রাইদা আর আমি একই কলেজে পড়লেও তাকে নিয়ে আমার কোনো স্মৃতিই মনে পড়ে না। কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডির শেষ সীমানা যখন ছুঁই–ছুঁই করছি, তখন রাইদাকে খুঁজে পাই ফেসবুকে। টুকটাক কথা হয়, নিউজফিডে ঘুরেফিরে ছবি দেখি। নীল রং তার প্রিয়। আমি ভাবি, এই নীলাবতীকে কলেজের পুরো দুই বছর আমি কেন দেখিনি কোথাও? ক্যানটিনে, শিক্ষাসফরে, সেমিনারে—অন্তত কোথাও আমাদের একবার মুখোমুখি হওয়ার ভীষণ দরকার ছিল!
রাইদার সঙ্গে চ্যাট হয় কোনো কোনো রাতে। আমরা কলেজের স্মৃতি আওড়াই। সাচিবিকবিদ্যা বিষয়ের অংশ হিসেবে আমাদের গাজীপুরে একটা গার্মেন্টস পরিদর্শনে যেতে হয়। সেই স্মৃতিও উঠে আসে আমাদের কলেজস্মৃতিতে। আমি বলি, চমৎকার একটা দিন ছিল। রাইদা বলে, ‘ভয়ংকর অভিজ্ঞতা!’
অবাক হওয়ার ইমো পাঠাই, ‘কেন? ভয়ংকর কেন!’
‘আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম!’
‘তাই নাকি! কীভাবে?’
‘জার্নি করে। কলেজে মাথা ঘুরে পড়ে যাই!’
‘পরে?’
‘পরে মাথায় পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরে!’
আর কিছু বলতে হয় না রাইদার। পরের অংশ আমি বলে দিই। ক্লাসে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল সেদিন। তার মধ্যেই গুঞ্জন ওঠে, একটা মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পানি চায় কয়েকজন। আমার হাতেই পানির বোতল ছিল। বাড়িয়ে দিই ভিড়ের মধ্যে কারও হাতে। মেয়েটাকেও দেখি একপলক। নীল থ্রি-পিস পরা, নীলাবতী! ভেজা চুল, তাকে বেঞ্চে শুইয়ে রাখা হয়েছে।
রাইদা অবাক হয়! বলে, ‘তোমার দীর্ঘদিনের আফসোস চুকাল শেষমেশ। কলেজ–জীবনের আমাকে নিয়ে এখন তোমার একটা স্মৃতি অন্তত আছে, আজ থেকে অধিকার নিয়ে বলতে পারবা, নীলাবতী আমি তোমার জীবন বাঁচিয়েছি!’
আমি হাসি! এসব অনুভূতিমাখা হাসিদের কোনো বাক্য বা ইমোতে তুলে আনা যায় না, কাজেই নীলাবতী ইনবক্সের অন্য পাশ থেকে আমার হাসি দেখে না। এক পরম অপেক্ষায় ব্যস্ত দিন কাটাই। রোজ রাতে ঘুমিয়ে পড়ার আগে টুং করে নীলাবতীর টেক্সট আসবে, ‘এই যে জলদানকারী! আপনি জেগে আছেন, না ঘুমিয়েছেন?’