– সুমাইয়া।
– রেসপন্স নেই।
– সুমা।
– রেসপন্স নেই।
– সুম্মা।
– হু, শুনছি তো।
– তাইলে এতক্ষ কথা বলোনি ক্যান?
– তুমি রাগ করে সুম্মা ডাকবে তাই।
– আমার রাগ দেখতে তোমার ভালো লাগে?!
– হু।
– যখন মাইর দিব তখন বুঝবা।
– তাইলে দাওনা!
– হুহ, ঢং করতে হবে না। এখন যাও, চা বানিয়ে নিয়ে আসো।
সুমাইয়া হাতের বইটা রেখে একটা ভেংচি দিয়ে কিচেনে গেছে। এখন সে আমার জন্য চা বানাবে। চায়ের কাপে ৫০গ্রাম আদা কুচি কুচি করে কেটে দিবে! যাতে ঝাঁজে আমি খেতে না পারি। আদা হলো তার রাগের বহিঃপ্রকাশ। রাগ যতো বেশী হবে আদা ততো বেশী হবে।
সুমাইয়া অনেকটা সন্তুষ্টচিত্তে চা নিয়ে আমার সামনে হাজির হলো। মনে হচ্ছে সে আজ চায়ের কাপে শুধু আদার রস করে এনেছে এবং সাথে চা পাতার মিশ্রণ। চায়ের কাপটা আমার হাতে দিয়ে খুব আগ্রহ নিয়ে সামনে বসলো। আমি বিষ খাব আর সে দেখবে; অনেকটা এরকম।
চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। পৃথীবির নবম আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই চায়ে আদার কোনো ঝাঁজ নেই। সুমাইয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
আমি প্রসংশার ভাব করে বললাম, – সুমা চা’টা ভালো হয়েছে।
সুমাইয়া আমার সামনে থেকে উঠে বিছানার চাদর ঠিক করতে করতে বললো, – ‘আজকে একটা খুশির সংবাদ আছে। তাই চায়ে আদা দেইনি।’
“আমি মনে মনে হাসলাম; খুশির খবরের সাথে চায়ে আদার কি সম্পর্ক!”
অনাগ্রহে জিজ্ঞেস করলাম, – খুশির সংবাদটা কি?
– তোমাকে বলা যাবে না।
– কেন?
– কারণ তোমার মধ্যে কোনো কিউরিসিটি দেখছি না।
– সুমাইয়া…!
– হুম বলো।
– You know ‘আমি কোনোকালেই কোনো বিষয়ে আগ্রহী ছিলাম না।’
– আমার বিষয়েও না?!
মনটা খারাপ হয়ে গেল। এই মেয়েটাকে আমি অসম্ভব বেশী ভালোবাসি। আর অনাগ্রহটা আমার ভালো লাগা। আবার দোষও বলা যায়।
পাশের রুমে গিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের ‘কবি’ উপন্যাসটা হাতে নিলাম। উপন্যাসটির ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার সাজ্জাদ। সাজ্জাদ লীলাবতীকে বলছে,
‘লীলাবতী, তোমাকে আমি ভালোবাসি।’
‘না।’
‘না বলছো কেন? আমার মনের কথা তোমার জানার কথা না।’
‘আপনি নিজেকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসেন না। এবং অন্যকারো ভালোবাসাও বুঝতে পারেন না। আল্লাহ্ আপনাকে অনেক ক্ষমতা দিয়েছেন কিন্তু ভালোবাসার এবং ভালোবাসা বুঝার ক্ষমতা দেন না।’
‘হতে পারে।’
‘টেলিফোন রেখে দিচ্ছি সাজ্জাদ ভাই।’
‘আচ্ছা রেখে দাও। হ্যালো শুনো, টেলিফোন রেখে দেবার আগে কি দু লাইন কবিতা শুনবে?’
‘না।’
‘মাত্র দু’টা লাইন। বেশী সময় লাগবে না।’
‘আচ্ছা বলুন।’
সাজ্জাদ হাসতে হাসতে বললো, তুমি থাকো জলে আর আমি থাকি স্থলে আমাদের দেখা হবে মরণের কালে।
হঠাৎ বাম কাঁধে সুমাইয়ার হাতের উষ্ণ ছোঁয়া অনুভব করলাম। সুমাইয়া অপরাধীর স্বর নকল করে বলছে,
– ‘সরি তাহসিন!’
আমি কিছু বললাম না। সে বললো, – ‘গতকাল তুমি যখন অফিসে ছিলে তখন আমার শরীরটা একটু খারাপ লাগছিলো। তাই আম্মুকে ফোন দিই। আম্মু এসে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।’
আমি প্রচন্ড বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, – ‘ডাক্তার কি বলেছে?’
– ‘ডাক্তার বলেছে!
– ‘কি বলেছে?’
সুমাইয়া খানিক সময় নিয়ে বললো।
– ‘তুমি খুব শীঘ্রই বাবা হবে!’
কিছু কিছু খুশির সংবাদে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারায়। আমার অবস্থাটাও ঠিক সেরকম। কেন জানি আজ সুমাইয়াকে পৃথীবির সবচেয়ে বেশী মূল্যবান মনে হচ্ছে। “হে নারী তুমি করিয়াছো ভুবন রচন।