সুমাইয়া আর আমার মধ্যে একটা মিল আছে। আমরা দুজনই জোৎস্নাবিলাসী। প্রতিদিন রাতে ডিনারের পর আয়োজন করে আকাশ দেখি। আমি কখনো কখনো হুট করে সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি! সে তখন বিব্রত হয়। হকচকিয়ে উঠে বলে, – কি দেখছো অমন করে?
আমি বলি, – চাঁদ।
– চাঁদ কি ছাঁদে থাকে হাদারাম? ওই যে দেখো আকাশে।
– আমার পাশের মানুষটা আকাশের চাঁদের থেকে কম কিসে!!
সুমাইয়া তখন লজ্জা পায়। ভীষণ লজ্জা চোখে সে আমার দিকে তাকায়। আমি দু’সেকেন্ডের বেশী চোখ রাখতে পারি না। কি ভয়ংকর সুন্দর তার চাহনি
সকাল ৭টা। সুমাইয়া ঘুম থেকে উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়েছে। সূর্যিমামার এক চিলতি রোদ এসে পড়েছে আমার গায়ে। খুব ভালো লাগছে।
– এই যে তাহসিন সাহেব, এবার উঠুন।
অফিসের সময় হয়ে গেছে!
আমি শুয়ে থেকেই বললাম,
– কে আপনি?
– কে মানে?! আমি আপনার বউ!
– আমার বউ কে?!
– ধুরর মাথাটা বোধহয় গেছে!
আমি মনে মনে হাসলাম। এখোনো বিছানা থেকে উঠিনি। কারণ আজ অফিস নেই। একটু পর সুমাইয়া আসবে। নাস্তা রেডি করে সে আমার পাশে বসবে এবং অসুস্থ রোগীর মত আমার দুইবাহুর মাঝ বরাবর জড়িয়ে ধরে বিছানা থেকে তুলবে। আমি একটু দুষ্টুমি করবো। সে কিচ্ছু বলবে না। মুচকি হাসবে। এরকম মুচকি হাসি দুষ্টুমিগুলোকে প্রশ্রয় দেয়।
ব্রেকফাস্ট করার পর সুমাইয়াকে বললাম। আজকে আমার অফিস নেই। চলো কোথাও বেড়াতে যাই। সে আনন্দে অভিভূত হয়ে বললো,
– কোথায় যাবে?
– তুমি যেখানে বলবে।
– তাহলে চলো নদীতে যাই। ছোট্ট একটা নৌকায় দুজন মিলে সারাদিন ঘুরবো।
– তারপর নৌকাটিতে পাল তুলে ঘর বেঁধে নতুন করে সংসার শুরু করবো।
আমার এরকম বোকা বোকা কথা শুনে সুমাইয়া বাচ্চা মেয়েদের মত খিলখিল করে হেসে দিলো। এই হাসিটা সবাইকে মানায় না। সুমাইয়াকে মানিয়েছে।
মাঝ নদীতে নৌকা। দুজন দুপাশে বসে আছি। আমি বৈঠা হাতে মাঝি। নৌকাটাও স্রোতের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটছে। হঠাৎ সুমাইয়া ডেকে উঠলো,
– ও মাঝি ভাই আমার শরীর খারাপ লাগছে। নৌকা পারে ভিড়াও।
– কি হয়েছে সুমাইয়া?
– বুঝো না?
আমি আর কিছু বললাম না। পারে গিয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে সরাসরি হাসপাতালে কিছুক্ষন পর ডাক্তার সাহেব মুখে হাসি ফুটিয়ে বলতে এলেন এমন সময় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো!