চুরের উপর বাটপারি

চুরের উপর বাটপারি

পার্কের একটা পাশ ধরে হাটছি আর বাদাম খাচ্ছি। তার সাথে হরেক রকমের কাপলদের কাহিনী দেখছি। কেউ হাত ধরে বসে আছে তো কেউ লজ্জায় লাল হয়ে দূরে বসে আছে। কেউ কেউ হয়ত নতুন দেখা করেছে। হঠাৎ দেখলাম একটা মেয়ে আর ছেলে ঝগড়া করছে। ঝগড়ার এক পর্যায় মেয়েটা ছেলেটাকে চড় মেরে বসলো আর ছেলেটা রাগ করে কিসব বলে বকবক করে চলে আসলো।মেয়েটা এক বেঞ্চে বসে কান্না করতে লাগলো। আর ছেলেটা আমার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিল তখন আমি ছেলেটাকে ডাক দিলাম…

— এই ভাই শোনেন?
— কি হয়েছে?( রাগ নিয়ে)
— আরে ভাই রাগেন কেন? কি হয়েছে আপনাদের মাঝে…

ছেলেটা কোন উত্তর না দিয়ে রাগে কটমট করতে করতে চলে গেল। আমার আরো কৌতুহল বেড়ে গেল ওদের সম্পর্কে জানতে। আমি মেয়েটার কাছে গিয়ে ওর পাশে বসে ওর দিকে টিস্যু বাড়িয়ে দিলাম। ও চোখ মুখ মুছতে মুছতে বলল…

— এই ছেলেটা খুব বাজে। আমার বান্ধবীর সাথেও আগে রিলেশন করে ছিল। তারপর আমার বান্ধবীকে ছ্যাকা দিয়ে ছিল। আজকে ওর সব সত্যিটা জানতে ও আমার সাথেও ব্রেকআপ করলো। আমিও ওরে চড় বসিয়ে দিলাম। ছ্যাচড়া পোলা,শয়তান,বিল্লি,উল্লুক,ওর কপালে মেয়ে জুটবে না হুহ।

আমি মেয়ের কথা শুনছি আর একটা একটা টিস্যু এগিয়ে দিছি। মেয়েটা আবার বলতে শুরু করলো…

— জানেন ওই হালারপু, নিজে তো আমারে কোন গিফট দেয় নি। কিন্তু আমার থেকে শুধু গিফট খুজে। আমিও ওর বাইকের চাবি আজ চামে মেরে দিয়েছি। এবার চাবি খুজেঁ মরুক।

কথাটা বলতেই মেয়েটা হেসে দিলো।মেয়েটা হাসলে আসলেই বেশ লাগে। কথার এক পর্যায় আমি প্রথম প্রশ্ন করলাম।

— আচ্ছা, আপনার স্থানীয় বাসা কি নরসিংদী তেই?
— হুমম কেন বলুন তো?
— না আপনার ভাষা শুনে বললাম। কারন খাটি নরসিংদীর মেয়েরা সত্যি ভয়ংকর।
আমার কথায় মেয়েরা ভ্রু কুচকে তাকালো। মনে হলো আমাকেই বকা শুরু করবে। হঠাৎ মেয়েটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল…
— মিথ্যা তো বলেন নি। যাক গে, আমি তন্নি আর আপনার নাম টা?
— আমি রাজ।
মেয়েটা অনেক মিশুক, কথা শুনেই বুঝা যাচ্ছে। হঠাৎ মেয়েটা একটা হাসি দিয়ে বলল…
— আচ্ছা আজকে আসি।ভাগ্যে থাকলে আবার দেখা হবে।
— টা টা
মেয়েটা চলে যাচ্ছে আর আমি মেয়েটার চলে যাওয়া দেখছি।

কয়েকদিন ব্যস্ততার কারনে পার্কে আসাই হয় নি। আজ ইচ্ছা করলো একটু পার্কে থেকে হেটেঁ আসি। নিজে না হয় প্রেম করতে পারি না, তাই বলে কি অন্যদের প্রেমও দেখা যাবে।

পার্কের ভিতর ডুকতেই একটা গোলাপের ঢিল এসে পড়লো আমার উপর। সামনে তাকাতে আবার সেই কাপল দুইটা। ওরা আবার ঝগড়া করছে। আমি কাছে যাওয়ার আগেই রাগে কটমট করতে করতে ছেলে চলে গেল।
আমি আবার গতবারের মত মেয়েটার কাছেই গেলাম। তবে আজ সাথে টিস্যু নেই তাই বাধ্য হয়ে রুমাল এগিয়ে দিলাম। চোখ মুছতে দিয়েছি ঠিক আছে, তাই বলে নাকও মুছবে।

— আজকে আবার কি হলো?
— ভাবছিলাম ও বদলাই যাবে কিন্তু ও আরো মেয়ের সাথেই রিলেশন করে। ফালতু ছেলে। ওরে তো পচা পানিতে চুবিয়ে মারা উচিত।
— এত রাগ স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল না।
— আর স্বাস্থ্য। ওর জন্য তো গত কয়েকদিন ধরে ঠিক মত খেতেও পারি না। ও এভাবে আমাকে ঠাকালো।
— হুমম বুঝছি এবার চলেন।
— কোথায়?
— খাবো, আমারও খুদা পেয়েছে।
— কিন্তু আপনাকে তো ঠিক মত চেনায় হয় নি।
— আস্তে আস্তে চিনে যাবেন। চলেন তো। আর হা আমাকে তুমি করেই ডাকো, আর আমিও তুমি করেই ডাকি। বন্ধুর মত বুঝলে।
— হুমম।

যাই হোক, অন্তত কারো চোখের জল মুছতে পারলে নাকি পূণ্য লাভ হয়। আর আমি তাই করবো। তন্নিকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে আসলাম আর পেট ভরে চিকেন বিরিয়ানি খেয়ে নিলাম।ও তেমন কোন কথা বলে নি তবে আমি অল্প পরিচয়ে ওরে খাওয়াচ্ছি এটা হয়ত সন্দেহ হচ্ছে। কথা একটু একটু এগিয়ে যেতে যেতে অনেকটা পরিচিত হয়ে নিলাম। তারপর আমি বিল পরিশোধ করে চলে আসলাম।

রাতে শুয়ে শুয়ে ফেসবুক চালাচ্ছি তখনই একটা অজানা নাম্বার থেকে ফোন আসলো।
— হ্যালো, কে বলছেন?
— আজ যাকে তুমি করে কথা বলার অধিকার দিয়েছো সেই বলছি?
— ও তন্নি, কিন্তু আমার নাম্বার তোমার কাছে কিভাবে?
— আসলে তুমি যখন প্রথম দিন আমার পাশে বেঞ্চে বসো তখন তোমার আইডি কার্ডে তোমার নাম্বার থাকে আর ওইখান থেকেই মনে রেখেছি।
— ও কিন্তু কখনো ফোন দাও নি কেন?
— যদি কিছু মনে করো তাই ফোন দেই নি।
— তবে আজ কি মনে করে ফোনটা দিলে?
— জানি না তবে তোমার সাথে কথা বলার বড্ড ইচ্ছা করছিল তাই দিলাম।
— বাব্বা
— হুমম

এভাবে আমাদের কথা বার্তা এগিয়ে যেতে লাগলো। আর তার সাথে আমাদের মাঝে মাঝে দেখা করাও। ও আমায় গিফট দিতে থাকে, আর সাথে আমিও গিফট দেই।ও আমাকে ৫০ টাকার গিফট দিলে আমি ১০০ টাকার গিফট দেই যেন ফকির না ভাবে।

তন্নির জন্য পার্কে অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষন পর মেডাম আসলো। আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে আসলো।
— কি ব্যাপার আজ মনে হচ্ছে তুমি অনেক খুশি?
— জানি না, এটা তোমার জন্য।
আমার দিকে একটা গিফট এগিয়ে দিলো।মনে হচ্ছে দামী কিছু হবে।
— কি এটা?
— খুলেই দেখো।
আমি খুলেই অবাক হয়ে গেলাম কারন এটা একটা সাওমি মোবাইল।
— এত দামী মোবাইল আমার জন্য।
— আমার জন্য বুঝি এটা গ্রহন করা যায় না।
— ওকে গ্রহন করে নিলাম।
এরপর একসাথে অনেকক্ষন বসে আড্ডা দিয়ে চলে আসলাম। পার্ক থেকে বেড়িয়েই হসপিটালের দিকে গেলাম। ওইখানে সব বন্ধুরা বসে আছে। আমাকে দেখে বেডে শুয়ে থাকা রিজু একটা মুচকি হাসি দিলো।
— এই নে তোর সাওমি মোবাইল। যেটা তুই তোর বাবার পকেটের টাকা মেরে কিনে ছিলি তোর জি এফের জন্য।
— তুই কিভাবে আনলি?
— গল্পটা কালকেই বলবো। আগে যে তোর এমন অবস্থা করেছে তাকে বড় ধরনের একটা বাশ দিয়ে নেই।
বলেই হাসপাতাল থেকে চলে আসলাম।

রাতে ছাদে বসে তন্নিকে ফোন দিলাম কিন্তু ফোনটা ওয়েটিং ছিল। কিন্তু তবুও ফোনটা রিসিভ করলো।
— কি ব্যাপার ওয়েটিং কেন?
— তেমন কিছু না।
— তেমন কিছু না, নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথের কথা হচ্ছিল।
— কি যে বলো না রাজ,তুমি থাকতে আর বয়ফ্রেন্ড কে আছে?
— বাব্বা প্রপোজ করলাম না আর ইনডাইরেক্ট তুমি প্রপোজ করে দিলে।
— সব ফিলিংস বুঝবে না।
— যাই হোক, কালকে স্টাইলাইস রেস্টুরেন্টে চলে আইসো। বাকি কাজ শেষ করবো।
— বাকি কাজ মানে?
— আমাদের প্রেমের ব্যাপারটা,আর কালকে তোমাকে বড় ধরনের একটা গিফট দিবো এসো।
— ওকে জানু।

সকালে ঠিক সময় ফ্রেশ হয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়েই দেখি মেডাম হাজির। আহ্ গিফটের নাম শুনে লাফাতে লাফাতে চলে আসছে।

— কখন আসলে তন্নি?
— ১০ মিনিট হবে।
— খাবার অডার দিছো নাকি আমি দিবো।
— আগে গিফট দাও। তারপর খাবো?
— গিফট টা প্যাকেট হচ্ছে। অনেক লম্বা তো, রেপিং করতে সময় নিচ্ছে।
— কি সেটা?
— পেলেই বুঝবে।আমি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলেই পাবে।
— ওকে এবার খাবারের অডার দাও।
আমি খাবারের মেনু দেখে দামী দামী অনেক গুলো খাবার অডার করলাম। বিল মোটামোটি ভালই হবে। কারন খাবার গুলো খুব এক্সপেনসিব।
খাবার চলে আসলো কিছু সময়ের মধ্যে। আর মেডাম তো ধুমধারাক্কা খেয়েই চলেছে।
— আচ্ছা তুন্নি আমার আগে তুমি কয়টা রিলেশন করেছো?
— এই তো একটা। কেন বলো তো?
— না শুনেছি খেতে বসে মিথ্যা বলতে নেই। খাওয়ার মিথ্যা বললে পিছনে নাকি বাশঁ যায়।
— তুমি আমায় বিশ্বাস করো না।
–অবশ্যই।
খাওয়া দাওয়ার শেষ পর্যায় আমি বললাম…
— তন্নি তুমি একটু বসো, আমি বাইরে থেকে গিফট টা নিয়ে আসি। তোমার গিফট চলে এসেছে।
— ওকে তবে তারাতারি আসবে কিন্তু।
— একদম।
— আচ্ছা তোমার কাছে ৫০০ টাকা হবে?
— কেন?
— দাও না,পরে দিয়ে দিচ্ছি।
— ওকে নাও

আমু রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে সোজা হাসপাতালে চলে আসলাম। প্রায় ২০ মিনিট পর তন্নি আমায় ফোন দিলো। প্রথম দুইবারে ফোনটা ধরলাম না। তৃতীয় বারে ফোনটা ধরলাম।
— ওই কোথায় তুমি?বিল দিবে কে?
— বিল কত এসেছে সোনা?
— ১৫০০ টাকার মত।
— তাহলে দিয়ে দাও সোনা।
— মানে?
–আমি বলেছিলাম না, আমি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলে তুমি গিফট পাবে। আর সেটা হলো বাশঁ।
— মানে তুমি আমার সাথে….
— নাটক করেছি?যেমন করে গত এক মাস আগে তুমি রিজু নামে একটা ছেলের সাথে নাটক করে ছিলে।
— রি….রিজু তোমার কি হয়?
— আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। এবার বিল দিয়ে বাসায় চল যাও। নয়ত পরে থালা বাসন মাজাবে। আর লম্বা বাশেঁর গিফট টা কেমব লাগলো। বললাম না, মিথ্যা বললে বাশঁ খেতে হয়।

ওই পাশ থেকে তন্নি ফোনটা কেটে দিলো। গত এক মাসের কয়েক দিন আগেই রিজুকেও তন্নি আমার মত করে ওর প্রেমে ফেলে। এরপর এমন করেই কথা বার্তা এগিয়ে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে গিফট দেওয়া নেওয়া করে। তন্নি রিজুর কাছে একটা দামী মোবাইল গিফট করে। বেচারা কোন উপায় না পেয়ে বাবার পকেটের টাকা মারে। এভাবে তন্নির লোভ বেড়ে যায়। তখন সে রিজুর কাছে আইফোন গিফট চায়।কিন্তু রিজু দিতে নারাজ হয়। এক পর্যায় কথা কাটাকাটি হয়। এভাবে একদিন তন্নির মুখোশটা রিজুর সামনে চলে আসে। রিজু অন্য একটা ছেলের সাথে তন্নিকে দেখে ফেলে। তখন তন্নির সামনে যেতেই তন্নি নাটক করে বলে রিজু নাকি তন্নির মোবাইল চুর। এতে কয়েকজন রিজুকে অনেক মারে। আমরা খবর পেয়ে হাসপাতালে যাই,ওইদিনের পরই একটা নাটক করার জেদ চেপে বসে এতদিন করে আসলাম চুরের উপর বাটপারি। বন্ধুর জন্য জীবন দিতে পারবো আর সামান্য নাটক করতে করবো না।

— ধন্যবাদ রাজ,এমন মেয়েদের উচিত শিক্ষা পাওয়া দরকার।(রিজু)
— শুধু মেয়ে নয়,এমন ছেলেদেরও উচিত জবাব দেওয়া উচিত নয়ত সমাজ বদলাবে না।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত