মৃত্যু বার্ষিকী

মৃত্যু বার্ষিকী

ভাবছি মেয়েটাকে আজ সারপ্রাইজ করবো,চমক দিয়ে অবাক করে দিবো আজকে। কিন্তু কি দিয়ে সারপ্রাইজ করবো,কি পছন্দ ওর এটাও তো জানি না। মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়, তেমন ভাবে এখনো জানা হয়নি। গ্রামের সাদামাটা মেয়ে ও।

আচ্ছা মেয়েটাকে যদি বাহিরে কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাই তাহলে কেমন হয়? বিয়ের পর একবারো তো কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়নি।এটাই মনে হয় ভালো হবে।

না,ও আবার যদি ঘুরতে না যায়।

আচ্ছা, যদি উপহার হিসেবে কোন স্বর্ণ অলংকার দেই তাহলে ভালো হবে হয়তো? কিন্তু পকেটে আজ এত টাকা নেই তো।না এটা দিবো না।
আজকে ও কে নিয়ে খেতে বাহির হবো।কারণ ও কখনো বাহিরের কোন ৫*কিংবা ৩* হোটেলে খায় নি। কিন্তু এ কয়েকদিনে যা বুঝলাম তাতে মনে হয়না সে বাহিরের খাবার খাবে। আমাকে প্রতিদিন যেভাবে খাবার বেধে দেয়। না এভাবে হবে না।

তার চেয়ে বরং ওকে আজকে সাজাবো নিজ হাতে খুব সুন্দর করে । একদম বাঙ্গালী বধুর মতো। নীল শাড়ীর সাথে লাল টুকটুেক একটা টিপ তার সাথে লাল নীল রংয়ের কাঁচের রেশমি চুড়ি আর খোপায় একটা বেলি ফুলের মালা, নিজ হাতে পায়ে আলতা লাগিয়ে দিবো। তাতেই হয়তো ও খুব বেশি খুশি হবে। কারণ ওর মনটা খুব নরম আর কোমল প্রকৃতির। এই কয়েকদিনে এতটুকু বুঝতে পেরেছি।

আচ্ছা ওকে রান্না করতে বলবো নাকি খাবারটা আজ বাহির থেকে নিয়ে আসবো। না ওতো আবার বাহিরের খাবার খাবে না তারচেয়ে বরং দুজন মিলে আজকে রান্না করবো। আজকে আমি হবো প্রধাণ বাবুর্চি আর মেয়েটা থাকবে আমার সহকারী হিসেব। তারপর পছন্দমত সব খাবার রান্না হবে।

সব প্লান করে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে কেউ একজন কল করে তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার জন্য কল করলো।একথাটা বলেই সে কলটা কেটে দিলো । আমি যেহেতু যাচ্ছিলাম কলটা পেয়ে একটু তাড়াতাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু যানজটের কারণে কি তাড়াতাড়ি যাওয়ার উপায় আছে। বার বার কল পাওয়ার পরেও বাসায় পৌছাতে একটু দেরি হয়ে যায়।

কোনরকম ভাবে বাসায় পৌছালাম। বাসায় পৌছে আমি নিজেই একটা সারপ্রাইজ পেলাম,আমাকেই অবাক করে দিলো, মস্ত বড় একটা চমক দিলো মেয়েটা। এতটা চমক দিবো কখনো বুঝতে পারি নাই, একবারের জন্য মনের মাঝে ধাক্কাও খেলাম না। বাসা ভর্তি মানুষ, অনেক কান্না।কান্নার রোল পড়েছে চারদিকে। আমাকে জড়িয়ে সবাই আরো বেশি করে কান্না শুরু করলো। বারান্দায় একটা চাদর দিয়ে ঢাকিয়ে রাখা হয়েছে কোন একজন কে। নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না,চাদরটা ধরে দিলাম সজোরে এক টান দিলাম। তারপর আর কিছু বলতে পারিনা। ঘন্টা দুয়েক আমার কোন হুস ছিলো না। কবর দেওয়ার কিছুক্ষণ আগে আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো।মেয়েটাকে শেষবারের মত দেখলাম। কোমল আর নরম প্রকৃতি মনের আমার প্রাণ প্রিয় মানুষটার নিথর দেহটা সাদা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। ওর মুখটা দেখে আমার কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেছিলো। আমার দুচোখ দিয়ে শুধু অশ্রু ঝরছিলো।

মেয়েটার আজ প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী। আজকে তার জন্য কিনে আনা সেই নীল শাড়ী,রেশমি চুড়ি, লালটিপ, আলতা গুলো বাহির করলাম। কান্না আসতেছে কেন জানি। ওর জন্য আজ বাসায় দোয়ার ব্যবস্থা করেছি।অনেক মানুষ, বাড়ীটা গমগম করছে। সবার মনে অনেক সুখ দেখছি কিন্তু আমি কেন জানি ঘরের দরজাটা বন্ধ করে ওর কাপড় গুলো নাড়ছি আর নাড়ছি। মাএ কয়েক দিনের পরিচয়ে মেয়েটা একটা জায়গা করে নিয়েছে মনের ভিতর।এই যায়গা টা অন্য কাউকে দিতে পারবো না কখনো। আমি তাকে হারিয়ে বুঝেছি, আমার জীবন থেকে সব হারিয়ে গেছে। সব হারিয়ে গেছে।

আমি তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি।আল্লাহ তায়ালা তাকে বেহেশত নসীব করুক। আমীন!

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত