আবুল মালের মতো টপগ্রেড ছেলে গুলো থাকতে আমার মতো ছাড়পোকাকে দিয়েই কেন পড়াতে হবে!চেম্বার থেকে বের হওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে চার লিটারের এক গ্যালন পানি শেষ করে ফেলেছি। তবুও ভাবতেই বুকটা শুকিয়ে যাচ্ছে।

তবে স্যারের মাথায় যাই চলুক নিজের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা কিন্তু ঠিকই কাজ করছে। লোকমুখে শুনেছি, স্যারের শ্যালিকা নাকি অসাধারণ সুন্দরী। যদিও তাকে আমার এই চর্মচক্ষু দিয়ে এখনও দেখা হয় নি, তবুও

কালচারাল ফাংশনে ম্যাডামকে ( স্যারের স্ত্রী) দেখে সে ব্যাপারে আমার একদমই কোনো সন্দেহ নাই। যদিও জানি যে স্যার দুইদিন পরেই আমাকে বলবে যে, হতচ্ছাড়া তোর আর আসার দরকার নাই!! তবুও দুই দিন একই টেবিলের এপার ওপার বসে এক সুন্দর রমনীর সাথে সময় কাটানোর সুযোগ কি সহজে পাওয়া যায়, বলুন??

যাই হোক, পরের দিন সন্ধ্যা বেলা সময় মতো কোয়ার্টারে উপস্থিত হলাম।কলিং বেল টিপতেই ম্যাডাম হাসি মুখে দরজা খুললো। ড্রয়িং রুমে বসতে বলে ম্যাম তার বোনকে ডাকতে গেলেন। কিছুক্ষন পর তার সাথে এটা কে বেরিয়ে এলো!

‘ ও মোর খোদা! এইটা কি আদৌ মানুষ! নাকি পরী! বিশ্বাস করুন, আমি এইগুলোর একটাও চিন্তা করি নি। তবে হ্যা, স্যারের শ্যালিকা আসলেই সুন্দরী।

-নাম কি তোমার?
-র্যামি…

-ওই বেয়াদ্দপ মাইয়া!! ঠিক করে নাম বল…
আমি গ্লাস থেকে পানি খাচ্ছিলাম তখন। হটাৎ করে পিছন থেকে বাজখাঁই গলায় ঝাড়ি শুনে মোটামুটি মুখের পানিটুকু দেয়ালের গায়ে স্প্রে হয়ে গেল। কাশতে কাশতে পেছনে ফিরে সেই বাঘের গর্জনের উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখি ম্যাডাম রেগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ নিয়ে র্যামির দিকে তাকিয়ে আছে। আর র্যামি মৃগী রোগীর মতো কাপা শুরু করে দিয়েছে।

-আসলে ভাইয়া, আমার নাম রহিমা খাতুন।
ম্যাম এসে বললেন যেন কিছু মনে না করি। তার বোন নাকি মহা ত্যাঁদড় মানুষ। তাই ওকে অলটাইম ঝাড়ির উপরে রাখে। তবে তখন আমি মনে করার মত কোনো অবস্থায় ছিলাম কিনা সেটা আদৌ আমার মনে নেই। কারন একজন বাঘিনীর গর্জনের সাথে সাথে মিস র্যামি থেকে মোসাম্মৎ রহিমা খাতুন হয়ে যাওয়ার দৃশ্য ইতোপূর্বে আলিফ লায়লায় দেখলেও বাস্তবে পর্যবেক্ষন করার অভিজ্ঞতা এই প্রথম।

তারপর থেকে সপ্তাহ দুই হলো স্যারের শ্যালিকাকে পড়াচ্ছি। মাখে মাঝে স্যারও এসে দেখে যান পড়ালেখা কেমন হচ্ছে।

আজকে আবার ক্লাসের শেষে চেম্বারে ডাক দিলেন স্যার।
-বাপ্পারাজ..
-জ্বী স্যার??
-ভাবছি, আজ তোমার ছাত্রীর একটা পরীক্ষা নেবো।
-অবশ্যই স্যার।
-সময় মতো চলে এসো।

অতোপর, সন্ধ্যায় স্যারের কোয়ার্টারে গেলাম। স্যার একখানা ভাইভার ব্যাবস্থা করেছিলেন তার শ্যালিকার জন্য। সেখানে আমি কোর্স টিচার, স্যার এক্সটারনাল, আর মোসাম্মৎ রহিমা খাতুন নিরীহ গোবেচারী পরীক্ষার্থী। যথারীতি স্যার একের পর এক প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে থাকলেন তার শ্যালিকাকে শ্যালিকা নিশ্চুপ হয়ে করুন চোখে আমার কাছে নিরবে বলতে থাকলো “ভাইয়া!!! আপনার দুটি পায়ে পড়ি। দুলাভাইএর হাত থেকে আমাকে বাঁচান।”
ভাইভা বোর্ডের পরিসমাপ্তির পর স্যার আমার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসলেন।

-কি বাপ্পারাজ? এখন কেমন বোধ করছো?
-ধরনী!! দ্বিধা হও। আমি তোমার মাঝে প্রবেশ করি।”
– তাহলে বোঝো… যখন ভাইভা বোর্ডে তুমি দাঁতে সুপারগ্লু লাগিয়ে এসে বসো যাতে বোমা মারলেও তোমার মুখ না খোলে, তখন আমার কেমন লাগে?

চুপচাপ হলে ফিরে এসে মফিজ স্যারের শিট আর বই পত্র নিয়ে পড়তে বসলাম। নাহ, আর যাই হোক। তার সাবজেক্ট এর ভাইভাতে মুখ বন্ধ করে বসে থাকা যাবে না…

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত