মেয়েটাকে মেসেজ দিলাম,
–দেখেন,আমার বাবার গুলশানে বাড়ি আছে।জানি সেটা আমার বাবার, আমার না, কিন্তু আমারও তো এসব একদিন হবে।
মেসেজটা দিয়ে ওয়েট করতেছি।মিথ্যা কথা বলে মেয়ে পটানো আমার স্বভাব।মেয়ে পটিয়ে ব্যবহার করে ছেড়ে দেই।এই সুন্দরীকে অনেকদিন ধরেই পটানের চেষ্টা করছি কিন্তু হচ্ছে না।তাই একটু মাসালাটা বেশি করে মারলাম।
একটু পর মেয়ে মেসেজ দিলো,
–হুম,আপনার বাবার বাড়ি আছে তো আমি কি করবো?সাথে একটি বিরক্তির ইমোজি।
আমি অনেক ভেবে পরের মেসেজটা দিলাম,
–বললাম এই জন্য যে আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি।সাথে দশটা লাভ ইমোজি।দেখলাম বাড়ি দেখে ইম্প্রেস হও কি না?
–জ্বি না,বাড়ি দেখে কেউ ইম্প্রেস হয় না।এংগ্রি রিয়াক্ট।
–ওহ,তাই?
এভাবে কথাগুলো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি আমার অভিলাষ পূরণ করার উদ্দেশ্য।
মেয়ে পটানো আমার কাছে চুটকি বাজানের মত।একেও পটাবো।এই পর্যন্ত সাত জনকে ব্যাবহার করেছি।এইটা হলে আট নম্বর হবে।আমি কখনও হাল ছাড়ি না।কিছু নিয়ম মেনে এগিয়ে যাই।নীলার সাথেও এভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।নীলা হল সে,যাকে এখন গুলশানের বাড়ির মিথ্যা কথাটা বললাম।আমার মিষ্টি- দুষ্ট কথায় সে আস্তে আস্তে নরম হচ্ছে।এরপর সুযোগ বুঝে কোপটা মারতে পারলেই হল।
নীলার সাথে ভাব হয়ার পর ও ওর ফোন নাম্বার, বাসার ঠিকানা সবই আমাকে আস্তে আস্তে দিতে লাগলো।একদিন ফোনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ সে বলে উঠে,”রাহিল,আই লাভ ইউ।কখন জানি না, আমিও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।”
সেই দিন আয়নার সামনে যেয়ে আমি এক নিষ্ঠুর হাসি দিয়েছিলাম যে হাসি দেখলে হয়তো শয়তানও ভয় পেয়ে যাবে।আরেকটা শিকার হাতের মুঠোয়।
আজকে নীলার সাথে প্রথম ডেট।আমি সবসময় প্রথম ডেটেই কাজটা করি।আমি নীলাকে একটা রেস্টুরেনটে আসতে বলেছি।নীলা নীল শাড়ি পড়ে আসবে,আস্তে আস্তে পায়ে হেটে আর তার সাথে নিয়ে আসবে অসম্ভব রকমের ভালো লাগার এক শুভ্রতা যেই শুভ্রতার সাথে আমি করবো ছলনা, হাহাহা।
রিক্সায় করে, সাদা পাঞ্জাবি পড়ে যাচ্ছি সেখানে।মনে মনে ভাবছি,এই নিয়ে হবে আট।আমি সবসময় বোকা এবং সুন্দর মেয়েদের এই ফাদে ফেলি।নিজের প্রতি সতর্ক, সেইসব মেয়েদের সাথে এরকম করি না।এখন পর্যন্ত যাদের সাথেই কাজটা করেছি সবাই ছিল সুন্দর এবং বোকা।
আস্তে আস্তে পৌছে গেলাম রেস্টুরেন্টে। নীলা আমার আগেই এসে পড়েছে।একটি টেবিলে চুপচাপ বসে আছে।তার ঘাড়ের উপর দিয়ে এসে চুল গুলো টেবিলে পড়েছে,মনে হয় টেবিল নিজেকে ধন্য মনে করছে।
–হাই নীলা,তুমি তো সামনা সামনি দেখতে আরো অপরুপ।
–হয়েছে আর বলতে হবে না।কত দেরি করলে তুমি?
আমি উত্তর দিলাম না।কি অপরুপ সরলতা তার মাঝে।রাগ দেখাচ্ছে কিন্তু তেজ নেই কিছুটা শীতকালের রোদের মত।চারিদিকে অনেক রোদ কিন্তু রোদে কোন তাপ নেই।
আমি খাবার অর্ডার করলাম।দেখতে দেখতে মাত্র দুজনের জন্য পাচ হাজার টাকার খাবার অর্ডার করে ফেললাম।নীলা বলল,
–এতো কে খাবে?
–আমরা খাবো।কেন পারবে না?
–জানি না,দেখি।
নীলার দিকে অনেক্ষন চেয়ে থেকে বললাম,
–আচ্ছা নীলা,তুমি আমাকে সত্যকারেই ভালোবাসো।
–কেনো তোমার সন্দেহ হয়?
–নাহ,তবে কেন জানি মাঝে মাঝে হয় মনে এগুলো সব মিথ্যা।
–কেন এমন মনে হয়?
–এমনেই।
কথা বলতে বলতে খাবার এসে পড়লো।মেয়েটাকে দেখলাম খাবারগুলো দেখে দারুন খুশি হয়েছে।তার মায়াবি চোখ এবং সরল হাসি তা বুঝিয়ে দিচ্ছে।সে বলল,
–কই খাও।
–খাচ্ছি,তুমি খাও আগে।আমি কিছুক্ষন তোমার খাবার খাওয়া দেখি তারপর খাবো।
–হয়েছে ঢং রাখো।
কেনো জানি নীলার সাথে কাজটা করতে মন চাচ্ছে না,তবুও করতে হবে।প্ল্যান মোতাবেল আমার ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠলো।আসলে ফোন না,এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম সেটা বেজে উঠলো।আমি মোবাইল কানে নিয়ে কথা বলার অভিনয় করলাম,তারপর ফোনটা কান থেকে নামিয়ে নীলাকে বললাম,
–নীলা,আমি এক মিনিট আসতেছি।আমার এক বন্ধু এসেছে বাহিরে ওকে কিছু টাকা দিয়ে আসি।
–আচ্ছা যাও।তাড়াতাড়ি এসো।
কি সরল মেয়েটা! কত সহজে বিশ্বাস করে ফেলে একজনকে।আমি বাহিরে এসে সোজা একটা ট্যাক্সি নিয়ে বাসার দিকে রউনা দিলাম।পথে আসতে আসতে নীলার নাম্বার যুক্ত সীম কার্ডটা ভেংগে ফেলিয়ে দিলাম।অনলাইনের সব কিছুতে ব্লক করে দিলাম।আজকে একটু বেশি খারাপ লাগছে কাজটা করে।অন্যবারে এতো খারাপ লাগে নি।আমি কি ফিরে যাবো? নাহ দরকার নেই।মেয়েটাকে একটু গরীব মনে হচ্ছিল।ওকি পারবে টাকাগুলো দিতে? থাক ওর চিন্তা বাদ।আমি এখন বাসায় যেয়ে শান্তিতে একটা ঘুম দিবো এরপর আরেকটা নতুন শিকারের জন্য আমার চোখের দৃষ্টি বিছিয়ে দিবো এই শহরে।
আপনারা হয়তো ভাবছেন, কাজটা খুব খারাপ।কিন্তু আমি এভাবে বিশ্বাস ভাংতে পছন্দ করি।এর একটা কারনও আছে।নীলাসহ আমার শিকারের বাকিরা কখনই আর কোন ছেলেকে অন্ধ বিশ্বাস করবে না।কোন ছেলে যখন নীলাদের মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ভোগ করতে চাইবে তখন নীলার মনে পড়বে এই দিনের কথা,পাচ হাজার টাকার কথা, আমার সাদা পাঞ্জাবিতে প্রতারনার কথা।সে তখন মিষ্টি কথায় ভুলবে না।এতে হয়তো নীলাদের বেচে যাবে এমন কিছু যা পাচ কোটি টাকা দিয়েও পাওয়া যাবে না।
তাই আমি মেয়েদের প্রথম বিশ্বাস এভাবেই ভাঙি যাতে তারা আর কখনও বোকামি না করে।প্রতারনার জাল বিছিয়ে দিবো এই শহরে।প্রতারক আমি।