মিরপুর আইডিয়াল গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ঠিক অন্যদিকে রয়েছে সায়েম মোটর সার্ভিসিং এর ওরার্কশপ। আমি আর রাশেদ একই সাথে সেখানে কাজ করতাম। দোকানের সামনেই রয়েছে গার্লস কলেজ তাই কলেজ ছুটির সময়টা আমাদের কাছে বেশ প্রিয় ছিলো। আসলে আমাদের দ্বারা যে ভালোবাসা হবেনা তা আমরা খুব ভালো করেই জানতাম। কোন শিক্ষিত মেয়েইবা আমাদের মত গ্যারেজে কাজ করা ছেলের সাথে প্রেম করবে। হাতে, মুখে সর্ব অংগে শুধু মবিল আর গ্রিজের কালী। কাজ শেষ করে নিজের চেহারা আয়নাতে দেখলেও হৃদয় কেপে উঠতো ভুত দেখেছি কিনা এই ভেবে।
রাশেদ কে কলেজ শুরু হবার এবং শেষ হবার সময়তে হারিকেন দিয়ে খুজলেও পেতাম না, সে কখন যে দোকান থেকে বের হয়ে স্কুলের সামনে চায়ের দোকানে গিয়ে দাঁড়াবে, সে খবর তো কাকপক্ষীও জানেনা। হঠাৎ একদিন রাশেদ মন খারাপ করে ফিরে আসলো, আমি মোটর ইঞ্জিন পরিষ্কার করছিলাম। মন মরা হয়ে তাকে বসে থাকতে দেখে বললাম, “কিরে আজ কি কলেজে কোন সুন্দরী মেয়ের দেখা হয়নাই।”
তেমন কিছুনা দোস্ত, ভাবতেছি পড়ালেখা করমু। এতদিন ধরে কলেজের সামনে যাই একটা মেয়েও তো মুখ ফিরে তাকায় না। সেখানে আরো অনেক কলেজের পোলাপাইন আসে, কেউ বাইক নিয়ে, কেউ দামী জামা কাপড় পড়ে। কত জনের যে কত স্ট্যাইল, চুল খাড়া করা, আবার নোয়ানো, কানে দেখি দুল হাতে আবার দামী চেইন ও পড়ে। মেয়েরা তাদের দিকেই তাকায়, আমার দিকে তাকায়না। রাশেদ এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে দম নিলো।
আমি ভুরু কুচকে রাশেদের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম। একটু ভারী গলায়, তার মানে সালা, তুই মাইয়া পটানোর জন্য পড়ালেখা করতে চাস। কথাটি বলে আবার কাজে মন দিলাম।
— দেখ বাপ মা তো আমার নাই তোর আছে। তারা তোর জন্য কাউরে না কাউরে খুজে দিবেই, আমার কি হইবো। আমার তো নিজে খুজে বের করতে হবে। এখন কোন বাবা মা কি আমার মত ছেলের কাছে তাদের মেয়েকে বিয়ে দিবে। তাছাড়া সারা জীবন তো আর গাড়ির ম্যাকানিক থাকলে চলবে না, জীবন যেভাবেই হোক পাইছি। কিন্তু জীবন পাবার পিছনে আমার হাত না থাকলেও সেই জীবন খারাপ করা বা ভালো করা সব আমার হাতেই।
০- তোর কথা বুঝলাম, কিন্তু পড়ালেখা করলে কাজ করমু কখন।
— বিকেলের পরে করমু। আমার কাছে কিছু টাকা আছে সেই টাকা দিয়ে ঝালমুড়ি বা চটপটির ব্যবসা শুরু করমু। তুই আমার সাথে থাকবি কিনা বল।
মাথা চুলকিয়ে ভাবতে লাগলাম কি করা যায়। তারপর কি মনে করে যেন রাজী হয়ে গেলাম। তার পরের সপ্তাহেই আমরা দুজন কাজ ছেড়ে দিলাম গ্যারেজের। আমরা কোথায় ভর্তি হবো কিভাবে পড়ালেখা করবো তা নিয়ে বড়ই দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়লাম। আমি সিক্স পর্যন্ত পড়েছিলাম সে ইতিহাসের পাচ বছর পাড় হয়ে গেছে। রাশেদেও আমার মতই পড়ালেখা করেছে। সরকারী স্কুল থেকে। আমরা যখন খুবই চিন্তামগ্ন নতুন কিছু করতে তখন আমাদের পাশে দাড়িয়েছিলেন আমার মা। আমি আর রাশেদ মিলে মায়ের কাছে সব কিছু বললাম, মা আমাদের শান্তনা দিলেন কিছু একটা হবেই।
আমার মা বাসায় কাজ করতেন, সে তার বাসার মালিকের সাথে কথা বলবে বলে কাজে চলে গেলো। কয়েকদিন পেরিয়ে গেলো তেমন কোন শুভ লক্ষন পেলাম না। একদিন মা বললেন আমাদের দুজন কে নাকি মালিক ডেকেছে। আমি আর রাশেদ গায়ের ঢোলাঢুলা জামা পড়েই তাদের বাসায় গেলাম।
আমাদের মত মানুষদের সোফায় বসার অধিকার নেই, তাই আমরা ফ্লোরে বসে অপেক্ষা করছি মালিক কখন আসবে। প্রায় ত্রিশ মিনিট পার হবার পর সে আসলো, তার নাম সোলায়মান, সে একজন সরকারী অফিসার। আমাদের দেখে কি যেন ভাবলো, আমাদের নাম, কোন পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি এসব প্রাথমিকভাবে আলাপ করলো।
এরই মধ্যে মা একটি পানির বালতি নিয়ে ড্রইংরুম এ আসলো যেখানে আমরা বসে ছিলাম। ধীরে ধীরে ফ্লোর মুছতেছে সে, মায়ের দিকে তাকিয়ে লক্ষ করলাম পুরো শরীর ঘামে ভেজা, আর খানিকটা হাফিয়ে উঠেছে কাজ করতে করতে। শাড়ির অর্ধেক ভেজা দেখে বুঝতে পারলাম কিছুক্ষন আগে বাথরুম থেকে যে কাপর কাচার শব্দ আসছিলো মা তাদের কাপড় ধুতেছো তখন। তারপর থালা বাসন পরিষ্কার করে এখন ফ্লোর মুছতে আসছে। কেন জানি বুকের ভিতর কু-কু করে উঠলো। এক যন্ত্রনার আলাপণ পেলাম, চোখ ফেটে পানি আসতে চাইছে মায়ের এমন পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখে। আমি যখন ফ্লোরের উপর বসে মায়ের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছিলাম তখন সোলায়মান সাহেবের কথায় ভাবনাতে আচ পড়লো,
— তো তোরা কোথায় পড়তে চাস।
০- স্যার যে কোন স্কুলে ভর্তির সুযোগ করে দেন। আমি বললাম।
— স্কুলের বেতন, পরীক্ষার ফিস, ভর্তির ফিস এগুলো পাবি কোথায়।
০- আমার কাছে ৪ হাজার টাকা আছে। দুই হাজার টাকা ব্যবসা করার জন্য রেখেছি আর দুই হাজার টাকা ভর্তির জন্য। রাশেদ স্যারকে জানালো।
সোলায়মান সাহেব আমার দিকে ফিরে, তোর কাছে কি টাকা আছে নাকি মায়ের ভরসায় আছিস। তোর মা বাবা তো নিজেই খেতে পারেনা, তোকে পড়ালেখা করাবে কি করে? স্যারের কথাতে আমার উপহাস মনে হলো। কেমন যেন মনে হলো গরীব হওয়ার অপরাধের শাস্তি দিচ্ছে এই কথা বলে। তার এই কথা শুনে আমার একটি কথা মনে পড়ে গেলো, ভাত পায়না চা খায়, সাইকেল নিয়া লন্ডন যায়। বাবা মায়ের ঝগড়া হলে মা প্রায় এই কথাটি বলতো। আজ মনে হলো সোলায়মান স্যার আমাকে এই কথার অর্থেই খোঁচা মারলেন গরীব হবার কারনে।
কিরে কথা বলছিস না কেন? তখন আমার মস্তিষ্কে এসব কথাই ঘুরছিলো। স্যারের কথায় তার দিকে ফিরে তাকালাম। মা পাশেই ছিলো, আমি কিছু বলার আগেই মা বলে উঠলেন, স্যার নজরুলের টাকা আমিই দিমু। ওরে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। একবার মায়ের দিকে তাকালাম, আমার চোখ জলে ভরে উঠলো। যে মা আমার টাকা দেবার কথা বলতেছেন, সকাল বেলাতেও সে শুধু এক গ্লাস পানি খেয়ে আমার সামনে ভাতের প্লেট দিয়ে বলেছে তার ক্ষিদে নেই। কোনভাবে চোখপদ্মা নদীকে আটকালাম, মনে মনে বললাম কান্নার জোয়ার এখন আসিস না, একটু পড়ে আয়, মা সামনে আছে।
সোলায়মান স্যার মায়ের কথায় সম্মতি দিয়ে বললেন, ঠিক আছে তাহলে আমি কাল ওদের স্কুলে নিয়ে যাবো। তখনো আমার বাম পকেটে তিন হাজার টাকা। ওয়ার্কশপ থেকে বেতন নিয়ে আসছিলাম। সেখান থেকে দুই হাজার টাকা বের করে সোলায়মান স্যারের হাতে দিয়ে বলতে লাগলাম “স্যার আপনি স্বাক্ষী এই মায়ের দুঃখ একদিন আমি মুছে দিয়ে তাকে সুখ দিবো। মায়ের দিকে এক নজর তাকিয়ে, “মা স্বাক্ষী তুমিও, একদিন সোনালী দিন আমি নিয়ে আসবো।” স্যার কে আবার বলতে লাগলাম “স্যার এই টাকা দিয়ে আমাদের ভর্তি করান, আর আমার পড়ালেখার টাকা তো নিজে যোগাবোই সাথে মায়ের জন্য প্রতিমাসে কিছু দিবো।
খুব গভীর ভাবে সোলায়মান স্যার যেন কি ভাবলেম তা আমার জানা নেই। কিছুক্ষন চুপ থেকে কাল সকাল দশটায় চলে আসিস তোরা, বলে উঠ চলে গেলেন। স্যার চলে যেতেই মা আমার কাছে এসে আমাকে বুকে টেনে নিলেন, তার কন্ঠ অনেক নরম হয়ে গিয়েছে ঘন ঘন ঢোক গিলছে, আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম আমার মা তার বুকের কান্না বাহিরে আসতে দিচ্ছেন না তা ঢোক গিলেই খেয়ে ফেলতেছেন। রেখে দিচ্ছেন বুকের কান্না বুকের মধ্যেই। ছেলের সামনে মা কাদবে এটা ছেলের জন্য অতি লজ্জাকর বিষয়। বুক থেকে সরিয়ে দুহাতে আমার গাল ধরে আমার কপালে চুমু দিলেন, পাশে রাশেদ ছিলো তাকেও টেনে নিলেন বুকে। আর বললেন “আমার একটি নয় দুটি ছেলে, আর আজ আমার দুটি ছেলেই বড় হয়ে গিয়েছে এখন আর কোন চিন্তা নেই আমার।” কথাগুলো বলে মা কাজে চলে গেলেন, আর আমরা আমাদের কাজে।
মিরপুর সাত নম্বরে আনন্দ বিদ্যানিকেতন এ আমাদের ভর্তি করিয়ে দিলো সোলায়মান স্যার। সাথে সে নিজের টাকা দিয়ে আমাদের জন্য একটি সাদা শার্ট আর নেভি ব্লু প্যান্ট কিনে দিলেন। যাবার সময় সে আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোরা একদিন সত্যিই সোনালী দিন নিয়ে আসতে পারবি আমার সেই বিশ্বাস তোদের কালকের কথা শুনে হয়ে গেছে। আর শোন কালশী রোডের মোড়ে তোদের দোকানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি তোরা সেখানে যা খুশি বিক্রি করতে পারবি বিকেল থেকে। প্রতিদিন পুলিশকে শুধু ২০টাকা দিলেই হবে।
আমাদের নতুন জীবন শুরু হলো, আমরা ৭ম শ্রেনীতে ভর্তি হলাম, আর ঝালমুড়ির ব্যবসা শুরু করলাম। সকাল থেকে বিকেল স্কুল তারপর বই ব্যাগ রেখেই চলে যেতাম জীবন বাচানোর অস্ত্র টাকা উপার্জন করতে। ঝালমুড়ির সাথে আমরা চটপটির ব্যবসা শুরু করলাম, আমরা স্কুলে যাবার পর আমার মা সব কিছু রেডি করে রাখতো, আমাদের আসার সময় হলে বাবা মা দুজন মিলে দোকান খুলে ফেলতো, আমরা আসতে বাবা রিক্সা নিয়ে আবার বের হয়ে যেতেন মা ঘরের কাজে ফিরে যেতেন।
এভাবেই আমাদের জীবন চলতে লাগলো। তিন বছর নিরলস পরিশ্রম আর পড়ালেখার প্রচন্ড আকাঙ্ক্ষা থেকে আমরা পাস করলাম এস.এস.সি। এখন আমাদের কে মুর্খ বলার মত কেউ নেই। যেদিন আমরা এস.এস.সি পাস করার খুশির সংবাদ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম সবাই কেদেছিলো, বাবা, মা, আমার তিন বোন। কেদেছিলাম আমি আর রাশেদও, এ যে বিরাট সুখের কান্না, এ সুখের বর্ণনা আমি মুর্খ লেখক কিভাবে প্রকাশ করবো।
এবার আমাদের সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ কলেজ জীবন, কিন্তু আমি আর রাশেদ ঠিক করলাম, আমরা কলেজে ভর্তি হবোনা। আমরা কারিগরি শিক্ষা নিবো, রাশেদ বেছে নিলো অটোমোবাইল, আমি কম্পিউটার। সাথে এখন আমাদের খরচ বেড়ে গেছে তাহলে ব্যবসাকেও বাড়াতে হবে। এখন আমরা খুজতে লাগলাম কোন ব্যবসায় লাভ বেশী, আর এখন আমাদের হিসেবে ঠকানো সহজ হবেনা, দুজনেই শিক্ষিত আর ভালো হিসেব জানি। অনেক ভেবে চিনতে ঠিক করলাম কাপড়ের ব্যবসা শুরু করবো। গলবে না পঁচবে না, আর বিক্রি হলেই লাভ। যা ভাবা সেই কাজ পুরবী হলের সামনে সোলায়মান স্যার কে দিয়ে বসার ব্যবস্থা করলাম। দুজনে কালীগঞ্জ থেকে মাল এনে বিক্রি করতে লাগলাম। এখানে সমস্যা ছিলো আমরা দুজনেই পড়তে চলে গেলে দোকান বন্ধ রাখতে হবে। তখন বাবা রিক্সা চালানো বন্ধ করে দিলো, সে সারাদিন দোকানে কাপড় বিক্রি করতে লাগলো। সন্ধার পর বাবাকে ছেড়ে দিয়ে আমরা দুজন বিক্রি করতাম। এভাবে একই জায়গায় দুবছর খুব ভালো ব্যবসা করলাম। তখন আর মাকে বাসার কাজে যেতে দেইনি। তখন নান্নু মার্কেটে নতুন নতুন দোকান তুলতেছে মাত্র। সোলায়মান স্যারের সাথে নান্নু কমিশনারের ভালো সম্পর্ক ছিলো বলে অল্পকিছু টাকা খরচ করতেই মার্কেটে একটি দোকান পেয়ে গেলাম। সেদিন থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাইনি শুধু এগিয়েই গিয়েছি সামনের দিকে। দু বছর মার্কেট থেকে জমজমাট ব্যবসা করে, আরো দুটি দোকান ভাড়া নিলাম, সেখানে দুজন করে চারজন কর্মচারী রেখেছি আর আমাদের প্রথম দোকানে বাবা বসতেন।
আমরা কারিগরী শিক্ষাতে খুব ভালো ফলাফলে পাস করলাম, এখন আমাদের ব্যবসার ডাইব্রেশন হতে লাগলো। একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার, একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। হোক সেটা ডিপ্লোমা কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার উপাধি তো রয়েছে। বাবার কাছে কাপড়ের ব্যবসা বুঝিয়ে দিয়ে আমরা দুজন দু পথের ব্যবসাতে নামলাম, সে গ্যারেজ খুলে বসলো, আমি আই.টি সেন্টার। আমার এখানে সব ধরনের কম্পিউটার প্রশিক্ষন দেওয়া থেকে শুরু করে, ওয়েব ডেভেলোপ, সফটওয়্যার ডেভেলোপ এর কাজ করা হতো। আর রাশেদের দোকানে গাড়ি সার্ভিসিং এর সমস্ত কাজ সহ গাড়ির সমস্ত দেশী বিদেশী যন্ত্রাংশ বিক্রি করতো। বছর পাচ কাটিয়ে দুজনেই হয়ে উঠলাম মিরপুরের মোটামোটি উচ্চপদের ব্যবসায়ী। ২ কাঠা জায়গা কিনে বাড়ির তোলার কাজ প্রায় শেষের পথে। একটি হোন্ডাই গাড়িও রয়েছে আমাদের। আমার সব বোনদের বিয়েও হয়ে গেছে আর তাদের বিয়ে খুব ভালো জায়গায় হয়েছে।
আমরা দুই ভাই যখন সফলতার উচ্চশিখরে সেদিন সোলায়মাম স্যার আমাদের দুজনের কাধে হাত দিয়ে বলেছিলেন, জানতাম তোরা একদিন নতুন সুর্যের আলো নিয়ে জেগে উঠবি। বিশ্বাস ছিলো তোরা, তোদের সোনালী দিনকে নিয়তির কাছ থেকে ছিনিয়েই আনবি। আর এ সব কিছুই সম্ভব হয়েছে তোদের সততা, তোদের পরিশ্রম, আর জীবন চ্যালেঞ্জ করার মত আত্মবিশ্বাস। দোয়া করি বাবা তোরা আরো বড় হয়ে উঠ, তোদের নাম ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্ব ইতিহাসের দুয়ারে দুয়ারে। সেদিন প্রথম নিজেদের নিয়ে গর্ববোধ হয়েছিলো। সেদিন মনে হয়েছিলো আমরা সুখী, আমরা আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরে সুখী। সোলায়মান স্যারের অনেক ঋন রয়েছে আমাদের উপর কিন্তু আমরা এই যা আমরা কোনদিন শোধ করতে পারবোনা। পৃথিবীতে কিছু মানুষের ঋন শোধ করা যায়না, তেমন কিছু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের মধ্যে সোলায়মান স্যার একজন।
এবার অনেক টাকা হয়েছে অনেক নাম হয়েছে এবার একটা বউ দরকার, এ ব্যাপার নিয়েও আমি আর রাশেদ বড্ড চিন্তিত। কথায় আছেনা সন্তানের কথা মা না বলতেই বুঝে যায়। আর এবারো তাই হলো। আমাদের মনের কথা মা কিভাবে যেন বুঝে গেলেন আর আমাদের বিয়ের জন্য চাপ দিতে লাগলেন। আর আমরা দুজনেও একটু ভাব নিয়ে বলে দিলাম বাবা আমরা নিজেরা পছন্দ করেই তবে বিয়ে করবো। আর গোপণে গোপনে মনটা আনন্দে তাক-ধুমাধুম করে নেচে উঠলো।
রাশেদ আমার কাছে এসে বলতে লাগলো, “ভাই এখন তো আমরা মেয়ে খুজতে আইডিয়াল গার্লস কলেজের সামনে যেতেই পারি। এখন তো আমাদের গাড়িও আছে বাড়িও আছে। আর অনেকগুলো ব্যবসাও আছে, তার থেকে বড় যে সম্পদ রয়েছে একটি নিষ্পাপ মন। যে মন আজো ভালোবাসার কাংগাল।
তার কথায় হেসে দিয়ে বললাম, চল তাইলে মিরপুর আইডিয়াল গার্লস কলেজে। আমরা দুজনেই সেই গেটাপ নিয়ে গার্লস কলেজের সামনে গিয়ে ছুটির অপেক্ষায় গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি। রাশেদ একটু ভিত গলায় বলতে লাগলো
০- ভাই এবার কি মাইয়া আমাদের পছন্দ করবে?
খিলখিল করে হেসে উঠে বললাম “আরে বেটা শুধু পছন্দ করবেনা দৌড়াইয়া বুকে আইসা পড়বো।” আমার কথায় রাশেদ ব্যাপক খুশি হয়েছে সেটা তার দাত কেলানো হাসি দেখলেই বোঝা যায়।
কলেজ ছুটি হতে আমাদের মন খারাপ হয়ে গেলো। জীবনকে সাজিয়ে তুলতে তুলতে আমাদের বয়স প্রায় ত্রিশের কোঠায়। কিন্তু এখানকার সব মেয়েরা ছোট, রাশেদ মন খারাপ করে বললো, “আরে ভাই আমরা তো বড় হয়ে গেলাম, কিন্তু মাইয়াগুলা এখনো ছোটই রইয়া গেলো কেমনে?”
আরে কুদ্দুস আমাদের দেখা মেয়েগুলো এখানে নাই, তারা তো এখন ভার্সিটিতে আছে। চল রে ভাই ভার্সিটিতে গিয়ে সেই পুরানো আইডিয়াল কলেজের মেয়েদের খুজে বের করি। যাদের দেখার জন্য তুই দাঁড়িয়ে থাকতি দোকান এর কাজ বন্ধ দিয়ে। গাল ভর্তি মুচকি হাসি দিয়ে রাশেদ গাড়ির ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে গাড়ি ঘুরাতে লাগলো।
আমি আর রাশেদ যাচ্ছি ভার্সিটির সামনে পুরাতন আইডিয়াল গার্লস কলেজের মেয়েদের খুঁজতে। তাদের মধ্যে ভালো দুজনকে পেলেই দুই ভাই মালা বদলের কাজ সেরে ফেলবো।