অসহায় মানুষ

অসহায় মানুষ

এডমিশন কোচিং থেকে বেরিয়ে বরিশাল সদর রোড থেকে আমি ও আমার কয়েকটা বন্ধু হেটে যাচ্ছি। গন্থব্য বাড়ি ফেরা। মাথার উপর কাঠফাটা রৌদ্র। যেই আমি বলতে গেলে সারাদিন রৌদ্রে থাকি, সেই আমিই আজ যেন রৌদ্রতেজ সইতে পারছি না। সামনের দিকে যতই হাঁটছি, ঘামে ততই ভিজে যাচ্ছি।

কিছুটা সামনে যেতেই আমার চোখ গেল একটা মানুষের দিকে। রোদের মধ্যে রাস্তার একপাশে পরে আছে। হাত পা কিছুই নেই। পরনে একটা কাপড় কিন্তু গায়েতে কোন কাপড় নেই। রাস্তার ধুলোবালির মধ্যে চিত হয়ে শুয়ে আছে। এই কাঠফাঁটা রোদের মাঝে রাস্তার মধ্যে শুয়ে আছে। আর্তনাদ করছে কয়েকটা টাকার জন্য। তার এই আর্তনাদে কিছু মানুষ পাঁচ দশ টাকা দিচ্ছে আর বাকিরা হাঁটার সময় একনজর দেখে দেখে চলে যাচ্ছে।

এই অসহায় মানুষটি জন্য এই পাঁচ দশ টাকাই অনেক কিছু। এই টাকার বিনিময়ে লোকটির ঐদিনের খাবার জুটবে। যেদিন টাকা পাবে সেদিন খেতে পারবে আর যেদিন টাকা না পাবে সেদিন তাকে না খেয়ে থাকতে হবে। অসুখ হলে চিকিৎসা করাতে পারবে না, ওষুধ খেতে পারবে না। কতটা অসহায় এই মানুষগুলো! ভাবতেই যেন অবাক লাগে!

আমি অসহায় লোকটিকে অনেকটা সময় ধরে দেখলাম। দেখা ছাড়্ব কিছু করার নেই আমার। আমাদের গ্রমটা বরিশাল শহর থেকে অনেটা দূরে হওয়ায় এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় আসা যাওয়ার ভাড়াটাই শুধু পকেটে থাকে। তাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না আামার।

দাড়িয়ে আছি আমি অসহায় লোকটির থেকে একটু দূরে। আপেক্ষা করছি গাড়ির জন্য। এখান থেকে গাড়ি পাওয়া বড্ড মুশকিল। খেয়াল করলাম আমার থেকে কিছুটা দূরে একটা প্রাইভেট কার এসে থামল। কারটির ভিতর থেকে একজন ভদ্র লোক ও একজন ভদ্র মহিলা নামল। লোকটির হাতে একটা সিগারেট জ্বালানো এবং হাতে একটা সিগারেট এর প্যাকেট। দেখে মনে হল তারা স্বামি-স্ত্রী। পাশ থেকে হেঁটে যাবার সময় লোকটির অবস্হা দেখে স্ত্রী একশ টাকার একটা নোট দিলো। তখন পাশ থেকে তার স্বামি বলল,্এ‌ত টাকা দেয়া লাগে,দশ বিশ টাকা দিলেই তো হয়।, তখন তার স্ত্রী বলল থাক না, ‘হাত পা নেই অসহায় মানুষ ওনি, আমাদের কাছে তো টাকা আছে, চল।’ এই বলে তারা চলে গেল।

আমি শুনলাম তাদের কথাগুলো আর চিন্তা করছিলাম বেশির ভাগ ধনীদের চিন্তা ভাবনা এই পুরুষ লোকটির মতই হয়। যারা দশ টাকার বেশি দাম দিয়ে একেকটা সিগারেট কিনে খাবে কিন্তু কাউকে দশ টাকা দিয়ে সাহায্য করবে না অথবা দিলেও দশ টাকার বেশি দিবে না। অথচ তাদের হাজার টাকা দিবার সামর্থ্যও রয়েছে। দশ টাকার বেশি দিতে গেলে এমন অবস্থা হয় – যেন তাদের ধনভান্ডার খালি হয়ে যাবে। তাদের মনোভাবটা এমন হয় যে, এত টাকা একজন ভিক্ষুককে দিবো! এসব মনুষদের কথা ভাবতেই কতটা অবাক লাগে!

এদের মত ধনীরা একটি বারও চিন্তা করে দেখে না যে এসকল অসহায় মানুষগুলোকেও তো আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন আর আমাদেরও আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছন। তারাও তো আমাদের মতই মানুষ। আমাদের যদি এরকম অসহায় করে দুনিয়াতে পাঠাতেন তাহলে আমাদের অবস্থাও তো তাদের মত হত। তাদের পাশে আমরা দারাই। তাদের সাহায্য সহযোগিতা করি।

একটি বারও যদি তারা এসব কথা চিন্তা করত তাহলে অসহায় মানুষগুলির অবস্থা এতটা করুন হতো না।
আসুন আমরা এইসকল অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াই, তাদের একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করে দেই, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করি।
আল্লাহ্ যেন আমাদের সকলকে অসহায় মানুষদের পাশে দাড়ানোর তৌফিক দান করেন … (আমিন)

বি:দ্রঃ সকল ধনী একই রকম নয়। তাদের মধ্যে মহৎ ব্যক্তিও রয়েছে। তবে তাদের সংখ্যা অতি নগন্য।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত